‘আরও বড় কিছু করতে চাই’
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন গত সোমবার। কী করবেন আগামী চার বছর? পরিকল্পনাই বা কী? আরও অনেক বিষয় নিয়ে কাজী সালাউদ্দিন বিস্তারিত বললেন মাসুদ আলমকেত
বাফুফের নির্বাচন শেষ। নতুন কমিটি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন।
বাফুফের নির্বাচন শেষ। নতুন কমিটি নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন।
আপনার দৃষ্টিতে কমিটি কেমন হলো?
পুরোনোরা যাবে, নতুনেরা আসবে। এটাই নিয়ম। গত কমিটি নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন। কোনো সমস্যা হয়নি। এই কমিটিতে নতুন মুখ থাকছে অর্ধেকের কাছাকাছি। যা হয়েছে, ভালোই।
নির্বাচনে অনেক টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে বলে অভিযোগ। ফুটবলের জন্য অনেকে এটিকে অশনিসংকেত বলছেন। আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমি কাউকে এক শ টাকাও দিইনি। টাকা ছড়াছড়ির ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে আমিও অভিযোগটা শুনেছি।
নির্বাচিত হয়েও সহসভাপতি বাদল রায়ের অভিযোগ, তাঁকে হারাতে একটি মহল ভোটারদের টাকা দিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় বাফুফের এই নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আপনি কী মনে করেন?
টাকা দেওয়া-নেওয়ার সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। তবে বিষয়টা সত্য হলে এই রকম হওয়া উচিত নয়। টাকা দিয়ে ভোট কেনা খারাপ, ক্ষমতা খাটিয়ে কাউন্সিলর বানানোও তো খারাপ। ফুটবল ফেডারেশনে সরাসরি জড়িত নয় এমন লোক প্রভাব খাটিয়ে কাউন্সিলর বানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে অনেক খেলাই হয়েছে। এসব নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি করতে ভালো লাগে না। ওই অধ্যায়টা শেষ। এখন সামনে তাকাচ্ছি।
আসলে সামনে তাকাতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নেই। তা সামনে আপনার লক্ষ্য কী? কী করতে চান?
এখন আমি সারা দেশে ফুটবল ছড়িয়ে দিতে চাই। নির্বাচনের আগে সেই অঙ্গীকারও করেছি। ঢাকার ফুটবল নিয়মিত হচ্ছে। বর্ষা শেষে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে জেলা ফুটবল শুরু করব।
গত মেয়াদে প্রতিশ্রুতি দিলেও ফেডারেশনের নিজস্ব উদ্যোগে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করতে পারেননি। এবার করবেন?
আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করা কঠিন। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সিডিউল মেলে না। তার পরও মানুষের চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট একটা-দুইটা করে দেব।
গত মেয়াদে মেসিসহ পুরো শক্তির আর্জেন্টিনাকে এনেছেন। এই নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে ম্যানইউ এবং ম্যারাডোনার ক্লাব আল ওয়াসলকে জুলাই মাসে আনবেন। কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
ম্যানইউকে আনার কথা বলেছিলাম। তার আগে আমাকে সেকেন্ড থট দিতে হবে। কারণ, মেসিকে আনা নিয়ে টিভি টক শো, নিউজ পেপারে আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা হয়েছে। ওই আয়োজনটা নাকি ভুল ছিল। জানি না কী ভুল ছিল। এখন আমি বুঝতে চাই তাঁরা (সমালোচকেরা) এসব কেন বলেছেন।
‘সেকেন্ড থট’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
সবকিছু নিয়ে আবার ভাবতে হবে। তবে একটু সময় দেন। ম্যানইউ, বার্সা...এসব আমার মাথায় আছে।
তাহলে আমরা দিন গোনা শুরু করে দিতে পারি?
এখনই নয়। অপেক্ষা করুন। তবে এখন ওসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খেলোয়াড় তৈরি করা। ইয়ুথ টুর্নামেন্ট থেকে খেলোয়াড় বাছাই শিগগিরই শুরু হবে। ওই খেলোয়াড়দের সিলেটে চালু হতে যাওয়া একাডেমিতে নিয়ে আসব।
জাতীয় দলের কথাও তো ভাবতে হবে। গত মেয়াদে জাতীয় দল নিয়েও বলার মতো কাজ হয়নি। এবার নির্বাচনের আগে বলেছেন, জাতীয় দলকে এশিয়ার সেরা ১৫ তে নিতে চান। এটা কী সম্ভব?
