এসইসির সক্রিয় হওয়ার এটাই সময় by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
কৃষ্ণ মেঘের পর দেখা যায় রুপালি রেখা। এ তমসা কেটে যায়। চারদিক আলোয় ঝলমল করে ওঠে। তবে আবার যে কালো মেঘের ছায়া গ্রাস করবে না, এ রকম নিশ্চয়তা কি আছে? প্রসঙ্গ শেয়ার। গত ডিসেম্বরে (২০১০) শেয়ারবাজারে যে ধস নামল, তা সরকারকে অত্যন্ত বিব্রত অবস্থায় ফেলেছিল। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ এ যুগে বিশ্বব্যাপী যেকোনো ঘটনা খুব সহজেই দেখানো হয়।
গত বছর ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) প্রথম যেদিন চরম বিপর্যয় ঘটল, শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে গেল এবং বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ দেখাতে লাগলেন, সেই দৃশ্য আলজাজিরা টিভিতে দীর্ঘসময় লাইভ দেখানো হলো। আমাদের অর্থমন্ত্রী তো বটেই, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকেও আশ্বস্ত করতে হয়েছে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের। এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই সুযোগ থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এম কে আনোয়ারের মতো একজন সিনিয়র নেতা বিক্ষোভকারীদের দলে ভেড়ানোর জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার মতো অবাস্তব প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
শেয়ারবাজারের কথা ভেবেই কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যদিও প্রথম এ রকম শোনা গিয়েছিল যে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে দেওয়ার মতো অনৈতিক এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডকে সরকার আর সমর্থন দেবে না। এদিকে প্রবীণ ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি রিপোর্ট দিলে তা প্রকাশ করা হয় এবং বলা হয় যে এই রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের এতসব ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে শেয়ারবাজার আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু মাঝেমধ্যে অন্য রকম কিংবা প্রশ্নবোধক চিত্রও দেখা যাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে চিন্তার কারণ। কথায় বলে_বেশি ভালো ভালো নয়। গত সপ্তাহে শেষের তিন দিন শেয়ারের দাম কিছুটা কমেছে। এর আগের দুই সপ্তাহে ১০ কার্যদিবসের ভেতর ৯ দিন শেয়ারের দাম বাড়ে এবং মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক হারে। এক দিন তো রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হলো। মনে রাখতে হবে, যেসব কম্পানির মৌল ভিত দুর্বল এবং এমন কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই, অথচ দাম বেড়ে চলেছে, তখন বুঝতে হবে যে এখানে কিছু কারচুপি বা কারসাজি হয়েছে। শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে। কিন্তু উঠতেই থাকবে, নামবে না_এটা তো হতে পারে না। বর্তমানে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি শান্ত এবং স্বাভাবিক। এখনই যথার্থ সময় বিনিয়োগকারীদের বোঝানোর যে তাদের বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের লাভ-লোকসানের দায়ভার অন্য কারো নয়, সরকারের তো কোনোক্রমেই নয়।
লঞ্চ যখন নদীর ঘাটে থাকে, তখন চেক করে দেখতে হয় যে অতিমাত্রায় যাত্রী বোঝাই হয়েছে কি না, সব কিছু ত্রুটিমুক্ত আছে কি না। লঞ্চ মাঝনদীতে যাওয়ার পর যদি বলা হয় যে বেশি এবং বিপজ্জনকভাবে বোঝাই হয়েছে, ত্রুটি দেখা যাচ্ছে, তখন তো আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়া আর ভালো কিছু হবে না। এ কাজটি করার দায়িত্ব স্টক এঙ্চেঞ্জের তো বটেই, তবে মূল দায়িত্ব এসইসির। