সম্প্রীতির সাধক নজরুল by সৌমিত্র শেখর

বাঁধনহারা ছিল কাজী নজরুল ইসলামের জীবন, শৈশব থেকেই; প্রচলিত আরাধনার স্থিরতা তাঁর জীবনে কখনো দেখা যায়নি। তবু নজরুল-জীবন এবং নজরুল-সৃষ্টি উত্তরকালে সম্প্রীতিসাধনার নামান্তর হয়ে উঠেছে। সারা পৃথিবীতে যেখানে মানবতা ভূলুণ্ঠিত, পরমতসহিষ্ণুতা হিংসার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, সেখানে নজরুল ইসলামের জীবন ও সৃষ্টি এবং


এর মিথস্ক্রিয়ায় উঠে আসা দর্শন দেখাতে পারে মানবপ্রেমের সুস্নিগ্ধ জলপ্রপাত, পরমতসহিষ্ণুতার বাতায়ন, সৌহার্দ্যের অমিয়ধারা। কাজী নজরুল ইসলাম এ কারণেই স্মরণীয় এবং শরণীয় আজ।
নজরুল ইসলাম জন্মেছিলেন ধর্মভীরু, রক্ষণশীল, অর্ধশিক্ষিত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা কাজী ফকির আহমদ দুই বিয়ে করেছিলেন, তাঁর সাত পুত্র, দুই কন্যা। ফলে দারিদ্র্যের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠেন নজরুল। উপরন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পিতার মৃত্যু নজরুলের জীবনকে শৃঙ্খলাহীন করে দিয়েছিল। ১০ বছর বয়স থেকে অর্থ উপার্জনের প্রয়োজনে নজরুলকে নিকটবর্তী গ্রামের মাজার শরিফের খাদেম ও মসজিদের ইমামতি করতে হয়। দারিদ্র্যের কারণেই রুটির দোকানে কাজ এবং সে সূত্রে তাঁর জীবনে আসে ত্রিশালপর্ব। খিদেকে জয় করবেন বলেই তিনি যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে এবং সে কারণে আসে তাঁর জীবনের করাচিপর্ব। এ রকম একটি পরিবারে জন্মে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অবিরত সংগ্রামকারী কারো পক্ষেই বড় কবি, মেজর বা পোয়েট হওয়া সম্ভব নয়- পরবর্তী সময় নজরুল এ কথা ভুল প্রমাণ করেছেন; কিন্তু এই প্রমাণটা হয়েছে ধীরে ধীরে, রাতারাতি নয়। নজরুল-রচিত প্রথম দিককার কবিতাগুলোতে আরবি-ফারসি-উর্দু-মিশ্রিত মুসলমানি বাংলার প্রভাব স্পষ্ট। তা ছাড়া এ সময় তিনি লিখেছেন 'মোহররম' 'কোরবানী' 'খেয়াপারের তরণী' 'শাত-ইল্-আরব' 'ফাতেহা-ই-দোয়াজ-দহম্' (আবির্ভাব ও তিরোভাব মিলিয়ে দীর্ঘ দুটি কবিতা) ইত্যাদির মতো মুসলিম ধর্মীয় উৎসব ও চেতনা নিয়ে বিভিন্ন কবিতা। সংগত কারণেই এগুলো মুসলিম-সম্পাদিত পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ করার জন্য পাঠানো হয়েছে। করাচি থেকে ফিরে নজরুল যখন কলকাতায় এলেন এবং পাকাপাকিভাবে কলকাতায় বসবাস করবেন বলে স্থির করলেন, আজকের নজরুল ইসলাম হওয়ার পালাবদলটা সেখান থেকেই শুরু। তিনি ইসলামী প্রসঙ্গ ও অনুষঙ্গ নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কারণ পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এ প্রসঙ্গের অগাধ জ্ঞান তাঁর ছিল। তা ছাড়া পারসি পণ্ডিত পিতৃব্য কাজী বজলে করিম এবং নিজের করাচিবাসকালীন পারসি সাহিত্য অধ্যয়ন নজরুলের মনোজগৎ ঋদ্ধ করেছিল। নজরুল তাঁর এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেশালেন কৈশোরের লেটো গানের চেতনা, যাত্রাপালার সমন্বয়ভাব। আর ভারতীয় ঐতিহ্য ও পুরাণ-প্রসঙ্গ আত্মস্থ করতে তাঁকে খুব সময় দিতে হয়নি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা'তেই পাওয়া গেল একজন ধর্মনিরপেক্ষ সমন্বয়বাদী কবিকে। তিনি এ গ্রন্থে 'মোহররম' 'কোরবানী' 'খেয়াপারের তরণী' 'শাত-ইল্-আরব' ইত্যাদি মুসলিম-প্রসঙ্গ ও অনুষঙ্গের কবিতার সঙ্গে সংযোজন করলেন হিন্দু দেবী ও উৎসব নিয়ে রচিত কবিতা 'রক্তাম্বর-ধারিণী মা', 'আগমনী'। আবার এ কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হলো 'প্রলয়োল্লাস' ও 'বিদ্রোহী'র মতো কবিতা- যে কবিতায় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রসঙ্গ ও অনুষঙ্গ অসাধারণ দক্ষতায় সংস্থাপিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় 'বিদ্রোহী'র মতো আরেকটি কবিতাও লেখা হয়নি, যেখানে সব ধর্মীয় অনুষঙ্গ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে এতটা কুশলতার সঙ্গে ব্যবহার হয়েছে। এ কারণেই বোধ হয়, 'বিদ্রোহী' যে পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ হয়, সেই 'বিজলী' পত্রিকার ওই সংখ্যার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে হয়েছিল। একটি কবিতার জন্য কোনো পত্রিকার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ- সমকালে এও অনন্য দৃষ্টান্ত। তা ছাড়া এ কাব্যগ্রন্থে আধুনিক তুরস্কের জনক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্ককে নিয়ে নজরুল কবিতা লিখেছেন। ওই সময় 'প্রবাসী' পত্রিকায় 'অগ্নিবীণা'র যে সমালোচনা প্রকাশ হয় তাতে নজরুলের ধর্মীয় সম্প্রীতিসাধনারই প্রশংসা আছে। আন্তঃধর্মীয় সমন্বয় এবং বিচিত্র ধর্মীয় উপাদানের সংমিশ্রণ নজরুলের আগে বাংলা সাহিত্যে আর কেউ করেননি। এ ক্ষেত্রে নজরুল ইসলাম নিশ্চিতভাবেই পথপ্রদর্শক হিসেবে শ্রদ্ধার্হ। ধর্মীয় সম্প্রীতিচেতনা কবিমনে লালিত ছিল বলেই নজরুল এ ধরনের কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ লিখতে পেরেছেন। নজরুলের কবিতায় মানুষের জয়গান ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকামনা শুধু তাঁর 'অগ্নিবীণা'তেই আছে, এ কথা ঠিক নয়। তিনি ধর্মীয় ছুঁতমার্গের বিরোধী ছিলেন এবং জাত ও সম্প্রদায়ের নামে বাড়াবাড়িকেও তিরস্কার করেছেন। 'জাতের নামে বজ্জাতি' কবিতায় তিনি বলেছেন : 'নারায়ণের জাত যদি নাই,/তোদের কেন জাতের বালাই?' তাঁর ধর্মীয় সম্প্রীতিসাধনার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ 'সাম্যবাদী' কবিতাগুচ্ছ। এর ১০টি কবিতাতেই মানবপ্রেম ও সম্প্রদায়-নিরপেক্ষতা প্রকাশিত। মানুষ এবং তার হৃদয়ই যে মুখ্য আর সব গৌণ, নজরুল তাঁর এ কবিতাগুচ্ছে সে কথা বলেছেন। এর কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো : 'গাহি সাম্যের গান- /যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,/যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম ক্রিশ্চান।' (সাম্যবাদী); এ কবিতাতেই তিনি বলেছেন : 'এই হৃদয়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,/বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,/ মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,/এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।' ধর্ম ও সম্প্রীতির ঊধর্ে্ব 'মানুষ' পরিচয়কেই মুখ্য করতে গিয়ে নজরুল সবাইকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছেন। হিন্দু বা মুসলিম অথবা অন্য কোনো ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে 'মানুষ' পরিচয়ই যে আমাদের কাছে প্রধান হওয়া উচিত, নজরুল তা বলেছেন। তিনি যে সময় কবিতা লিখেছেন সে সময় ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক ভেদ-রাজনীতি প্রকট হতে থাকে। প্রধান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায় পরস্পরের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশদের বিভেদনীতির কারণে। প্রায়ই ভ্রাতৃঘাতী হয়ে ওঠে তারা। এসব দেখে কাজী নজরুল ইসলামের উচ্চারণ 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার'- যেখানে কবি বলেছেন : 'হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা'র।' এখানেও নজরুল সম্প্রদায় নয়, অখণ্ড মানবতায় আস্থা স্থাপন করেছেন এবং এই আস্থার ভিত্তি হলো সম্প্রীতি। ১৯২৬ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে নজরুল এই কবিতা রচনা করেন।
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর রচিত গানে কখনো প্রকাশ্যভাবে কখনো অনুভব-অনুষঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা বলেছেন। গানে এভাবে সম্প্রীতির বাণী প্রকাশ নজরুল ছাড়া তাঁর সমকালে আর কারো মধ্যে দেখা যায় না। তিনি লিখেছেন : 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। /মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ' অথবা 'হিন্দু-মুসলমান দুটি ভাই/ভারতের দুই আঁখি-তারা/এক বাগানে দুটি তরু দেবদারু আর কদম-চারা ' এ প্রসঙ্গে নজরুলের ইসলামী গান ও হিন্দুধর্ম