পৃথিবীতে সবই সম্ভব। চেষ্টা করতে হবে। আমরা চার বছর আগে শুরু করায় আজ প্রফেশনাল লিগটা নিয়মিত, তাই না? কাজেই জাতীয় দল নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নও সম্ভব।
আগেরবার বলেছিলেন, বায়োডাটা দেখে কোচ নেবেন না। তার পরও বায়োডাটানির্ভর কোচই নেওয়া হয়েছে। এবার কী হবে?
এবারও একই কথা বলছি। বায়োডাটা দেখে কোচ নেব না। টাকা জোগাড় করতে পারলে ভালো কোচ আনব, নইলে আনবই না। এটা আমাদের একার কাজ নয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্পনসর, ফুটবলমোদী মানুষ, ফেডারেশন সবাইকে মিলেই করতে হবে।
গত মেয়াদে ফেডারেশনে অনেক দ্বন্দ্ব ছিল বলে শোনা যায়। নতুন কমিটি নিয়ে অনেকে নানা আশঙ্কা করছেন...
আমি কোনো আশঙ্কা করছি না। এই কমিটি ভালো কাজ করবে। গতবার আমার সঙ্গে অন্যদের তফাত ছিল ভিশনে। যেমন সুপার কাপ। এক কোটি টাকা চ্যাম্পিয়ন দলকে দেব শুনে তারা (ফেডারেশনের অনেকে) আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি করেছে। এটা নাকি করা যাবে না। আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল টিম খেলবে ঢাকায়, এটা নিয়েও টিটকারি করেছে। কিন্তু আমি তো করে দেখিয়েছি।
কিন্তু যেটা বেশি দরকার ছিল, সেই জেলার দিকে গত মেয়াদে নজর দেননি বলে বড় অভিযোগ ছিল। জেলাগুলোকে একবার ডেকে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন, যেটা তারা চা-নাশতা খেয়েই শেষ করেছে। এবার কী করবেন?
জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলোর (ডিএফএ) দরকার টাকা। জেলাগুলো বলেছে, দেড়-দুই লাখ টাকায় তাদের লিগ হয়ে যাবে। আমি কমিটমেন্ট করেছি এবার বছরে তিন লাখ করে দেব সব জেলাকে। গতবার দেওয়া ৫০ হাজার টাকা চা-নাশতা খেয়েই শেষ। ঠিক আছে। কিন্তু একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। টেলিভিশনে যাঁরা এত কথা বলছেন, তাঁদের খোঁজ নিতে বলেন। আমি যা করেছি ৪০ বছরে তা হয়েছে?
তার মানে আপনি গত মেয়াদের কাজে সন্তুষ্ট? কোনো ব্যর্থতা ছিল না?
হয়তো কিছু ছিল। জাতীয় দলের জন্য ঠিকমতো স্পনসর জোগাড় করতে পারিনি। আরও টাকা পেলে জেলাকে দিতে পারতাম। তবে একটা কথা বলতে পারি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং বাংলাদেশের ফুটবলের দারুণ ভবিষ্যৎ আছে। ফিফা-এএফসিতে আমাকে মিস্টার প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করে সবাই। এটা বাংলাদেশেরই অর্জন। এখন গাড়ি ফার্স্ট গিয়ার থেকে সেকেন্ড গিয়ারে যাচ্ছে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ভালো ফল আসবে।
মেসিদের আনার সময় বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম আ ম্যাড ম্যান।’ আপনার মাথায় এখনো কি পাগলামি জাতীয় কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে?
সে রকম কিছু এই মুহূর্তে মাথায় নেই। নতুন কমিটির সঙ্গে বসছি, কথা বলছি। আমার মতো পাগল আর কয়টা আছে, আগে সেটা দেখি। এ নিয়ে তিন-চার সপ্তাহ পর আপনাকে কিছু বলতে পারব। মেসিদের সফরের স্পনসর বেক্সিমকো গ্রুপের অনেক লোকসান হয়েছে। তার পরও ওই গ্রুপের প্রধান সালমান রহমান ভাই আমাকে বলেছেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনকে আনতে পারলে আনো। কাজেই সুযোগ এলে তা নেওয়ার চেষ্টা তো করবই। গত মেয়াদের চেয়ে আরও বড় কিছু করতে চাই।
অথচ পুনর্নির্বাচিত হয়ে আসতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছে আপনার। নির্বাচনের এই কটা দিন আপনার নাকি খাওয়া-দাওয়া-ঘুম কিছুই ঠিক ছিল না?