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে এসেছে এবং আমরাও লক্ষ করেছি যে এসইসি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় না থেকে শেয়ারবাজারের সহযাত্রী হিসেবে নেমেছে। মনে হয়েছে, যেন এসইসি স্টক এঙ্চেঞ্জের মার্কেটিং এজেন্ট। ইচ্ছেমতো মার্জিন ঋণের হার নিয়ন্ত্রণ করছে। সকালে এক রেট, বিকেলে আরেক রেট। যাকে খুশি ডাইরেক্ট লিস্টিং দিচ্ছে। বুকবিল্ডিং এবং প্লেসমেন্ট নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এসব কথা তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে। আর সে কারণে এসইসির নির্বাহীদের আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সরকার সেই আলোকে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন উচ্চপদে নতুন নিয়োগ দিয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিল যে নতুন ইমেজ নিয়ে অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে এসইসি মাঠে নামবে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম সে রকম কিছু বলছে না। কর্তাব্যক্তিরা তাদের পূর্বসূরির পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, যেমন_তারা নিয়ন্ত্রক নন, সহায়ক। সহায়ক তো বটে, তবে নিয়ন্ত্রক তথা শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক_এটা মনে রাখতে হবে। এসইসি জনসংযোগের নামে যা করছে, তাতে মনে হয় যে স্টক এঙ্চেঞ্জের কাছে তারা কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পেরেছে, সেটা পরিমাপ করা নিয়ে তারা বেশি উদগ্রীব। এটি দুর্বল চিত্তের পরিচায়ক বললে ভুল হবে না। একটা কথা মনে রাখতে হবে এসইসিকে, যদি তারা মনে করে থাকে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে শেয়ারবাজার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অতএব বিলম্ব করা হোক, তাহলে তারা ব্যর্থতার চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে এবং সামনে আবার শেয়ারবাজার একটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। আগেই উল্লেখ করেছি যে দুই সপ্তাহ আগে যখন শেয়ারের মূল্য লাগামহীন হয়েছিল, তখনই অনেক মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
এসইসিকে অনেক স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের এখন অন্যতম দায়িত্ব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এতে একটা ধাক্কা আসতে পারে, তবে তা সামলানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে, তাদের সমর্থকরা হৈচৈ করে বেশিদূর যেতে পারবে না। এসইসিকে মনে রাখতে হবে যে দুবারই বহুসংখ্যক নিরীহ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছে, বিশ্ববিখ্যাত অর্থনৈতিক সাপ্তাহিকী ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ একে আখ্যায়িত করেছে ঝষধঁমযঃবৎ ড়ভ ঃযব ওহহড়পবহঃ, শেয়ারবাজারে তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে তো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। বুকবিল্ডিং প্লেসমেন্ট_এসবই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি, তবে এর প্রয়োগটা দেশীয় পরিস্থিতির আলোকে বিচার করতে হবে। যদি আইপিও অতি বিশালকায় না হয়, তাহলে ওসব নিয়ে মাথা না ঘামানো ভালো। কেননা আমাদের প্রাইমারি মার্কেট অত্যন্ত শক্তিশালী। স্টক এঙ্চেঞ্জের সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে এসইসিকে অত্যন্ত সক্রিয় থাকতে হবে। বলা হচ্ছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ সংস্কার আসবে। কিন্তু প্রশ্ন, আদৌ তা হবে কি? বিশেষ করে এই কমিটি প্রধান স্টক এঙ্চেঞ্জের পছন্দ-অপছন্দের বাইরে যাবেন কি? ১৯৮৬ সালে যে সদস্যপদের দাম ছিল ৬ হাজার টাকা, আজ তার মূল্য ১২০ কোটি টাকা। অতএব এহেন অমূল্য সম্পদের কিঞ্চিৎ অবমূল্যায়ন কি সহ্য করা যায়। যা-ই হোক, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ক্ষেত্রে স্টক এঙ্চেঞ্জের বাধা এলে ন্যাশনাল স্টক এঙ্চেঞ্জ স্থাপনের কথা ভাবতে দোষ কী?
