পুলিশের গুলিতে নিহত ৪

চারদলীয় জোটের পূর্বঘোষিত গণমিছিলে সরকারি দল আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশ বাধা দেয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বিএনপির চার নেতাকর্মী। সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হয়েছে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে। নিহত চারজনের দু’জন চাঁদপুর ও দু’জন লক্ষ্মীপুর জেলার।

এসব সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ ব্যক্তি। আহতদের মধ্যে সাংবাদিক ও পুলিশও রয়েছেন। সংঘর্ষের এসব ঘটনায় প্রায় ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স'ানে বিএনপিসহ বিরোধী দলের অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরে পুলিশের সাথে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে বিএনপি ও ছাত্রদলের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। তারা হচ্ছেন সদরের বাবুরহাট এলাকার বাসিন্দা বিএনপি কর্মী আবুল হোসেন মৃধা (৬৫) ও গুয়াখোলা এলাকার বাসিন্দা ছাত্রদল কর্মী লিমন (২৫)। এ ছাড়া পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত বিএনপি কর্মী মাহফুজ (২৫), ইব্রাহিম (৩০) ও এনামকে (২৫) সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চাঁদপুর সদর হাসপাতালে আরো ২৫ জন বিএনপি কর্মী বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১টা পর্যন- শহরের বিভিন্ন স'ানে দফায় দফায় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। বেলা ১টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল বের করে। পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে বিএনপি কর্মীরা পিছু হটে। এ সময় জেলা বিএনপি কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় হামলা করে ছাত্রলীগ কর্র্মীরা। শহরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনো থমথমে পরিসি'তি বিরাজ করছে। গতকাল বিকেল ৪টায় জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদকের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলন থেকে আজ সোমবার অর্ধ দিবস হরতাল ও চাঁদপুর থানার ওসি মো: জাকির হোসাইনকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ১০টায় শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে গণমিছিল কর্মসূচি ছিল জেলা বিএনপির। ওই গণমিছিলে শহরের বিভিন্ন স'ান থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করতে মিছিল নিয়ে আসছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বিএনপি কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ বিএনপি কর্মীদের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা ও অপ্রয়োজনে গুলি বর্ষণ করে।
পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি কর্মীদের হামলা থেকে জীবনরক্ষায় পুলিশ বাধ্য হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে গুলি করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির আজম জানান, সংঘর্ষে তাদের ২৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে আহত একজনকে পুলিশ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে ২ জন নিহত
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে চারদলীয় জোটের গণমিছিলে পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও সাংবাদিক-পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা শহরের দক্ষিণ তেমুহানী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হতে থাকেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে নেতাকর্মীদের সাথে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। তখন পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ও লাঠিচার্জ শুরু করলে মিছিলকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। সংঘর্ষে সাংবাদিক ও পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হন। গুলিবিদ্ধ যুবদল কর্মী রুবেলকে (২৫) সদর হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। ঘটনায় সদর থানার ওসিসহ পুলিশের ৩০ সদস্য আহত হন। আহতরা হচ্ছেন- সদর থানার ওসি গোলাম সরোয়ার, ওসি (তদন-) লিটন দেওয়ান, এসআই কবির হোসেন, এনামুল কামাল, আবুল বাসার ও শাহজাহান। সাংবাদিকদের মধ্যে ইনডিপেনডেন্ট টিভি ও মানবজমিন প্রতিনিধি আব্বাছ হোসেন, মাছরাঙ্গা ও যায়যায়দিন প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম স্বপন, স'ানীয় উপকূল প্রতিদিন এর সাংবাদিক এস এম বেলাল, বিএনপি নেতা আবুল কাশেম (৬০), জিল্লুর মিয়া (৪০), আবু মিয়াসহ ৩৫ জন আহত হন বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেন। জামায়াত নেতাদের দাবি- তাদের সাত কর্মী গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হন। জামায়াতের গুলিবিদ্ধরা হলেন- সদর উপজেলা পশ্চিমের সেক্রেটারি মমিন উল্যা ইয়াসিন, ইব্রাহিম, নুরুল আমিন, খোরশেদ,খোকন ও নাসিম। তাদের মধ্যে আবুল কাশেম, ইয়াসিন ও ইব্রাহিমকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত বাকিদের লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহত রুবেল সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি। তিনি পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের হোসেন আহম্মদ বাহারের ছেলে। অপর দিকে বিকেল ৫টায় জানা গেছে, আহত আবুল কাশেম নোয়াখালী থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। তিনি সদর উপজেলা ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনাসা গ্রামের বাসিন্দা। নিহত রুবেলের লাশ ময়নাতদনে-র পর পরিবারের কাছে হস-ান-র করা হয়েছে।
