কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা by মোবাশ্বির আলম মজুমদার
পছন্দের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করা অনেক শিল্প-সমঝদারের সাধ্যেই কুলিয়ে ওঠে না। মৌলিক শিল্পকর্মের ক্ষেত্রে সাধারণত রিপ্রোডাকশন করা হয় না। শিল্পকর্মের ‘অরা’ বজায় রাখতে গিয়ে দাম বেজায় হয়ে ওঠে, সাধারণ সমঝদার আর নাগাল পান না।
এ রকম অনেক সমঝদারের জন্য খুশির খবর হলো ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা আর্ট সেন্টারে ‘কিবরিয়া ছাপচিত্র মেলা’ শিরোনামে যে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে, সেখান থেকে সুলভ মূল্যে অনেক অমূল্য ছাপচিত্র সংগ্রহ করার সুযোগ মিলবে। ছাপচিত্রশিল্পের যুক্ত সঙ্গে সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো পসরা সাজিয়েছে এই মেলায়। মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রজ, অনুজ শিল্পীদের নানা রকম শিল্পকর্ম।
ছাপচিত্র শিল্পের একটি শ্রমসাধ্য প্রকাশমাধ্যম। কৌশলগত কারণে ছাপচিত্র মাধ্যমে করা শিল্পকর্মের অনেক প্রিন্ট সহজেই করা সম্ভব, তাই একটি মৌলিক শিল্পকর্মের হুবহু ছাপচিত্র সহজেই পেতে পারেন দর্শক। দর্শকদের নাগালের মধ্যে ছাপচিত্র এনে দেওয়ার লক্ষ্যে এই মেলা প্রথম শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। এবার দ্বিতীয় আয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছাপচিত্রশিল্পের মেলার আয়োজন হয়, ফলে শিল্পের এ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন অনেকে, গড়ে তুলতে পারেন কাঙ্ক্ষিত শিল্পকর্ম। ঢাকা আর্ট সেন্টারের ট্রাস্টি শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান এ আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রাফিক বা ছাপচিত্র তৈরির মাধ্যম, কৌশল, সর্বোপরি শিল্পের এ মাধ্যমকে জনপ্রিয় করার জন্যই এমন উদ্যোগ।’
পঞ্চাশের দশকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ দেশে শিল্পচর্চা শুরু হওয়ার সময় থেকেই ছাপচিত্রে কাজ শুরু করেন শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদ (১৯২২-২০১২)। তাঁর কলকাতার শিক্ষাজীবন (১৯৪৪-৪৬) পর্বে ছাপচিত্র মাধ্যমে মুকুল দে, রমেন চক্রবর্তীসহ ভারতবর্ষের নামী শিল্পীদের কাছ থেকে দীক্ষা নেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র ভারতবর্ষে শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদের নাম ছাপচিত্রের ক্ষেত্রে অনিবার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ছাপচিত্রের নানা মাধ্যম ও পদ্ধতি—কাঠখোদাই, ড্রাই পয়েন্ট, এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, কপার এনগ্রেডিং-এর চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সফিউদ্দিন আহমেদ।
ছাপচিত্রচর্চার নিরীক্ষায় অগ্রজ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। তাঁর লিথোগ্রাফ চিত্রকলায় তিনি রেখা ও বুনটের ব্যবহারের মাধ্যমে ছাপচিত্র মাধ্যমের সবচেয়ে কঠিন মাধ্যমকে সহজ করে শিখিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোহাম্মদ কিবরিয়া তাঁর ছাপচিত্র মাধ্যমের শিল্পকর্মের জন্য ১৯৬০ সালে জাপানের টোকিওতে ‘স্টারলেম অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। বাংলাদেশের শিল্পকলার সমৃদ্ধ এ মাধ্যমের চর্চায় মনোযোগী নয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পীরা এ মেলায় তাঁদের কাজ প্রদর্শন ও বিপণনের ব্যবস্থা রেখেছেন।
ছাপচিত্রচর্চার শুরুর পর্বে কাঠখোদাই চিত্রের আধিক্য থাকলেও ক্রমে মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক শিট, অফসেট প্রিন্টে ব্যবহূত প্লেট এবং কোলাজ। লিথোগ্রাফচর্চায় শিল্পীরা আগ্রহী হলেও মাধ্যমের অপ্রতুলতার জন্য লিথো প্রিন্ট আমরা খুব বেশি পাই না। ছাপচিত্রের নিজস্ব একটি ভাষা আছে, যা দৃশ্যশিল্পের অন্য মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। রেখা, বুনট বা টেক্সচার, চিত্রতলে রঙের পরিমিত ব্যবহারও ছাপচিত্র শিল্পকর্মের ব্যতিক্রমী দিক। ভারতবর্ষে একসময় সমাজের নানা অসংগতি, প্রতিবাদী বিষয়ের প্রকাশমাধ্যম হয়ে উঠেছিল ছাপচিত্র। সে সময়ে ছাপাখানা বা মুদ্রণযন্ত্রের অপ্রতুলতাও এর একটি কারণ ছিল।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬) কালি তুলির পাশাপাশি দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী বিষয়কে ছাপচিত্রে প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ছাপচিত্রের দুই অগ্রজ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া, সফিউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে পরবর্তীকালে ছাপচিত্র রচনা করেছেন মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ শিল্পী। গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে চর্চায় রত নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের মনোযোগে ছাপচিত্র শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করেছে। ঢাকা আর্ট সেন্টারের এই মেলাটি তাই দর্শক, শিল্পসংগ্রাহক, শিল্পানুরাগীদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। মেলা শেষ হবে ৫ জানুয়ারি। ছাপচিত্র মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—ছাপচিত্র বিভাগ, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ছাপচিত্র বিভাগ, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; ছাপচিত্র গ্রুপ, চারুকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন, চারুকলা ইনস্টিটিউট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; ছাপচিত্র স্টুডিও, চারুকলা বিভাগ ইউডা; সফিউদ্দিন বেঙ্গল স্টুডিও; আতেলিয়ার ’৭১; বর্নিকা প্রিন্টমেকার্স অ্যাসোসিয়েশন; কিবরিয়া প্রিন্ট মেকিং স্টুডিও; ঢাকা আর্ট সেন্টার।