বাংলাদেশে নাকি অর্থনীতির আকারের তুলনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজি নয় নতুন করে ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দিতে। তার পরও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে আরো ব্যাংক এবং বীমা কম্পানির অনুমতি দেওয়া হবে। তাহলে রাজনৈতিক কারণে ন্যাশনাল স্টক এঙ্চেঞ্জ স্থাপন করাও প্রয়োজন। যে অচলায়তন শেয়ারবাজারের সংস্কারকে আটকে রেখেছে, অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধা দিচ্ছে এবং যার ফলে লাখো নিরীহ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হচ্ছে, সেই অচলায়তন অবশ্যই ভাঙতে হবে। এসইসির বর্তমান কর্মকর্তারা দয়া করে মনে রাখবেন, এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনের সময় আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। যদি আপনারা কোনো অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে অথবা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে না চেয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সেই ইতিহাসই আপনাদের ক্ষমা করবে না। আইনসংগত দায়িত্ব পালন না করে নির্দেশিত কাজ করার ফলে সাবেক তিনজন পুলিশের আইজি এখন জেলহাজতে। সময়ের চাহিদা, ইতিহাসের চাহিদা তথা জনমানুষের চাহিদা_অপরাধীর বিচার হোক। দয়া করে সবারই সেটা মনে রাখা উচিত।
লেখক : সাবেক ইপিএস, শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
শেয়ারবাজারের কথা ভেবেই কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যদিও প্রথম এ রকম শোনা গিয়েছিল যে কালো টাকা বিনিয়োগ করতে দেওয়ার মতো অনৈতিক এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডকে সরকার আর সমর্থন দেবে না। এদিকে প্রবীণ ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি রিপোর্ট দিলে তা প্রকাশ করা হয় এবং বলা হয় যে এই রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের এতসব ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে শেয়ারবাজার আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু মাঝেমধ্যে অন্য রকম কিংবা প্রশ্নবোধক চিত্রও দেখা যাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে চিন্তার কারণ। কথায় বলে_বেশি ভালো ভালো নয়। গত সপ্তাহে শেষের তিন দিন শেয়ারের দাম কিছুটা কমেছে। এর আগের দুই সপ্তাহে ১০ কার্যদিবসের ভেতর ৯ দিন শেয়ারের দাম বাড়ে এবং মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক হারে। এক দিন তো রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হলো। মনে রাখতে হবে, যেসব কম্পানির মৌল ভিত দুর্বল এবং এমন কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই, অথচ দাম বেড়ে চলেছে, তখন বুঝতে হবে যে এখানে কিছু কারচুপি বা কারসাজি হয়েছে। শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে। কিন্তু উঠতেই থাকবে, নামবে না_এটা তো হতে পারে না। বর্তমানে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি শান্ত এবং স্বাভাবিক। এখনই যথার্থ সময় বিনিয়োগকারীদের বোঝানোর যে তাদের বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের লাভ-লোকসানের দায়ভার অন্য কারো নয়, সরকারের তো কোনোক্রমেই নয়।
লঞ্চ যখন নদীর ঘাটে থাকে, তখন চেক করে দেখতে হয় যে অতিমাত্রায় যাত্রী বোঝাই হয়েছে কি না, সব কিছু ত্রুটিমুক্ত আছে কি না। লঞ্চ মাঝনদীতে যাওয়ার পর যদি বলা হয় যে বেশি এবং বিপজ্জনকভাবে বোঝাই হয়েছে, ত্রুটি দেখা যাচ্ছে, তখন তো আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়া আর ভালো কিছু হবে না। এ কাজটি করার দায়িত্ব স্টক এঙ্চেঞ্জের তো বটেই, তবে মূল দায়িত্ব এসইসির। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে এসেছে এবং আমরাও লক্ষ করেছি যে এসইসি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় না থেকে শেয়ারবাজারের সহযাত্রী হিসেবে নেমেছে। মনে হয়েছে, যেন এসইসি স্টক এঙ্চেঞ্জের মার্কেটিং এজেন্ট। ইচ্ছেমতো মার্জিন ঋণের হার নিয়ন্ত্রণ করছে। সকালে এক রেট, বিকেলে আরেক রেট। যাকে খুশি ডাইরেক্ট লিস্টিং দিচ্ছে। বুকবিল্ডিং এবং প্লেসমেন্ট নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এসব কথা তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে। আর সে কারণে এসইসির নির্বাহীদের আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সরকার সেই আলোকে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন উচ্চপদে নতুন নিয়োগ দিয়েছে। সবার প্রত্যাশা ছিল যে নতুন ইমেজ নিয়ে অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে