পরিবর্তনের রাজনীতি-হিযবুত তাহ্রীরের ‘হঠকারী’ অভিলাষ by ফারুক ওয়াসিফ
আগুন পোড়ায় সবাই জানে, নতুন করে জানতে আমাদের পাকিস্তান হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু চলতি ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে, হিযবুত তাহ্রীরের ইচ্ছা সেটাই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় জেএমবি’র পাশাপাশি হিযবুত তাহ্রীরও ব্যাপক ছাড় পেয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময়ও সেই ছাড় বহাল থাকে।
২০০৯ সালের অক্টোবরে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয় বটে, কিন্তু এর তৎপরতার খবর গণমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে। তাদের সর্বশেষ পোস্টারে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ডাক দেওয়া হয়।
স্বঘোষিত অহিংস আন্দোলনকারী হিযবুতের সেনাসংযোগের ইতিহাস আরও গভীর। গত বছরের ৬ মে ব্রিগেডিয়ার আলী খান নামের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে আটক করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তাঁকেসহ আরও ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হিযবুতের সঙ্গে মিলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গে হিযবুতের যোগাযোগ হয় ব্রিটেনে সামরিক প্রশিক্ষণের সময়। ২০০৯ সালে তুর্কি সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। কেমালেত্তিন নামের এক তুর্কি ইসরায়েলে বসে এর নেতৃত্ব দেন এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। প্রায় সব কটি আরব রাষ্ট্রে সামরিক অভ্যুত্থান-চেষ্টার অভিযোগে হিযবুত নিষিদ্ধ। এর পর সাবেক সোভিয়েত মুসলিম প্রজাতন্ত্রগুলোই হয়ে ওঠে হিযবুতের মূল মঞ্চ। রাশিয়া ও চীনের প্রভাববলয়ে থাকা এই রাষ্ট্রগুলো কেন তাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ, এর কোনো ব্যাখ্যা সংগঠনটির তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। লক্ষ্যণীয়, মুসলিম দেশগুলোতে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হলেও ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় তারা ছাড় উপভোগ করছে।
প্রায় দুই দশক ধরে ব্রিটেনই হয়ে থাকছে হিযবুতের প্রধান ঘাঁটি। ব্রিটিশ এমপি ক্লেয়ার শর্ট হাউস অব কমন্সে এদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। আল-কায়েদার মতো হিযবুত তাহ্রীরও মার্কিন-ব্রিটিশ স্বার্থ রয়েছে, এমন দেশগুলোতে বেশি তৎপর। ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নির্বাচিত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অনির্বাচিতদের হাতে নেওয়ার ইচ্ছাও তারা গোপন রাখছে না।
হিযবুতের গোড়াপত্তন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হয় অভিবাসী ব্রিটিশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় অভিবাসী অস্ট্রেলীয় মুসলমানদের মাধ্যমে। বাংলাদেশে তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা গোলাম মওলা লন্ডন থেকেই হিযবুতের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে আসেন। ব্রিটিশ নাগরিক জিতুজ্জামান হক বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশে থেকে সংগঠনটি পরিচালনা করেন। বর্তমান নেতৃত্বের অধিকাংশই বিলেতফেরত অথবা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত এলিট শ্রেণীর সদস্য। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এদের টার্গেট। এঁদের নেতারা একমুখে বাংলাদেশে কর্মরত পশ্চিমা পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে যুক্ত থাকেন, অন্যমুখে দেন পশ্চিমাবিরোধী জিহাদের ডাক।
দুই.
