পাকিস্তান-সরকার হবে সেনাশাসন আড়ালের প্রসাধনী by ব্রুস রিডেল
সামরিক অভ্যুত্থান কতটা সম্ভব? আমরা দেখতে পাচ্ছি পাকিস্তানের পঞ্চম সামরিক স্বৈরতন্ত্র ধাপে ধাপে কায়েম হচ্ছে। এটা হবে আগের চারটি থেকে আলাদা ধরনের এক সামরিক শাসন। হয়তো এবার আমরা কোনো অভ্যুত্থান ঘটতে দেখব না, পাব না একক কোনো সামরিক শাসক। বরং দেখতে পাচ্ছি, বাহিনীর কমান্ডাররা পর্দার অন্তরালে থেকে প্রতিটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাদের হাতে নিয়ে নিচ্ছে।
একটি বেসামরিক সরকার অবশ্য টিকে থাকবে, তবে তার ভূমিকা হবে সামরিক শাসন আড়াল রাখার প্রসাধনীসামগ্রী হিসেবে। সেনাবাহিনীর ভূমিকা বাড়বে পর্দার আড়ালে থেকেই সেনাবাহিনী দেশের সর্বময় ক্ষমতাবার মালিক হতে চায়। পাকিস্তানে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য দুটি বিষয় আছে তাদের: এক. পরমাণু বোমা, দুই. ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক; দুটো বিষয়ের নিয়ন্ত্রণই তারা চায়। এই লক্ষ্যেই তারা ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হোসাইন হাক্কানিকে অপসারণ করিয়ে নিয়েছে। কেননা, ওয়াশিংটনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হোসাইন হাক্কানিকে তারা বাধা বলে মনে করেছিল। এর জন্যই তারা লড়াই করে আসছে, তারা চাইছে এই সম্পর্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। সেনাবাহিনী সেই সরকার চায়, যে সরকার ওয়াশিংটন, বেইজিং ও রিয়াদের মতো মূল পররাষ্ট্রনৈতিক সম্পর্কগুলোর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছেড়ে রাখবে। পাকিস্তানে তারা আর কখনো ‘প্রথম পরমাণু আক্রমণ করবে না’, বা ‘কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ স্বাধীনতা সংগ্রাম নয়’ ধরনের কথাবার্তা আর শুনতে চায় না।
চিঠি কেলেংকারির মওকা
চিঠি কেলেংকারি বা মেমোগেট (মেমোগেট হলো পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কেলেংকারির নাম। জারদারি সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসাইন হাক্কানির মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে একটি গোপন চিঠি পৌঁছানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই চিঠির ভাষ্য হচ্ছে, সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধানকে অপসারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সরকার মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা চায়। হাক্কানি এই চিঠি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী মনসুর ইজাজের মাধ্যমে পাঠালেও পরে মনসুর ইজাজ এই ঘটনা ফাঁস করে দেন। এ ঘটনা থেকেই পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী ও নির্বাচিত সরকারের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় এবং অভ্যুত্থানের আশঙ্কা দানা বাঁধে।) বিষয়টি বিস্ময়কর গুরুত্ব পেয়ে গেছে। এ ঘটনা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠেছে। আমি আশা করি এই খেলার খেলোয়াড়েরা একটু ক্ষান্ত হবে এবং বলবে, ‘হেই, এটা তো এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’ এবং এই খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বেসামরিক সরকার বা বিচার বিভাগ নয়, সেই খেলোয়াড় হলো সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড়ের কার কী উদ্দেশ্য তা এখনো পুরোটা পরিষ্কার নয়। তবে খেয়াল করার বিষয়, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া দেখতে বদ্ধপরিকর। তারা সংবিধানবহির্ভূত কোনো সমাপ্তি দেখতে আগ্রহী নয়। পাকিস্তানের জন্য এমন মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে আবার এই নয় যে, পাকিস্তানে গণতন্ত্র চলছে। কিন্তু গণতন্ত্রে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রথম পদক্ষেপটি হলো, নির্বাচিত সরকারকে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত হতে না হওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা। আমার বিশ্বাস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম লীগের প্রধান নওয়াজ শরিফ এ ব্যাপারে ভালোভাবেই আন্তরিক।
জারদারি সরকার বিষয়ে
