মুদ্রাস্ফীতি মূল্যস্ফীতিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে by ইফতেখার আহমেদ টিপু
দেশের অর্থনীতি এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থার শিকার। বিশ্বমন্দা, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি। রাজনৈতিক অস্থিরতা সে খুঁড়িয়ে চলাকেও স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। অর্থমন্ত্রীর মুখে বারবার আশার কথা ঘোষিত হলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
উন্নয়ন সহযোগীরাও অর্থনীতির চলমান হালচালে তাদের অসন্তুষ্টির কথাই জানান দিয়েছেন। প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছর গতবারের চেয়ে কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জ্বালানি সংকটে দেশের কলকারখানায় উৎপাদন মুখ থুবড়ে পড়ছে। বাণিজ্য ঘাটতি আর মূল্যস্ফীতির উচ্চচাপে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। আইএমএফও বলেছে, প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট এবং দাম বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে অসহনীয় চাপে ফেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের উচ্চমূল্যও এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে রোধ করা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি রোধ করতে গিয়ে যে ভুল নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে, তাতেও সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সঙ্কুচিত করে দেওয়ায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি সংকটে নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা ও উৎপাদন বিঘি্নত হওয়ায় ব্যাংকের খেলাপিঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।
আমাদের অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য সংঘাতের রাজনীতি দায়ী। বিশ্বমন্দার মধ্যেও ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রত্যাশার মাত্রা অতিক্রম করে চমক সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছিল, চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বলে বিবেচিত হবে। আগামী দেড় যুগের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে- এমন সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু সরকার ও বিরোধী দলের সংঘাতের রাজনীতি এসব সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। লাগাতার হরতালের কারণে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। এমন একসময় বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দানা বেঁধে উঠেছে, যখন চীনের শ্রমবাজারে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরি পোশাক খাত থেকেই বাংলাদেশ ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঘনবসতির দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদও সীমিত। দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে, তাকে কাজে লাগাতে রাজনৈতিক হানাহানির পথ থেকে এখনই সরে আসতে হবে। অর্থনীতির স্বার্থেই গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক সমঝোতা। এটি আজ সময়ের দাবি।
মুদ্রাস্ফীতি প্রতিনিয়ত মূল্যস্ফীতিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থায় ব্যত্যয় ঘটছে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কমলেও বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে তার দাম বাড়ছে। সুব্যবস্থাপনার বদলে যেনতেন করে সমস্যা মোকাবিলার প্রয়াসে বেহাল হয়ে পড়ছে অর্থনীতি। সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে অপ্রয়োজনীয় খাতের ব্যয় মেটাতে সরকার ঋণের ঘেরাটোপে আটকা পড়ছে। ব্যাংকঋণ নিতে নিতে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে এখন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে খরচ মেটাতে হচ্ছে। স্বপ্নবিলাসী মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সামর্থ্যের চেয়ে বিশাল বাজেট প্রণয়ন করে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা শাঁখের করাত হয়ে দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক সহায়তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় দেশের মুদ্রাব্যবস্থার ওপর চাপ পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ায় দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অর্থনীতির বেহাল অবস্থার উত্তরণে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। তবে এর সুফল তখনই অনুভূত হবে, যখন বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে পরামর্শগুলো কাজে লাগানো হবে।
অর্থনীতি হলো রাজনীতির প্রাণ। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনের সংকট ঘনীভূত হওয়ায় তা সরকারবিরোধী আন্দোলনকে উৎসাহিত করছে। রাজনৈতিক সংঘাতে উৎপাদনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। অর্থনীতিকে সঠিক পথে নেওয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতার পথ ধরে সংঘাতের উপাদানগুলোকে স্তিমিত করাই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ এবং চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ chairman@ifadgroup
আমাদের অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য সংঘাতের রাজনীতি দায়ী। বিশ্বমন্দার মধ্যেও ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রত্যাশার মাত্রা অতিক্রম করে চমক সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছিল, চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বলে বিবেচিত হবে। আগামী দেড় যুগের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে- এমন সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু সরকার ও বিরোধী দলের সংঘাতের রাজনীতি এসব সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। লাগাতার হরতালের কারণে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। এমন একসময় বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দানা বেঁধে উঠেছে, যখন চীনের শ্রমবাজারে পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরি পোশাক খাত থেকেই বাংলাদেশ ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান ঘনবসতির দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদও সীমিত। দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে, তাকে কাজে লাগাতে রাজনৈতিক হানাহানির পথ থেকে এখনই সরে আসতে হবে। অর্থনীতির স্বার্থেই গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক সমঝোতা। এটি আজ সময়ের দাবি।
মুদ্রাস্ফীতি প্রতিনিয়ত মূল্যস্ফীতিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থায় ব্যত্যয় ঘটছে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম কমলেও বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে তার দাম বাড়ছে। সুব্যবস্থাপনার বদলে যেনতেন করে সমস্যা মোকাবিলার প্রয়াসে বেহাল হয়ে পড়ছে অর্থনীতি। সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে অপ্রয়োজনীয় খাতের ব্যয় মেটাতে সরকার ঋণের ঘেরাটোপে আটকা পড়ছে। ব্যাংকঋণ নিতে নিতে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে এখন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে খরচ মেটাতে হচ্ছে। স্বপ্নবিলাসী মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সামর্থ্যের চেয়ে বিশাল বাজেট প্রণয়ন করে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা শাঁখের করাত হয়ে দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক সহায়তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় দেশের মুদ্রাব্যবস্থার ওপর চাপ পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ায় দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অর্থনীতির বেহাল অবস্থার উত্তরণে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। তবে এর সুফল তখনই অনুভূত হবে, যখন বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে পরামর্শগুলো কাজে লাগানো হবে।
অর্থনীতি হলো রাজনীতির প্রাণ। মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনের সংকট ঘনীভূত হওয়ায় তা সরকারবিরোধী আন্দোলনকে উৎসাহিত করছে। রাজনৈতিক সংঘাতে উৎপাদনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। অর্থনীতিকে সঠিক পথে নেওয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতার পথ ধরে সংঘাতের উপাদানগুলোকে স্তিমিত করাই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ এবং চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ chairman@ifadgroup
No comments