ব্যাধিগ্রস্ত চক্ষু হাসপাতাল-কেবল দায় চাপালে নিরাময় নেই
অনেক আশা নিয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল মানসম্মত আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার, যাতে সচ্ছলরা বিদেশে চিকিৎসার পরিবর্তে দেশেই সাশ্রয়ী ব্যয়ে জটিল রোগ সারাতে উৎসাহী হয়।
আর গরিব মানুষের পক্ষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই বিধায় তারা নতুন জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এক কথায় সর্বস্তরের চোখের রোগীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসা সেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সক্ষম হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ১০ বছরেও আঁতুড়ঘরের চৌকাঠ পেরোতে সক্ষম হয়নি। সোমবার সমকালে 'চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণে অনিয়ম, শতকোটি টাকা অপচয়' শিরোনামে প্রকাশ পাওয়া প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হবে, যে হাসপাতালটির মানুষের চোখের চিকিৎসা দেওয়ার কথা এখন সে নিজেই অনিয়ম ও দুর্নীতির পাঁকে পড়ে রোগী বনে গেছে। প্রকল্পটির আওতায় যেসব ভবন এ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে তার কোনোটিই আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদানের মতো মানসম্পন্ন নয়। কক্ষগুলোর অবস্থাও যাচ্ছেতাই। সরকারি উন্নয়ন কাজ পরিবীক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইএমইডি নির্মাণ কাজে ত্রুটি ও অনিয়মের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। সরকারের কর্তাব্যক্তি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ জন্য দোষ দিচ্ছেন পূর্ববর্তী সরকারের ওপর। কাজগুলো প্রধানত ওই সরকারের আমলেই করা হয়েছিল। কিন্তু কেবল দায় চাপিয়ে দিলেই তো হলো না। এ জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধু এখানে থেমে পড়লেই চলবে না। ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালটির কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করে একে প্রত্যাশা অনুযায়ী চক্ষু চিকিৎসার আধুনিক মানসম্মত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। এ জন্য বিদেশি অর্থায়নের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রেও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নতুন একদল লোক এ থেকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে না পারে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠার সাফল্যের সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষের চোখের রোগে সুচিকিৎসা পাওয়ার প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়মের পাঁচে পড়ে অমনিতেই তিন বছরের প্রাক্কলিত প্রকল্পের জন্য ১০ বছর চলে গেছে। তাই আর কালক্ষেপণ কাম্য নয়।
No comments