এসইসি মাঠে নামবে। কিন্তু তাদের কার্যক্রম সে রকম কিছু বলছে না। কর্তাব্যক্তিরা তাদের পূর্বসূরির পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন। কেউ কেউ আবার রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, যেমন_তারা নিয়ন্ত্রক নন, সহায়ক। সহায়ক তো বটে, তবে নিয়ন্ত্রক তথা শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক_এটা মনে রাখতে হবে। এসইসি জনসংযোগের নামে যা করছে, তাতে মনে হয় যে স্টক এঙ্চেঞ্জের কাছে তারা কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পেরেছে, সেটা পরিমাপ করা নিয়ে তারা বেশি উদগ্রীব। এটি দুর্বল চিত্তের পরিচায়ক বললে ভুল হবে না। একটা কথা মনে রাখতে হবে এসইসিকে, যদি তারা মনে করে থাকে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে শেয়ারবাজার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অতএব বিলম্ব করা হোক, তাহলে তারা ব্যর্থতার চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে এবং সামনে আবার শেয়ারবাজার একটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। আগেই উল্লেখ করেছি যে দুই সপ্তাহ আগে যখন শেয়ারের মূল্য লাগামহীন হয়েছিল, তখনই অনেক মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন।
এসইসিকে অনেক স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের এখন অন্যতম দায়িত্ব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এতে একটা ধাক্কা আসতে পারে, তবে তা সামলানোর ব্যবস্থাও নিতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে, তাদের সমর্থকরা হৈচৈ করে বেশিদূর যেতে পারবে না। এসইসিকে মনে রাখতে হবে যে দুবারই বহুসংখ্যক নিরীহ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছে, বিশ্ববিখ্যাত অর্থনৈতিক সাপ্তাহিকী ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ একে আখ্যায়িত করেছে ঝষধঁমযঃবৎ ড়ভ ঃযব ওহহড়পবহঃ, শেয়ারবাজারে তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে তো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। বুকবিল্ডিং প্লেসমেন্ট_এসবই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি, তবে এর প্রয়োগটা দেশীয় পরিস্থিতির আলোকে বিচার করতে হবে। যদি আইপিও অতি বিশালকায় না হয়, তাহলে ওসব নিয়ে মাথা না ঘামানো ভালো। কেননা আমাদের প্রাইমারি মার্কেট অত্যন্ত শক্তিশালী। স্টক এঙ্চেঞ্জের সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে এসইসিকে অত্যন্ত সক্রিয় থাকতে হবে। বলা হচ্ছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ সংস্কার আসবে। কিন্তু প্রশ্ন, আদৌ তা হবে কি? বিশেষ করে এই কমিটি প্রধান স্টক এঙ্চেঞ্জের পছন্দ-অপছন্দের বাইরে যাবেন কি? ১৯৮৬ সালে যে সদস্যপদের দাম ছিল ৬ হাজার টাকা, আজ তার মূল্য ১২০ কোটি টাকা। অতএব এহেন অমূল্য সম্পদের কিঞ্চিৎ অবমূল্যায়ন কি সহ্য করা যায়। যা-ই হোক, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ক্ষেত্রে স্টক এঙ্চেঞ্জের বাধা এলে ন্যাশনাল স্টক এঙ্চেঞ্জ স্থাপনের কথা ভাবতে দোষ কী?
বাংলাদেশে নাকি অর্থনীতির আকারের তুলনায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজি নয় নতুন করে ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি দিতে। তার পরও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে আরো ব্যাংক এবং বীমা কম্পানির অনুমতি দেওয়া হবে। তাহলে রাজনৈতিক কারণে ন্যাশনাল স্টক এঙ্চেঞ্জ স্থাপন করাও প্রয়োজন। যে অচলায়তন শেয়ারবাজারের সংস্কারকে আটকে রেখেছে, অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধা দিচ্ছে এবং যার ফলে লাখো নিরীহ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হচ্ছে, সেই অচলায়তন অবশ্যই ভাঙতে হবে। এসইসির বর্তমান কর্মকর্তারা দয়া করে মনে রাখবেন, এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনের সময় আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। যদি আপনারা কোনো অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে অথবা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে না চেয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সেই ইতিহাসই আপনাদের ক্ষমা করবে না। আইনসংগত দায়িত্ব পালন না করে নির্দেশিত কাজ করার ফলে সাবেক তিনজন পুলিশের আইজি এখন জেলহাজতে। সময়ের চাহিদা, ইতিহাসের চাহিদা তথা জনমানুষের চাহিদা_অপরাধীর বিচার হোক। দয়া করে সবারই সেটা মনে রাখা উচিত।
লেখক : সাবেক ইপিএস, শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
No comments