যুবদল কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু। কর্মসূচিতে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ ও মিলাদ মাহফিল। তিনি বিনা উসকানিতে পুলিশের এ বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা এবং বিচার বিভাগীয় তদনে-র দাবি জানান। অপর দিকে পুলিশ সুপার মো: জমশের আলী জানান, আমার পুলিশ বাহিনীর ওপর বিএনপি-জামায়াত অতর্কিত হামলা চালিয়ে সদর থানার ওসি গোলাম সরোয়ার ও এসআই আবুল কাশেম, মো: শাহজাহান, এনামুল হকসহ ৩০ জন পুলিশকে পিটিয়ে আহত করে। এই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন- কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন- রিপোর্ট জমা দেবে। তারপর আইনগত ব্যবস'া নেয়া হবে। অপর দিকে জামায়াতের শহর সভাপতি ফারুক হোসাইন নুরনবী জানান, আমাদের শানি-পূর্ণ মিছিলে পুলিশি হামলা ও গুলি চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হতাহত করা হয়েছে। তিনি এ হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পুলিশ ঘটনাস'ল থেকে পাঁচজনকে আটক করলেও তাদের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
অপর দিকে এ ঘটনায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন- অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি।
ময়মনসিংহে আহত শতাধিক, গুলিবর্ষণ
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী যৌথভাবে গতকাল বিএনপির জেলা কার্যালয় থেকে গণমিছিল বের করলে নতুনবাজার ট্রাফিক মোড়ে পুলিশ বাধার সৃষ্টি করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি দোকানপাট ও টেম্পো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এবং পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টিয়ার শেলের ঝাঁজ থেকে রক্ষা পেতে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় কাঠখড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর এসআই মাজেদের নেতৃত্বে পুলিশ বিএনপি অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করে। একজন এপিবিএন পুলিশকে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কর্মীদের গুলি করতে দেখা যায়। পরে বিএনপি অফিসের ভেতর থেকে গুলিবিদ্ধ চারজনকে পুলিশ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি জানান, ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে বিকেলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নতুনবাজার বিএনপির জেলা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে চার দলের জেলা সমন্বয়ক সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সমপাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন ও সেক্রেটারি আব্দুল করিমের নেতৃত্বে গণমিছিল বের করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। পুলিশের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ধাওয়া ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জামালপুরে আহত ৪৫
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের গণমিছিলে পুলিশি বাধা, লাঠিচার্জ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশসহ অন-ত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন- এসআই মোখলেছুর রহমান, আর্মড এসআই আউয়াল, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ মিয়া, ছাত্রদল কর্মী মাসুদ, শফিক, মাসুম, দেলু, জেলা মাহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা আক্তার জাহান মণি, মহিলা দল কর্মী লাভলী, শ্যামা, সুবর্ণা, সালমা, শাহীনা, হাওয়া, রুবী ও মিনা।
গতকাল সকাল থেকেই গণমিছিল ও সমাবেশ সফল করতে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে চারদলীয় জোট নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বৈশাখী মেলা মাঠে উপসি'ত হন। জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদারের সভাপতিত্বে মিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক এমপি মোস-াফিজুর রহমান বাবুল ও সুলতান মাহমুদ বাবু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো: ওয়ারেছ আলী মামুন, জেলা জামায়াতের আমির আ ফ ম নুরুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে নেতৃবৃন্দ শহরের প্রধান সড়কে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ধস-াধসি- ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মুহূর্তেই শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ-নেতাকর্মীদের ধস-াধসি-, পুলিশের লাঠিচার্জ ও ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশসহ অন-ত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম জানান, শহরের বৈশাখী মেলা মাঠে সমাবেশ শেষে পূর্বঘোষিত বিএনপির গণমিছিল প্রধান সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিল বের হতে চাইলে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ধস-াধসি- হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন-ত ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
সদর থানার অফিসার ইন-চার্জ মজিবুর রহমান মজুমদার জানান, ওই ঘটনায় এসআই মোখলেছুর রহমান আহত হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জে শতাধিক আহত
