নোয়াখালীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা- মাইজদীতে ৫ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা by গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার বাড়িয়েছিলাম। সাক্ষরতার হার ৪৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ফলাফলটা কি দাঁড়াল।
আমরা দেখলাম সাক্ষরতার হার ৫০ ভাগে নেমে এসেছে। আমার প্রশ্ন- ৫ বছরে যদি আমরা সাক্ষরতার হার ২০ ভাগ বাড়াতে পারি তাহলে আমাদের শিক্ষার হার কমল কেন? আসলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চান না আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করুক। তিনি নোয়াখালীতে বিশেষ আইনগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। বিএনপি নেত্রী সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন নিজের দুই ছেলেকে পড়ালেখা শেখাবেন বলে। প্রতিমাসে টাকা নিতেন, পনেরো শ’ টাকা করে একেক ছেলের জন্য, লেখাপড়া শেখাবেন। কি ডিগ্রি এনেছেন আপনারা জিজ্ঞেস করেন- মানি লন্ডারিংয়ের ডিগ্রি? দুর্নীতির ডিগ্রী? উনি এই ডিগ্রি এনে দিয়েছেন ছেলেদের। অবশ্য উনার দুঃখটা আমরা বুঝি। উনি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন। আর মেট্রিক পরীক্ষায় তিন বিষয়ে পাস করেছিলেন। তাহলো উর্দু, অঙ্ক আর বাংলা। আর কোন বিষয়ে পাস করেননি। তাই মেট্রিকে নিজে ফেল করে উনি বোধহয় চিন্তা করেন আমি যেহেতু পাস করিনি বাংলার ছেলেমেয়েরা কিভাবে পাস করবে। সেই জন্যই ছেলেমেয়েরা পাস করুক তা উনি চান না। মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদী হাউজিং এস্টেট মাঠে ৫ লক্ষাধিক লোকের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।আপনারা দেখেছেন পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি ক্লাস হতো। আমরা বৃত্তি বাড়িয়ে দিয়েছি। একই প্রশ্নপত্রে আমরা জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা চালু করেছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা আজ লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছে। ভাল রেজাল্ট করছে। এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় ৮৬ ভাগ পাস করেছে। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯০ ভাগের পরে। এই যে পাসের হার আমরা বৃদ্ধি করেছি, আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় আরও মনোযোগী হোক। পড়াশোনা করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং দেশের মুখ উজ্জ¦ল করবে। বিদেশে যাবে, বিদেশে ভাল করবে। আমরা সেটাই চাই। শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোন দেশ উন্নতি করতে পারে না। দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। এজন্য আমরা শিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি এবং বাবা-মায়ের বোঝা কমিয়ে দিয়েছি।
শিক্ষা হচ্ছে বড় সম্পদ। এই সম্পদ দিয়ে নিজের জীবনকে গড়ে তুলতে হবে। এই সম্পদই হচ্ছে, সেই সম্পদ যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। আমার ছেলেমেয়েকে যেমন আমি শিক্ষিত করেছি, ঠিক তেমনিভাবে দেশের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে চাই। সেভাবেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাত্র চার বছর পূর্ণ করলাম। চার বছর পূর্তির পর আমাদের এটি প্রথম জনসভা। আজকে আমি কথা দিয়ে গেলাম- আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা নির্বাচন এবং উপনির্বাচন হয়েছে। একটা নির্বাচনেও কোন রকম অভিযোগ আসেনি। প্রত্যেকটা নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছে। কারণ আমরা জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। ভোটের মালিক আপনারা, যাঁকে খুশি ভোট দেবেন। ভোট শান্তিপূর্ণভাবে হবে। কেউ ভোট কেড়ে নিবে, সিল মারবে; ওই অবস্থা যেন আর না হয়, সেজন্য আমরা আইন করে সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি বলেই প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সক্ষম হয়েছি।
বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তিতে উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন- আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকে। গ্যাস পাওয়া যায়, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে। মাবোনেরা যাতে ঘরের কাছে চিকিৎসা সুবিধা পান সেজন্য কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার করেছি। এখন আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে না। আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই। এজন্য খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের লক্ষ্য। আল্লাহর অশেষ রহমত। তাছাড়া নিয়ত ভাল থাকলে আল্লাহও সাহায্য করে। আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। খাদ্য উৎপাদন বিএনপির আমলে কমে গিয়েছিল। ৩০ লাখ মে.টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আবার আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। ৩ কোটি ৪০ লাখ মে.