জারদারি সরকারের সমালোচনায় পঞ্চমুখ হওয়া খুবই সহজ। কিন্তু এটা ভুললে চলবে না, সরকারি ক্ষমতায় আসীন হয়েই এই সরকার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উভয় পক্ষের হয়ে কাজ করা থেকে সরিয়ে এনেছে, চেষ্টা করেছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া থামিয়েছে এবং পরমাণু বোমার বেলায় গ্রহণ করেছে ‘প্রথম আক্রমণ নয়’ নীতি। যেদিন থেকে প্রেসিডেন্ট জারদারি দায়িত্ব নিয়েছেন এবং হোসাইন হাক্কানিকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত করেছেন, সেদিন থেকেই সেনাবাহিনী তাঁর ওপর যারপরনাই নাখোশ হয়ে আছে। মেমোগেট বা চিঠি কেলেংকারির ঘটনাকে সেনাবাহিনী জারদারি সরকারের দিক থেকে তৈরি হওয়া সমস্যা অবসানের সুযোগ হিসেবে নেয়। তারা যেমন সরকার চায় তেমনি সরকার কায়েমের লক্ষ্যে এই ঘটনাকে তারা কাজে লাগায়। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী চাইছে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নটি সরকার জেনারেলদের হাতেই ছেড়ে রাখুক।
ব্রুস রিডেলের এই সাক্ষাৎকারটি নেন আশীষ কুমার সেন। ভারতের দি আউটলুক ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত।
ব্রুস রিডেল: সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও পাকিস্তাননীতি পর্যালোচনার দায়িত্ব পান।
চিঠি কেলেংকারির মওকা
চিঠি কেলেংকারি বা মেমোগেট (মেমোগেট হলো পাকিস্তানের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক কেলেংকারির নাম। জারদারি সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসাইন হাক্কানির মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে একটি গোপন চিঠি পৌঁছানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই চিঠির ভাষ্য হচ্ছে, সেনাপ্রধান ও আইএসআইয়ের প্রধানকে অপসারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সরকার মার্কিন প্রশাসনের সহায়তা চায়। হাক্কানি এই চিঠি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী মনসুর ইজাজের মাধ্যমে পাঠালেও পরে মনসুর ইজাজ এই ঘটনা ফাঁস করে দেন। এ ঘটনা থেকেই পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী ও নির্বাচিত সরকারের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় এবং অভ্যুত্থানের আশঙ্কা দানা বাঁধে।) বিষয়টি বিস্ময়কর গুরুত্ব পেয়ে গেছে। এ ঘটনা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠেছে। আমি আশা করি এই খেলার খেলোয়াড়েরা একটু ক্ষান্ত হবে এবং বলবে, ‘হেই, এটা তো এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’ এবং এই খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বেসামরিক সরকার বা বিচার বিভাগ নয়, সেই খেলোয়াড় হলো সেনাবাহিনী।
পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড়ের কার কী উদ্দেশ্য তা এখনো পুরোটা পরিষ্কার নয়। তবে খেয়াল করার বিষয়, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া দেখতে বদ্ধপরিকর। তারা সংবিধানবহির্ভূত কোনো সমাপ্তি দেখতে আগ্রহী নয়। পাকিস্তানের জন্য এমন মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে আবার এই নয় যে, পাকিস্তানে গণতন্ত্র চলছে। কিন্তু গণতন্ত্রে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রথম পদক্ষেপটি হলো, নির্বাচিত সরকারকে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত হতে না হওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা। আমার বিশ্বাস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম লীগের প্রধান নওয়াজ শরিফ এ ব্যাপারে ভালোভাবেই আন্তরিক।
জারদারি সরকার বিষয়ে
জারদারি সরকারের সমালোচনায় পঞ্চমুখ হওয়া খুবই সহজ। কিন্তু এটা ভুললে চলবে না, সরকারি ক্ষমতায় আসীন হয়েই এই সরকার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উভয় পক্ষের হয়ে কাজ করা থেকে সরিয়ে এনেছে, চেষ্টা করেছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া থামিয়েছে এবং পরমাণু বোমার বেলায় গ্রহণ করেছে ‘প্রথম আক্রমণ নয়’ নীতি। যেদিন থেকে প্রেসিডেন্ট জারদারি দায়িত্ব নিয়েছেন এবং হোসাইন হাক্কানিকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত করেছেন, সেদিন থেকেই সেনাবাহিনী তাঁর ওপর যারপরনাই নাখোশ হয়ে আছে। মেমোগেট বা চিঠি কেলেংকারির ঘটনাকে সেনাবাহিনী জারদারি সরকারের দিক থেকে তৈরি হওয়া সমস্যা অবসানের সুযোগ হিসেবে নেয়। তারা যেমন সরকার চায় তেমনি সরকার কায়েমের লক্ষ্যে এই ঘটনাকে তারা কাজে লাগায়। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী চাইছে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নটি সরকার জেনারেলদের হাতেই ছেড়ে রাখুক।
ব্রুস রিডেলের এই সাক্ষাৎকারটি নেন আশীষ কুমার সেন। ভারতের দি আউটলুক ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত।
ব্রুস রিডেল: সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও পাকিস্তাননীতি পর্যালোচনার দায়িত্ব পান।
No comments