মোবারক ভয়ংকর লোক, বললেন লোকমানের স্ত্রীঃ কী করে সে বন্ধুকে খুন করাল! by কামরুল হাসান ও মনিরুজ্জামান
অ্যালবামে পাশাপাশি দুটি ছবি রাখা। একটিতে কয়েকজন আছেন রিসোর্টের সিঁড়িতে। আরেকটিতে সঙ্গে আছেন তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরাও। দুটি ছবিতেই লোকমান হোসেনের হাসিমাখা মুখ। গতকাল বৃহস্পতিবার লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত ছবি দুটি প্রতিবেদকদের দেখাচ্ছিলেন। তিনি ছবিতে লোকমানের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় দিচ্ছিলেন, ‘পাশের লোকেরা হলেন লোকমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোবারক হোসেন, কবির সরকার, আসাদুজ্জামান, ডেবিট ও জুবায়ের কবির। দুই বছর আগে সিলেটে বেড়াতে গিয়ে এ ছবি তোলা।’
তামান্না নুসরাত পারিবারিক অ্যালবামে মোবারককে দেখিয়ে বললেন, ‘এটা মোবারক। সে খুব ভয়ংকর লোক, সবকিছুই পারে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কী করে সে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে খুন করাল?’ নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান খুনের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী বলে মোবারককে সন্দেহ করছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামি আশরাফ সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবারক সম্পর্কে পুলিশ অনেক তথ্য পেয়েছে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আশরাফ সরকারকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, রিমান্ডে আশরাফ সরকার বলেছেন, মোবারক আগে থেকেই লোকমানকে খুন করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করা (টেন্ডারবাজি) নিয়ে তাঁদের বৈরিতা শুরু হয়।
লোকমানের ভাই কামরুজ্জামান বলেন, মোবারক ছিলেন টেন্ডারবাজ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁরা নরসিংদীতে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। প্রথম দিকে কিছু কাজ নিয়ন্ত্রণ করলেও ভাগাভাগির সব টাকা তিনি মেরে দিতেন। এতে অনেক ঠিকাদার তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হতেন। মেয়র এ ঘটনায় তাঁকে বকাঝকা করেন।
লোকমান হত্যার চার দিন আগে ২৭ অক্টোবর মোবারক মালয়েশিয়ায় চলে যান বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, মোবারক দেশে নেই। হয়তো খুনের ছক করেই তিনি বিদেশে চলে গেছেন।
লোকমানের ঘনিষ্ঠজনদের সন্দেহ, তাঁর খুনের পরিকল্পনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর ভাই সালাউদ্দিন আহমেদের যোগসাজশ রয়েছে। আর পেশাদার খুনি ভাড়া করা থেকে শুরু করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোবারককে সন্দেহ করা হয়।
অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান এ দুই সন্দেহের ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবারক কেন মেয়রকে মারতে যাবে? সে কি মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল?’ মন্ত্রীর ভাইয়ের ব্যাপারে আসাদুজ্জামানের বক্তব্য হলো, সালাউদ্দিন একজন বড় ব্যবসায়ী। তিনি লোকমানকে খুন করতে পারেন না। তাঁর দাবি, ‘এসব নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা প্রচারণা। এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। এর সঙ্গে দলের লোকদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতির ধারণা, লোকমান ও তাঁর ভাইয়ের অনেক শত্রু ছিল। তারা খুন করতে পারে।
গতকাল উপজেলা মোড়ে মোবারকের বাড়িতে গেলে সেখানকার কেউ কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মোবারকের দুই স্ত্রী। তিনি এক স্ত্রী নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। আরেক স্ত্রী তাঁর মেয়েকে নিয়ে থাকেন শহরের পশ্চিম ব্রাহ্মন্দী এলাকায়।
পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় মোবারকের ব্যবসা আছে। বছরে চার-পাঁচবার তিনি মালয়েশিয়ায় যান।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবারকের বড় ভাই সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবারক কী কাজ করে, সেটা আমি জানি না। আমি কোনো সন্ত্রাসীর খবর রাখি না।’
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আনোয়ার হোসেন বলেন, মোবারকের বিরুদ্ধে তাঁর থানায় কোনো মামলা নেই। তিনি শুনেছেন, ১৯৯৫ সালে একটি মামলায় মোবারক আসামি ছিলেন। কিন্তু সে কাগজপত্র তিনি খুঁজে পাননি।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মোবারকের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আগে পুলিশের কাছে তেমন কোনো তথ্য ছিল না। এখন খোঁজখবর করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানায়, নরসিংদীর ব্যাপারিপাড়ার জজ মিয়ার ছেলে মোবারক হোসেন ওরফে মোবা। তিনি ১৯৮৬ সালে নরসিংদীর কালিকুমার ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস করেন। নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর আর লেখাপড়া করেননি। তিনি ছোটবেলা থেকেই লোকমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে লোকমানের পক্ষে তিনি কাজ করেছেন।
লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মোবারক, কবির সরকার ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু লোকমানের কাছে নানা আর্থিক সুবিধা দাবি করতেন। যেমন: তাঁদের পছন্দমতো ঠিকাদারি কাজ দেওয়া। কিন্তু লোকমান এটা পছন্দ করতেন না। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে সেটা বেশি দিনের নয়।
তামান্না জানান, দুই বছর আগেও তাঁরা সবাই একসঙ্গে সিলেটে বেড়াতে যান। সারা রাত লোকমান, মোবারক, তারেক, ডেভিড, কবির সরকারসহ সব বন্ধু হইচই করেন। তিনি বলেন, মোবারক খুব ভয়ংকর ও সন্দেহপ্রবণ লোক। তিনি স্ত্রীদের মারধর করতেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও লোকমানের ঘনিষ্ঠ এস এম কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, মোবারকের সঙ্গে ঢাকার সন্ত্রাসী জিসান গ্রুপের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় জিসান, তাঁর সহযোগী উপল, ফয়সল ও ইকতিয়ার এসে মোবারকের কলেজ রোডের বাসায় আত্মগোপন করেছিল। পরে সেই বাসাটি মোবারক বিক্রি করে দেন।
কাইয়ুম জানান, লোকমানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর থেকে মোবারক ঢাকায় ছিলেন। মাঝেমধ্যে নরসিংদী আসতেন।
মোবারকের প্রথম স্ত্রী নাজনীন খান বলেন, মোবারক দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে নরসিংদীর বাসায় আসেন।
মোবারক কেমন মানুষ—এ প্রশ্নের জবাবে নাজনীন বলেন, ‘এককথার আমি কোনো জবাব দিতে চাই না।’
সূত্র জানায়, রিমান্ডে আশরাফ সরকার বলেছেন, মোবারক আগে থেকেই লোকমানকে খুন করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করা (টেন্ডারবাজি) নিয়ে তাঁদের বৈরিতা শুরু হয়।
লোকমানের ভাই কামরুজ্জামান বলেন, মোবারক ছিলেন টেন্ডারবাজ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁরা নরসিংদীতে সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। প্রথম দিকে কিছু কাজ নিয়ন্ত্রণ করলেও ভাগাভাগির সব টাকা তিনি মেরে দিতেন। এতে অনেক ঠিকাদার তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হতেন। মেয়র এ ঘটনায় তাঁকে বকাঝকা করেন।
লোকমান হত্যার চার দিন আগে ২৭ অক্টোবর মোবারক মালয়েশিয়ায় চলে যান বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, মোবারক দেশে নেই। হয়তো খুনের ছক করেই তিনি বিদেশে চলে গেছেন।
লোকমানের ঘনিষ্ঠজনদের সন্দেহ, তাঁর খুনের পরিকল্পনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর ভাই সালাউদ্দিন আহমেদের যোগসাজশ রয়েছে। আর পেশাদার খুনি ভাড়া করা থেকে শুরু করে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোবারককে সন্দেহ করা হয়।
অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান এ দুই সন্দেহের ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবারক কেন মেয়রকে মারতে যাবে? সে কি মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল?’ মন্ত্রীর ভাইয়ের ব্যাপারে আসাদুজ্জামানের বক্তব্য হলো, সালাউদ্দিন একজন বড় ব্যবসায়ী। তিনি লোকমানকে খুন করতে পারেন না। তাঁর দাবি, ‘এসব নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা প্রচারণা। এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। এর সঙ্গে দলের লোকদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতির ধারণা, লোকমান ও তাঁর ভাইয়ের অনেক শত্রু ছিল। তারা খুন করতে পারে।
গতকাল উপজেলা মোড়ে মোবারকের বাড়িতে গেলে সেখানকার কেউ কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মোবারকের দুই স্ত্রী। তিনি এক স্ত্রী নিয়ে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। আরেক স্ত্রী তাঁর মেয়েকে নিয়ে থাকেন শহরের পশ্চিম ব্রাহ্মন্দী এলাকায়।
পারিবারিক একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় মোবারকের ব্যবসা আছে। বছরে চার-পাঁচবার তিনি মালয়েশিয়ায় যান।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবারকের বড় ভাই সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোবারক কী কাজ করে, সেটা আমি জানি না। আমি কোনো সন্ত্রাসীর খবর রাখি না।’
নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আনোয়ার হোসেন বলেন, মোবারকের বিরুদ্ধে তাঁর থানায় কোনো মামলা নেই। তিনি শুনেছেন, ১৯৯৫ সালে একটি মামলায় মোবারক আসামি ছিলেন। কিন্তু সে কাগজপত্র তিনি খুঁজে পাননি।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মোবারকের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আগে পুলিশের কাছে তেমন কোনো তথ্য ছিল না। এখন খোঁজখবর করা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানায়, নরসিংদীর ব্যাপারিপাড়ার জজ মিয়ার ছেলে মোবারক হোসেন ওরফে মোবা। তিনি ১৯৮৬ সালে নরসিংদীর কালিকুমার ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস করেন। নরসিংদী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর আর লেখাপড়া করেননি। তিনি ছোটবেলা থেকেই লোকমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ২০০৪ সালের পৌর নির্বাচনে লোকমানের পক্ষে তিনি কাজ করেছেন।
লোকমানের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মোবারক, কবির সরকার ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু লোকমানের কাছে নানা আর্থিক সুবিধা দাবি করতেন। যেমন: তাঁদের পছন্দমতো ঠিকাদারি কাজ দেওয়া। কিন্তু লোকমান এটা পছন্দ করতেন না। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে সেটা বেশি দিনের নয়।
তামান্না জানান, দুই বছর আগেও তাঁরা সবাই একসঙ্গে সিলেটে বেড়াতে যান। সারা রাত লোকমান, মোবারক, তারেক, ডেভিড, কবির সরকারসহ সব বন্ধু হইচই করেন। তিনি বলেন, মোবারক খুব ভয়ংকর ও সন্দেহপ্রবণ লোক। তিনি স্ত্রীদের মারধর করতেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও লোকমানের ঘনিষ্ঠ এস এম কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, মোবারকের সঙ্গে ঢাকার সন্ত্রাসী জিসান গ্রুপের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় জিসান, তাঁর সহযোগী উপল, ফয়সল ও ইকতিয়ার এসে মোবারকের কলেজ রোডের বাসায় আত্মগোপন করেছিল। পরে সেই বাসাটি মোবারক বিক্রি করে দেন।
কাইয়ুম জানান, লোকমানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর থেকে মোবারক ঢাকায় ছিলেন। মাঝেমধ্যে নরসিংদী আসতেন।
মোবারকের প্রথম স্ত্রী নাজনীন খান বলেন, মোবারক দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে নরসিংদীর বাসায় আসেন।
মোবারক কেমন মানুষ—এ প্রশ্নের জবাবে নাজনীন বলেন, ‘এককথার আমি কোনো জবাব দিতে চাই না।’
No comments