হজ ফ্লাইট-দূর করতে হবে বিড়ম্বনা

বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনা অনেকটাই নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরনো উড়োজাহাজের বহর নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে শিডিউল ঠিক রাখতে না পারাটাই যেন বিমানের নিয়মিত রুটিন। যেখানে ঢাকায় অন্য সব বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট অপারেশন বাড়িয়েছে, সেখানে বিমানের ফ্লাইট কমেছে।


আন্তর্জাতিক রুট একের পর এক বন্ধ হয়েছে। কিছু রুট চালু হওয়ার পর যখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে, তখনই আবার নানা অজুহাতে সেই রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়। হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা বিমানের জন্য সে রকম একটি অজুহাত। হজের সময় হজযাত্রীদের ফ্লাইট নিশ্চিত করতে গিয়ে এবার বাইরের নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ করে অনেক রুটে বিমানের ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এসবের নেপথ্যে বিমানের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা বা নীতিনির্ধারকের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনি সংস্থাটিকে ব্যবসয়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগও আছে। এক শ্রেণীর কর্মকর্তার কমিশন-বাণিজ্যের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এবারও হজ ফ্লাইট চালু রাখতে গিয়ে বিমান ফ্লাইট বিপর্যয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজের যে বহর আছে, তা দিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবেই বাইরে থেকে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার কথা উঠে আসে। বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি আরবের বিমান সংস্থার বাইরে তৃতীয় কোনো বিমান সংস্থাকে হজযাত্রী পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হলে ফ্লাইট বিপর্যয়ের আশঙ্কা যেমন থাকত না, তেমনি রয়ালটি বাবদ বাড়তি অর্থ পেত বিমান। এখন আর সেটা পাওয়া সম্ভব নয়। বিমান কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিমানের জন্য ক্ষতিকর হয়েই দেখা দেবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। হজ ফ্লাইট চালু রাখতে গিয়ে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ করতে হবে। কারণ বিমান কর্তৃপক্ষ সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও তিনটি এয়ারক্র্যাফট দিয়ে এ বছর সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। তাতে কমপক্ষে ২০ হাজার হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বারবার দরপত্র ডেকেও অজ্ঞাত কারণে বিমান হজ ফ্লাইট লিজ নিতে পারেনি। যদিও বিষয়টি সবার কাছেই ওপেন-সিক্রেট। অভিযোগ রয়েছে, কাবো ও এয়ার আটলান্টার কাছ থেকে বেশি দরে উড়োজাহাজ লিজ নিতে সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিম সংকট। অভিযোগ উঠেছে, কমিশনের ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় কৃত্রিম সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিমানকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন শিডিউলড ফ্লাইট লাগানো হবে হজে। হজযাত্রী পরিবহনের জন্য বিমানের দুটি এয়ারক্র্যাফট 'অরুণ আলো' ও 'পালকি'কে ঢাকা-লন্ডন রুট থেকে তুলে এনে হজযাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় চতুর্মুখী সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিমান। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে হজ ফ্লাইট। এবার হজযাত্রী পরিবহনে মাত্র ১১০টি স্লট পাবে বিমান। এ স্লট দিয়েই ৫৬ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ সীমিত স্লটে এত যাত্রী পরিবহন বিমানের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে বিড়ম্বনাই অপেক্ষা করছে বিমানের হজযাত্রীদের জন্য। আমরা আশা করব, হজযাত্রী পরিবহনে বিমান কর্তৃপক্ষ দক্ষতার পরিচয় দেবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সব রুটে বিমান চলবে আগের মতোই। এ জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.