অপহরণকারীদের হাতে অস্ত্র দেখেননি রফিকুলের শাশুড়ি-সবার পরনে ছিল র্যাবের কালো পোশাক
"ছয়-সাতজন লোক হঠাৎ ঘরে ঢুকে বলল, 'আমরা র্যাবের লোক। কেউ কথা বলবেন না।' তারা রফিককে বলল, 'আপনি আমাদের সঙ্গে চলেন।' এসব কথা বলতে বলতে একজন আলমারি খুলল। একজন ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ার খুলল। তাদের গায়ে কালো পোশাক ছিল।
তারা রফিকের হাতে হ্যান্ডকাফ লাগাল। আমি আর স্নিগ্ধা (রফিকের স্ত্রী ঝরার বোন) বাসায় ছিলাম। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। দুই-এক মিনিটের মধ্যেই তারা গাড়ি নিয়ে চলে যায়।" নিহত বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদারের শাশুড়ি লিপি খাতুন গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠের কাছে তাঁর জামাতাকে অপহরণ ঘটনার এই বর্ণনা দেন। তবে তিনি অন্ধকারে কারো হাতে অস্ত্রজাতীয় কিছু দেখেননি বলেও জানান।
গতকাল ঝিনাইদহের শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামে গেলে এলাকাবাসীও একই রকম দাবি করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো অপহরণ ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। হত্যার পর চার দিন পার হয়ে গেলেও হয়নি কোনো মামলা। গতকাল র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনায় র্যাবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরিবারের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। তারা মনগড়া কথা বলছে। তবে আমরা ঘটনা তদন্ত করে দেখছি।'
সেই রাতে যা ঘটে : প্রথমে জানা যায়, রফিকুলের শ্বশুরবাড়ির পাশে ভায়রা সাইদুল ইসলাম সাইদের বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয় রফিকুলকে। তবে রফিকুলের শাশুড়ি লিপি খাতুন কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের বাড়ি থেকেই অপহৃত হন রফিকুল। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁদের বাড়িতে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রফিকুল। হঠাৎ ছায়-সাতজন লোক বাড়িতে আসে। তারা দরজার কড়া নেড়ে ঘরে ঢুকেই র্যাব বলে পরিচয় দেয়। ওই সময় বিদ্যুৎ না থানায় সবার চেহারা ও পোশাকের লেখা দেখতে পারেননি তিনি। তবে সবারই পরনে ছিল কালো পোশাক। তাদের একজন রফিকুলকে বলে, 'আমরা র্যাব। কেউ কথা বলবেন না। আমাদের সঙ্গে চলুন।' তখন রফিকুল বলেন, তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। কেন তিনি যাবেন? এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একজন রফিকুলের হাতে হাতকড়া পরায়। অন্য একজন ড্রয়ার ও আলমারির দরজা খুলে তল্লাশি চালায়। রফিককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় তারা। ওই সময় লিপি তাদের বাধা দিলে একজন তাঁকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
টাকাসহ লাগেজ খোয়া যাওয়ার ব্যাপারে লিপি বলেন, 'প্রথমে ভেবেছিলাম, সেটি নিয়ে গেছে। পরে দেখি বাসায় আছে। রাতে র্যাব গিয়ে সেটি বের করেছে।' ঝিনাইদহে রফিকুলের বাড়িতে (বাড়িটি রফিকুল তাঁর স্ত্রীকে কিনে দেন) তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন গাড়িচালক ও আত্মীয় আমির হোসেন। আমির হোসেন জানান, সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তিনি। ওই সময় রানা নামের এক প্রতিবেশী যুবক তাঁকে জানান, বাসায় 'ঝামেলা' হয়েছে। বাসায় ফিরে আমির দেখেন, রফিকুলের শাশুড়ি, স্ত্রীর বোন স্নিগ্ধা ও স্নিগ্ধার স্বামী সাইদ আছেন। তাঁরা আমিরকে বলেন, রফিকুলকে র্যাব ধরে নিয়ে গেছে। খবরটি আমির যেন দ্রুত ঢাকায় জানান। আমির এরপর ওই বাসায়ই ছিলেন। রাত ১০টার দিকে র্যাব এসে তাঁকে ও সাইদকে ধরে নিয়ে যায়। ঝিনাইদহের ক্যাম্পে তাঁদের দুজনকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। আমির যা জানেন তা র্যাবকে জানান। রাত ১টার সময় তাঁরা লাশ উদ্ধারের খবর পান। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে র্যাব গাড়িতে করে দুজনকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যায়।