হিযবুত অহিংস পথে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সামরিক বিদ্রোহের পথ যদি অহিংস হয়, তাহলে সোনার পাথরবাটিও সম্ভব। সত্যি যে, হিযবুত সরাসরি অস্ত্র ধারণ করা বা রক্তপাতে শামিল হয়নি। কিন্তু তাদের মতাদর্শের শাঁসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ঘৃণা ও সহিংসতার বীজ। তিনটি ধারণা দিয়ে হিযবুতের আদর্শকে দাগিয়ে নেওয়া যায়—১. গণতন্ত্র-বিরোধিতা, ২. বৈশ্বিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা, ৩. শরিয়া আইন বিষয়ে অটলতা। এই তিন উদ্দেশ্য নিখাদ পাশ্চাত্য-বিরোধিতার জমিনে গাঁথা। হিযবুত মনে করে, গণতন্ত্রই মুসলিম দেশগুলোর প্রধান ব্যাধি। এর নিদান হিসেবে তারা খেলাফত ও শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের চোখে অসুখই হলো ওষুধ, আর ওষুধই হলো অসুখ।
প্রথমত, তারা ভুলে যায়, মহানবী (সা.) প্রণীত মদিনা সনদই প্রথম গণতান্ত্রিক সংবিধান, যেখানে সব ধর্মের ও গোত্রের মানুষকে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছিল। মুসলমানদের চারটি মযহাব রয়েছে; রয়েছে শিয়া ও সুন্নি বৈচিত্র্য। রয়েছে সুফি ও মরমি ভাবধারার ঐতিহ্য। এ ছাড়া বৈশ্বিক ধর্ম হিসেবে বিভিন্ন জাতি-ভাষা-অঞ্চলের ছাপও বহন করে চলছে দেড় হাজার বছরের এই ধর্ম। ভারত সরকারের একটি জরিপে দেখা গেছে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের প্রতিদিনকার জীবনে মিল ২০ শতাংশ, বাকি আশি শতাংশ মেলে স্বজাতির অন্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের সঙ্গে। বাংলাদেশের মুসলিম আর আরবের মুসলিমের মধ্যে মিল কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস আর উপাসনার সংস্কৃতিতে। সব বিশ্বাসীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা যেমন এক নয়, তেমনি তাদের সবাইকে এক ছাঁচে ঢালাও সম্ভব নয়। সম্ভব নয় কোনো একক কর্মসূচিতে তাদের সবার মঙ্গল করা। সহনশীলতার গণতান্ত্রিক চর্চা ছাড়া কীভাবে জাতি-বর্ণ-ভাষা ও অঞ্চলে বিভক্ত মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ানো সম্ভব?
দ্বিতীয়ত, বিশ্বের মুসলমানরা কখনোই একক কোনো খেলাফতের অধীনে আসেনি। খোলাফায়ে রাশেদিন ছাড়া আর কোনো খলিফাও ইসলামে সর্বজনীন মান্যতা পাননি। সিরিয়ার উমাইয়া শাসকেরা কার্যত খেলাফতের নামে রাজতন্ত্রই চালু করেন। ইসলামের আদি চিন্তকেরা খেলাফতকে যতটা না ধর্মের, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার খেলা আমল করে দূরে থেকেছেন। পাকিস্তানি পণ্ডিত জিয়াউদ্দিন সরদার বলছেন, ‘সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে ধর্ম খলিফাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে কাজ করেছে; সাম্য ও ন্যায়বিচারের আদর্শের উৎস হয়েছে ধর্ম। ক্ষমতার হাতিয়ার না হয়ে ধর্ম বরং ক্ষমতার সামনে সত্যের স্পর্ধা দেখিয়েছে। সম্ভবত এজন্যই ইসলামের আদি আইনপ্রণেতারা কিন্তু বিশ্বের জন্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি একক খেলাফতের ধারণা সমর্থন করেননি।’
