বিভিন্নমুখী সংকটে বিমান-সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় লাভজনক করা সম্ভব

'আকাশে শান্তির নীড়' বলে প্রচারিত বাংলাদেশ বিমানের অশান্তি যেন শেষ হওয়ার নয়। একের পর এক সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বিমানের। কখনো উড়োজাহাজের সংকট, কখনো প্রশাসনের সংকট। দুর্নীতির অভিযোগও অনেক দিনের। ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থাটি কেবলই লোকসান দিয়ে চলেছে।


সম্প্রতি একের পর এক ডিসি-১০ বিমান অকেজো হয়ে হ্যাঙ্গারে ঢুকছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে ২০০ যাত্রী নিয়ে একটি এয়ারবাস কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আধা ঘণ্টা পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি আবার বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে এবং গন্তব্য হয়েছে হ্যাঙ্গারে। ইতিমধ্যে এটি নিয়ে চারটি উড়োজাহাজ হ্যাঙ্গারে ঢুকেছে। আর একবার হ্যাঙ্গারে ঢুকলে মাসের পর মাস হ্যাঙ্গারেই পড়ে থাকতে হয়। ফলে বিমানের ১৮টি রুটের অধিকাংশ রুটেই ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। ভোগান্তির শিকার হয়ে যাত্রীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিমানের ওপর থেকে। বাড়ছে বিমানের লোকসানও।
বিমানের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আগে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান ও মন্ত্রীর রেষারেষি ছিল ব্যাপক আলোচিত বিষয়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দৌড়ঝাঁপ এবং একপর্যায়ে মন্ত্রী বদল- কোনোটাই প্রতিষ্ঠানটির চেহারা পরিবর্তন করতে পারেনি। অব্যবস্থাপনা নিয়ে যে অভিযোগ, তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খাটো করে দেখা যায় না। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়েও ছিল এন্তার অভিযোগ। কোনো রকমে বিমান কর্মচারীদের আন্দোলন থামানো গেছে। প্রশাসনিক দুরবস্থা এবং পরিচালনাগত ত্রুটি দুই মিলে সেবার মান কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
সামনে হজের মৌসুম। এ সময় বিমানের ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয়কে কেউ কেউ সন্দেহের চোখেও দেখছেন। বিদেশি উড়োজাহাজ লিজ আনাটা কারো কারো জন্য একটি লাভজনক বিষয়। তারই ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য এমনটি করা হয়ে থাকতে পারে বলেও কেউ কেউ ধারণা করছেন। বিমানের নিকট-অতীত পর্যালোচনা করলেও এমন ধারণা পাওয়া যায়। এয়ার বাস ও ডিসি-১০ বিমানগুলো যেন হজযাত্রী পরিবহন করতে অপারগতা প্রকাশের জন্যই মৌসুম শুরু হওয়ার আগে একটি একটি করে অচল হতে থাকে। আবার যে মুহূর্তে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়, তখনই উড়োজাহাজগুলো ধীরে ধীরে হ্যাঙ্গার থেকে বের হতে থাকে। এ বছরও হজযাত্রী পরিবহনের জন্য নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারলাইনস থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া আনার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। বিতর্কিত এই সংস্থাটি নিয়ে গত বছরও বিমানে টানাটানি হয়েছে। এবারও কাবো এয়ারলাইনস আলোচনায় চলে এসেছে। অবশ্য বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ বিকল থাকলে কাবো হোক কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানই হোক, বাংলাদেশ বিমান উড়োজাহাজ ভাড়া আনতে বাধ্য হবে। সরকারকে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। বিমান ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। একে লাভজনকভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে এবং জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.