কয়েকটি দাবির ক্ষেত্রে আব্দুল কাদের নিজস্ব অভিমত দেন by এস এম ফরহাদ
ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে গেলে ১৯ জুলাই দাবিগুলোকে পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিবগাতুল্লাহ ভাই ও কেন্দ্রের অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক ভাইসহ আমরা মিলিত হই। এখানে দায়িত্বশীল ভাইয়েরা পরামর্শ দেন যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এখনই সরকার পতনের ডাক দিলে তা প্ল্যাটফর্মটিকে বিতর্কিত করবে এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেরকসহ সকল নেতৃবৃন্দের ওপর অসহনীয় চাপ, জুলুম ও নির্যাতন নেমে আসতে পারে। আব্দুল কাদেরের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপচারিতায়ও অনেকটাই সেরকম পর্যালোচনা হয়। তাই আমরা কৌশলী ভূমিকা হিসেবে উল্লেখ করি ‘ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনাকে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে’। দাবিটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যেটি মেনে নিলে শেখ হাসিনার সরকারে থাকার নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়ে যায়। উল্লেখ্য, তারও কয়েকদিন আগে থেকেই সভাপতি সাদিক ভাই সাবেক দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বিভিন্ন দফা নির্ধারণ করেন ও ইন্টারনেট শাটডাউনের আগেই আসিফ-নাহিদ ভাইকে তার বেশ কয়েকটি দফা পাঠিয়ে নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা-পরামর্শ করতে বলেন। এর আগের কর্মসূচির ক্ষেত্রেও নিয়মিত তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হতো, কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই বাকি সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হয়। এদিকে, ৯ দফা প্রস্তুত শেষে আব্দুল কাদেরকে ফোন দিয়ে জানালে সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জ্ঞাপন করে। তবে, কয়েকটা দাবির ক্ষেত্রে আব্দুল কাদেরের নিজস্ব অভিমত থাকে যা আমরা আবারো আলোচনা করে চূড়ান্ত করি। আব্দুল কাদেরকে নতুন একটা নম্বর নিতে বলা হয়, যেখানে সাংবাদিকরা ফোন দিয়ে নিশ্চিত হবে ৯ দফা সম্পর্কে। সে অনুযায়ী সাংবাদিকরা নিশ্চিত হন।
কীভাবে আব্দুল কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্বার সাহসিকতার সঙ্গে ৯ দফা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, আমাদের টিম কোন উপায়ে কতটা কৌশল ও ঝুঁকির সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের হাউজে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিল, কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে কীভাবে সারা দেশে কঠিন সময়ে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল, ঠিক কীভাবে নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকা অবস্থায় বিকল্প নেটওয়ার্ক মেইনটেইন করে স্থানীয় শাখাগুলোর ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলমান ছিল এবং নিয়মিত কর্মসূচিগুলো কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল- ঘটনার পেছনের বিস্তৃত ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা অন্য কোনো সময়ে লিখবো, ইনশাআল্লাহ।
আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের অংশ হতে পেরেছিলাম ও আমাদের দেয়া ৯ দফা সাদরে গ্রহণ করে জনগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে সেসময় দাঁড়িয়ে যায় বুলেটের সামনে। আমরা সেই শ্রমজীবী, পেশাজীবী, প্রবাসী, আলেম সমাজের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি; যারা দেশের স্বার্থে ৯ দফার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। বলতে চাই, ৯ দফার কৃতিত্ব একক কোনো ব্যক্তি বা প্ল্যাটফর্মের নয়। এর কৃতিত্ব সেই শিশুটির যে বারান্দায় খেলতে গিয়ে শহীদ হয়েছে, যারা অকুতোভয় সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে গেছে ময়দানে। যাদের জন্য ‘৯ দফা’ হয়েছে ‘ফ্যাসি মুক্তির ৯ দফা’; রূপান্তরিত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত ‘১ দফা’।
আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে ওই সকল শহীদ ও আহত ভাইদের প্রতি বিনম্র সালাম জ্ঞাপন করছি মূলত যারা এই আন্দোলনের স্পিরিট নিয়ে মাঠে লড়াই করে গেছেন। একইসঙ্গে সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাদের জন্য শাহাদতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।
লেখক: সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments