হাইব্রিড বীজের সংকট by কৃষিবিদ শহীদুর ইসলাম
গত ২৪ এপ্রিল সমকালের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম ছিল 'বীজ নিয়ে প্রতারণা : দিশেহারা কৃষক'। এ হাইব্রিডের ঝলকানি আর কৃষকের চোখের পানি আজকের নতুন নয়। শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে আলোক-৬২০১ হাইব্রিড ধান প্রবর্তনের মাধ্যমে।
তখন ব্যাপক প্রচার চালানো হলেও আজ এটি প্রমাণিত, প্রথম হাইব্রিড জাত আলোক-৬২০১ ধানের উচ্চ ফলনের দাবি ছিল নিতান্তই চটকদার। বহু কৃষক আলোক-৬২০১ ব্যবহার করে প্রতারিত হয়েছেন, সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
হাইব্রিড নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কটি হলো, উফশী জাতের মতো বাংলাদেশের মাটি, পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমের ওপর এর প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই এ বীজ সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করে এনে চাষের জন্য কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। হাইব্রিড নিয়ে অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কটি রয়েছে তা হলো, হাইব্রিড বীজ কৃষক নিজে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারেন না। কারণ প্রতিবার মাতৃজাত ও পিতৃজাতের মধ্যে সংকরীকরণ প্রথম বংশধর (হাইব্রিড) থেকে বীজ তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। এরূপ সংকরীকরণ কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না বিধায় কৃষক এ বীজ তৈরি করতে পারেন না। তাছাড়া এ মাতৃজাত ও পিতৃজাত যার কাছে থাকবে যা সবসময় গোপন রাখা হয়, কেবল সেই এ বীজ উৎপাদন করতে পারবে এবং প্রতিবার তার কাছ থেকেই বীজ নিতে হবে। আমাদের দেশে যেসব হাইব্রিড জাত আসছে তার প্রায় সবই আসে চীন ও ভারত থেকে। যেসব চীনা ও ভারতীয় কোম্পানি এ বীজ এ দেশে বিক্রি করে তারা কখনোই মাতৃজাত ও পিতৃজাত আমাদের দেয় না বা কোনোদিন দেবেও না। ফলে আমাদের বীজের জন্য চিরদিন চীন বা ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।
অন্যদিকে হাইব্রিড ধান একটি অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর সংবেদনশীল। হাইব্রিড জাতের ধান চাষ আমাদের মাটি, পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, কৃষকের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা ইত্যাদি কোনো দিক থেকেই মানানসই নয়। অধিক সংবেদনশীল হওয়ায় এসব জাতে পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় ব্যাপকভাবে। কৃষকরা হাইব্রিড জাত চাষ করলেই ভালো ফলন পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হাইব্রিড জাতে যত্নের সামান্য ত্রুটি হলেই ফলন মারাত্মক হ্রাস পায়। সঠিক সময় ও সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ, দফায় দফায় বালাইনাশক প্রয়োগ, পর্যাপ্ত সেচ দেওয়া, নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজ যথাযথভাবে করতে না পারলে ফলন কমে যায়। বাস্তবতা এই যে, সব কৃষকের জন্য, বিশেষ করে দরিদ্র বা হতদরিদ্র কৃষকদের জন্য হাইব্রিড জাত মোটেও উপযোগী নয়।
দেশের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যদি হাইব্রিড জাত প্রবর্তন করতেই হয় তবে আমাদের নিজস্ব হাইব্রিড জাত আবিষ্কার করা উচিত। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা হয় তাহলে আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে হাইব্রিড জাত আবিষ্কার করা মোটেও অসম্ভব নয়। কিন্তু ধানের হাইব্রিড জাত যেহেতু মাটি থেকে অধিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে, বেশি সেচ লাগে এবং অনেক সংবেদনশীল সেহেতু সারাদেশে ঢালাওভাবে হাইব্রিড জাত ছড়িয়ে না দিয়ে তা কেবল নিচু ও এক ফসলি বোরো ধানের জমিতে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
হ ধোপাঘাটা, ঝিনাইদহ
হাইব্রিড নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কটি হলো, উফশী জাতের মতো বাংলাদেশের মাটি, পরিবেশ ও ইকোসিস্টেমের ওপর এর প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই এ বীজ সরাসরি বিদেশ থেকে আমদানি করে এনে চাষের জন্য কৃষকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। হাইব্রিড নিয়ে অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কটি রয়েছে তা হলো, হাইব্রিড বীজ কৃষক নিজে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারেন না। কারণ প্রতিবার মাতৃজাত ও পিতৃজাতের মধ্যে সংকরীকরণ প্রথম বংশধর (হাইব্রিড) থেকে বীজ তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। এরূপ সংকরীকরণ কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না বিধায় কৃষক এ বীজ তৈরি করতে পারেন না। তাছাড়া এ মাতৃজাত ও পিতৃজাত যার কাছে থাকবে যা সবসময় গোপন রাখা হয়, কেবল সেই এ বীজ উৎপাদন করতে পারবে এবং প্রতিবার তার কাছ থেকেই বীজ নিতে হবে। আমাদের দেশে যেসব হাইব্রিড জাত আসছে তার প্রায় সবই আসে চীন ও ভারত থেকে। যেসব চীনা ও ভারতীয় কোম্পানি এ বীজ এ দেশে বিক্রি করে তারা কখনোই মাতৃজাত ও পিতৃজাত আমাদের দেয় না বা কোনোদিন দেবেও না। ফলে আমাদের বীজের জন্য চিরদিন চীন বা ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে।
অন্যদিকে হাইব্রিড ধান একটি অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর সংবেদনশীল। হাইব্রিড জাতের ধান চাষ আমাদের মাটি, পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, কৃষকের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা ইত্যাদি কোনো দিক থেকেই মানানসই নয়। অধিক সংবেদনশীল হওয়ায় এসব জাতে পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় ব্যাপকভাবে। কৃষকরা হাইব্রিড জাত চাষ করলেই ভালো ফলন পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। হাইব্রিড জাতে যত্নের সামান্য ত্রুটি হলেই ফলন মারাত্মক হ্রাস পায়। সঠিক সময় ও সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ, দফায় দফায় বালাইনাশক প্রয়োগ, পর্যাপ্ত সেচ দেওয়া, নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজ যথাযথভাবে করতে না পারলে ফলন কমে যায়। বাস্তবতা এই যে, সব কৃষকের জন্য, বিশেষ করে দরিদ্র বা হতদরিদ্র কৃষকদের জন্য হাইব্রিড জাত মোটেও উপযোগী নয়।
দেশের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যদি হাইব্রিড জাত প্রবর্তন করতেই হয় তবে আমাদের নিজস্ব হাইব্রিড জাত আবিষ্কার করা উচিত। যদি সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা হয় তাহলে আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে হাইব্রিড জাত আবিষ্কার করা মোটেও অসম্ভব নয়। কিন্তু ধানের হাইব্রিড জাত যেহেতু মাটি থেকে অধিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে, বেশি সেচ লাগে এবং অনেক সংবেদনশীল সেহেতু সারাদেশে ঢালাওভাবে হাইব্রিড জাত ছড়িয়ে না দিয়ে তা কেবল নিচু ও এক ফসলি বোরো ধানের জমিতে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
হ ধোপাঘাটা, ঝিনাইদহ
No comments