অথচ হিযবুত বলতে চায়, সর্বক্ষমতার অধিকারী একজন অনির্বাচিত খলিফার খেলাফতি শাসনে সব জাতির সব মুসলিম থাকতে বাধ্য। এটা একমাত্র সম্ভব তালেবানি কায়দায় ধর্মের সামরিকীকরণ তথা রেজিমেন্টেশনের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি মোল্লাতন্ত্রও দাঁড় করাতে হবে। কিন্তু ইসলাম কি পোপতন্ত্রের মতো কোনো মোল্লাতন্ত্র অনুমোদন করে? খেলাফতের স্বার্থে অন্য ধর্ম ও মত-পথের মানুষকেও দমন করতে হবে তাদের। তাই হিযবুতের আপাত বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের আড়ালে লুকানো হিংসা ও দমনমূলক মতবাদটি চিনতে ভুল করা যাবে না।
তৃতীয়ত, শরিয়ার কোনো একক বিধিব্যবস্থাও অদ্যাবধি তৈরি হয়নি। ইসলামে এক আল্লাহ, তাঁর প্রেরিত পুরুষ মহানবী (সা.)-এ পূর্ণ বিশ্বাস এবং কোরআনই একমাত্র অভ্রান্ত ও অপরিবর্তনীয়, আর কিছু নয়। নবম শতাব্দীতে গ্রন্থিত ইসলামি জুরিসপ্রুডেন্স যুগে যুগে সংস্কারের মাধ্যমে বিভিন্ন আদল পেয়েছে। ইসলামি শাস্ত্রবিদেরা কোনো একক আইনগুচ্ছকে আদর্শ ঘোষণা করেননি। আদি যুগের আলেমরা হয়তো বুঝেছিলেন, ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা ও পরিবেশের মুসলমানরা স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে কোরআনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন। মুসলিম দেশগুলো ধনে-বলে-আদর্শে তখনই বড় হয়েছে, যখন তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও প্রয়োজনকে আমলে নিয়েছে; এবং যখন তারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি। ইসলামের গৌরব বৃদ্ধিকারী রাষ্ট্রনায়কদের প্রায় কেউই আক্ষরিক অর্থে শরিয়াভিত্তিক আইন চালু করেননি। উমাইয়া, ফাতেমীয়, আব্বাসীয়, সাফাভীয়, ওসমানীয় বা মোগলরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রাচীন সভ্যতাকে বাতিল না করে, গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে আরও বিকশিতই করেছিল। বৈচিত্র্য ধারণের গুণেই তারা তাদের আমলের সেরা সভ্যতা হয়ে উঠেছিল। বাগদাদ, দামেস্ক, বসরা, ইস্তামবুলের মুসলিম শাসকেরা যদি এক সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির লেনদেন না মানলে মধ্যযুগে এসব শহর বিশ্বের মশাল হতে পারত না। স্পেনের মুসলিম সভ্যতা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অপূর্ব মিলনকেন্দ্র হতে পেরেছিল ঘৃণার জোশে নয়, সমন্বয়শীলতার তাকদে। সম্রাট আকবর যদি প্রজা, কর্মচারি, আমাত্যবর্গ ও সেনাবাহিনীতে সব ধর্মের লোককে স্থান না দিতেন, রাষ্ট্রপরিচালনায় যদি সেযুগের মাপে ধর্মনিরপেক্ষ না হতেন, তাহলে এত বিরাট সাম্রাজ্যের নেতা তিনি হতে পারতেন না। সভ্যতা বলতে তাঁরা কেবল তরবারি বোঝেননি, উন্নত চিন্তা ও নৈতিকতাকেও বুঝেছিলেন।
মুসলমান সাম্রাজ্য কেন ইউরোপের কাছে হেরে গেল, তা ইতিহাসের এক বিরাট প্রশ্ন। বিশিষ্ট রুশ ইতিহাসবিদ ভি ভি বারটোল্ড তাঁর মুসলমান কালচার বইয়ে বলেন: ‘বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির ঘাটতির জন্য নয়, বরং এই শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলো চুপসে গিয়েছিল সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ এবং সমাজে চিন্তা-বিস্তারের ক্ষমতা খুইয়ে তারা ভেতর থেকে শুকিয়ে মরছিল।’
তিন.
