বীর মুক্তিযোদ্ধা- তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৬০৯ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। কামরুল হক, বীর বিক্রম ক্র্যাক প্লাটুনের সাহসী এক সদস্য মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন কামরুল হক (স্বপন)।
ঢাকা মহানগরে কয়েকটি অপারেশন করেন তিনি। এর মধ্যে ধানমন্ডির অপারেশন অন্যতম। তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট এ অপারেশন করেন। দলে তিনি ছাড়া আর যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন: কাজী কামালউদ্দিন (বীর বিক্রম), বদিউল আলম (পরে শহীদ, বীর বিক্রম), শাফী ইমাম রুমী (পরে শহীদ, বীর বিক্রম) ও হাবিবুল আলম (বীর প্রতীক)।
তাঁদের পরিকল্পনা ছিল পুরাতন ২০ নম্বর রোডে চীনা দূতাবাসের সামনে এবং ১৮ নম্বর রোডে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাসার সামনে অপারেশন করার। সেখানে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ পাহারায় থাকত। এর জন্য প্রয়োজন ছিল একটি গাড়ি। তাঁর দুই সহযোদ্ধা একটা মাজদা গাড়ি হাইজ্যাক করেন। গাড়ি চালান হাবিবুল আলম।
সেদিন সন্ধ্যার আগে গাড়িতে করে তাঁরা প্রথমে ২০ নম্বর সড়কে যান। কিন্তু তখন নির্দিষ্ট স্থানে পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ কেউ ছিল না। এরপর তাঁরা ১৮ নম্বরে যান। সেখানে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাড়ির সামনে আটজন পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ বসে আড্ডা মারছিল। কাজী কামালউদ্দিন ও বদিউল আলম তাদের গুলি করেন। কামরুল হক ও রুমীর ওপর দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনা কেউ পাল্টা গুলি করে কি না, তা লক্ষ রাখা। সফলতার সঙ্গেই তাঁরা অপারেশন করেন।
এরপর তাঁরা আবার আগের টার্গেটে যান। কিন্তু এবারও সেখানে পাকিস্তানি কাউকে তাঁরা পাননি। ফিরে যাওয়ার পথে তাঁরা চরম ঝুঁকির মুখে পড়েন। ৫ নম্বর সড়কের মুখে মিরপুর রোডে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবরোধের মধ্যে পড়েন। সাহসিকতার সঙ্গে তাঁরা এ অবরোধ ভেদ করেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল তখন সেখানে তল্লাশি শুরু করেছিল। ওখানে দুটি ট্রাক মিরপুর রোডে সামনের দিকে, একটা জিপ রাস্তার ডান দিকে এবং আরেকটা জিপ পেট্রলপাম্পের সামনে নিউ মার্কেটের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো ছিল। এলএমজি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে মাটিতে শুয়ে পজিশনে ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। রাস্তা ছিল পুরো কর্ডন করা।
দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের গাড়ি থামাতে বলে। তখন হাবিবুল আলম গাড়ির হেডলাইট অফ করে ডান দিকে টার্ন নেন। ওই সেনারা গালি দিয়ে তাঁদের বলে, ‘কিধার যাতা? রোখো।’ এ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানিদের আক্রমণের। হাবিবুল আলম দক্ষতার সঙ্গে গাড়ি বাঁ দিকে ঘুরিয়ে এগিয়ে যান। কামরুল হক, কাজী কামাল ও বদিউল চলন্ত অবস্থায় গুলি শুরু করেন। কামরুল ছিলেন গাড়ির পেছনের আসনে। তিনি হাবিবুল আলমের ঘাড়ের ওপর দিয়ে গুলি করেন।
ওখানে পাকিস্তানি সেনা যারা দাঁড়িয়ে ও শুয়ে ছিল, বেশির ভাগ নিহত ও বাকিরা আহত হয়। কামরুল ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এরপর তাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে এক মিনিটের মধ্যে গ্রিন রোডের মোড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে যান। এ অপারেশনের পর প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক প্রশাসনসহ সামরিক প্রশাসনেও ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
কামরুল হক ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য কামরুল হককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৪৫। গেজেটে নাম স্বপন।
