স্বাস্থ্যসেবায় ন্যূনতম ব্যয় হচ্ছে না-প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে
স্বাস্থ্যসেবার সরকারি ব্যয় ও মান নিয়ে বরাবরই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়ে আসছে। এবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তাদের 'বিশ্বস্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০১২' প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার নেতিবাচক দিকটি তুলে ধরেছে। জাতিসংঘের এ প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, স্বাস্থ্যসেবার জন্য মাথাপিছু কমপক্ষে ৪৪ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করা উচিত।
কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু বর্তমান ব্যয় ২১ ডলারের সমপরিমাণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শুধু পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত- সব দেশই বাংলাদেশের চেয়ে অধিক ব্যয় করে থাকে। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যসেবায় প্রধানত সংস্থাটি মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ও অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দিয়েছে। শুধু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাই নয়, পত্রিকার রিপোর্ট থেকেও জানা গেছে, দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ দিন দিন কমছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার দোকানে।
স্বাস্থ্য খাতে যেখানে মালদ্বীপ ব্যয় করছে ৩৫৫ ডলার ও ভুটান করছে ৯১ ডলার সমপরিমাণ অর্থ, সেখানে বাংলাদেশের এ করুণ দশা কেন? দেশের সরকার স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় করে থাকে, তার বেশির ভাগ অর্থই চলে যায় অবকাঠামো নির্মাণ, লোকবল নিয়োগের মতো কাজে। এ অবস্থার কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বাংলাদেশে চিকিৎসার সঠিক মান না পাওয়া ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আস্থা না থাকার কারণে এমনকি দরিদ্র জনগোষ্ঠীও বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রের শরণাপন্ন হচ্ছে না। ফলে অনেকে ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও বেসরকারি সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে সরকার এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি বা একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার চাপ বা তাগিদ অনুভব করছে না। এটি কোনো দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা হতে পারে না। জনসেবার অন্যতম এই শর্তটি এড়িয়ে দেশ কী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে? কখনোই তা সম্ভব নয়। দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। একটি আধুনিক রাষ্ট্র এ অধিকারকে অবহেলা করে জনগণকে নিজ দায়িত্বে ছেড়ে দিতে পারে না। দ্বিতীয়ত, চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর বিষয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠাননির্ভর করে ফেলাটাই বা কতটা যুক্তিসংগত? শুধু দেশের বাণিজ্যিক চিকিৎসাকেন্দ্রেই নয়, সামর্থ্যবান গোষ্ঠী অল্পতেই চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছুটে যাচ্ছে। এতে মহামূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই দেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠাননির্ভরতা কমিয়ে আনুন। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মূল্যবান অর্থের সাশ্রয় হবে। জনগণকে ভিটাবাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে না। অন্যদিকে সরকারের জন্যও তা প্রশংসা বয়ে আনবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ করতে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না।
No comments