কেইপিজেডকে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ

ট্টগ্রামের আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (কেইপিজেড) পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী অভিযান চালিয়ে এই আদেশ দেন।


কেইপিজেড আনোয়ারা ও পটিয়ায় দুই বছর ধরে প্রায় আড়াই হাজার একর পাহাড়শ্রেণীর ভূমিতে শিল্পায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল অভিযানের সময় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই পাহাড় কাটার কাজ করছে। এ সময় কেইপিজেডের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতির কাগজপত্র তুলে ধরা হয়।
এসব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মাপজোখ করার পর অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট দল তাদের পাহাড় কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ফিরে আসে। এ ব্যাপারে দুই দিনের মধ্যে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে মুনীর চৌধুরী জানান। এখানে ৪০ থেকে ৬০ ফুট উচ্চতার ৪৭ কাঠা পাহাড় কেটে সমতল করা হয়েছে বলে এনফোর্সমেন্ট দল জানায়।
জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর ৩৩টি শর্ত সাপেক্ষে কেইপিজেডকে পাহাড় কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে গত ২৪ নভেম্বর ওই অনুমতিপত্র নবায়ন করা হয়। শর্তে সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে, ‘অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী, পাহাড় কর্তন ও মোচন করা যাবে। পাহাড় টিলা কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হবে।’
অনুমতিপত্রের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার সময় নকশা জমা দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ওই এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২ থেকে ২৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু ভূমিতে শিল্পায়ন করা হবে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে ওই এলাকার চারটি স্থানে পাহাড়ের দুই-তৃতীয়াংশ উচ্চতা নষ্ট করে সমতল করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এখানে কোনো কোনো স্থানে পাহাড় কেটে শিল্পায়ন করছে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ কিংবা শিল্পায়নের বিপক্ষে নই। তবে যেভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে, এতে করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েছে, এটা সত্য। তবে ওই অনুমতিপত্রের ফাঁকফোকর রয়েছে। ওই ফাঁক ধরেই তারা পাহাড় কাটছে। এখন আমরা উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। প্রয়োজনে অনুমতিপত্র পুনর্বিবেচনা করা হবে।’
এর আগে এনফোর্সমেন্ট দল কেইপিজেড এলাকার দিয়াং পাহাড়ের মরিয়ম আশ্রমের পাশে, মিয়া রোড জংশন ও বন্দর মৌজায় ৪০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু পাহাড় কাটার আলামত দেখতে পায়। এ সময় পাহাড় কাটায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজন এক্সক্যাভেটর ও ট্রাকচালককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়। পরে কাগজপত্র দেখার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়েই এখানে শিল্পায়নের জন্য প্লট তৈরি করছি। যদি পাহাড় সমতল করা না হয়, তাহলে কীভাবে আমরা কারখানা করব? যেসব শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের অনুমতি দিয়েছে, আমরা কোনোভাবেই ওই শর্ত লঙ্ঘন করিনি। আমরা অনুমতির আবেদন করে যে যে নকশা জমা দিয়েছিলাম, তাতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২-২৪ মিটার পর্যন্ত উচ্চতা রাখার কথা উল্লেখ ছিল। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ওই আড়াই হাজার একর ভূমিতে ১৬ লাখ গাছ লাগানো ছাড়াও ১৭টি পানির উৎস তৈরি করেছে বলে এনফোর্সমেন্ট দলের কাছে দাবি করেছে।
র‌্যাব ও আনোয়ারা ভূমি কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই অভিযানে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাব অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.