ঝাউবন উজাড়-সমুদ্রসৈকত না মগের মুল্লুক?
ষোল-সতের শতকে মগ জলদস্যুদের উপদ্রবে কক্সবাজার এলাকার জানমাল যেভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল, তার সঙ্গে ইনানী সৈকতের ঝাউবন উজাড়িকরণের তুলনা অত্যুক্তি নয় কি? জনসমাগমস্থল থেকে তিন দিনে কমবেশি দুই হাজার ঝাউগাছ দল বেঁধে কেটে নেওয়ার ঘটনা আমাদের কার্যত মগের মুল্লুকের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
এই বিপুলসংখ্যক বৃক্ষ নিধন বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের অগোচরে ঘটেছে বিশ্বাস করা কঠিন। দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে গাছপ্রতি টাকা নিয়ে বন বিভাগ এই সুযোগ করে দিয়েছে বলে স্থানীয়রা সমকালের কাছে যে অভিযোগ করেছে, তা উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, ঝাউবন উজাড় করার অপকর্ম কয়েক মাস ধরেই চলছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে স্থানীয়রা বলছেন। এটা খালি চোখেও দৃশ্যমান যে, ২০০১ সালে রোপণ করা দুই লাখ গাছের ঝাউবনটির অর্ধেকই অসুরের ভোগে চলে গেছে। প্রজাতন্ত্রের সম্পদ এভাবে দুর্বৃত্তের মৌরসি-পাট্টায় পরিণত হতে দেওয়া যায় না। সমুদ্রসৈকতের মতো স্পর্শকাতর এলাকার বৃক্ষ নিধনকে আর দশটা অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করারও অবকাশ নেই। ঝাউবন হচ্ছে সৈকতের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। বিশ্বের দীর্ঘতম এই বেলাভূমির প্রাকৃতিক ঝাউবন ইতিমধ্যেই আমরা খুইয়েছি। এখন যদি কৃত্রিমটিও হারিয়ে যায় খোদ সৈকত রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই জোয়ার-ভাটায় এর উল্লেখযোগ্য অংশ ক্ষয়ে গেছে। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষের লোভের কাছে সামষ্টিক অস্তিত্বের প্রশ্ন এভাবে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। আমরা চাই অবিলম্বে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কারা এর পেছনে রয়েছে, প্রশাসন আন্তরিক হলে তা বের করা কঠিন নয়। সমকালের প্রতিবেদনেও প্রভাবশালী কয়েকজনের নাম ছাপা হয়েছে। একই সঙ্গে ঝাউবন সুরক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে নতুন নতুন বন সৃজনের ব্যাপারেও। তাতে করে যেমন সৈকত, তেমনি বৃহত্তর অর্থে প্রকৃতি ও পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।
No comments