টন খাদ্য এবার উৎপাদন হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য ভিজিএফ’র মাধ্যমে গরিব মানুষকে খাদ্য দিচ্ছি। আমরা বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ছোট শিশুরা স্কুলে গেলে মাকে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। এবার বছরের প্রথম দিনে আমরা ২৭ কোটি বই বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। আজকে বাবা-মাকে বই কেনার জন্য চিন্তা করতে হয় না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন- বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তারা কি করেছে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, লুটপাট আর মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারে ব্যস্ত ছিল। ২০০১ সালে চালের দাম ১০টা রেখে গিয়েছিলাম। সেই চাল ৩৮/৪০ টাকায় নিয়ে যায় তারা। আর নৌকায় ভোট দিলেই বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকে। আমরা ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম, নির্বাচনে জিতলে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করব। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ জনগণের হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছিল। এবার শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দিয়েছি। স্কুলে স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করে দিয়েছি। প্রযুক্তি শিক্ষার যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র করা হয়েছে এবং সেখানে ইন্টারনেট সুবিধাও দেয়া হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অপরিসীম। সেই প্রবাসীরা অনলাইনে এবং এসএমএম’র মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে পারে। ভর্তির জন্য ঢাকায় ঢাকায় যেতে হয় না। বাড়ির পাশের ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে গিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলা এবং দেখার সুযোগ পায় স্বজনরা। ছাত্রছাত্রীরাও অনলাইনে পূরণ করেন ভর্তির আবেদন ফরম।
তিনি বলেন, কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কৃষকের ১০ টাকার এ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায় ভর্তুকির টাকা। বিএনপি দেশের সব পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা আবার পাটকল চালু করেছি। পাটের জীবন রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। আমরা পাটের সুদিন ফিরিয়ে এনেছি। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা সত্ত্বে¡ও আমাদের অর্থনীতি মজবুত। অনেকেরই ধারণা ছিল, বাংলাদেশ আর অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আজকে আমাদের রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।
জাতির পিতা বলেছেন, যে মাটিতে বীজ ফেললে গাছ হয়, গাছে ফল হয় সেই মাটির মানুষ কখনও দরিদ্র থাকতে পারে না। আমরা চাই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সন্দুরভাবে বাঁচবে। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭১-এ যারা মানুষ হত্যা করেছে, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে তাদের বিচার শুরু হয়েছে। আজকের জনসভায় থেকে আপনারা হাত তুলে সেই বিচারের প্রতি যেই সমর্থন দিয়েছেন। সেজন্য আপনাদের (নোয়াখালীবাসীকে) ধন্যবাদ।
নোয়াখালীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীর বিষয়ে আমার কাছে দাবি করার কিছু নেই। দাবি করার আগেই আমরা অনেক কিছু করেছি। নোয়াখালীতে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। এরই মধ্যে আমি জেলা প্রশাসকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থনৈতিক জোনের জায়গা ঠিক করার জন্য। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে বেকার সমস্যার সমাধান করব। এছাড়া নোয়াখালীর জলাবদ্ধতাসহ সব সমস্যা আমরা পর্যায়ক্রমে সমাধান করব।
আগামি নির্বাচনের জন্য ভোট প্রার্থনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন- আমরা সব কিছুই করে দেব। কিন্তু আগামী নর্বাচনে আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরেকবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনারা আমাকে হাত তুলে ওয়াদা করেন আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন কি না। এ সময় জনসভায় উপস্থিত লাখো জনতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে হাত উঠিয়ে ওয়াদা ব্যক্ত করেন।
সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সচেষ্ট ॥ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহজাদপুরে সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাপেক্সকে শক্তিশালী করে। দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়তে উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি সরকারের সময়ে বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে এমন প্রচারণা চালিয়ে বিদেশীদের কাছে গ্যাস বিক্রির চুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। আমরা তখন বলেছিলাম, আগে গ্যাসের মজুদ নির্ধারণ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবতা যাচাই করে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। নোয়াখালীর সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্রের এই গ্যাস নোয়াখালী অঞ্চলে শিল্প-কারখানার উন্নয়নে এবং সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য অগ্রাধিকার পাবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী গ্যাসের অপচয় রোধ করার জন্য ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করেন।