হিযবুত তাহ্রীরসহ ইসলামপন্থিরা সীমান্তে হত্যা, টিপাইমুখ বাঁধসহ যেসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে জনমত সংগঠিত করতে চায়, সেসব অবশ্যই জাতীয় স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এসবের ক্ষতি বাংলাদেশের সবার, ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এসব সমস্যার গোড়া যেমন অন্য ধর্ম নয়, তেমনি ধর্মীয় আওয়াজ তুলে এসবের বিহিতও হবে না। ধর্মীয় বা সামরিকতার পথে যদি সার্বভৌম জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যেত, তাহলে পাকিস্তানই হতো তার চ্যাম্পিয়ন।
বেশির ভাগ মুসলিম তরুণের মন আহত ও অপমানিত। পাশ্চাত্য আর তাদের ভরসা দিচ্ছে না; জাগাচ্ছে ভয় ও অবিশ্বাস। মুসলিম দেশগুলোয় আগ্রাসন এবং অভিভাসী মুসলিমদের প্রতি বৈরী আচরণে মনে হওয়া স্বাভাবিক, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে লিপ্ত। ভারতের ওই জরিপেও আছে, সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সত্ত্বেও সর্বভারতীয়মুসলমানদের মনে একই ভীতি কাজ করছে।এই যন্ত্রণা থেকেই যে পরিচয় আক্রান্ত, সেই পরিচয় পুঁজি করে তারা আত্মরক্ষার উপায় খোঁজে। তারা দেখতে পায়, স্থানীয় শাসকেরা নতজানু ও সুবিধাবাদী। শাসকদের দুর্নীতি, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারী চলনবলনে জনগণ বিরক্ত ও ক্লান্ত। ধর্মঘেঁষা বিএনপি এবং কম ধর্মঘেঁষা আওয়ামী ভাবধারার জাতীয়তাবাদ তাদের চোখে ব্যর্থ। এই অবস্থাতেই বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ঢালাই করে রাজনীতি করার লোকের আবির্ভাব ঘটে। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে ধর্মীয় সমস্যা হিসেবে দেখায় এবং এর সমাধান বাতলায় সামরিক পথে। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের সংবেদনশীল অংশ হাতের কাছে পাওয়া ধর্ম এবং হঠাৎ হাজির হওয়া জেহাদিদের নিয়ে দিন বদলাতে আগ্রহী হয়।
কিন্তু যাদের ইতিহাস ঘোলাটে, যাদের চিন্তাভাবনা সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষে ভরা, তাদের পক্ষে কি বিকল্প হওয়া সম্ভব? মিসর বা তিউনিসিয়ার অপশাসন এভাবে বদলায়নি; বদলেছে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের চাপে। মুসলমান দেশগুলোর আজ প্রয়োজন গণতান্ত্রিকতা, সাংস্কৃতিক উদারতা এবং মর্যাদা ও অধিকার কায়েমের অর্থনীতি। গ্রামীণ জেএমবি কিংবা শহুরে হিযবুত তাহ্রীরের পথে তা হওয়ার নয়। আরব জাগরণের প্রমাণ, আরব তারুণ্য খেলাফত নয়, পাশ্চাত্যের লেজুড়বৃত্তিও নয়, জাতীয় স্বার্থরক্ষক মুক্তিকামী রাজনীতি চায়। ধর্মীয় ভেদাভেদ মানলে তাহরির স্কোয়ারে বামপন্থি, ইসলামপন্থি, শিয়া-সুন্নি, মুসলিম-খ্রিস্টান নির্বিশেষে মিসরিয় ঐক্য ঘটতে পারতো না। ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর জনপ্রিয়তার কারণ ধর্মীয় কড়াকড়ি নয়, বরং জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক ঐক্যই তাদের শক্তি। অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনে পশ্চিমা তরুণেরাও বলছে: আমরা যে জাতির বা ধর্মের হই, আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯৯%; আর ওই ১% যারা, তারা স্বধর্মী বা বিধর্মী, স্বজাতি বা বিজাতি যা-ই হোক, তারা মানবতার শত্রু। তারা বুদ্ধি ও হূদয়ে ভর করে ভোটের জায়গায় অধিকারের গণতন্ত্র দাবি করছে। ধর্মীয় বা সেক্যুলার যে নামেই ডাকি, এই দাবি মানবতার, আমরা সবাই যার অংশ।
ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
স্বঘোষিত অহিংস আন্দোলনকারী হিযবুতের সেনাসংযোগের ইতিহাস আরও গভীর। গত বছরের ৬ মে ব্রিগেডিয়ার আলী খান নামের সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে আটক করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তাঁকেসহ আরও ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হিযবুতের সঙ্গে মিলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গে হিযবুতের যোগাযোগ হয় ব্রিটেনে সামরিক প্রশিক্ষণের সময়। ২০০৯ সালে তুর্কি সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। কেমালেত্তিন নামের এক তুর্কি ইসরায়েলে বসে এর নেতৃত্ব দেন এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। প্রায় সব কটি আরব রাষ্ট্রে সামরিক অভ্যুত্থান-চেষ্টার অভিযোগে হিযবুত নিষিদ্ধ। এর পর সাবেক সোভিয়েত মুসলিম প্রজাতন্ত্রগুলোই হয়ে ওঠে হিযবুতের মূল মঞ্চ। রাশিয়া ও চীনের প্রভাববলয়ে থাকা এই রাষ্ট্রগুলো কেন তাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ, এর কোনো ব্যাখ্যা সংগঠনটির তরফ থেকে দেওয়া হয়নি। লক্ষ্যণীয়, মুসলিম দেশগুলোতে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হলেও ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় তারা ছাড় উপভোগ করছে।
প্রায় দুই দশক ধরে ব্রিটেনই হয়ে থাকছে হিযবুতের প্রধান ঘাঁটি। ব্রিটিশ এমপি ক্লেয়ার শর্ট হাউস অব কমন্সে এদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। আল-কায়েদার মতো হিযবুত তাহ্রীরও মার্কিন-ব্রিটিশ স্বার্থ রয়েছে, এমন দেশগুলোতে বেশি তৎপর। ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নির্বাচিত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি অনির্বাচিতদের হাতে নেওয়ার ইচ্ছাও তারা গোপন রাখছে না।
হিযবুতের গোড়াপত্তন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হয় অভিবাসী ব্রিটিশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় অভিবাসী অস্ট্রেলীয় মুসলমানদের মাধ্যমে। বাংলাদেশে তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা গোলাম মওলা লন্ডন থেকেই হিযবুতের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে আসেন। ব্রিটিশ নাগরিক জিতুজ্জামান হক বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশে থেকে সংগঠনটি পরিচালনা করেন। বর্তমান নেতৃত্বের অধিকাংশই বিলেতফেরত অথবা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত এলিট শ্রেণীর সদস্য। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এদের টার্গেট। এঁদের নেতারা একমুখে বাংলাদেশে কর্মরত পশ্চিমা পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে যুক্ত থাকেন, অন্যমুখে দেন পশ্চিমাবিরোধী জিহাদের ডাক।
দুই.