সংশ্লিষ্ট গানগুলো বিবেচনায় আনা যেতে পারে। নজরুল একসময় প্রচুর শ্যামাসংগীতসহ হিন্দুধর্ম সংশ্লিষ্ট গান ও ইসলামী গান রচনা করেন। তিনি যে শ্যামাসংগীত, ভজন, কীর্তনগুলো রচনা করেছেন তা শুনলে বোঝা যায়, তাঁর কতটা আত্তীকৃত ছিল ভারতীয় দর্শন, বিশেষ করে হিন্দুপুরাণ। বিভিন্ন ধর্ম-মতের দর্শনে এভাবে লীন হয়ে যাওয়াই সম্প্রীতিসাধনার বীজমন্ত্র। নজরুল এই বীজমন্ত্র গ্রহণ করেছিলেন। আর গ্রহণ করেছিলেন বলেই তিনি এই মত ও পথের সমন্বয়ের চেষ্টাও করেন। তাই রাধার রূপকল্প তৈরি করে 'কে বিদেশী বন উদাসী/বাঁশের বাঁশি বাজাও বনে' গান লিখলেও সেখানে 'সুর সোহাগ' 'কুসুম বাগ' 'গুল বদন' ইত্যাদি বাংলা ও পারসি শব্দ-বন্ধের চমৎকার সম্মিলন ঘটিয়েছেন। রাধার মানভঞ্জন পর্বের একটি চমৎকার গান 'কার নিকুঞ্জে রাত কাটায়ে/আসলে প্রাতে পুষ্পচোর।' এই গানে নজরুল আরবি-পারসি শব্দ ও ইসলামী অনুষঙ্গ এমন দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন যে, মনেই হয় না এগুলো রাধা বা কৃষ্ণকথার মূলে নেই। নজরুল প্রচুর বাংলা 'ভজন' লিখেছেন কাওয়ালির সুরে। এ রকমের একটি ভজন : 'রাখ এ মিনতি ত্রিভুবন পতি/তব পদে মতি (রাখ)।'
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গদ্য রচনাতে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির কথা বলেছেন। বিশেষ করে তাঁর রচিত প্রবন্ধ ও অভিভাষণে এই ভাবনা ব্যাপক ও সরাসরিভাবে প্রকাশিত। একটি অভিভাষণে তিনি বলেছেন : 'কেউ বলেন, আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।' এই সরল ও সরাসরি স্বীকারোক্তির পর নজরুলের সম্প্রীতিচেতনা পৃথকভাবে অনুসন্ধান করার প্রয়োজন হয় না। তবু নজরুলের গদ্য রচনা অভিনিবেশ সহকারে পাঠ করলে দেখা যায়, তিনি হিন্দু-মুসলিমের ঐক্যবদ্ধতার দিকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, হিন্দু ও মুসলিম যদি পরস্পরকে ঈর্ষা ও ঘৃণা করতে থাকে তাহলে ভারতের স্বাধীনতা লাভ অসম্ভব। ইংরেজরা তাদের শিক্ষার চাকচিক্যে ভারতীয় হিন্দু ও মুসলিমের নিজস্ব প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তিনি এ সম্পর্কে ভারতীয় হিন্দু ও মুসলিমদের সজাগ করেছেন এক অভিভাষণে : 'ভারত যে আজ পরাধীন এবং আজও যে স্বাধীনতার পথে তার যাত্রা শুরু হয়নি- শুধু আয়োজনেরই ঘটা হচ্ছে এবং ঘটাও ভাঙছে- তার একমাত্র কারণ আমাদের হিন্দু-মুসলমানের পরস্পরের প্রতি হিংসা ও অশ্রদ্ধা। আমরা মুসলমানরা আমাদেরই প্রতিবেশী হিন্দুর উন্নতি দেখে হিংসা করি, আর হিন্দুরা আমাদের অবনত দেখে আমাদের অশ্রদ্ধা করে।' নজরুল শুধু বাস্তব অবস্থা বর্ণনা বা উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি এ থেকে উত্তরণের পথ নির্দেশও করেছেন। তিনি মনে করেন, যদি হিন্দু ও মুসলিম পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ও ঈর্ষা ত্যাগ করে, তাহলে সাম্প্রদায়িকতার যেমন অবসান হবে, তেমনি ভারতের স্বাধীনতার সূর্যও উদিত হবে। তার পরও নজরুল-জীবনী পাঠকমাত্রই জানেন যে, নজরুল হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের রক্ষণশীলদের পক্ষ থেকে বিরুদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবু দেখা যায় গদ্যে তিনি লিখেছেন, কোনো বিরুদ্ধতার মুখোমুখি তিনি হননি, সবাই তাঁকে ভালোবেসেছে। সম্প্রীতিকামী মহৎ মানব না হলে এ ধরনের চিন্তা করা যায় না।
নজরুলের হৃদয়ে সমন্বয় ও সম্প্রীতির আদর্শিক বল ছিল আর ছিল বাংলা ও বাঙালির জন্য ভালোবাসা। তাই তিনি বাঙালির জাতীয় কবি হতে পেরেছেন। নজরুল-জীবন ও নজরুল-সৃষ্টি কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতিবিদ্যা অনুসরণ করে বিকশিত হয়নি সত্য; কিন্তু এ দুয়ের প্রাণ যে সম্প্রীতি ও সমন্বয়ের সুতোতে বাঁধা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই নজরুল-জীবন ও নজরুল-সৃষ্টির একমাত্র নাম হতে পারে সম্প্রীতিসাধনা।

লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
scpcdu@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.