ক্রিকেট সিরিজ-মিসবাহরা এলেন

'শ্রীলংকাকে হারিয়ে এ মুহূর্তে দলের আত্মবিশ্বাস অনেক উঁচুতে ছুঁয়েছে। তারপরও বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। ঘরের মাঠে বাংলাদেশিরা কঠিন প্রতিপক্ষ।' সাধারণত কোনো দল ঢাকায় পা রাখার পরই এ ধরনের কথা বলে থাকে। তবে পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক আবুধাবি থেকেই মুশফিকদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন দলের সবাইকে। গত রাতে ঢাকায় পা রেখে ঠিকই একই সুরে কথা বললেন মোহাম্মদ হাফিজ। '


শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি, পাকিস্তান দল হিসেবে ভালো করতে পারে। তবে বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ ভাবছি না আমরা। কারণ আমরা জানি, বাংলাদেশ টেস্টখেলুড়ে দেশ। নিজেদের মাটিতে তারা বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ। তাছাড়া যে কোনো লড়াইয়েই
প্রতিপক্ষকে সমীহ করতে হয়। শ্রীলংকার মতো এই সিরিজও জিততে এসেছি আমরা।' আগের রাতে শ্রীলংকাকে টি২০ ম্যাচে ৫ উইকেটে হারিয়ে খুব বেশিক্ষণ উৎসব করতে পারেনি পাকিস্তান দল। কয়েক ঘণ্টার বিশ্রাম সেরেই ঢাকার বিমান ধরতে হয়েছে তাদের। গতরাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে পা রাখা দলটির চোখে তাই ক্লান্তি থাকলেও একটা বিজয়ীর আভা ছিল স্পষ্ট। ১৪ ক্রিকেটারের সঙ্গে ৯ জন অফিসিয়াল এসেছেন এ সফরে। শুধু নবাগত মোহাম্মদ খলিল পাকিস্তানের এ বহরে আসতে পারেননি। তিনি পাকিস্তান থেকে বিমান ধরে আজই ঢাকায় চলে আসবেন।
আরব আমিরাতের মরু জয় করে আসা পাকিস্তানের এ দলটিই আজ বাদে কাল মুশফিকদের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচ দিয়ে সিরিজ শুরু করবে। প্রায় এক মাসের লম্বা এই সফরে ১, ৩ ও ৬ ডিসেম্বর তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ঘুরে দুটি টেস্টও খেলবে পাকিস্তান। তবে এবার আর ঘরের মাঠের আবহ নিয়ে শারজাহ কিংবা আবুধাবি নয়, লড়তে হবে মিরপুর এবং চট্টগ্রামের মতো বাংলাদেশিদের ঘাঁটিতে। পাকিস্তান অধিনায়ক সতর্ক তাই ওই জায়গাতেই। 'বাংলাদেশ সফরটা আমাদের জন্য মোটেই সহজ হবে না। তারপরও আমার বিশ্বাস, দলের প্রত্যেকেই বাংলাদেশ সফরে আরও উন্নতি করবে এবং লংকার বিপক্ষে জয়ের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।'
২০০২ সালে শেষ বার দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ এসেছিল পাকিস্তান দল। দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতেই আসার কথা ছিল পাকিস্তান দলের; কিন্তু ওই সময় বিডিআর বিদ্রোহের কারণে সরকার থেকেই পাকিস্তান দলের নিরাপত্তা নিয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি। বিসিবি সে কথা পিসিবিকে জানিয়ে দিলে নাখোশ হন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা; কিন্তু তাদের ভুল ভাঙে বিশ্বকাপ খেলতে ঢাকায় আসার পর। এখানকার দর্শকদের সমর্থন পেয়ে তারা বাংলাদেশে খেলতে আসার ব্যাপারে ফের আগ্রহ দেখান।
ঢাকার মাঠে মুশফিক-সাকিবরা পাকিস্তানিদের কাছে ভয়ঙ্কর হলেও এখানেই সর্বশেষ বিশ্বকাপের সুখস্মৃতি লেগে আছে মিসবাহদের। কোয়ার্টার ফাইনালে মিরপুরের মাঠেই গ্যালারি ভরা সমর্থক নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিলেন আফ্রিদিরা। সে মাঠে আর যাই হোক, এবার গ্যালারি সঙ্গে পাচ্ছেন না পাকিস্তানিরা। তবে এবার দলটাকে বেশ গুছিয়ে এনেছেন মিসবাহ। স্পট ফিক্সিংয়ের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়ে সবাইকে একসঙ্গে বেঁধেছেন অধিনায়ক। টিম স্পিরিট বাড়িয়ে একটা ঐক্য গড়ে মাঠে নামছেন পাকিস্তানিরা। 'গত বছর পাকিস্তান ক্রিকেটের ওপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে, তা থেকে অনেকটা সামলে উঠেছে পাকিস্তান ক্রিকেট। মূলত ওই ঘটনার পরই পাকিস্তান দল একটা বন্ধনে জড়িত হয়েছে, ক্রিকেটারদের মধ্যে ঐক্য বেড়েছে, একটা সুশৃঙ্খল দল হয়ে তারা মাঠে নামছে। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য এটা ভালো একটা লক্ষণ।' বিশ্বকাপের পর শহিদ আফ্রিদির কাছ থেকে অধিনায়কত্ব বুঝে নিয়ে এখন পর্যন্ত দলকে দারুণভাবে সামলে যাচ্ছেন মিসবাহ। তার নেতৃত্বে জুন থেকে এ পর্যন্ত ১০টি ওয়ানডের মাত্র একটিতে হেরেছে পাকিস্তান। গত অক্টোবরে টেস্ট দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত মিসবাহর দল কোনো ম্যাচ হারেনি। দল নিয়ে তাই মিসবাহর গর্বটা সবার চেয়ে একটু হলেও বেশি। 'আমি মনে করি, সাফল্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে শৃঙ্খলা, আমাদের এ দলটি মাঠ এবং মাঠের বাইরের সেই শৃঙ্খলা ধরে রেখেছে। আশা করছি, বাংলাদেশ সফরেও এর ব্যতিক্রম হবে না।'

No comments

Powered by Blogger.