ইলিয়াসকে উদ্ধারে ‘লোক দেখানো’ অভিযান-পাঁচ দিনে ফলাফল শূন্য

ইলিয়াস আলীর সন্ধানে ‘ব্যাপক তৎপরতা’ চলছে বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব-পুলিশ সদর দপ্তর, থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়— সবখানেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একই কথা, তদন্তের ব্যাপারে তাঁরা খুবই আন্তরিক। কিন্তু ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন হলেও দৃশ্যমান অভিযান হয়েছে মাত্র একটি, তা-ও আবার নিষ্ফল।


পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। গত রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম মুনিরুজ্জামানের আদালতে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে এভাবে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে পুলিশ। ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ৪৮ ঘণ্টা পর পর তদন্তের অগ্রগতি জানাতে পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের নামে যা করা হচ্ছে, সবই লোক দেখানো। তাঁরা নিশ্চিত, সরকারের কোনো সংস্থা তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন এ নিয়ে যা হচ্ছে, সবই অর্থহীন। তবে র‌্যাবের গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক এম সোহায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর যুক্তি, তদন্তের স্বার্থে অনেক তথ্য বলা যায় না। তদন্ত সব সময় দৃশ্যমান হয় না। দৃশ্যমান কিছু দেখতে অপেক্ষা করতে হয়।
গতকাল সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক বলেন, ইলিয়াসকে উদ্ধারে সরকারের সংস্থাগুলো আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনসার। বনানীর রাস্তায় পাওয়া যায় ইলিয়াসের গাড়িটি। এর পর থেকেই দাবি করা হয়, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে পুলিশের গুলশান বিভাগ, বনানী থানা, ডিবি ও র‌্যাব মাঠে নেমেছে। কিন্তু তারা কী করছে, কোথায় কোথায় অভিযান চালাচ্ছে, তা বলতে পারছে না।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ বলেন, ইলিয়াস আলীর জিডির সূত্র ধরেই তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি।
গত কয়েক দিনে ইলিয়াসের ‘সিলেট হাউজ’, বনানী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের আশপাশের এলাকা, রূপসী বাংলা হোটেলে তদন্তকারীদের তৎপরতা দেখা গেছে। কিন্তু তারা কী করছে, তা স্পষ্ট নয়। দৃশ্যমান তৎপরতা ছিল শনিবার রাতে গাজীপুরের পুবাইল এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাবের চার ঘণ্টার নিষ্ফল অভিযান। তবে ওই অভিযান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ইলিয়াসের স্ত্রীকে নিয়ে যে অভিযান হচ্ছে, তার অনেকটাই সাজানো। একটি মহল ইলিয়াসের স্ত্রীকে উড়ো তথ্য দিচ্ছে। আর তিনি অভিযানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে ডাকছেন। কারা তাঁকে এসব তথ্য দিচ্ছে, তা তিনি কাউকে বলছেন না।
শনিবারের অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাবের পরিচালক এম সোহায়েল বলেন, ওই অভিযানে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান তাহসিনা রুশদীর। তাঁর কথামতো অভিযান হয়েছে। এ নিয়ে র‌্যাবের কাছে আগাম কোনো তথ্য ছিল না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এর আগে বলেছেন, র‌্যাবের লোকেরা ইলিয়াসকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে র‌্যাব। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ইলিয়াস নিখোঁজের ঘটনা বিএনপির ‘নাটক’।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, শনিবার ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর র‌্যাব-পুলিশকে ডেকে কিছু তথ্য দিয়েছেন। র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে তাহসিনাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গাজীপুরের পুবাইল এলাকায় চার ঘণ্টা অভিযান চালায়। ওই অভিযান থেকে ফেরার পর থেকেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন ইলিয়াসের স্ত্রী। গতকালও তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি কথা বলতে রাজি হননি। অবশ্য র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা দুপুরে তাহসিনার সঙ্গে দেখা করেন। ওই কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর ইলিয়াসের বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আবরার ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলে, ‘র‌্যাব বাসায় আসছে-যাচ্ছে। তারা শুধু আমাদের তথ্য দিতে বলছে। আমরা কোত্থেকে তথ্য পাব?’

No comments

Powered by Blogger.