‘ছাত্রলীগে’র ২৬ জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ by গাজীউল হক
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামধারী ২৬ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগ নামধারীরা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ‘স্থানীয়’, অপরটি ‘শহর’ পক্ষ নামে পরিচিত। এ দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমির হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগির শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনব।’ তবে ছাত্রলীগ নামধারীদের অপতৎপরতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
তাঁদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: ‘স্থানীয় পক্ষ’র অনুসারী ইলিয়াছ হোসেন লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। গত বছরের আগস্টে আবাসিক হলের একজন শিক্ষার্থীর কম্পিউটার চুরির কথা স্বীকার করেন ইলিয়াছ। কম্পিউটারের দাম পরিশোধ করার অঙ্গীকার করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা করেননি।
ইলিয়াছের বিরুদ্ধে বিভাগের একজন শিক্ষকের বাসায় হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে, যার জন্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ইলিয়াছ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই কম্পিউটার আমি চুরি করি নাই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’
বাংলা বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী নূরুল আমিন গত বছরের জুলাইয়ের দিকে তাঁরই বিভাগের একজন শিক্ষককে রামদা নিয়ে ধাওয়া করেন। নজরুল হলের ওই ঘটনায় সেদিন দৌড়ে রক্ষা পান শিক্ষক। এর আগে বিভাগের এক ছাত্রীকে চড় মারার অভিযোগে নূরুল আমিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রলীগের ‘স্থানীয় পক্ষ’র নূরুল আমিন এখনো হলেই আছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রথম আলোর কাছে নূরুল আমিন দাবি করেন, তিনি হলে নন, মেসে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মসূচিতেও যান না।
নিজের প্রস্তুতি না থাকায় পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নামধারী নেতা সৈয়দ শাহরিয়ার মাহমুদ।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিকেলে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাঁদের স্বজনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসেন। সেদিন বাণিজ্য ভবনের পশ্চিম পাশে তাঁদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ নামধারী ছাত্ররা।
কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আ ফ ম আহসান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নেই। ওখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটিও নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যারা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৮ মে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি ও ধূমপান করবেন না বলে অঙ্গীকারনামায় সই করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিন হাজার শিক্ষার্থী আছেন।
‘স্থানীয়’ ও ‘শহর’ পক্ষ: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান এবং অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আল-আমিন মিলে একটি পক্ষ। তাঁদের ছাত্রলীগের ‘স্থানীয় পক্ষ’ বলা হয়। আর ‘শহর পক্ষে’ আছেন মার্কেটিং চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের মঈনউদ্দিন সফিকুর রহমান এবং হিসাববিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের এমদাদুল বারী। সফিকুর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। গত ২৭ নভেম্বর ‘স্থানীয় পক্ষ’র দুই নেতা তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ছুটি শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দিন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠলেই শহর পক্ষের ছাত্রলীগের নেতারা তাঁদের নামিয়ে দিতেন। এমনকি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগরের রামঘাট ও টমছম ব্রিজে অটোরিকশার স্ট্যান্ডে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাধা দিতেন।
এ নিয়ে ১০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘এক মাস ধরে ক্লাস হচ্ছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই দিনই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন আলেখারচরে একটি হোটেলে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে ছাত্রলীগ নামধারী উভয় পক্ষের নেতাদের বৈঠক হয়। জানতে চাইলে প্রক্টর মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘অচিরেই সংকটের অবসান হবে।’
দুই নেতা যা বলেন: স্থানীয় পক্ষের নেতা মাহমুদুর রহমান দাবি করেন, ‘শহরে আমাদের পক্ষের কোনো নেতা-কর্মী গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। আমাদের পক্ষের কেউ মারধর বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও শহর পক্ষের নেতা মঈনউদ্দিন সফিকুর রহমান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওরা আমাদের ওপর বারবার হামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ তিনি দাবি করেন, তাঁর ওপর হামলাকারীদের বিচার না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।
তাঁদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: ‘স্থানীয় পক্ষ’র অনুসারী ইলিয়াছ হোসেন লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। গত বছরের আগস্টে আবাসিক হলের একজন শিক্ষার্থীর কম্পিউটার চুরির কথা স্বীকার করেন ইলিয়াছ। কম্পিউটারের দাম পরিশোধ করার অঙ্গীকার করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা করেননি।
ইলিয়াছের বিরুদ্ধে বিভাগের একজন শিক্ষকের বাসায় হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে, যার জন্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ইলিয়াছ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই কম্পিউটার আমি চুরি করি নাই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’
বাংলা বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী নূরুল আমিন গত বছরের জুলাইয়ের দিকে তাঁরই বিভাগের একজন শিক্ষককে রামদা নিয়ে ধাওয়া করেন। নজরুল হলের ওই ঘটনায় সেদিন দৌড়ে রক্ষা পান শিক্ষক। এর আগে বিভাগের এক ছাত্রীকে চড় মারার অভিযোগে নূরুল আমিনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ছাত্রলীগের ‘স্থানীয় পক্ষ’র নূরুল আমিন এখনো হলেই আছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রথম আলোর কাছে নূরুল আমিন দাবি করেন, তিনি হলে নন, মেসে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কর্মসূচিতেও যান না।
নিজের প্রস্তুতি না থাকায় পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নামধারী নেতা সৈয়দ শাহরিয়ার মাহমুদ।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিকেলে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাঁদের স্বজনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসেন। সেদিন বাণিজ্য ভবনের পশ্চিম পাশে তাঁদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন ছাত্রলীগ নামধারী ছাত্ররা।
কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আ ফ ম আহসান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নেই। ওখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটিও নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে যারা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৮ মে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি ও ধূমপান করবেন না বলে অঙ্গীকারনামায় সই করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিন হাজার শিক্ষার্থী আছেন।
‘স্থানীয়’ ও ‘শহর’ পক্ষ: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান এবং অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আল-আমিন মিলে একটি পক্ষ। তাঁদের ছাত্রলীগের ‘স্থানীয় পক্ষ’ বলা হয়। আর ‘শহর পক্ষে’ আছেন মার্কেটিং চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের মঈনউদ্দিন সফিকুর রহমান এবং হিসাববিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের এমদাদুল বারী। সফিকুর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। গত ২৭ নভেম্বর ‘স্থানীয় পক্ষ’র দুই নেতা তাঁকে ছুরিকাঘাত করেন। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ছুটি শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দিন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠলেই শহর পক্ষের ছাত্রলীগের নেতারা তাঁদের নামিয়ে দিতেন। এমনকি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগরের রামঘাট ও টমছম ব্রিজে অটোরিকশার স্ট্যান্ডে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাধা দিতেন।
এ নিয়ে ১০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘এক মাস ধরে ক্লাস হচ্ছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই দিনই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন আলেখারচরে একটি হোটেলে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে ছাত্রলীগ নামধারী উভয় পক্ষের নেতাদের বৈঠক হয়। জানতে চাইলে প্রক্টর মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘অচিরেই সংকটের অবসান হবে।’
দুই নেতা যা বলেন: স্থানীয় পক্ষের নেতা মাহমুদুর রহমান দাবি করেন, ‘শহরে আমাদের পক্ষের কোনো নেতা-কর্মী গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। আমাদের পক্ষের কেউ মারধর বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও শহর পক্ষের নেতা মঈনউদ্দিন সফিকুর রহমান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওরা আমাদের ওপর বারবার হামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ তিনি দাবি করেন, তাঁর ওপর হামলাকারীদের বিচার না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।
No comments