বিতর্কিত সেই প্রতিষ্ঠানই গম আনছে, খালাস চট্টগ্রামে by আশরাফুল হক রাজীব
'কাগজপত্রে অসংগতি থাকার পরও এলএমজের কাছ থেকে গম নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।' বিতর্কিত একটি ভারতীয় সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গম আমদানির সিদ্ধান্তে অনড় থাকার বিষয়টি এভাবেই স্বীকার করলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান।
তাঁর ভাষ্য, এখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ দেখা হয়েছে।
ভারতীয় সরবরাহকারী এলএমজে ইন্টারন্যাশনাল খাদ্য অধিদপ্তরে আগে থেকেই বিতর্কিত। তবে জাহাজভর্তি পচা গম আনা এবং সময়সূচি না মানার পরও তারা রেহাই পেয়ে যায় কালো তালিকাভুক্ত থেকে। এ ক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের ভারতীয় এ কম্পানিটির প্রতি 'বিশেষ দুর্বলতা' থাকায় এটি সম্ভব হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এবার এই কম্পানির মাধ্যমেই গম আনার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে কাগজপত্রে অসঙ্গতি থাকার পরও এলএমজের কাছ থেকে গম নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। এখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ দেখা হয়েছে। কারো ব্যক্তিস্বার্থ নয়। যাই হোক ৯ জানুয়ারির (আজ) মধ্যে তাদের গম সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে সরকার।'
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, নানা দিক বিবেচনা করে এলএমজেকে চট্টগ্রাম বন্দরে গম খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমভি মাইটি রয়েল জাহাজটি এসব গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষা করছে।
চুক্তি অনুযায়ী এলএমজের জাহাজ মংলা বন্দরে গম খালাসের কথা ছিল। কিন্তু কম্পানি মংলার পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দরে গম খালাসের অনুমতি চায়। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মংলা বন্দরে মালবাহী জাহাজ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়- এ অভিযোগ এনে এলএমজে চট্টগ্রামে গম খালাসের অনুমতি চেয়েছে। এর আগেও একাধিক কম্পানি এ ধরনের অভিযোগ করে বলেও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
খাদ্য অধিদপ্তর এলএমজের সঙ্গে ৫০ হাজার টন গম সরবরাহ করার চুক্তি করে গত বছরের ১৭ মে। ৪০ দিন অর্থাৎ ২৬ জুনের মধ্যে এ গম সরবরাহের কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে তারা গম সরবরাহে ব্যর্থ হলে অধিদপ্তর সময় বাড়িয়ে দেয়। বর্ধিত সময়েও তারা গম সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়। বর্ধিত সময় ২৪ আগস্টের মধ্যেও তারা সব গম দিতে পারেনি। তখনো বাকি থাকে ১১ হাজার ৭৫০ টন গম। এই গম সরবরাহের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও খাদ্য অধিদপ্তর তা নেয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তর এলএমজের পক্ষ থেকে পাঠানো জাহাজীকরণের কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। সেখানে দাবি করা হয়, মন্ত্রণালয় অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যেই জাহাজীকরণ করা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে খাদ্য অধিদপ্তর এলএমজের পাঠানো জাহাজীকরণের দলিল 'বিল অব ল্যাডিং' সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ে যে কাগজপত্র উপস্থাপন করেছে, তা ছিল ভুয়া। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খানের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বচসা হয়। বিষয়টি গড়ায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক পর্যন্ত। মন্ত্রী তাঁর দপ্তরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডেকে পাঠান অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুশফিকা ইকফাৎও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মহাপরিচালক দাবি করেন, তাঁর সব কিছুই সঠিক। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা খাদ্যমন্ত্রীকে বলেন, ২৪ আগস্ট ভারতের চেন্নাইয়ের করাইকল বন্দর থেকে জাহাজীকরণ করা হলে তা বাংলাদেশে আসতে তিন দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। অথচ লেগেছে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়। অতিরিক্ত সময়ের জন্যও অনুমোদন নেয়নি খাদ্য অধিদপ্তর।
জনা যায়, পরে কাগজপত্রে গড়মিল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা চায় এলএমজে এবং নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করার প্রস্তাব দেয়। গত ১২ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবকে জানান, কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও এর আগে গম কেনার নজির রয়েছে। গত অর্থবছরে ইউক্রেন থেকে যে গম আনা হয়েছে তার জিটুজি-২ এর বিল অব ল্যাডিংসহ সব কাগজপত্র ছিল চুক্তির তারিখের আগের। অর্থাৎ যে তারিখে গম আমদানির জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, তার আগেই জাহাজে গম তুলে দেওয়া হয়েছে। জাহাজের দলিল অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার পরও সেই গম গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশে ২০১১ সালে সাত মাসের মধ্যে তিনবার পচা গম পাঠায় এলএমজে। সেই গম খাদ্য অধিদপ্তর গ্রহণ করেনি। পরে এলএমজে সেই গম ফেরতও নেয়নি। বাংলাদেশি বেসরকারি কম্পানির কাছে এ গম বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ খাদ্য অধিদপ্তরের রাসায়নিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল গমগুলো ব্যবহার করার অনুপযুক্ত। এসব গম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এরপর ২০১২ সালেও নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করেছে এলএমজে।
