চরাচর-কাঁকড়াভুক বেজি by ইশতিয়াক হাসান
বছর দুয়েক আগের কথা। ঘুরতে বেরিয়েছিলাম মৌলভীবাজারের রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুরের বনে। একেবারে ভোরে বেরিয়ে পড়েছিলাম সঙ্গী-সাথিসহ। শীতকাল হওয়ায় কুয়াশার কারণে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল না কিছু। এর মধ্যেই হঠাৎ একটা ছড়ার কিনারা ঘেঁষে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে দেখলাম দুটো প্রাণীকে।
আকারে বেজির সঙ্গে বেশ মিল আছে, কিন্তু এটি যে বেজি- এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। গায়ে-গতরে বেশ বড়, লেজ লোমশ। চেহারাটাও ঠিক পুরোপুরি আমাদের চেনা বেজির মতো নয়। মনে পড়ল, আগে একবার লাঠিটিলার জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েও সন্দেহের দোলাচলে দুলেছিলাম এ রকম তিনটি প্রাণী দেখে। সেগুলোও ছড়ার কিনারেই ঘোরাফেরা করছিল। সেবার ছবি তুলতে না পারলেও এবার আর ভুল করলাম না। ঢাকায় ফিরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনিরুল ভাইকে দেখাতেই তিনি নিশ্চিত করলেন এটা কাঁকড়াভুক বেজি।
মাথাসহ কাঁকড়াভুক বেজির শরীরের দৈর্ঘ্য ১৮ ইঞ্চি। লোমশ লেজটা লম্বায় প্রায় ১২ ইঞ্চি। গায়ে বেশ পুরু লোম থাকে। তবে এদের চেনা যায় গলার দুই পাশে বৈশিষ্ট্যসূচক সাদা দাগ থেকে। গায়ের রং ধূসর। এমনিতে দিনে চলাফেরাই তাদের পছন্দ। তবে লাজুক স্বভাবের কারণে মানুষ বা অন্য প্রাণীদের দেখলে তারা লুকিয়ে পড়ে। সাধারণত ভোরের দিকে ছড়ার আশপাশে ব্যাঙ, কাঁকড়া আর মাছ খুঁজতে দেখা যায় এদের। কখনো বনের মাঝখানের খোলা জায়গায়ও এরা শিকারের খোঁজে ঘোরাঘুরি করে। তারা একা, জোড়া বেঁধে বা তিন-চারটা একত্রে চলাফেরা করে। এরা সাধারণত গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এদের প্রজননের সময় মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত।
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হলো ছোট বেজি আর বড় বেজি। কাঁকড়াভুক বেজি নামে এর তৃতীয় একটি প্রজাতি যে এ দেশে আছে, এটা প্রথম চট্টগ্রামের বন থেকে রেকর্ড করেন প্রখ্যাত বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান। ১৯৭৮ সালের মে মাসের দিকে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রামগড়-সীতাকুণ্ড রেঞ্জের বনে। হঠাৎই তাঁরা দেখেন ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো বিরাটকায় একটা ধূসর বেজি। বাংলাদেশের কোথাও এমনকি মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এ ধরনের বেজি কখনো দেখেছেন বলে তিনি মনে করতে পারলেন না। তাই এর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সাহায্য নেন এস এইচ প্রেটারের 'দ্য বুক অব ইন্ডিয়ান এনিম্যালস' বইটির। আর এটিতেই দেখেন এর নাম কাঁকড়াভুক বেজি। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম আর বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি বনগুলোতে এরা আছে। তবে দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এমনকি আমাদের সঙ্গে আদমপুরের বনে ঘুরে বেড়ানো বন প্রহরীরাও সেদিনই প্রথম দেখেছিলেন এদের। বাংলাদেশের বাইরে এদের পাবেন ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের অরণ্যে।
ইশতিয়াক হাসান
মাথাসহ কাঁকড়াভুক বেজির শরীরের দৈর্ঘ্য ১৮ ইঞ্চি। লোমশ লেজটা লম্বায় প্রায় ১২ ইঞ্চি। গায়ে বেশ পুরু লোম থাকে। তবে এদের চেনা যায় গলার দুই পাশে বৈশিষ্ট্যসূচক সাদা দাগ থেকে। গায়ের রং ধূসর। এমনিতে দিনে চলাফেরাই তাদের পছন্দ। তবে লাজুক স্বভাবের কারণে মানুষ বা অন্য প্রাণীদের দেখলে তারা লুকিয়ে পড়ে। সাধারণত ভোরের দিকে ছড়ার আশপাশে ব্যাঙ, কাঁকড়া আর মাছ খুঁজতে দেখা যায় এদের। কখনো বনের মাঝখানের খোলা জায়গায়ও এরা শিকারের খোঁজে ঘোরাঘুরি করে। তারা একা, জোড়া বেঁধে বা তিন-চারটা একত্রে চলাফেরা করে। এরা সাধারণত গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। এদের প্রজননের সময় মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত।
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হলো ছোট বেজি আর বড় বেজি। কাঁকড়াভুক বেজি নামে এর তৃতীয় একটি প্রজাতি যে এ দেশে আছে, এটা প্রথম চট্টগ্রামের বন থেকে রেকর্ড করেন প্রখ্যাত বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান। ১৯৭৮ সালের মে মাসের দিকে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রামগড়-সীতাকুণ্ড রেঞ্জের বনে। হঠাৎই তাঁরা দেখেন ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো বিরাটকায় একটা ধূসর বেজি। বাংলাদেশের কোথাও এমনকি মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে এ ধরনের বেজি কখনো দেখেছেন বলে তিনি মনে করতে পারলেন না। তাই এর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সাহায্য নেন এস এইচ প্রেটারের 'দ্য বুক অব ইন্ডিয়ান এনিম্যালস' বইটির। আর এটিতেই দেখেন এর নাম কাঁকড়াভুক বেজি। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম আর বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি বনগুলোতে এরা আছে। তবে দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এমনকি আমাদের সঙ্গে আদমপুরের বনে ঘুরে বেড়ানো বন প্রহরীরাও সেদিনই প্রথম দেখেছিলেন এদের। বাংলাদেশের বাইরে এদের পাবেন ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের অরণ্যে।
ইশতিয়াক হাসান
No comments