'অপরাধীদের' বেকসুর খালাস-সমালোচনার মুখে যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধ আদালত
সাবেক যুগোস্লাভিয়ার জন্য গঠিত জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটিওয়াই) নজিরবিহীন সমালোচনার মুখে পড়েছে। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থেকে 'চিহ্নিত' কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি অব্যাহতি পাওয়ায় সমালোচনা উঠেছে খোদ আদালতের ভেতর থেকেই।
নেদারল্যান্ডসের হেগে স্থাপিত এ আদালতের একটি রায়কে 'ন্যায়বিচারের যে কোনো ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক' বলে অভিযোগ করেছেন একজন বিচারক। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ একে 'রাজনৈতিক আদালত' বলেও মন্তব্য করেছেন।
নব্বইয়ের দশকে বেশ কয়েক বছর স্থায়ী যুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র (এসএফআর যুগোস্লাভিয়া) ভেঙে যায়। কয়েক দফার রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। যুদ্ধকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ যুদ্ধাপরাধের বিচারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আইসিটিওয়াই গঠন করে। সে অনুযায়ী, প্রায় দুই দশক ধরে আদালত তাঁর বিচারকাজ পরিচালনা করছেন।
গত দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ক্রোয়েশীয় সামরিক কর্মকর্তা ও কসোভোর গেরিলা যোদ্ধা আপিল করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আবার অনেকের যুদ্ধাপরাধের বিচার পুনরায় শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে এতদিনে একজনও ক্রোয়েট, কসোভীয় অথবা বসনীয় শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা বা রাজনীতিককে সাজা ভোগ করতে হয়নি। বিপরীতে একই ধরনের অপরাধের দায়ে বিপুল সংখ্যক সার্বীয় সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা জেল খাটছেন। আদালতের এই আচরণকে 'পক্ষপাতমূলক' বলে অভিযোগ করে সার্বিয়া। কয়েকটি রায়কে 'লজ্জাজনক' বলে অভিহিত করে। এ ছাড়া এই আদালতকে সহায়তা করা কমিয়ে দেওয়ারও ঘোষণা দেয় তারা। আদালতের বিরুদ্ধে সার্বিয়াবিরোধী অবস্থানের অভিযোগ ওঠা ছাড়াও আদালতের একটি রায়কে 'ন্যায়বিচারের যে কোনো ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক' বলেছেন আদালতেরই এক বিচারক।
সম্প্রতি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন কসোভোর সাবেক প্রধানমন্ত্রী রামুশ হারাদিনাজ। ক্রোয়েশীয় জেনারেল আন্তে গোতোভিনা। অন্যতম জ্যেষ্ঠ এ ক্রোয়েট 'যুদ্ধাপরাধীর' প্রাথমিকভাবে ২৪ বছরের জেল হয়েছিল। তবে আপিল আবেদনের ভিত্তিতে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। পাঁচজন আপিল বিচারপতির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ তিনজন গোতোভিনাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে মত দেন। দুজন রায় দেন বিপক্ষে।
বিচারপতি ফাসতো পোচার অভিযোগ করেন, 'যেসব যুক্তির ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তাতে অনেক ভুল আছে।' কয়েকজন সহকর্মীর যুক্তিতর্ককে 'একেবারে হাস্যকর' বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আইসিটিওয়াইয়ের প্রধান কেঁৗসুলি সার্জ ব্রামের্তজের বিশেষ উপদেষ্টা ফ্রেদেরিক সুইনেন বিচারপতিদের ব্যবহৃত ভাষাকে 'অস্বাভাবিক' বলে মন্তব্য করেন।
হেগের ক্লিনজেনডিল ইনস্টিটিউটের বলকান বিশেষজ্ঞ মারিয়েন দুকাসে রোজিয়ের বলেন, আদালতের এই সুনাম নষ্টের ব্যাপারটি একটি জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। 'জটিল এই জন্য যে ১৯৯৩ সালে এর (আদালতের) যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেকগুলো উদ্দেশ্যে পূরণের লক্ষ্যে।' তাঁর মতে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা তো ছিলই পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনও ছিল আদালতের লক্ষ্য। আর তা হলো, সংঘাত মিটমাট করে বলকানদের মধ্যে পুনরায় সংহতি স্থাপন করা। কিন্তু হারাদিনাজ ও গোতোভিনার মতো ব্যক্তিদের খালাশ দেওয়ার ব্যাপারটি তা কঠিন করবে বলে তিনি মনে করেন। একজন বলকান সাংবাদিক আদালতের এই 'গণহারে' খালাস দেওয়ার ঘটনাকে 'শীতকালীন সেল' বলে মন্তব্য করেন। আইসিটিওয়াই-কে 'রাজনৈতিক আদালত' বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, '১৬১ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করাসহ গত ২০ বছরে যে সুনাম অর্জন করেছে আদালত, তা ভেস্তে যেতে বসেছে।' তার মতে, 'এটা আদালতের এক ধরনের আত্মহত্যার শামিল।' এমন অভিযোগও উঠেছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রভাব রয়েছে আদালতের ওপর।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বলকান অঞ্চলের বিশাল দেশ এসএফআর যুগোস্লাভিয়ার আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ফেডারেল) মধ্যে ছিল ছয়টি প্রজাতন্ত্র_স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো এবং সার্বিয়া। সার্বিয়ার দুটি স্বশাসিত অঞ্চল ভোজভোডিনা ও কসোভো। এর মধ্যে কসোভো ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার ঘোষণা দেয়। সূত্র : এএফপি।