ছাপচিত্র শিল্পের একটি শ্রমসাধ্য প্রকাশমাধ্যম। কৌশলগত কারণে ছাপচিত্র মাধ্যমে করা শিল্পকর্মের অনেক প্রিন্ট সহজেই করা সম্ভব, তাই একটি মৌলিক শিল্পকর্মের হুবহু ছাপচিত্র সহজেই পেতে পারেন দর্শক। দর্শকদের নাগালের মধ্যে ছাপচিত্র এনে দেওয়ার লক্ষ্যে এই মেলা প্রথম শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। এবার দ্বিতীয় আয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছাপচিত্রশিল্পের মেলার আয়োজন হয়, ফলে শিল্পের এ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন অনেকে, গড়ে তুলতে পারেন কাঙ্ক্ষিত শিল্পকর্ম। ঢাকা আর্ট সেন্টারের ট্রাস্টি শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান এ আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রাফিক বা ছাপচিত্র তৈরির মাধ্যম, কৌশল, সর্বোপরি শিল্পের এ মাধ্যমকে জনপ্রিয় করার জন্যই এমন উদ্যোগ।’
পঞ্চাশের দশকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ দেশে শিল্পচর্চা শুরু হওয়ার সময় থেকেই ছাপচিত্রে কাজ শুরু করেন শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদ (১৯২২-২০১২)। তাঁর কলকাতার শিক্ষাজীবন (১৯৪৪-৪৬) পর্বে ছাপচিত্র মাধ্যমে মুকুল দে, রমেন চক্রবর্তীসহ ভারতবর্ষের নামী শিল্পীদের কাছ থেকে দীক্ষা নেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র ভারতবর্ষে শিল্পগুরু সফিউদ্দিন আহমেদের নাম ছাপচিত্রের ক্ষেত্রে অনিবার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ছাপচিত্রের নানা মাধ্যম ও পদ্ধতি—কাঠখোদাই, ড্রাই পয়েন্ট, এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট, কপার এনগ্রেডিং-এর চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সফিউদ্দিন আহমেদ।
ছাপচিত্রচর্চার নিরীক্ষায় অগ্রজ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। তাঁর লিথোগ্রাফ চিত্রকলায় তিনি রেখা ও বুনটের ব্যবহারের মাধ্যমে ছাপচিত্র মাধ্যমের সবচেয়ে কঠিন মাধ্যমকে সহজ করে শিখিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোহাম্মদ কিবরিয়া তাঁর ছাপচিত্র মাধ্যমের শিল্পকর্মের জন্য ১৯৬০ সালে জাপানের টোকিওতে ‘স্টারলেম অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। বাংলাদেশের শিল্পকলার সমৃদ্ধ এ মাধ্যমের চর্চায় মনোযোগী নয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্পীরা এ মেলায় তাঁদের কাজ প্রদর্শন ও বিপণনের ব্যবস্থা রেখেছেন।
ছাপচিত্রচর্চার শুরুর পর্বে কাঠখোদাই চিত্রের আধিক্য থাকলেও ক্রমে মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক শিট, অফসেট প্রিন্টে ব্যবহূত প্লেট এবং কোলাজ। লিথোগ্রাফচর্চায় শিল্পীরা আগ্রহী হলেও মাধ্যমের অপ্রতুলতার জন্য লিথো প্রিন্ট আমরা খুব বেশি পাই না। ছাপচিত্রের নিজস্ব একটি ভাষা আছে, যা দৃশ্যশিল্পের অন্য মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। রেখা, বুনট বা টেক্সচার, চিত্রতলে রঙের পরিমিত ব্যবহারও ছাপচিত্র শিল্পকর্মের ব্যতিক্রমী দিক। ভারতবর্ষে একসময় সমাজের নানা অসংগতি, প্রতিবাদী বিষয়ের প্রকাশমাধ্যম হয়ে উঠেছিল ছাপচিত্র। সে সময়ে ছাপাখানা বা মুদ্রণযন্ত্রের অপ্রতুলতাও এর একটি কারণ ছিল।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬) কালি তুলির পাশাপাশি দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী বিষয়কে ছাপচিত্রে প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ছাপচিত্রের দুই অগ্রজ শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া, সফিউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে পরবর্তীকালে ছাপচিত্র রচনা করেছেন মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ শিল্পী। গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে চর্চায় রত নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের মনোযোগে ছাপচিত্র শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করেছে। ঢাকা আর্ট সেন্টারের এই মেলাটি তাই দর্শক, শিল্পসংগ্রাহক, শিল্পানুরাগীদের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। মেলা শেষ হবে ৫ জানুয়ারি। ছাপচিত্র মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—ছাপচিত্র বিভাগ, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ছাপচিত্র বিভাগ, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; ছাপচিত্র গ্রুপ, চারুকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন, চারুকলা ইনস্টিটিউট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়; ছাপচিত্র স্টুডিও, চারুকলা বিভাগ ইউডা; সফিউদ্দিন বেঙ্গল স্টুডিও; আতেলিয়ার ’৭১; বর্নিকা প্রিন্টমেকার্স অ্যাসোসিয়েশন; কিবরিয়া প্রিন্ট মেকিং স্টুডিও; ঢাকা আর্ট সেন্টার।
No comments