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জে বিএনপির গণমিছিল চলাকালে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায় সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পলিশ বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রথখোলা মাঠে সমাবেশ শেষে গণমিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। সমাবেশে বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল আসার সময় ঈশা খাঁ রোডে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মারমুখী হয়ে পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশও ব্যাপক লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও পথচারীসহ শতাধিক আহত হন। আহত ১১ জন পুলিশ সদস্যকে কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সংঘর্ষ চলাকালে ব্যবসায়ীরা ভয় ও আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পথচারীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে বেশ কয়েকজনকে আহত করে। পরিচয় দেয়ার পরও স'ানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিককে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে সাংবাদিক উজ্জ্বলের মাথা ফেটে রক্তাক্ত হন। এ ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। পুলিশ শহরের বিভিন্ন স'ান থেকে বিএনপির ১২ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তারা হলেন- মো: আমিরুজ্জামান, ইব্রাহিম মোল্লা, শফিকুল ইসলাম মবিন, হাবিবুর রহমান, জামান, শরীফ উদ্দিন, সাদ্দাম হোসেন, রফিক খান, তাজবির, নয়ন, সোহেল ও শহীদ মেম্বার।
শহরের বিভিন্ন স'ানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে।
টাঙ্গাইলে আহত ২০
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বিএনপির গণমিছিলে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের হামলায় ২০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকালে গণমিছিলকে সফল করতে বিভিন্ন স'ান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে শহরের পৌর উদ্যানে সমবেত হতে থাকে। বিভিন্ন স'ানে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপসি'তিতে মিছিলের ওপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে বিএনপির অভিযোগ।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির একটি মিছিল পৌর উদ্যানের দিকে আসার সময় শহরের নিরালা মোড়ে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। হামলায় দেলদুয়ার বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ চান খাঁ, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌস, নাগরপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক গুরুতর আহত হন। হামলায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় উভয় দলের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে। শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটে যায়। পুলিশ পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়।
পরে পৌর উদ্যান থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকসহ সাবেক সাত এমপির নেতৃত্বে বিএনপির কয়েক হাজার লোকের বিরাট গণমিছিল বের হলে পুলিশ বাধার সৃষ্টি করে মিছিলের গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিরালা মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে অবস'ান নেয়। পরে বিএনপির মিছিলটি পুরনো বাসস্ট্যান্ড ঘুরে নিরালার মোড়ে আসতে চাইলে পুলিশ সেখানে আবার বাধা দেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই মিছিলে আরেক দফা হামলা চালায়।
জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম তোফা বিএনপির শান্তিপূর্ণ এই মিছিলে বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা দাবি করেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে গণমিছিলে আসার সময় বিভিন্ন স'ানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
ফরিদপুরে লাঠিচার্জ
ফরিদপুর অফিস জানায়, ফরিদপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১১টার দিকে চারদলীয় জোট মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে পথচারীসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশি লাঠিচার্জের পর নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ তাদের খুঁজতে বিভিন্ন স'ানে তল্লাশি চালায়। তবে কাউকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা, সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুল ইসলাম লিটন, যুগ্ম সম্পাদক এম এ কাশেম, দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলা, জেলা যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেন খান পলাশ, সাধারণ সম্পাদক এ কে কিবরিয়া স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে গণমিছিল শুরু করেন। মিছিলটি কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। এ সময় পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করলে পুলিশ অতর্কিত তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে পথচারীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পরে পুলিশ মিছিলকারীদের খুঁজতে আশপাশ মার্কেট ভবনগুলোয় তল্লাশি চালায়। বিএনপি নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে পুলিশের অতর্কিত লাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
মাদারীপুরে মহিলাসহ আহত ১৫
