ছেলের অভিষেক নিয়ে রোমাঞ্চিত চন্দরপল
১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া চার দিনের টুর্নামেন্টে লিওয়ার্ড আইল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হলো গায়ানার এক বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি। সেই একই টুর্নামেন্টে একই দলের বিপক্ষে অভিষেক হতে যাচ্ছে গায়ানার আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। ২১ বছর আগের সেই অভিষিক্তের নাম শিবনারায়ণ চন্দরপল। এবার অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ব্যাটসম্যানের নাম ত্যাগনারায়ণ চন্দরপল। একই দলের বিপক্ষে একই দলের হয়ে একই মাসে বাপ-বেটার অভিষেক! বাস্তব কখনো কখনো সত্যিই কল্পনার চেয়ে অদ্ভুত।শুরুটায় এক বিন্দু মিলছেন বাপ-বেটা, একটা জায়গায় আবার দুজনকে আলাদাও করছে শুরু। এখানে জহুরি চোখের কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন খেমরাজ চন্দরপল। ভদ্রলোক শিবনারায়ণের বাবা। ছেলের ক্রিকেটের হাতেখড়ি, মৌলিক ব্যাপারগুলো শেখা বাবার হাত ধরেই। ছেলেকে বিশ্বসেরা হওয়ার ভিত গড়ে দেওয়ার পর নাতিকে নিয়েও পড়লেন খেমরাজ। ত্যাগনারায়ণের ১০ বছর বয়সেই ঘোষণা দিলেন, ‘শিবের চেয়েও ভালো ত্যাগ, ওর হাতে শিবের চেয়েও অনেক বেশি শট।’ সেটার প্রমাণ দিয়েই যেন ১৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হতে যাচ্ছে ত্যাগনারায়ণের। অভিষেকের সময় শিবনারায়ণের বয়স ছিল ১৮। বিখ্যাত বাবাকে পেছনে ফেলেই শুরু হচ্ছে ত্যাগের পথচলা।
এই একটা জায়গায় বুঝি পেছনে পড়াও গর্বের। বাবাকে ছাপিয়ে যাওয়া ছেলের যেকোনো অর্জন সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দেয় হয়তো বাবাকেই! মৃদুভাষী চন্দরপলের কণ্ঠেও কাল ফুটে উঠল সেই গর্ব আর তৃপ্তি, ‘অবশ্যই খুব রোমাঞ্চিত আমি। ওর সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কিছু কাজ করে এসেছি। এখনো অনেক কিছুই শিখতে হবে ওকে। তবে ওর বয়স মাত্রই ১৬। এত তাড়াতাড়ি শুরু করাটা সব সময়ই দারুণ, শেখার সময় অনেক বেশি পাবে।’
নিজের ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ততায় ছেলের গড়ে ওঠায় সেভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। তবে গত কিছুদিনে ক্লাব ক্রিকেটে অনেকবার একসঙ্গে ব্যাটিং করেছেন দুজন। গড়েছেন দারুণ কিছু জুটি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে ছেলে। বোলিংয়ের হাতটাও খারাপ নয়। কিন্তু চন্দরপল যে অতৃপ্ত ক্রিকেট-ক্ষুধার প্রতীক! ছেলেকে নিয়ে উপলব্ধিতেও ফুটে উঠল তা, ‘নিজের খেলার প্রতিটি দিক নিয়েই কাজ করতে হবে, উন্নতির চেষ্টা করতে হবে প্রতিনিয়ত। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’
সিলেট রয়্যালসের হয়ে বিপিএল খেলতে চলে এসেছেন বলে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ছেলের অভিষেক দেখতে পারবেন না। তবে বিখ্যাত বাবার ছেলে হওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার মন্ত্র মাথায় ঢুকিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে আসার আগে, ‘আমি ব্র্যান্ডনকে (ত্যাগনারায়ণের আরেক নাম) বলেছি, দেখো, তুমি স্রেফ তোমার মতোই হতে পারবে, আমার মতো নয়। কোনো চাপ নেবে না, থাকবে নিজের মতো।’
No comments