রফিকুলের ছোট ভাই মফিজুর রহমান গতকাল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন আমরা কিছু বিষয়ে সন্দেহ করছি। কাছের লোকজনও জড়িত থাকতে পারে। র্যাব আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা চাই, র্যাব যদি না করে, তবে কে করেছে তা বের হোক।'
রাজধানীর বঙ্গবাজারের মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেট নিয়ে বিরোধের জের ধরে রফিক খুন হতে পারেন বলে মনে করছে অনেকে। তবে গতকাল তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদাররা এ আশঙ্কার বিরোধিতা করেছেন। মার্কেটটির সহসভাপতি শেখ মোহাম্মদ শাকিল, পরিচালক জহির মাদমুদ, হাজি আবদুল জব্বার, আবদুল হাই ও সৈয়দ এহসানুল হক টুটুল দাবি করেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কোনো বিরোধ নেই। তাঁরা বলেন, রফিকুল শ্রমিকদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী চক্রও জড়িত থাকতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলেন : অপহরণস্থলের পাশের বাড়ির বাসিন্দা আছিয়া খাতুন বলেন, 'র্যাবের মতো কালো পোশাক পরা লোকজন ঝুপঝাপ করে সাদা মাইক্রোবাস থেকে নেমে প্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা রফিকুলকে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়।' প্রতিবেশী শুকুর আলী ও আবদুর রশিদ বলেন, তাঁরা দূর থেকে দেখেছেন, অপহরণকারীরা ছিল কালো পোশাক পরা। গ্রামের আবদুল খালেক বলেন, 'আমি ঘরের ভেতর থেকে দেখেছি, কালো পোশাকধারীদের হাতে অস্ত্র ছিল।'
চাঁদপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ : রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের দোয়াভাঙায় এ সমাবেশ চলাকালে আধাঘণ্টার জন্য চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
তদন্তে নেই অগ্রগতি : ঝিনাইদহ র্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল হক বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দারা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। র্যাবের পোশাক পরে তুলে নেওয়ার ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' শৈলকুপা থানার ওসি আবদুল বারি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ মামলা করতে আসেনি। রফিকুলের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা মামলা করবেন।'
গতকাল ঝিনাইদহের শৈলকুপার আনন্দনগর গ্রামে গেলে এলাকাবাসীও একই রকম দাবি করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো অপহরণ ও হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। হত্যার পর চার দিন পার হয়ে গেলেও হয়নি কোনো মামলা। গতকাল র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনায় র্যাবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরিবারের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। তারা মনগড়া কথা বলছে। তবে আমরা ঘটনা তদন্ত করে দেখছি।'
সেই রাতে যা ঘটে : প্রথমে জানা যায়, রফিকুলের শ্বশুরবাড়ির পাশে ভায়রা সাইদুল ইসলাম সাইদের বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয় রফিকুলকে। তবে রফিকুলের শাশুড়ি লিপি খাতুন কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের বাড়ি থেকেই অপহৃত হন রফিকুল। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁদের বাড়িতে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রফিকুল। হঠাৎ ছায়-সাতজন লোক বাড়িতে আসে। তারা দরজার কড়া নেড়ে ঘরে ঢুকেই র্যাব বলে পরিচয় দেয়। ওই সময় বিদ্যুৎ না থানায় সবার চেহারা ও পোশাকের লেখা দেখতে পারেননি তিনি। তবে সবারই পরনে ছিল কালো পোশাক। তাদের একজন রফিকুলকে বলে, 'আমরা র্যাব। কেউ কথা বলবেন না। আমাদের সঙ্গে চলুন।' তখন রফিকুল বলেন, তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। কেন তিনি যাবেন? এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একজন রফিকুলের হাতে হাতকড়া পরায়। অন্য একজন ড্রয়ার ও আলমারির দরজা খুলে তল্লাশি চালায়। রফিককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় তারা। ওই সময় লিপি তাদের বাধা দিলে একজন তাঁকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