মাদারীপুর সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের অতর্কিত লঠিচার্জে মহিলা নেতাকর্মীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গণমিছিলের আগে কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সুমন হোটেল এলাকায় এসে জড়ো হন। এখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামিনুর হোসেন মিঠু, রাজৈর বিএনপির সভাপতি শামছুল হক হাওলাদার, কালকিনি সভাপতি ফজলুল হক বেপারী, শিবচর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে গণমিছিল বের হলে নতুন শহর কালীবাড়ী এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে আবার খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হলে পুলিশ তাতেও বাধা দেয়।
মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পূর্ব নির্ধারিত শান্তিপূর্ণ গণমিছিল চলাকালে পুলিশ মিছিলের পেছন থেকে এসে অতর্কিতভাবে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লাঠিচার্জে মহিলা কর্মীসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস'ায় নাছিমা বেগম, কামাল হোসেন, রাজীব ও আল আমিনকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এ দিকে বিকেলে জেলা বিএনপি সভাপতি আবুবক্কর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অপর একটি গণমিছিল পুরানবাজার রেইন্ট্রিতলা থেকে বের হয়। এতেও পুলিশ বাধা দেয়।
মাদারীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে মাত্র। এ ব্যাপারে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি’।
পটুয়াখালীতে আহত ১২
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীতে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে গণমিছিল সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের শেরেবাংলা সড়কে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বাসভবন সুরাইয়া ভিলা চত্বর থেকে গণমিছিল বের হলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমানসহ ১২ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
গণমিছিলে যোগ দিতে সকাল থেকে শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের শেরেবাংলা সড়কে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বাসভবন সুরাইয়া ভিলা চত্বরে জমায়েত হতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সেখানে জমায়েত হন। পৌনে ১১টার দিকে গণমিছিল বের হলে শুরু হয় পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলতে থাকে এ অবস'া।
বরগুনায় আহত অর্ধশত
রগুনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় বিএনপি- জামায়াতের গণমিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ, এ বাধায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১৫ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও পিকেটারদের ইটপাটকেলে শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ শেষে পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের পূর্বনির্ধারিত গণমিছিল কর্মসূচি উপলক্ষে গতকাল সকালে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী শহরের বিভিন্ন স'ানে জড়ো হন। সকাল ১০টায় মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের দিকে আগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ মারমুখী হলে পিকেটাররাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। এ সময় শহরের টাউন হল বাসস্ট্যান্ড, মাছবাজার, পৌরমার্কেট ও লঞ্চঘাট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ ছাড়াও পুলিশ বেধড়ক লাঠি চার্জ করে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটের আঘাতে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। বিক্ষোভকারীদের ইটপাটকেলে ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন ফকির জানান, বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চারজন অফিসার রয়েছে। আহত পুলিশ সদস্য ও পিকেটারদের চিকিৎসা দিতে স'ানীয় হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে পুলিশ বিএনপির ২০ কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
এ দিকে বেলা ১টায় ছাত্রলীগ বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। একপর্যায়ে তারা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস'া বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুরে মেয়রসহ ৪০ জন আহত
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলিবর্ষণ ও গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চারদলীয় জোটের গণমিছিল সফল হয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জে দিনাজপুর পৌর মেয়র, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফটো সাংবাদিকসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি মোতাবেক সকাল ১০টায় শহরের বিভিন্ন প্রান- থেকে বিএনপি, জামায়াত ও জাগপাসহ চারদলীয় জোটের কর্মীরা ব্যানারসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে জমায়েত হতে থাকেন। খণ্ড মিছিলগুলো ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে যাওয়ার সময় পুলিশ হাসপাতাল মোড়, মডার্ন মোড় ও লিলিমোড়ে লাঠি চার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট থেকে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু, জেলা জামায়াত আমির মো: আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা জাগপা সভাপতি তৈয়বউদ্দীন চৌধুরী