হিযবুত অহিংস পথে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সামরিক বিদ্রোহের পথ যদি অহিংস হয়, তাহলে সোনার পাথরবাটিও সম্ভব। সত্যি যে, হিযবুত সরাসরি অস্ত্র ধারণ করা বা রক্তপাতে শামিল হয়নি। কিন্তু তাদের মতাদর্শের শাঁসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ঘৃণা ও সহিংসতার বীজ। তিনটি ধারণা দিয়ে হিযবুতের আদর্শকে দাগিয়ে নেওয়া যায়—১. গণতন্ত্র-বিরোধিতা, ২. বৈশ্বিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা, ৩. শরিয়া আইন বিষয়ে অটলতা। এই তিন উদ্দেশ্য নিখাদ পাশ্চাত্য-বিরোধিতার জমিনে গাঁথা। হিযবুত মনে করে, গণতন্ত্রই মুসলিম দেশগুলোর প্রধান ব্যাধি। এর নিদান হিসেবে তারা খেলাফত ও শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের চোখে অসুখই হলো ওষুধ, আর ওষুধই হলো অসুখ।
প্রথমত, তারা ভুলে যায়, মহানবী (সা.) প্রণীত মদিনা সনদই প্রথম গণতান্ত্রিক সংবিধান, যেখানে সব ধর্মের ও গোত্রের মানুষকে সমানাধিকার দেওয়া হয়েছিল। মুসলমানদের চারটি মযহাব রয়েছে; রয়েছে শিয়া ও সুন্নি বৈচিত্র্য। রয়েছে সুফি ও মরমি ভাবধারার ঐতিহ্য। এ ছাড়া বৈশ্বিক ধর্ম হিসেবে বিভিন্ন জাতি-ভাষা-অঞ্চলের ছাপও বহন করে চলছে দেড় হাজার বছরের এই ধর্ম। ভারত সরকারের একটি জরিপে দেখা গেছে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের প্রতিদিনকার জীবনে মিল ২০ শতাংশ, বাকি আশি শতাংশ মেলে স্বজাতির অন্য হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের সঙ্গে। বাংলাদেশের মুসলিম আর আরবের মুসলিমের মধ্যে মিল কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস আর উপাসনার সংস্কৃতিতে। সব বিশ্বাসীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা যেমন এক নয়, তেমনি তাদের সবাইকে এক ছাঁচে ঢালাও সম্ভব নয়। সম্ভব নয় কোনো একক কর্মসূচিতে তাদের সবার মঙ্গল করা। সহনশীলতার গণতান্ত্রিক চর্চা ছাড়া কীভাবে জাতি-বর্ণ-ভাষা ও অঞ্চলে বিভক্ত মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ানো সম্ভব?
দ্বিতীয়ত, বিশ্বের মুসলমানরা কখনোই একক কোনো খেলাফতের অধীনে আসেনি। খোলাফায়ে রাশেদিন ছাড়া আর কোনো খলিফাও ইসলামে সর্বজনীন মান্যতা পাননি। সিরিয়ার উমাইয়া শাসকেরা কার্যত খেলাফতের নামে রাজতন্ত্রই চালু করেন। ইসলামের আদি চিন্তকেরা খেলাফতকে যতটা না ধর্মের, তার চেয়ে বেশি ক্ষমতার খেলা আমল করে দূরে থেকেছেন। পাকিস্তানি পণ্ডিত জিয়াউদ্দিন সরদার বলছেন, ‘সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে ধর্ম খলিফাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে কাজ করেছে; সাম্য ও ন্যায়বিচারের আদর্শের উৎস হয়েছে ধর্ম। ক্ষমতার হাতিয়ার না হয়ে ধর্ম বরং ক্ষমতার সামনে সত্যের স্পর্ধা দেখিয়েছে। সম্ভবত এজন্যই ইসলামের আদি আইনপ্রণেতারা কিন্তু বিশ্বের জন্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি একক খেলাফতের ধারণা সমর্থন করেননি।’
