আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের সহযোগিতা চাই- ঢাকা বার সমিতির বহুতল ভবনের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ॥ ২০ কোটি টাকা দেবার ঘোষণা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকার বাসত্মবায়নে আইনজীবীদের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে ঢাকা আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন উপলৰে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সকলের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থাকবে। কেউ অন্যায়ের শিকার হবে না। প্রধানমন্ত্রী মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তির জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উলেস্নখ করেন। খবর বাসসর।তিনি জেল হত্যা, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও যুদ্ধাপরাধীসহ সকল অপরাধীর বিচারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, সকল সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ নিমর্ূল করে প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তা বিধানই আমাদের সরকারের অন্যতম লৰ্য।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি জিলস্নুর রহমানের প্রতিশ্রম্নতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আইনজীবী ভবন নির্মাণে সরকারের পৰ থেকে ২০ কোটি টাকা প্রদানের ঘোষণা করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজার হাজার আইনজীবী মুহুমর্ুহু করতালি ও সেস্নাগান দিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মুখলেসুর রহমান বাদলের সভাপতিত্বে ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম, সংসদ সদস্য ডা. মোসত্মফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট গাজী মোহাম্মদ শাহ আলম।
প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের ভিত্তিপ্রসত্মর ও ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে আইনজীবী ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা ওয়ান ইলেভেনের পর তাঁর এবং দলের নেতাকমর্ীদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে সে কথা স্মরণ করে আইনজীবীদের সে সময়ের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, এ দেশের আইনজীবীরা গণতন্ত্র পুনরম্নদ্ধারের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের আইনজীবী ও জনগণ সেদিন বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলেই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছি।
শেখ হাসিনা সকল প্রকার ভয়-ভীতি উপেৰা করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীরা দম্ভভরে বলেছিল, তারা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে। কেউ তাদের বিচার করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা উলেস্নখ করে বলেন, ইনডেমনিটি আইন পাস করে জিয়াউর রহমান খুনীদের বিচারের পথ রম্নদ্ধ করে রেখেছিল। শুধু তাই নয়, খুনীদের বিদেশে দূতাবাসে পর্যনত্ম চাকরি দিয়েছিল। একজন খুনী যদি কোন দেশের রাষ্ট্রদূত হয়, সারা পৃথিবীতে সে দেশের ভাবমূর্তি ৰুণ্ন না হয়ে পারে না। তিনি বলেন, সরকারে থাকার পরেও আমি সাধারণ নিয়মে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকাজ শুরম্ন করেছিলাম। কোন বিশেষ আদালত গঠন করা হয়নি। মামলার রায়ের জন্য ১৩ বছর অপেৰা করেছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৫ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকার্য বন্ধ করে রেখেছিল। বিএনপি নেত্রী জন্মদিন না হওয়ার পরও ১৫ আগস্ট পালন করে খুনীদের উৎসাহিত করেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ার মধ্যদিয়ে দেশ অভিশাপ ও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সুসংহত করে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। ১৯৯৬ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করার প্রক্রিয়া শুরম্ন করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, কাজের সুবিধার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দু'টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। তা হলো_ আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। এ প্রসঙ্গে তিনি বিচারকের স্বল্পতার কথা উলেস্নখ করে বলেন, ইতোমধ্যেই তাঁর সরকার এক শ' বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে, আরও ১শ' জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দলীয়করণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ২২ জন বিচারপতির নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছিল, যা এ দেশে বিচার বিভাগের ইতিহাসে এ নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ_ আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ একই সঙ্গে সঠিকভাবে কাজ না করলে কখনোই দেশ এগুতে পারে না। এই তিনটি বিভাগ যাতে সঠিকভাবে কাজ করে সে লৰ্য নিয়েই সরকার বিভিন্ন পদৰেপ গ্রহণ করেছে। সাধারণ দরিদ্র মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায়, সে জন্য আইনজীবীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এলৰ্যে সরকার পৃথক লিগ্যাল এইড সিস্টেমকে জোরদার করেছে এবং পৃথক লিগ্যাল এইড ডিরেক্টরেট গঠন করেছে।
No comments