মুন্নাসহ জোট নেতৃবৃন্দ সহস্রাধিক জনতাকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল শুরু করে। গণমিছিলটি লিলিমোড় এসে পৌঁছলে পুলিশ গণমিছিলে লাঠিচার্জ, ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গোটা শহরে ভীতিকর পরিসি'তি সৃষ্টি হয়। পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপে দিনাজপুর পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহাবুব হোসেন, জেলা সাধারণ সম্পাদক মুকুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামান উজ্জ্বল, দিনাজপুর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নুর ইসলাম ও সাংবাদিক মো: মিজানসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস'ল থেকে দিনাজপুর জেলা জাগপার সাধারণ সম্পাদক শাহ্‌জাহান খোকনসহ ১২ জনকে আটক করেছে।
কুড়িগ্রামে আহত অর্ধশত
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, বিএনপির মিছিলকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশের সাথে বিএনপি-নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের সদর থানার ওসি ময়নুলসহ আহত হয়েছে অর্ধশত। বিক্ষুব্ধ নেতকর্মীদের সাথে পুলিশের ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এ সময় বিএনপি কর্মীরা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ বেশ ক’টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিক ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শহরজুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নীলফামারীতে আহত ৭০
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশ, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে উভয় দলের ৭০ জনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হন। ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের চার কনস্টেবলসহ তিন কর্মকর্তা এবং দু’জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সামসুজ্জামান জানান, গতকাল দুপুর ১২টায় জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশি বাধা ভেঙে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করার চেষ্টা করলে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। শুরু হয় পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এ সময় এসে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেড় ঘণ্টার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় বিএনপির ৫০ জনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহত হন জেলা বিএনপির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (৬২), শ্রমিক দলের আব্দুর রশিদ (৩৬), যুবদলের আতাউর রহমান, ছাত্রদলের মেহেদী হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিঠু, বিএনপি কর্মী রাজু, সহিদুল ইসলাম, ন্যাপের রেজাউল ইসলাম, মেহবুলসহ ৫০ জন। ভেঙে দেয়া হয় জেলা বিএনপির কার্যালয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক জানান, জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ফেললে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপির গণমিছিলে যোগ দিতে আসা লোকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় গুরুতর আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের আরিফ হোসেন মুনসহ কমপক্ষে ২০ জন নেতাকর্মী।
নীলফামারী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ জেড এম আসাদুজ্জামান জানান, পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন রাউন্ড টিয়ার শেল ও ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হয়। ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের সদর সার্কেল এএসপি সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এসআই মেহেদী রাসেল, এএসআই আবু হানিফসহ সাত কনস্টেবল আহত হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সময় টিভির সাংবাদিক কনক ওয়াজেদ ও বাংলাবাজার পত্রিকার মোজাহিদ বিন খয়রাত আহত হয়েছেন। আহতদের স'ানীয় ক্লিনিক ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ চার বিএনপি কর্মীকে আটক করে।
নাটোরে শতাধিক আহত
নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোরে বিএনপি ও জামায়াতের পৃথক গণমিছিলে দফায় দফায় যুবলীগ ও পুলিশের বাধা ও হামলায় কমপক্ষে শতাধিক আহত এবং চার জামায়াত কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। আহতদের মধ্যে জামায়াতের চারজন বাকিরা বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক দাবি করেছেন, তাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সরকারি দল ও পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে কয়েক হাজার লোক নিয়ে বিএনপি মিছিল সমাবেশ করে, জামায়াত শেষ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত মিছিল করতে পারলেও সমাবেশ করতে পারেনি।
বেলা ১১টায় শহরের স্টেশনবাজার এলাকা থেকে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নেতৃত্বে বিশাল গণমিছিল দলের অস'ায়ী জেলা কার্যালয়ের সামনে এলে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক ও নাটোর জেলা সভাপতি সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, গণমিছিলে বাধা দেয়ার মাধ্যমে সরকার তার পুরনো বাকশালী কায়দায় ফিরে গেছেন। সকাল থেকেই নাটোরের বিভিন্ন গুরুতপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি যুব ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস'ান নেয়। গণমিছিলের প্রতিবাদে শহরের ছায়াবাণী মোড়ে অর্ধশতাধিক দলীয়কর্মী নিয়ে যুবলীগ দুপুর পর্যন- সমাবেশ করে।
সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের মাদরাসা মোড়ে জনতা ব্যাংকের সামনে জামায়াত নেতাকর্মীরা সমবেত হলে সেখানে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। জেলা আমির অধ্যাপক ইউনুস আলী ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনকে এ সময় হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে এসে দলের পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। মিছিল শেষে পুলিশ জামায়াত কর্মী দাখিল উদ্দিন, রবিউল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম ও জালাল উদ্দিনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর প্রচেষ্টার অভিযোগে মামলা দেয়।
এ দিকে বিএনপি ও জামায়াতের মিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ইসলামিক টিভির নাটোর প্রতিনিধি সালমান সাদিক তমাল। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে ক্যামেরা ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ প্রথমে তাকে ও পরে ক্যামেরা উদ্ধার করলেও তার মানিব্যাগ উদ্ধার করতে পারেনি। দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতার ও শাসি- দাবি করেছেন নাটোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ বি এম মোস-ফা খোকন ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজাসহ ক্লাবের সব সদস্য।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জামায়াত নেতাসহ আহত ১০
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সাথে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে শহরে টিএ রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় টিএ রোডের দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল আধঘণ্টা বন্ধ থাকে। বেলা সাড়ে ১১টায় টিএ রোড দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি বিক্ষোভ মিছিল অতিক্রম করার সময় পুলিশ মিছিলে বাধা দেয় এবং ব্যাপক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন তাদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর সংঘর্ষ হয়। রেলগেট এলাকায় অবস'ানকারী জোট নেতাকর্মীদের সাথেও তখন পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইয়াকুবসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। পুলিশ আট রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে মিছিলকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় টিএ রোড এলাকায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যানবাহন ও দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। এর আধঘণ্টা পর চারদলীয় জোটের একটি বিশাল মিছিল কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল খালেকের নেতৃত্বে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে রেলগেট এলাকায় এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সহসভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ।
বান্দরবানে আহত ২৫
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরের পূরবী আবাসিক বোডিং এলাকায় মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কথাকাটাকাটি নিয়ে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলে উভয় পক্ষে। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের কোর্ট বিল্ডিং, মাদরাসা শপিং কমপ্লেক্স, ট্রাফিক মোড়, ধোপা পুকুরপাড়, জজ কোর্টসহ বিভিন্ন এলাকায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন কনস্টেবল আহত হন। পরিসি'তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভরত নেতাকর্মীদের ওপর কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পুলিশ আটক করেছে বিএনপির ২৫ জন নেতাকর্মী ও সমর্থককে। শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিসি'তি ঠেকাতে প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেট নামায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ইমতিয়াজ জানান, ইটপাটকেলের আঘাতে ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অন্য দিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মাবুদ জানান, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপির মিছিলে বাধা দেয় এবং নেতাকর্মীদের অটক করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূরবী অবাসিক বোডিং এলাকায় বিএনপি মিছিল বের করতে চাইলে সেখানে মমতাজ নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে পুলিশ আটক করলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। নেতাকর্মীরা পুলিশকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি কয়েকটি দোকানও ভাঙচুর করে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্র্মীরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অংশ নেয়। নেতাকর্মীরা এ সময় জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট কাজী মুহিতুল হোসেনের চেম্বারও ভাঙচুর করে। ঘটনার পর শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। পুলিশ শহরের বিভিন্ন স'ানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ২৫ জন নেতাকর্মী ও সমর্থককে আটক করেছে। ঘটনার সময় আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। এখনো পরিসি'তি থমথমে রয়েছে। শহরে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াত অফিসের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লায় মিছিল ছত্রভঙ্গ
