বিশ্বনাথে থানা ঘেরাও, দফায় দফায় সংঘর্ষ

বিএনপির ‘নিখোঁজ’ নেতা ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে গতকাল রোববার হরতাল-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে পুলিশসহ ৪০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করেছে।


বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলী নিখোঁজের প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেওয়া হয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর বনানী থেকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, হরতালের শুরুতে বেলা সাড়ে ১১টায় একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন। শোভাযাত্রাটি বিশ্বনাথ থানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে সেখানে অবস্থান করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের থানার সামনে থেকে সরাতে গেলে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
এর জের ধরে বিক্ষোভকারীরা পুরানবাজার অর্শ চিকিৎসালয়, সোহান অ্যান্ড ব্রাদার্স বেডিং স্টোর, মুক্তার স্টোরসহ বেশ কয়েকটি দোকান ও সংবাদপত্র বহনকারী একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে তাহির আলী টি-স্টল নামের একটি রেস্তোরাঁয় অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পিকেটারদের হামলায় দোকানগুলোর মালিকসহ বেশ কয়েকজন পথচারী আহত হয়। এ সময় পুলিশ বিএনপির আশিক মিয়া, আবদুল মান্নান, যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কয়েছ মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান, ছাত্রদলের আবদুশ শহিদ, রাসেল মাহমুদ, রুবেল আহমদ ও নাসির আহমদকে আটক করে। পুলিশের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে বিশ্বনাথ উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হরতাল আহ্বানকারীরা সদর বাজারে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে দু্পুর ১২টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ শতাধিক কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সালাউদ্দিন, কনস্টেবল জনি দাশ, লিপ্টু চন্দ্র দেব, মুজিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, জাকির হোসেন, সুমন আহমদ, আবদুর রাকিব, আবদুর রহিমসহ বিএনপির ৪০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। সিলেট জেলা দক্ষিণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোপাল চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানা ঘেরাও করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা তখন থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ অবস্থায় পুলিশ ধাওয়া করলে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে পুলিশও আহত হয়। তবে বিকেল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সিলেটে ধাওয়া, গ্রেপ্তার, মামলা: সিলেট নগরে সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল চলছিল। দুপুরে জিন্দাবাজারে হরতাল আহ্বানকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। হরতাল চলাকালে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। এ সময় অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। হরতালের আগের রাতে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির কাছে যাত্রীবাহী একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাসে অগ্নিসংযোগ ও হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি, দক্ষিণ সুরমা ও মোগলাবাজার থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। হরতাল চলাকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৩ জনকে। এর মধ্যে সিলেট নগরে ২১ ও দক্ষিণ সুরমায় দুই এবং বাকিরা সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায়। এদিকে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. ময়নুল হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট মহানগরসহ জেলার ১২ উপজেলা থেকে পুলিশ ২০১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে হরতাল চলাকালে সিলেটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, যুব জমিয়ত ও ছাত্র জমিয়তের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের অতর্কিত হামলায় জমিয়তের পাঁচজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হচ্ছেন: জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, জেলা যুব জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, জমিয়ত নেতা রফিক আহমদ ও ছাত্র মজলিসের আবদুল করিম। মহানগর পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া প্রথম আলোকে জানান, জিন্দাবাজারে হরতাল আহ্বানকারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ২৩টি রাবার বুলেট ও ১৭টি কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মহানগর পুলিশের ছয় থানা এলাকা থেকে হরতালে সহিংসতার অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.