চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা-সমস্যার গোড়ায় নজর দিন
মাঝারি গোছের বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম মহানগর জলাবদ্ধ হয়ে পড়ার অঘটন কেবল নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি করে না; আমাদের বিস্ময়ও জাগায়। পাহাড় কিংবা নদী সংলগ্ন নগরের সুবিধা হচ্ছে, সেখানে বৃষ্টির পানি আটকে থাকে না। প্রাকৃতিক ঢাল ও স্রোতস্বিনীই পানি নিষ্কাশনে সহায়তা করে থাকে।
আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানীতে এই দুই আশীর্বাদের পাশাপাশি সাগরও উদার বুক পেতে রয়েছে। তারপরও প্রতি বর্ষায় সবুজ নগরীটির জীবনযাত্রা ঘোলা জলে ধূসর হয়ে ওঠে কেন? কেউ কেউ, বিশেষ করে প্রশাসনিক কর্তারা অবশ্য এর দায় সাগরের ওপরই চাপাতে চান। জোয়ারের সময় বৃষ্টিপাত হলেই নাকি দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। প্রশ্ন জাগে, শহর ও সাগরের শত শত বছরের সহাবস্থানে সাম্প্রতিককালে কেন জোয়ার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? কর্ণফুলী নদী এবং নগরের অভ্যন্তরীণ খালগুলো ভরাট হওয়ার যে কথা বলা হয়; তাতে সারবস্তু আছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু গত ডিসেম্বর-এপ্রিলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে খাল থেকে মাটি ও আবর্জনা উত্তোলনের পরও পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না কেন? এ মাসের গোড়ার দিকেও দেখা গেল সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে হাঁটুপানি জমে গেছে। সিসিসি মেয়র সম্প্রতি দাবি করেছেন, খনন কাজের ফলে ৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতা কমেছে। বাস্তবতা অবশ্য ভিন্নই। আমাদের মনে আছে, গত বছরও এবারের তুলনায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করে খালগুলো পুনর্খনন করা হয়েছিল। তার মানে, প্রতি বছরই এভাবে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সামান্য স্বস্তি কিনতে হবে? আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতার মূল কারণ দুটি। এর একটি নির্বিচারে পাহাড় কাটা ও বিসবুজীকরণ। এর ফলে একদিকে বৃষ্টির পানির প্রাকৃতিক সংরক্ষণ ব্যাহত হচ্ছে; অন্যদিকে কর্দমাক্ত পানি নালা ও খাল ভরাট করছে। দ্বিতীয়ত, নগরীর নিম্নাঞ্চল ভরাট। চট্টগ্রাম নগরীর মহাপরিকল্পনায় এ বিষয়টি নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু বাকলিয়া ও আগ্রাবাদের মতো নিচু এলাকাগুলোতে ভরাট কাজ চলছেই। পাহাড় ও গাছপালা কাটা এবং নিম্নাঞ্চল ভরাট বন্ধ করা না গেলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি। তার বদলে কেবল খাল খনন ও নালা তৈরির প্রকল্প গ্রহণ সমস্যার গোড়ার বদলে আগায় জল ঢালা ছাড়া কিছু হবে না। বর্তমান মেয়র বিলম্বে হলেও সেদিকে নজর দিতে পারেন।
No comments