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লায় জেলা বিএনপির পৃথক দু’টি গ্রুপ এবং শরিক দল গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকাল দুপুরে প্রথমে নগরীর কান্দিরপাড়ে সমাবেশ করেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু গ্রুপ। পরে বিকেলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর কান্দিরপাড় দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাদুরতলা সিডিপ্যাথ হসপিটাল এলাকায় এলে পুলিশি বাধায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রোববার বিকেলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের নেতৃত্বে একটি গণমিছিল বের হয়। নগরীর কান্দিরপাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে বিকেল সাড়ে ৫টায় মিছিলটি কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর অতিক্রম করে সিডিপ্যাথ এলাকায় পৌঁছলে ওই মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে মিছিলে লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
পরে নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আবার সমবেত হন। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, জামায়াতের মহানগর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। এ সময় উপসি'ত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, জামায়াত নেতা সানাউল্লাহ মজুমদার, জেলা যুবদল সভাপতি আমিরুজ্জামান আমীর, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, জেলা ছাত্রদল সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রমুখ। এর আগে দুপুরে জেলা বিএনপির অপর গ্রুপ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নেতৃত্বে বিশাল গণমিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপসি'ত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর, জেলা বিএনপি নেতা ফজলুল হক ফজলু, আব্দুর রউফ চৌধুরী ফারুক, ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদুল কবীর সাজ্জাদ, ইউসুফ মোল্লা টিপু ও তারেক হাসান রাসেল প্রমুখ।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় চারদলের শানি-পূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচি বানচাল করতেই সরকার পুলিশকে ব্যবহার করে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে চায়। এ ছাড়া গণমিছিল বানচাল করতে শনিবার রাতভর নগরীতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।
গতকাল নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে চারদলীয় ঐক্যজোট আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বিএনপির মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি। ব্রিফিংটি মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই বিপুল পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ কার্যালয়টি অবরুদ্ধ করে রাখে। এ ছাড়া সমগ্র নগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই দিনভর ছিল পুলিশের সতর্ক প্রহরা। এ দিন বিকেলে বিএনপির পূর্বঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে স'গিত হয়। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক আজ সোমবার বিকেল ৩টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত শেষে নগরীতে গণমিছিল করার সিদ্ধানে-র কথা জানান তিনি।
খুলনায় আজো সভা সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ
এ দিকে খুলনা মহানগরী এলাকায় কেএমপি অধ্যাদেশ-১৮৫ এর ৩০ ধারার ক্ষমতাবলে আজ সোমবার ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন- সব ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সর্ব প্রকার ছড়ি বা লাঠি, বিস্ফোরকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা যাবে না বলে গতকাল রোববার কেএমপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, আজ সোমবার রাজশাহী মহানগরীতে গণমিছিল সফল করতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ব্যাপক প্রস'তি নিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা জানিয়েছেন, গণমিছিলে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ জনতার বিপুল সমাবেশ ঘটনো হবে। গণমিছিল সফল করতে গত কয়েক দিন থেকে থানা-ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লাপর্যায়ে চলে ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রস'তি। গণমিছিলকে ঘিরে বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও অন্যরকম উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গণমিছিলকে ঘিরে নেতাকর্মীরা খুবই উজ্জীবিত।
মহানগর বিএনপির নেতারা জানান, আজ বিকেল ৩টায় লোকনাথ স্কুল চত্বর থেকে আলু পট্টি, রেলগেট-সিঅ্যান্ডবি মোড়সহ নগরীজুড়ে জনতার সমাগম ঘটবে। এ লক্ষ্যে সব প্রস'তি সম্পন্ন হয়েছে।
মহানগর জামায়াতের নেতারা জানান, আজ সোমবার গণমিছিলে জামায়াতের দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ ব্যাপক লোক সমাগম ঘটানো হবে। এ জন্য ব্যাপক প্রস'তি নেয়া হয়েছে।
এ দিকে, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস-ফার নেতৃত্বে বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহী কলেজ থেকে গণমিছিল বের হবে।

No comments

Powered by Blogger.