অনেকটা সে রকমই। শরীর চলেনি। তবু ভোটের প্রচারে খুলনা, চট্টগ্রামে গিয়েছি। নানা রকম চাপ। এটা-ওটা কত কী! ভোটের রাজনীতি আমাকে এবার অনেক কিছু শিখিয়েছে। মনের অজান্তেই অনেক শত্রু তৈরি করে ফেলেছি। তবে আমি নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি করিনি। কোনো ভোটারের বাসায় এক দিনও যাইনি।
আপনার সম্পর্কে শোনা যায়, ফেডারেশনে আপনি আয়ের চেয়ে ব্যয় করেন বেশি। তাই বেশ কিছু দেনাও হয়ে গেছে। আপনার জন্য সামনে তো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ?
টাকা দেনা-পাওনা সব প্রতিষ্ঠানেই থাকে। কাজেই ওটা এমন কিছু নয়। তবে আমার গত মেয়াদে অনেক টাকা এসেছে। গত চার বছরে ক্লাবকে দিয়েছি আট কোটি টাকা। জাতীয় দলের জন্য খরচ করেছি ১১-১২ কোটি টাকা (টাকার এই অঙ্ক নিয়ে অবশ্য খানিকটা বিভ্রান্তি আছে, তবে সালাউদ্দিন বলেছেন, এই হিসাব দিয়েছে বাফুফের হিসাব শাখা)। সামনে আরও অনেক বেশি টাকা আনতে হবে।
টাকার চেয়ে বড় ফেডারেশনে কাজের পরিবেশ। বাফুফের পরিবেশটায় গত কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস চলে আসছিল। এবার কী এসবের ঊর্ধ্বে ওঠা যাবে?
উঠতেই হবে। এটা খুব দরকার। এই নির্বাচনের ছয় মাস আগে থেকে ফেডারেশনের পরিবেশটা আমার একদমই ভালো লাগেনি। এখন চাইব ঐক্যবদ্ধ একটা ফেডারেশন। আপনারা জানেন, আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার অনেক চেষ্টা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি। অনেক শুকরিয়া।
পুরোনোরা যাবে, নতুনেরা আসবে। এটাই নিয়ম। গত কমিটি নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন। কোনো সমস্যা হয়নি। এই কমিটিতে নতুন মুখ থাকছে অর্ধেকের কাছাকাছি। যা হয়েছে, ভালোই।
নির্বাচনে অনেক টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে বলে অভিযোগ। ফুটবলের জন্য অনেকে এটিকে অশনিসংকেত বলছেন। আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমি কাউকে এক শ টাকাও দিইনি। টাকা ছড়াছড়ির ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে আমিও অভিযোগটা শুনেছি।
নির্বাচিত হয়েও সহসভাপতি বাদল রায়ের অভিযোগ, তাঁকে হারাতে একটি মহল ভোটারদের টাকা দিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় বাফুফের এই নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আপনি কী মনে করেন?
টাকা দেওয়া-নেওয়ার সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। তবে বিষয়টা সত্য হলে এই রকম হওয়া উচিত নয়। টাকা দিয়ে ভোট কেনা খারাপ, ক্ষমতা খাটিয়ে কাউন্সিলর বানানোও তো খারাপ। ফুটবল ফেডারেশনে সরাসরি জড়িত নয় এমন লোক প্রভাব খাটিয়ে কাউন্সিলর বানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে অনেক খেলাই হয়েছে। এসব নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি করতে ভালো লাগে না। ওই অধ্যায়টা শেষ। এখন সামনে তাকাচ্ছি।
আসলে সামনে তাকাতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নেই। তা সামনে আপনার লক্ষ্য কী? কী করতে চান?
এখন আমি সারা দেশে ফুটবল ছড়িয়ে দিতে চাই। নির্বাচনের আগে সেই অঙ্গীকারও করেছি। ঢাকার ফুটবল নিয়মিত হচ্ছে। বর্ষা শেষে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে জেলা ফুটবল শুরু করব।
গত মেয়াদে প্রতিশ্রুতি দিলেও ফেডারেশনের নিজস্ব উদ্যোগে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করতে পারেননি। এবার করবেন?
আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করা কঠিন। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সিডিউল মেলে না। তার পরও মানুষের চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট একটা-দুইটা করে দেব।
গত মেয়াদে মেসিসহ পুরো শক্তির আর্জেন্টিনাকে এনেছেন। এই নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে ম্যানইউ এবং ম্যারাডোনার ক্লাব আল ওয়াসলকে জুলাই মাসে আনবেন। কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
ম্যানইউকে আনার কথা বলেছিলাম। তার আগে আমাকে সেকেন্ড থট দিতে হবে। কারণ, মেসিকে আনা নিয়ে টিভি টক শো, নিউজ পেপারে আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা হয়েছে। ওই আয়োজনটা নাকি ভুল ছিল। জানি না কী ভুল ছিল। এখন আমি বুঝতে চাই তাঁরা (সমালোচকেরা) এসব কেন বলেছেন।
‘সেকেন্ড থট’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
সবকিছু নিয়ে আবার ভাবতে হবে। তবে একটু সময় দেন। ম্যানইউ, বার্সা...এসব আমার মাথায় আছে।
তাহলে আমরা দিন গোনা শুরু করে দিতে পারি?
এখনই নয়। অপেক্ষা করুন। তবে এখন ওসবের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খেলোয়াড় তৈরি করা। ইয়ুথ টুর্নামেন্ট থেকে খেলোয়াড় বাছাই শিগগিরই শুরু হবে। ওই খেলোয়াড়দের সিলেটে চালু হতে যাওয়া একাডেমিতে নিয়ে আসব।
জাতীয় দলের কথাও তো ভাবতে হবে। গত মেয়াদে জাতীয় দল নিয়েও বলার মতো কাজ হয়নি। এবার নির্বাচনের আগে বলেছেন, জাতীয় দলকে এশিয়ার সেরা ১৫ তে নিতে চান। এটা কী সম্ভব?
পৃথিবীতে সবই সম্ভব। চেষ্টা করতে হবে। আমরা চার বছর আগে শুরু করায় আজ প্রফেশনাল লিগটা নিয়মিত, তাই না? কাজেই জাতীয় দল নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নও সম্ভব।
আগেরবার বলেছিলেন, বায়োডাটা দেখে কোচ নেবেন না। তার পরও বায়োডাটানির্ভর কোচই নেওয়া হয়েছে। এবার কী হবে?
এবারও একই কথা বলছি। বায়োডাটা দেখে কোচ নেব না। টাকা জোগাড় করতে পারলে ভালো কোচ আনব, নইলে আনবই না। এটা আমাদের একার কাজ নয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্পনসর, ফুটবলমোদী মানুষ, ফেডারেশন সবাইকে মিলেই করতে হবে।
গত মেয়াদে ফেডারেশনে অনেক দ্বন্দ্ব ছিল বলে শোনা যায়। নতুন কমিটি নিয়ে অনেকে নানা আশঙ্কা করছেন...
আমি কোনো আশঙ্কা করছি না। এই কমিটি ভালো কাজ করবে। গতবার আমার সঙ্গে অন্যদের তফাত ছিল ভিশনে। যেমন সুপার কাপ। এক কোটি টাকা চ্যাম্পিয়ন দলকে দেব শুনে তারা (ফেডারেশনের অনেকে) আমাকে নিয়ে ইয়ার্কি করেছে। এটা নাকি করা যাবে না। আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল টিম খেলবে ঢাকায়, এটা নিয়েও টিটকারি করেছে। কিন্তু আমি তো করে দেখিয়েছি।
কিন্তু যেটা বেশি দরকার ছিল, সেই জেলার দিকে গত মেয়াদে নজর দেননি বলে বড় অভিযোগ ছিল। জেলাগুলোকে একবার ডেকে ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন, যেটা তারা চা-নাশতা খেয়েই শেষ করেছে। এবার কী করবেন?
জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলোর (ডিএফএ) দরকার টাকা। জেলাগুলো বলেছে, দেড়-দুই লাখ টাকায় তাদের লিগ হয়ে যাবে। আমি কমিটমেন্ট করেছি এবার বছরে তিন লাখ করে দেব সব জেলাকে। গতবার দেওয়া ৫০ হাজার টাকা চা-নাশতা খেয়েই শেষ। ঠিক আছে। কিন্তু একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। টেলিভিশনে যাঁরা এত কথা বলছেন, তাঁদের খোঁজ নিতে বলেন। আমি যা করেছি ৪০ বছরে তা হয়েছে?
