বাহাত্তরের হাতে লেখা সংবিধানের অনুলিপি, নতুন ১০৭- বইমেলা প্রতিদিন
প্রকৃতিতে পরির্বতন এখন স্পষ্ট। দিন দিন উষ্ণতা বাড়ছে। বসনত্মের মাতাল সমীরণে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। রোদ মেঘের লুকোচুরি খেলাও শুরম্ন হয়ে গেছে। বুধবার দুপুর থেকেই সূর্যের আর দেখা মেলেনি।
নগরীর আকাশে এদিন মেঘেরই দাপট ছিল। এমনই নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে নগরবাসিন্দারা এসেছিলেন বইমেলায়। ঘুরেছেন বেশ আয়েশেই। এখন যাঁরাই মেলায় আসছেন, কাউকেই আর খালি হাতে যেতে দেখা যাচ্ছে না। সবার হাতেই থাকছে এক বা একাধিক বই। এদিন মেলায় এসেছে ১০৭টি নতুন বই। এর মধ্যে রয়েছে হসত্মলিখিত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান গ্রন্থটির মুদ্রিত কপি। এছাড়া নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও কবি-সাহিত্যিকদের উপস্থিতি তো ছিলই।বাংলাদেশের প্রথম হসত্মলিখিত সংবিধান ॥ বাংলায় হসত্মলিখিত ও অলঙ্কৃৃত বাংলাদেশের ('৭২-এর) প্রথম সংবিধানের অবিকল অনুলিপি বইমেলায় এসেছে বুধবার। এনেছে আগামী প্রকাশনী। সংবিধানটি মুদ্রণের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মোনায়েম সরকার। এদিন নজরম্নল মঞ্চে এই সংবিধান গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন ব্যারিস্টার আমির-উল-ইসলাম। এ সময় আরও ছিলেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মোনায়েম সরকার, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও প্রকাশক ওসমান গনি। ১৯৭২ সালে লিখিত এই সংবিধানটির লিপিকার হলেন এ কে এম আব্দুর রউফ। সে সময় সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জয়নুল আবেদিন। বর্তমানে ১১০ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত এই সংবিধান গ্রন্থটির কভার অঙ্কন করেছেন চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চোধুরী, আবুল বারক আলভী ও জুনাবুল ইসলাম। সার্বিক অঙ্গসজ্জায় ছিলেন শিল্পী হাশেম খান। ম্যাট পেপারে মুদ্রিত এই গ্রন্থটির মূল্য তিন হাজার টাকা। এই লিখিত সংবিধানে ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী ১৬৭ সাংসদসহ ৩৯৮ ব্যক্তির স্বাৰর রয়েছে।
মোড়ক উন্মোচন ॥ এদিন মেলায় এক ডজনেরও বেশি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। এর মধ্যে প্রবাসী লেখক শামীম আজাদের কাব্যগ্রন্থ 'জন্মান্ধ জুপিটার' এর মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। বইটি প্রসঙ্গে শামীম আজাদ বলেন, বইটি আমি প্রবাসে বসেই লিখেছি। আমরা যাঁরা দেশের মানচিত্রের বাইরে অর্থাৎ বৈশ্বিক মানচিত্রে থাকি, তাঁরা সব সময়ই দেশের মুখ উজ্জ্বলেন জন্যই কাজ করি। দেশের কথা ভাবি, দেশ নিয়ে লেখালেখি ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই করি। আর প্রতি বছর এই মেলার সময় দেশে আসি। সারা বছর নিশ্বাস নেয়ার জন্য এই মেলা আমাদের অক্সিজেন যোগায়। এই মেলার ধুলা, ফুটপাথে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া, এখানে-ওখানে আড্ডা দেয়া সবই ভাল লাগে। আর এ টানেই ফেব্রম্নয়ারি মাসে ছুটে আসি দেশে। এবারে মেলায় তাঁর আরও দু'টি বই এসেছে। তার একটি বিলেতের স্নাপ শর্ট এনেছে মাওলা, অন্যটি স্মৃতি কাব্য এনেছে বিদ্যা প্রকাশ। এদিন সজীব সাহার 'চাকরি পাওয়ার কৌশল' বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে এম আজাদ চৌধুরী।
নতুন বই ॥ এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১০৭টি। এদিনও কবিতার বই সবচেয়ে বেশি, ৩৫টি। উপন্যাস তার অর্ধেক ১৭টি, প্রবন্ধ ৯টি ও গল্প ৮টি উলেস্নখযোগ্য। নতুন বইগুলোর মধ্যে রয়েছে লেখক মাইনউদ্দিন কাজলের একাত্তরের মেয়ে, মুক্তিযাদ্ধের যুই পলাশ ও সাতটি নির্বাচিত উপন্যাস, সব বই এনেছে রিদম প্রকাশনা। উলিস্নখিত বই তিনটির প্রথম দু'টির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী হাশেম খান, আর শেষটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। এছাড়া সরকার আব্দুল মান্নানের বাংলা কথা সাহিত্য ভিন্ন স্বর ভিন্ন শৈলী এনেছে অনিন্দ্য, সেলিনা হোসেনের পুটুস পুটুসের জন্মদিন এনেছে জনতা, বাবুল ভট্টাচার্যের চলচ্চিত্রের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এনেছে শ্রাবণ, অনুপ সাদি সম্পাদিত বাঙালীর গণতান্ত্রিক চিনত্মাধারা এনেছে উত্যাদি, নির্মলেন্দু গুণের অনুবাদ গ্রন্থ গীনস বার্গের সঙ্গে এনেছে শ্রাবণ, মোহীত অনূদিত সেক্সপিয়ারের এ্যান্টনি এ্যান্ড কিওপেট্টা ও মাহবুবুল হকের কৃতিজন কৃতিকথা এনেছে অনুপম, মহাদেব সাহার প্রথম পাঁচ কাব্যগ্রন্থ এনেছে বিজয়, হায়াৎ মামুদের সময়ের সঙ্গে বোঝাপরা এনেছে কৃষ্ণচুড়া, মোসত্মাক আহমেদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান এনেছে কথামেলা, মিথুশিলাক মুরমুর বীর গাঁথা মুক্তিযোদ্ধা আদিবাসীদের অবদান এনেছে নওরোজ উলেস্নখযোগ্য।
No comments