কামরুল হকের পৈতৃক বাড়ি ঢাকায়। ঠিকানা ৪২২ মালিবাগ। তাঁর বাবা শামসুল চৌধুরী, মা আনোয়ারা বেগম ও স্ত্রী রোজি হক।
সূত্র: মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক, হাবিবুল আলম বীর প্রতীক এবং শহীদ শাফী ইমাম রুমী স্মারকগ্রন্থ।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
rahedtr@prothom-alo.info
তাঁদের পরিকল্পনা ছিল পুরাতন ২০ নম্বর রোডে চীনা দূতাবাসের সামনে এবং ১৮ নম্বর রোডে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাসার সামনে অপারেশন করার। সেখানে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ পাহারায় থাকত। এর জন্য প্রয়োজন ছিল একটি গাড়ি। তাঁর দুই সহযোদ্ধা একটা মাজদা গাড়ি হাইজ্যাক করেন। গাড়ি চালান হাবিবুল আলম।
সেদিন সন্ধ্যার আগে গাড়িতে করে তাঁরা প্রথমে ২০ নম্বর সড়কে যান। কিন্তু তখন নির্দিষ্ট স্থানে পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ কেউ ছিল না। এরপর তাঁরা ১৮ নম্বরে যান। সেখানে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাড়ির সামনে আটজন পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ বসে আড্ডা মারছিল। কাজী কামালউদ্দিন ও বদিউল আলম তাদের গুলি করেন। কামরুল হক ও রুমীর ওপর দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনা কেউ পাল্টা গুলি করে কি না, তা লক্ষ রাখা। সফলতার সঙ্গেই তাঁরা অপারেশন করেন।
এরপর তাঁরা আবার আগের টার্গেটে যান। কিন্তু এবারও সেখানে পাকিস্তানি কাউকে তাঁরা পাননি। ফিরে যাওয়ার পথে তাঁরা চরম ঝুঁকির মুখে পড়েন। ৫ নম্বর সড়কের মুখে মিরপুর রোডে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবরোধের মধ্যে পড়েন। সাহসিকতার সঙ্গে তাঁরা এ অবরোধ ভেদ করেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল তখন সেখানে তল্লাশি শুরু করেছিল। ওখানে দুটি ট্রাক মিরপুর রোডে সামনের দিকে, একটা জিপ রাস্তার ডান দিকে এবং আরেকটা জিপ পেট্রলপাম্পের সামনে নিউ মার্কেটের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো ছিল। এলএমজি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে মাটিতে শুয়ে পজিশনে ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। রাস্তা ছিল পুরো কর্ডন করা।
দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের গাড়ি থামাতে বলে। তখন হাবিবুল আলম গাড়ির হেডলাইট অফ করে ডান দিকে টার্ন নেন। ওই সেনারা গালি দিয়ে তাঁদের বলে, ‘কিধার যাতা? রোখো।’ এ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানিদের আক্রমণের। হাবিবুল আলম দক্ষতার সঙ্গে গাড়ি বাঁ দিকে ঘুরিয়ে এগিয়ে যান। কামরুল হক, কাজী কামাল ও বদিউল চলন্ত অবস্থায় গুলি শুরু করেন। কামরুল ছিলেন গাড়ির পেছনের আসনে। তিনি হাবিবুল আলমের ঘাড়ের ওপর দিয়ে গুলি করেন।
ওখানে পাকিস্তানি সেনা যারা দাঁড়িয়ে ও শুয়ে ছিল, বেশির ভাগ নিহত ও বাকিরা আহত হয়। কামরুল ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এরপর তাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে এক মিনিটের মধ্যে গ্রিন রোডের মোড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে যান। এ অপারেশনের পর প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক প্রশাসনসহ সামরিক প্রশাসনেও ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
কামরুল হক ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য কামরুল হককে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৪৫। গেজেটে নাম স্বপন।
কামরুল হকের পৈতৃক বাড়ি ঢাকায়। ঠিকানা ৪২২ মালিবাগ। তাঁর বাবা শামসুল চৌধুরী, মা আনোয়ারা বেগম ও স্ত্রী রোজি হক।
সূত্র: মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক, হাবিবুল আলম বীর প্রতীক এবং শহীদ শাফী ইমাম রুমী স্মারকগ্রন্থ।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
rahedtr@prothom-alo.info
No comments