তার মানে আপনি গত মেয়াদের কাজে সন্তুষ্ট? কোনো ব্যর্থতা ছিল না?
হয়তো কিছু ছিল। জাতীয় দলের জন্য ঠিকমতো স্পনসর জোগাড় করতে পারিনি। আরও টাকা পেলে জেলাকে দিতে পারতাম। তবে একটা কথা বলতে পারি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং বাংলাদেশের ফুটবলের দারুণ ভবিষ্যৎ আছে। ফিফা-এএফসিতে আমাকে মিস্টার প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করে সবাই। এটা বাংলাদেশেরই অর্জন। এখন গাড়ি ফার্স্ট গিয়ার থেকে সেকেন্ড গিয়ারে যাচ্ছে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ভালো ফল আসবে।
মেসিদের আনার সময় বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম আ ম্যাড ম্যান।’ আপনার মাথায় এখনো কি পাগলামি জাতীয় কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে?
সে রকম কিছু এই মুহূর্তে মাথায় নেই। নতুন কমিটির সঙ্গে বসছি, কথা বলছি। আমার মতো পাগল আর কয়টা আছে, আগে সেটা দেখি। এ নিয়ে তিন-চার সপ্তাহ পর আপনাকে কিছু বলতে পারব। মেসিদের সফরের স্পনসর বেক্সিমকো গ্রুপের অনেক লোকসান হয়েছে। তার পরও ওই গ্রুপের প্রধান সালমান রহমান ভাই আমাকে বলেছেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনকে আনতে পারলে আনো। কাজেই সুযোগ এলে তা নেওয়ার চেষ্টা তো করবই। গত মেয়াদের চেয়ে আরও বড় কিছু করতে চাই।
অথচ পুনর্নির্বাচিত হয়ে আসতে গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছে আপনার। নির্বাচনের এই কটা দিন আপনার নাকি খাওয়া-দাওয়া-ঘুম কিছুই ঠিক ছিল না?
অনেকটা সে রকমই। শরীর চলেনি। তবু ভোটের প্রচারে খুলনা, চট্টগ্রামে গিয়েছি। নানা রকম চাপ। এটা-ওটা কত কী! ভোটের রাজনীতি আমাকে এবার অনেক কিছু শিখিয়েছে। মনের অজান্তেই অনেক শত্রু তৈরি করে ফেলেছি। তবে আমি নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি করিনি। কোনো ভোটারের বাসায় এক দিনও যাইনি।
আপনার সম্পর্কে শোনা যায়, ফেডারেশনে আপনি আয়ের চেয়ে ব্যয় করেন বেশি। তাই বেশ কিছু দেনাও হয়ে গেছে। আপনার জন্য সামনে তো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ?
টাকা দেনা-পাওনা সব প্রতিষ্ঠানেই থাকে। কাজেই ওটা এমন কিছু নয়। তবে আমার গত মেয়াদে অনেক টাকা এসেছে। গত চার বছরে ক্লাবকে দিয়েছি আট কোটি টাকা। জাতীয় দলের জন্য খরচ করেছি ১১-১২ কোটি টাকা (টাকার এই অঙ্ক নিয়ে অবশ্য খানিকটা বিভ্রান্তি আছে, তবে সালাউদ্দিন বলেছেন, এই হিসাব দিয়েছে বাফুফের হিসাব শাখা)। সামনে আরও অনেক বেশি টাকা আনতে হবে।
টাকার চেয়ে বড় ফেডারেশনে কাজের পরিবেশ। বাফুফের পরিবেশটায় গত কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব, অবিশ্বাস চলে আসছিল। এবার কী এসবের ঊর্ধ্বে ওঠা যাবে?
উঠতেই হবে। এটা খুব দরকার। এই নির্বাচনের ছয় মাস আগে থেকে ফেডারেশনের পরিবেশটা আমার একদমই ভালো লাগেনি। এখন চাইব ঐক্যবদ্ধ একটা ফেডারেশন। আপনারা জানেন, আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার অনেক চেষ্টা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি। অনেক শুকরিয়া।
No comments