প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জাতি হতাশ ॥ by তরিকুল
মহাজোট সরকারের চার বছরপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণকে অসত্য ও দলীয় বক্তব্য আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
রবিবার বিকেলে দলটির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালেয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দলটির সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কোনও বক্তব্য না দেয়ায় জাতি হতাশ হয়েছে। অবিলম্বে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারকে সংলাপ করার আহ্বান জানান তিনি। একই দিন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অন্য এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অন্তঃসারশূন্য বলে আখ্যায়িত করেন।মঙ্গলবারের ১৮ দলীয় জোটের মানবপ্রাচীর কর্মসূচীকে সামনে রেখে রবিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান ও জাসাস সভাপতি এমএ মালেক।
সংবাদ সম্মেলনে তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জাতি হতাশ হয়েছে। সরকার সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে তা ফুটে উঠেনি। তিনি সরকাররকে ধাপ্পাবাজ, অযৌগ্য, মিথ্যুক আখ্যায়িত করে বলেন, এমন সরকার জাতির জীবনে আর আসেনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, তারা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন তা তারা জানেন। তবে যারা তত্ত্বাবধায়কবিরোধী কথা বলেন তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। কারণ তারা সিনিয়র আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা। তবে তাদেরও দায়িত্ব আছে দেশ যাতে খারাপ দিকে না যায় তা লক্ষ্য রাখার।
জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ফলে সংলাপের পথ বন্ধ হয়ে গেল কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তরিকুল বলেন, সংলাপের পথ অবশ্যই খোলা আছে। আর পথ বন্ধ হলে রাজপথেই সমাধান হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংলাপ কখনও বন্ধ হয় না। কারণ যুদ্ধের সময়ে মাও সেতুংও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করেছিলেন। তরিকুল বলেন, যেভাবেই যা করুক, তত্ত্বাবধায়ক হতেই হবে। তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমেই নির্বাচন দিতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের জন্য উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের জন্য মানুষ নয়। ওয়ান-ইলেভেনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তরিকুল বলেন, সেনা সমর্থিত সরকারকে সমর্থন দিয়েই তিনি ক্ষমতায় আসেন। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন ও এরশাদ সরকারকে আওয়ামী লীগ বৈধতা দিয়েছে। তিনি বলেন, টালবাহানা বাদ দিয়ে গণঅভ্যুত্থান হওয়ার আগেই তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দুঃশাসনের অবসানের অভ্যুত্থান ঘটানোর অপেক্ষায় আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের দল দাবি করে তরিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় তবে সেই বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। বিএনপির সমন্বয়ক বলেন, সরকার ফাঁসির আসামিদের ক্ষমা করে দেয়, হত্যা মামলার আসামিকে জামিন দেয়। অথচ ময়লার গাড়ি ভাংচুরের মিথ্যা মামলায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে বন্দী করে রেখেছে। তিনি দলের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
প্রতিহিংসার চার বছর : সংবিধান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার শীর্ষক প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত অপর এক আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ গতানুগতিক। মওদুদ বলেন, আগামী নির্বাচন হবে কি না, হলে কীভাবে হবে, তা নিয়ে জাতি উদ্বিগ্ন। মানুষ আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন ভাষণ দেবেন। গণতন্ত্রের যে সঙ্কট চলছে, তা নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু তা হয়নি।
মওদুদ আহমদ বলেন, এ ভাষণের কোন মূল্য আছে বলে আমি মনে করি না। আশা করি প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে এমন ভাষণ দেবেন যাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমিত হবে, তাতে মানুষ খুশি হবে।
দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশ্বজিৎ হত্যা, পদ্মা সেতু, হলমার্ক কেলেঙ্কারি এসব বিষয়ে কোন বক্তব্য না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সমালোচনা করেন বিএনপির এই নেতা।
এক-এগারোর ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন মওদুদ আহমদ। তবে তিনি বলেন, আবার এক-এগারোর মতো কোন ঘটনা ঘটলে তার দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ১৮ দল কোন নির্বাচনে যাবে না উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, উপযুক্ত সময়ে কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
No comments