ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার-বাধাগুলো দূর করতে হবে
সর্বসাম্প্রতিক প্রযুক্তির ব্যবহার কখনও কখনও অপরিহার্য হয়ে উঠলেও ব্যবহারকারীরা পুরনো রীতি আঁকড়েই স্বস্তি পেতে চান। চেনা পথে চলার ঝুঁকি কম, নতুন করে শিখতে হয় না। বাজার থেকে নতুন দ্রব্য কেনার ঝক্কিও পোহাতে হয় না। অবশ্য নতুন প্রযুক্তির সর্বত্রগামিতা কোনো বাধাকেই শেষ পর্যন্ত গ্রাহ্য করতে চায় না।
নতুনের গতি যেমন কথা বলে, তেমনি বাজারও নিজের গরজেই প্রসারিত হয়। উদাহরণ হিসেবে মোবাইল ফোনের উল্লেখ করা যেতে পারে। ল্যান্ডফোন একদা এ দেশে আভিজাত্য, অর্থনৈতিক অবস্থানের পরিচায়ক বলেই গণ্য হতো। ল্যান্ডফোনের গ্রাহক হতে যে ঝক্কি পোহাতে হতো, তাতে এ ফোন যে কখনও সর্বসাধারণের যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারবে_ তা ছিল দূরকল্পনা। অথচ মোবাইল আসার আগে সারা পৃথিবীতে এ ফোনই ছিল আপামর মানুষের যোগাযোগের উপায়। আমাদের দেশে বাজার প্রসারিত হয়নি। বিপুল গণভিত্তি পায়নি ল্যান্ডফোনের ব্যবহার। তাই মোবাইল ফোনের প্রথম আগমনেই ছিটকে পড়েছে ল্যান্ডফোন। শুরুতে মোবাইল ফোন নিয়েও সংশয় ছিল। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোগ, প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে এর যে প্রসার ঘটেছে, তা কৌতূহলোদ্দীপক। বলতে গেলে, এ প্রযুক্তি এখন শ্রেণী নির্বিশেষে প্রসারিত হয়েছে। এই বিপুল প্রসার যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটিয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি এনেছে সত্য। কিন্তু আরও নানা অর্থনৈতিক-ব্যবসায়িক উদ্যোগে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাংকিং থেকে অর্থনৈতিক লেনদেন পর্যন্ত বহু কিছু এর মাধ্যমে নতুন মাত্রা পেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ প্রযুক্তিকে যতটা খোলামন নিয়ে স্বাগত জানান, প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ততটাই পিছিয়ে। অবশ্য বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান দিয়ে এ ক্ষেত্রে অনেকটাই অগ্রসরমানতার পরিচয় দিয়েছে। প্রযুক্তির সুবিধার জন্যই হোক, কি সরকারের স্লোগানের জন্য_ বহু কিছু এখন মোবাইল ও ইন্টারনেটের আওতায় চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন, পাসপোর্টের আবেদন ফর্ম, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফল এখন মোবাইল ও ইন্টারনেটের আওতায়। এখন জোরেশোরে শুরু হয়েছে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। উদ্যোগগুলো ইতিবাচক। কিন্তু এসব উদ্যোগের সফলতার জন্য কিছু প্রশ্ন আবশ্যিকভাবে উত্থাপিত হওয়া উচিত। মোবাইল ফোনের প্রসার সন্তোষজনকভাবে ঘটলেও ইন্টারনেটের প্রসার কিন্তু মোটেও সন্তোষজনক নয়। মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল উদ্যোগগুলোর সফলতা নির্ভর করে মূলত ইন্টারনেটের ওপর। ছোটখাটো কর্মকাণ্ড মোবাইলের সাহায্যে সম্পন্ন হতে পারে। কিন্তু বড় ও বিস্তারিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে ইন্টারনেটের সহায়তা লাগবেই। সেটি করতে হলে কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পেঁৗছাতে হবে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট কেবল বা তারের মাধ্যমেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সারা পৃথিবীতেই মোবাইল, ওয়্যারলেস, ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সেবা আছে। তবে এ সেবা চলতি পথের জন্য। ঘরে বসে বড় কাজ করতে হলে অধিকাংশই দ্রুতগতির কেবল সংযোগের ওপর নির্ভর করেন। আমাদের দেশে কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবার অবস্থা করুণ। এ ক্ষেত্রে বিটিসিএল বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে পারত। কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে তারা বাজার নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারত। কিন্তু এ সেবার ক্ষেত্রেও তাদের মনোভাব পুরনো টিঅ্যান্ডটি আমলের ল্যান্ডফোনের মতোই। বাজারে আউটলেট নেই। গ্রাহকরা চাইলেই খুঁজে পান না তাদের প্রতিনিধিদের। পাশাপাশি, সেবার আওতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা থাকলেও সফল উদ্যোগ নেই। অথচ দেশের ডিজিটালাইজেশনের জন্য এটি জরুরি। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করার ক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে। কেননা, সেখানে ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য নয়। এমনিভাবে বহু কিছুতেই পিছিয়ে পড়ছে জনগণের বড় অংশ। শ্লথগতির ইন্টারনেট সেবার কারণে এ মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারছে না। সংযোগমূল্য বেশি হওয়ায় এর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠী। তাই দ্রুত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। এ সরকারের আমলে বেশ কিছু আশাপ্রদ উদ্যোগ এসেছে। নতুন প্রযুক্তি সুবিধা সর্বব্যাপ্ত করতে আরও উদ্যোগ দরকার। আর এ ক্ষেত্রে বাধাগুলো দূর করতে সঠিক কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে এগোতে হবে।
No comments