অথচ হিযবুত বলতে চায়, সর্বক্ষমতার অধিকারী একজন অনির্বাচিত খলিফার খেলাফতি শাসনে সব জাতির সব মুসলিম থাকতে বাধ্য। এটা একমাত্র সম্ভব তালেবানি কায়দায় ধর্মের সামরিকীকরণ তথা রেজিমেন্টেশনের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি মোল্লাতন্ত্রও দাঁড় করাতে হবে। কিন্তু ইসলাম কি পোপতন্ত্রের মতো কোনো মোল্লাতন্ত্র অনুমোদন করে? খেলাফতের স্বার্থে অন্য ধর্ম ও মত-পথের মানুষকেও দমন করতে হবে তাদের। তাই হিযবুতের আপাত বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের আড়ালে লুকানো হিংসা ও দমনমূলক মতবাদটি চিনতে ভুল করা যাবে না।
তৃতীয়ত, শরিয়ার কোনো একক বিধিব্যবস্থাও অদ্যাবধি তৈরি হয়নি। ইসলামে এক আল্লাহ, তাঁর প্রেরিত পুরুষ মহানবী (সা.)-এ পূর্ণ বিশ্বাস এবং কোরআনই একমাত্র অভ্রান্ত ও অপরিবর্তনীয়, আর কিছু নয়। নবম শতাব্দীতে গ্রন্থিত ইসলামি জুরিসপ্রুডেন্স যুগে যুগে সংস্কারের মাধ্যমে বিভিন্ন আদল পেয়েছে। ইসলামি শাস্ত্রবিদেরা কোনো একক আইনগুচ্ছকে আদর্শ ঘোষণা করেননি। আদি যুগের আলেমরা হয়তো বুঝেছিলেন, ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা ও পরিবেশের মুসলমানরা স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে কোরআনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন। মুসলিম দেশগুলো ধনে-বলে-আদর্শে তখনই বড় হয়েছে, যখন তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও প্রয়োজনকে আমলে নিয়েছে; এবং যখন তারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি। ইসলামের গৌরব বৃদ্ধিকারী রাষ্ট্রনায়কদের প্রায় কেউই আক্ষরিক অর্থে শরিয়াভিত্তিক আইন চালু করেননি। উমাইয়া, ফাতেমীয়, আব্বাসীয়, সাফাভীয়, ওসমানীয় বা মোগলরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রাচীন সভ্যতাকে বাতিল না করে, গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে আরও বিকশিতই করেছিল। বৈচিত্র্য ধারণের গুণেই তারা তাদের আমলের সেরা সভ্যতা হয়ে উঠেছিল। বাগদাদ, দামেস্ক, বসরা, ইস্তামবুলের মুসলিম শাসকেরা যদি এক সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির লেনদেন না মানলে মধ্যযুগে এসব শহর বিশ্বের মশাল হতে পারত না। স্পেনের মুসলিম সভ্যতা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অপূর্ব মিলনকেন্দ্র হতে পেরেছিল ঘৃণার জোশে নয়, সমন্বয়শীলতার তাকদে। সম্রাট আকবর যদি প্রজা, কর্মচারি, আমাত্যবর্গ ও সেনাবাহিনীতে সব ধর্মের লোককে স্থান না দিতেন, রাষ্ট্রপরিচালনায় যদি সেযুগের মাপে ধর্মনিরপেক্ষ না হতেন, তাহলে এত বিরাট সাম্রাজ্যের নেতা তিনি হতে পারতেন না। সভ্যতা বলতে তাঁরা কেবল তরবারি বোঝেননি, উন্নত চিন্তা ও নৈতিকতাকেও বুঝেছিলেন।
মুসলমান সাম্রাজ্য কেন ইউরোপের কাছে হেরে গেল, তা ইতিহাসের এক বিরাট প্রশ্ন। বিশিষ্ট রুশ ইতিহাসবিদ ভি ভি বারটোল্ড তাঁর মুসলমান কালচার বইয়ে বলেন: ‘বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির ঘাটতির জন্য নয়, বরং এই শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলো চুপসে গিয়েছিল সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলার মাধ্যমে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ এবং সমাজে চিন্তা-বিস্তারের ক্ষমতা খুইয়ে তারা ভেতর থেকে শুকিয়ে মরছিল।’
তিন.