নব্বইয়ের দশকে বেশ কয়েক বছর স্থায়ী যুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র (এসএফআর যুগোস্লাভিয়া) ভেঙে যায়। কয়েক দফার রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। যুদ্ধকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ যুদ্ধাপরাধের বিচারে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আইসিটিওয়াই গঠন করে। সে অনুযায়ী, প্রায় দুই দশক ধরে আদালত তাঁর বিচারকাজ পরিচালনা করছেন।
গত দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ক্রোয়েশীয় সামরিক কর্মকর্তা ও কসোভোর গেরিলা যোদ্ধা আপিল করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আবার অনেকের যুদ্ধাপরাধের বিচার পুনরায় শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফলে এতদিনে একজনও ক্রোয়েট, কসোভীয় অথবা বসনীয় শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা বা রাজনীতিককে সাজা ভোগ করতে হয়নি। বিপরীতে একই ধরনের অপরাধের দায়ে বিপুল সংখ্যক সার্বীয় সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতা জেল খাটছেন। আদালতের এই আচরণকে 'পক্ষপাতমূলক' বলে অভিযোগ করে সার্বিয়া। কয়েকটি রায়কে 'লজ্জাজনক' বলে অভিহিত করে। এ ছাড়া এই আদালতকে সহায়তা করা কমিয়ে দেওয়ারও ঘোষণা দেয় তারা। আদালতের বিরুদ্ধে সার্বিয়াবিরোধী অবস্থানের অভিযোগ ওঠা ছাড়াও আদালতের একটি রায়কে 'ন্যায়বিচারের যে কোনো ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক' বলেছেন আদালতেরই এক বিচারক।
সম্প্রতি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন কসোভোর সাবেক প্রধানমন্ত্রী রামুশ হারাদিনাজ। ক্রোয়েশীয় জেনারেল আন্তে গোতোভিনা। অন্যতম জ্যেষ্ঠ এ ক্রোয়েট 'যুদ্ধাপরাধীর' প্রাথমিকভাবে ২৪ বছরের জেল হয়েছিল। তবে আপিল আবেদনের ভিত্তিতে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। পাঁচজন আপিল বিচারপতির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ তিনজন গোতোভিনাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে মত দেন। দুজন রায় দেন বিপক্ষে।
বিচারপতি ফাসতো পোচার অভিযোগ করেন, 'যেসব যুক্তির ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তাতে অনেক ভুল আছে।' কয়েকজন সহকর্মীর যুক্তিতর্ককে 'একেবারে হাস্যকর' বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আইসিটিওয়াইয়ের প্রধান কেঁৗসুলি সার্জ ব্রামের্তজের বিশেষ উপদেষ্টা ফ্রেদেরিক সুইনেন বিচারপতিদের ব্যবহৃত ভাষাকে 'অস্বাভাবিক' বলে মন্তব্য করেন।
হেগের ক্লিনজেনডিল ইনস্টিটিউটের বলকান বিশেষজ্ঞ মারিয়েন দুকাসে রোজিয়ের বলেন, আদালতের এই সুনাম নষ্টের ব্যাপারটি একটি জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। 'জটিল এই জন্য যে ১৯৯৩ সালে এর (আদালতের) যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেকগুলো উদ্দেশ্যে পূরণের লক্ষ্যে।' তাঁর মতে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা তো ছিলই পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনও ছিল আদালতের লক্ষ্য। আর তা হলো, সংঘাত মিটমাট করে বলকানদের মধ্যে পুনরায় সংহতি স্থাপন করা। কিন্তু হারাদিনাজ ও গোতোভিনার মতো ব্যক্তিদের খালাশ দেওয়ার ব্যাপারটি তা কঠিন করবে বলে তিনি মনে করেন। একজন বলকান সাংবাদিক আদালতের এই 'গণহারে' খালাস দেওয়ার ঘটনাকে 'শীতকালীন সেল' বলে মন্তব্য করেন। আইসিটিওয়াই-কে 'রাজনৈতিক আদালত' বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, '১৬১ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করাসহ গত ২০ বছরে যে সুনাম অর্জন করেছে আদালত, তা ভেস্তে যেতে বসেছে।' তার মতে, 'এটা আদালতের এক ধরনের আত্মহত্যার শামিল।' এমন অভিযোগও উঠেছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রভাব রয়েছে আদালতের ওপর।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বলকান অঞ্চলের বিশাল দেশ এসএফআর যুগোস্লাভিয়ার আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ফেডারেল) মধ্যে ছিল ছয়টি প্রজাতন্ত্র_স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র, মন্টিনেগ্রো এবং সার্বিয়া। সার্বিয়ার দুটি স্বশাসিত অঞ্চল ভোজভোডিনা ও কসোভো। এর মধ্যে কসোভো ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার ঘোষণা দেয়। সূত্র : এএফপি।
No comments