ফলক উন্মোচন এবং সুইচ টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গ্যাস ক্ষেত্রের উদ্বোধন এবং জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে যাত্রা শুরু করা সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্র হবে দেশের ২৪ নম্বর গ্যাস ক্ষেত্র। এই প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হয় ৬০ কোটি টাকা। ‘এই গ্যাস ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম সেলিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপির পরিচালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক, পানি সম্পদমন্ত্রী রমেস চন্দ্র সেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মোহাম্মদ এনামুল হক এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এমপি, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদিকা ফরিদুন্নাহার লাইলি এমপি, জেলা পরিষদের প্রশাসক ডা. এবিএম জাফর উল্যা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, এটিএম এনায়েত উল্যা, ভিপি মোহাম্মদ উল্যা, যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের, আব্দুল মমিন বিএসসি, উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে এ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন, আফম বাবুল বাবু, অধ্যাপক ওয়ালী উল্যা, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু, সাধারণ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইকবাল করিম তারেক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইবনে ওয়াজিদ ইমন প্রমুখ।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগ কোম্পানীগঞ্জের সরকারী মুজিব কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। গ্যাস ক্ষেত্র উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে দুপুর সোয়া ১টায় নোয়াখালী সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গোটা নোয়াখালী শহর সেজেছিল বর্ণিল সাজে। রংবেরঙের ডিজিটাল ব্যানার, পতাকা, গেট দিয়ে সাজানো হয়েছে জেলা শহর। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে সোমবার বিকেল থেকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসহ প্রত্যন্ত উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে থাকেন। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মিছিল নিয়ে জনসভায় জড়ো হতে থাকে মানুষ। ফুলের নৌকা সাজিয়ে, ঢাকঢোল নিয়ে বাজনা বাজিয়ে মিছিল নিয়ে আসে নেতাকর্মীরা। ২০০০ সালের ২৩ জানুয়ারির পর দীর্ঘ ১৩ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে গত একসাপ্তাহ জুড়ে গোটা জেলায় ছিল সাজ সাজ রব।
বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে পৌঁছে নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন, নতুন ডাকাতিয়া ও পুরাতন ডাকাতিয়া- ছোট ফেনী নদী নিষ্কাশন প্রকল্পে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ক্লোজার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন, ৫ বছর মেয়াদী সদর ও সুবর্ণচর উপজেলার ৫০ কিলোমিটার সড়কের পারফরমেন্স পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন, কবিরহাট উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন সোনাইমুড়ি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন, সদর উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, নোয়াখালী পৌরসভা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর, সোনাইমুড়ি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উদ্বোধন, চাটখিল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনের ফলক উন্মোচন করেন।
জনসভার শুরুতে ১৯৭২ সালের ২২ জুন নোয়াখালী সফরকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে।
খালি খালি নোয়াখালী বলব না ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই জনতার উদ্দেশে বলেন, খালী খালী নোয়াখালী বলব না। এবার থেকে ভরা ভরা নোয়াখালী বলব। আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। আজকে সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্রের উদ্বোধন করলাম। এই গ্যাস ক্ষেত্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যাবে আর এই গ্যাস দিয়ে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হবে। এখানে এই গ্যাস ব্যবহার হবে। নোয়াখালীতে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছি। নোয়াখালী যেহেতু জলাবদ্ধ থাকে সেই জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন ডাকাতিয়া, পুরনো ডাকাতিয়া-ছোট ফেনী নদীর পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ক্লোজার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হলো। কবিরহাট এবং সোনাইমুড়ি উপজেলা পরিষদ ভবনের উদ্বোধন করেছি। চৌমুহনীতে চারলেন সড়কে উন্নীতকরণের কাজ চলছে, ইতোমধ্যে দুই কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। ২শ’ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং ৬শ’ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ৩শ’ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুত লাইন স্থাপন এবং ২৭ হাজার গ্রাহকের মাঝে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।
আগামীতে নোয়াখালীর দুঃখ নোয়াখালী খাল পুনর্খনন করা হবে। বিগত নির্বাচনে নোয়াখালীবাসী আমাদের দুটি সিট উপহার দিয়েছে সেজন আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই।
No comments