টাকাসহ লাগেজ খোয়া যাওয়ার ব্যাপারে লিপি বলেন, 'প্রথমে ভেবেছিলাম, সেটি নিয়ে গেছে। পরে দেখি বাসায় আছে। রাতে র্যাব গিয়ে সেটি বের করেছে।' ঝিনাইদহে রফিকুলের বাড়িতে (বাড়িটি রফিকুল তাঁর স্ত্রীকে কিনে দেন) তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন গাড়িচালক ও আত্মীয় আমির হোসেন। আমির হোসেন জানান, সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তিনি। ওই সময় রানা নামের এক প্রতিবেশী যুবক তাঁকে জানান, বাসায় 'ঝামেলা' হয়েছে। বাসায় ফিরে আমির দেখেন, রফিকুলের শাশুড়ি, স্ত্রীর বোন স্নিগ্ধা ও স্নিগ্ধার স্বামী সাইদ আছেন। তাঁরা আমিরকে বলেন, রফিকুলকে র্যাব ধরে নিয়ে গেছে। খবরটি আমির যেন দ্রুত ঢাকায় জানান। আমির এরপর ওই বাসায়ই ছিলেন। রাত ১০টার দিকে র্যাব এসে তাঁকে ও সাইদকে ধরে নিয়ে যায়। ঝিনাইদহের ক্যাম্পে তাঁদের দুজনকে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। আমির যা জানেন তা র্যাবকে জানান। রাত ১টার সময় তাঁরা লাশ উদ্ধারের খবর পান। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে র্যাব গাড়িতে করে দুজনকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যায়।
রফিকুলের ছোট ভাই মফিজুর রহমান গতকাল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এখন আমরা কিছু বিষয়ে সন্দেহ করছি। কাছের লোকজনও জড়িত থাকতে পারে। র্যাব আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা চাই, র্যাব যদি না করে, তবে কে করেছে তা বের হোক।'
রাজধানীর বঙ্গবাজারের মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেট নিয়ে বিরোধের জের ধরে রফিক খুন হতে পারেন বলে মনে করছে অনেকে। তবে গতকাল তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদাররা এ আশঙ্কার বিরোধিতা করেছেন। মার্কেটটির সহসভাপতি শেখ মোহাম্মদ শাকিল, পরিচালক জহির মাদমুদ, হাজি আবদুল জব্বার, আবদুল হাই ও সৈয়দ এহসানুল হক টুটুল দাবি করেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কোনো বিরোধ নেই। তাঁরা বলেন, রফিকুল শ্রমিকদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালী চক্রও জড়িত থাকতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলেন : অপহরণস্থলের পাশের বাড়ির বাসিন্দা আছিয়া খাতুন বলেন, 'র্যাবের মতো কালো পোশাক পরা লোকজন ঝুপঝাপ করে সাদা মাইক্রোবাস থেকে নেমে প্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা রফিকুলকে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায়।' প্রতিবেশী শুকুর আলী ও আবদুর রশিদ বলেন, তাঁরা দূর থেকে দেখেছেন, অপহরণকারীরা ছিল কালো পোশাক পরা। গ্রামের আবদুল খালেক বলেন, 'আমি ঘরের ভেতর থেকে দেখেছি, কালো পোশাকধারীদের হাতে অস্ত্র ছিল।'
চাঁদপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ : রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের দোয়াভাঙায় এ সমাবেশ চলাকালে আধাঘণ্টার জন্য চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
তদন্তে নেই অগ্রগতি : ঝিনাইদহ র্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল হক বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দারা মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। র্যাবের পোশাক পরে তুলে নেওয়ার ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' শৈলকুপা থানার ওসি আবদুল বারি বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ মামলা করতে আসেনি। রফিকুলের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা মামলা করবেন।'
No comments