হিযবুত তাহ্রীরসহ ইসলামপন্থিরা সীমান্তে হত্যা, টিপাইমুখ বাঁধসহ যেসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে জনমত সংগঠিত করতে চায়, সেসব অবশ্যই জাতীয় স্বার্থের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এসবের ক্ষতি বাংলাদেশের সবার, ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এসব সমস্যার গোড়া যেমন অন্য ধর্ম নয়, তেমনি ধর্মীয় আওয়াজ তুলে এসবের বিহিতও হবে না। ধর্মীয় বা সামরিকতার পথে যদি সার্বভৌম জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যেত, তাহলে পাকিস্তানই হতো তার চ্যাম্পিয়ন।
বেশির ভাগ মুসলিম তরুণের মন আহত ও অপমানিত। পাশ্চাত্য আর তাদের ভরসা দিচ্ছে না; জাগাচ্ছে ভয় ও অবিশ্বাস। মুসলিম দেশগুলোয় আগ্রাসন এবং অভিভাসী মুসলিমদের প্রতি বৈরী আচরণে মনে হওয়া স্বাভাবিক, তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে লিপ্ত। ভারতের ওই জরিপেও আছে, সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সত্ত্বেও সর্বভারতীয়মুসলমানদের মনে একই ভীতি কাজ করছে।এই যন্ত্রণা থেকেই যে পরিচয় আক্রান্ত, সেই পরিচয় পুঁজি করে তারা আত্মরক্ষার উপায় খোঁজে। তারা দেখতে পায়, স্থানীয় শাসকেরা নতজানু ও সুবিধাবাদী। শাসকদের দুর্নীতি, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারী চলনবলনে জনগণ বিরক্ত ও ক্লান্ত। ধর্মঘেঁষা বিএনপি এবং কম ধর্মঘেঁষা আওয়ামী ভাবধারার জাতীয়তাবাদ তাদের চোখে ব্যর্থ। এই অবস্থাতেই বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ঢালাই করে রাজনীতি করার লোকের আবির্ভাব ঘটে। তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে ধর্মীয় সমস্যা হিসেবে দেখায় এবং এর সমাধান বাতলায় সামরিক পথে। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের সংবেদনশীল অংশ হাতের কাছে পাওয়া ধর্ম এবং হঠাৎ হাজির হওয়া জেহাদিদের নিয়ে দিন বদলাতে আগ্রহী হয়।
কিন্তু যাদের ইতিহাস ঘোলাটে, যাদের চিন্তাভাবনা সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষে ভরা, তাদের পক্ষে কি বিকল্প হওয়া সম্ভব? মিসর বা তিউনিসিয়ার অপশাসন এভাবে বদলায়নি; বদলেছে গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানের চাপে। মুসলমান দেশগুলোর আজ প্রয়োজন গণতান্ত্রিকতা, সাংস্কৃতিক উদারতা এবং মর্যাদা ও অধিকার কায়েমের অর্থনীতি। গ্রামীণ জেএমবি কিংবা শহুরে হিযবুত তাহ্রীরের পথে তা হওয়ার নয়। আরব জাগরণের প্রমাণ, আরব তারুণ্য খেলাফত নয়, পাশ্চাত্যের লেজুড়বৃত্তিও নয়, জাতীয় স্বার্থরক্ষক মুক্তিকামী রাজনীতি চায়। ধর্মীয় ভেদাভেদ মানলে তাহরির স্কোয়ারে বামপন্থি, ইসলামপন্থি, শিয়া-সুন্নি, মুসলিম-খ্রিস্টান নির্বিশেষে মিসরিয় ঐক্য ঘটতে পারতো না। ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর জনপ্রিয়তার কারণ ধর্মীয় কড়াকড়ি নয়, বরং জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক ঐক্যই তাদের শক্তি। অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনে পশ্চিমা তরুণেরাও বলছে: আমরা যে জাতির বা ধর্মের হই, আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯৯%; আর ওই ১% যারা, তারা স্বধর্মী বা বিধর্মী, স্বজাতি বা বিজাতি যা-ই হোক, তারা মানবতার শত্রু। তারা বুদ্ধি ও হূদয়ে ভর করে ভোটের জায়গায় অধিকারের গণতন্ত্র দাবি করছে। ধর্মীয় বা সেক্যুলার যে নামেই ডাকি, এই দাবি মানবতার, আমরা সবাই যার অংশ।
ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
No comments