সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পর শিক্ষক আন্দোলন অবান্তর ॥ শিক্ষামন্ত্রী- আন্দোলনের নামে বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে অভিযোগ এনেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরেও আন্দোলন করাকে ‘অবান্তব’ অ্যাখ্যায়িত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আন্দোলনের নামে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। প্রাইমারী আর মাধ্যমিক এক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতার আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এক সঙ্গে যে সুযোগ বৃদ্ধি করেছে অতীতে তা কেউ করেনি। আপনার সরকার তো ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিল। তারা কেন কোন সুযোগ সুবিধা শিক্ষকদের দিল না? ২৮ বছরে আপনার দল তো জাতীয়করণ করল না। পাঠ্যবই থেকে মওলানা ভাসানীর নাম বাদ দেয়ার যে অভিযোগে উঠেছে তাকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে অভিযোগকারীদের বই পড়ে দেখারও অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী।বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির একদিন পরই আবার আন্দোলন সম্পর্কে বুধবার শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ আনলেন। এদিকে মন্ত্রীর অভিযোগ অসত্য বলে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপিুপন্থী শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সমাবেশ থেকে মহাজোট সরকারকে ‘শিক্ষকবিরোধী’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিএনপি নেতা ঘোষণা দিয়েছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। এ সরকার টাকা দিয়ে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনতে পারবে কিন্তু শিক্ষকদের টাকা দেবে না। আপনারা এই সরকারকে বিশ্বাস করবেন না। সমাবেশ থেকে বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা সেলিম ভূইয়া চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন। এর আগে মঙ্গলবার বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫ গুণ করে ১০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ভাতাও ১৫০ টাকার স্থলে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩০০ টাকা করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ল। চলতি জানুয়ারি থেকেই এই সুবিধা পাবেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের এসব আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু এ ঘোষণার পর বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠনটি। চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা না আসা পযন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। এদিকে সমাবেশের কারণে সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যায় রাস্তায় যান চলাচল। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এ অবস্থায় দুপুরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী অভিযোগ করেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে ‘অবান্তব’ অ্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। হঠাৎ করে এভাবে জমায়েত হয়ে এ দাবি করা অগ্রহণযোগ্য। প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়ায় এমপিওভুক্ত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও তাদের চাকরি জাতীয়কণের দাবিতে আন্দোলন করছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রাইমারী আর মাধ্যমিক এক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উড়াল দিয়ে এসে এখানে বসিনি। ৫৩ বছর ধরে এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত আছি। বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই এসব করা হচ্ছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভাতা বাড়ানোর এ ঘোষণায় শিক্ষক-কর্মচারীরা খুশি হয়েছেন। তারা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। এদিকে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাম পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়ার যে অভিযোগে উঠেছে তা ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কতিপয় পত্রপত্রিকায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছেÑ তা যথার্থ নয়। বরং বিভ্রান্তিকর। প্রকৃত তথ্য হলো, বর্তমান শিক্ষাক্রমের একাধিক পাঠ্যপুস্তকে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর একাধিক ছবিসহ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর বাধ্যতামূলক বিষয় ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ১০ নং পৃষ্ঠায় পাঠ-৩ এ ‘যুক্তফ্রন্ট’ শিরোনামে মওলানা আবদুল খান ভাসানীর ছবিসহ তাঁর অবদান তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া ৯ম-১০ম শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যপুস্তকের ৫নং পৃষ্ঠায় বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিকাশে রাজনৈতিক আন্দোলনের ভুমিকা অধ্যায়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অবদান তুলে ধরা হয়েছে। ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ পাঠ্যপুস্তকের ১১৫ নং পৃষ্ঠায় ১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু ও মওলানা ভাসানীর প্রভাত ফেরির ছবিসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। একই শ্রেণীর ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ পাঠ্যপুস্তকের ১৩৯ নং ও ১৫৩ নং পৃষ্ঠায় যুক্তফ্রন্টের পটভূমি ও ২১ দফা কর্মসূচী অধ্যায়ে তাঁর বিশেষ অবদান তুলে ধরা হয়েছে। একই বইয়ের ১৭১ নং পৃষ্ঠায় মহান মুক্তিযুদ্ধে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অবদান ছবিসহ প্রকাশ করা হয়েছে। পাঠ্যবই থেকে মওলানা ভাসানীর নাম বাদ দেয়ার যারা অভিযোগে করেন তারা দয়া করে বই পড়ে দেখুন।
আন্দোলনে শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট ॥ জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব ও পরামর্শ বিবেচনা না করে মন্ত্রণালয়ের এক তরফা ঘোষণার প্রতিবাদে জেলায় জেলায় শিক্ষক কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ফ্রন্টের জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আগামী রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। বুধবার ফ্রন্টের জাতীয় কমিটির বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, শিক্ষার কাক্সিক্ষত সমন্বিত উন্নয়ন ও শিক্ষকদের প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট শিক্ষা জাতীয়করণ কর্মসূচী বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
মাল্টিমিডিয়া শ্রেণী কক্ষ চালু করা হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, চলতি বছরের মধ্যেই ২৩ হাজার ৩০০ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণী কক্ষ চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনকালে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন।
No comments