ভারতীয় সরবরাহকারী এলএমজে ইন্টারন্যাশনাল খাদ্য অধিদপ্তরে আগে থেকেই বিতর্কিত। তবে জাহাজভর্তি পচা গম আনা এবং সময়সূচি না মানার পরও তারা রেহাই পেয়ে যায় কালো তালিকাভুক্ত থেকে। এ ক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের ভারতীয় এ কম্পানিটির প্রতি 'বিশেষ দুর্বলতা' থাকায় এটি সম্ভব হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এবার এই কম্পানির মাধ্যমেই গম আনার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে কাগজপত্রে অসঙ্গতি থাকার পরও এলএমজের কাছ থেকে গম নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। এখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ দেখা হয়েছে। কারো ব্যক্তিস্বার্থ নয়। যাই হোক ৯ জানুয়ারির (আজ) মধ্যে তাদের গম সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে সরকার।'
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, নানা দিক বিবেচনা করে এলএমজেকে চট্টগ্রাম বন্দরে গম খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমভি মাইটি রয়েল জাহাজটি এসব গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষা করছে।
চুক্তি অনুযায়ী এলএমজের জাহাজ মংলা বন্দরে গম খালাসের কথা ছিল। কিন্তু কম্পানি মংলার পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দরে গম খালাসের অনুমতি চায়। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মংলা বন্দরে মালবাহী জাহাজ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়- এ অভিযোগ এনে এলএমজে চট্টগ্রামে গম খালাসের অনুমতি চেয়েছে। এর আগেও একাধিক কম্পানি এ ধরনের অভিযোগ করে বলেও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
খাদ্য অধিদপ্তর এলএমজের সঙ্গে ৫০ হাজার টন গম সরবরাহ করার চুক্তি করে গত বছরের ১৭ মে। ৪০ দিন অর্থাৎ ২৬ জুনের মধ্যে এ গম সরবরাহের কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে তারা গম সরবরাহে ব্যর্থ হলে অধিদপ্তর সময় বাড়িয়ে দেয়। বর্ধিত সময়েও তারা গম সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়। বর্ধিত সময় ২৪ আগস্টের মধ্যেও তারা সব গম দিতে পারেনি। তখনো বাকি থাকে ১১ হাজার ৭৫০ টন গম। এই গম সরবরাহের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও খাদ্য অধিদপ্তর তা নেয়নি। গত ৯ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তর এলএমজের পক্ষ থেকে পাঠানো জাহাজীকরণের কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। সেখানে দাবি করা হয়, মন্ত্রণালয় অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যেই জাহাজীকরণ করা হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে খাদ্য অধিদপ্তর এলএমজের পাঠানো জাহাজীকরণের দলিল 'বিল অব ল্যাডিং' সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ে যে কাগজপত্র উপস্থাপন করেছে, তা ছিল ভুয়া। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খানের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বচসা হয়। বিষয়টি গড়ায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক পর্যন্ত। মন্ত্রী তাঁর দপ্তরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডেকে পাঠান অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুশফিকা ইকফাৎও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মহাপরিচালক দাবি করেন, তাঁর সব কিছুই সঠিক। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা খাদ্যমন্ত্রীকে বলেন, ২৪ আগস্ট ভারতের চেন্নাইয়ের করাইকল বন্দর থেকে জাহাজীকরণ করা হলে তা বাংলাদেশে আসতে তিন দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। অথচ লেগেছে সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়। অতিরিক্ত সময়ের জন্যও অনুমোদন নেয়নি খাদ্য অধিদপ্তর।
জনা যায়, পরে কাগজপত্রে গড়মিল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা চায় এলএমজে এবং নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করার প্রস্তাব দেয়। গত ১২ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবকে জানান, কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও এর আগে গম কেনার নজির রয়েছে। গত অর্থবছরে ইউক্রেন থেকে যে গম আনা হয়েছে তার জিটুজি-২ এর বিল অব ল্যাডিংসহ সব কাগজপত্র ছিল চুক্তির তারিখের আগের। অর্থাৎ যে তারিখে গম আমদানির জন্য ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, তার আগেই জাহাজে গম তুলে দেওয়া হয়েছে। জাহাজের দলিল অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার পরও সেই গম গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশে ২০১১ সালে সাত মাসের মধ্যে তিনবার পচা গম পাঠায় এলএমজে। সেই গম খাদ্য অধিদপ্তর গ্রহণ করেনি। পরে এলএমজে সেই গম ফেরতও নেয়নি। বাংলাদেশি বেসরকারি কম্পানির কাছে এ গম বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ খাদ্য অধিদপ্তরের রাসায়নিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল গমগুলো ব্যবহার করার অনুপযুক্ত। এসব গম মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এরপর ২০১২ সালেও নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করেছে এলএমজে।
No comments