বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় বাংলায় রূপান্তর : by এনামুল হক
খান সাইফুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী আইন ১৯৫২-এর ৫৯ ধারায় ব্যবহৃত সক্রিয় সেন্যদলে থাকাকালীন কথাটা এই মামলার েেত্র প্রযোজ্য নয়। তথাপি উপরোক্ত বক্তব্য স্ববিরোধী, কারণ আপীলকারীরা সেনাবাহিনী আইন ১৯৫২-এর কতিপয় বিধানের ওপর নির্ভর করে ফৌজদারি আদালতের প্রক্রিয়ারকে নস্যাত করার চেষ্টা করেছে।
জনাব হকের মতে, নৌবাহিনী অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৩৫ ধারায় প্রদত্ত বিদ্রোহের এই সংজ্ঞাটি সেনাবাহিনী আইন ১৯৫২-এর ৩১ ধারার সঙ্গে পাঠ করতে হবে এই উপসংহারে পেঁৗছার জন্য যে আপীলকারীদের কার্যকলাপ বিদ্রোহের মতো দুষ্কর্মের আওতার মধ্যে পড়ে না। ৩১ ধারার (ক) বিধিতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আইনসম্মত কতর্ৃপকে উৎখাত করা বা প্রতিহত করার কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু নথিপত্রে এমন কিছুরই উল্লেখ নেই যা থেকে প্রমাণ হয় যে আপিলকারীরা ও অন্য আসামিরা সম্মিলিতভাবে কতর্ৃপরে অবাধ্যতা করেছে কিম্বা অগ্রাহ্য বা অবজ্ঞা করেছে কিম্বা কতর্ৃপরে আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যাতে করে তাদের সেই কর্মকাণ্ড বিদ্রোহের আওতার মধ্যে পড়ে। তদুপরি রেকর্ডকতৃ সা্য প্রমাণ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে কতর্ৃপ বরং আপিলকারীদের ও অন্য আসামিদের সেনাবাহিনীর কিছু বিুব্ধ লোকজন ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের কর্মকাণ্ড মেনে নিয়েছিল এবং তাদের কয়েকজনকে সরকার পুরস্কৃতও করেছিল।সেনাবাহিনী আইন ১৯৫২-এর ৫৯ (১) ধারায় বলা আছে যে, উপধারা (২)-এর বিধানাবলী সাপে েসেনাবাহিনী আইনের অধীন কোন ব্যক্তি যদি কোথাও সিভিল অপরাধ সংঘটিত করে তাহলে সে সেনাবাহিনী আইনের অধীনে অপরাধের জন্য দোষী বলে গণ্য হবে এবং সেনাবাহিনী আইনের ৮(২) ধারায় প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী সিভিল অপরাধ বলতে এমন অপরাধকে বোঝায় যা বাংলাদেশে সংঘটিত হলে ফৌজদারি কোর্টে সে অপরাধের বিচার করা যাবে। কাজেই এ ব্যাপারে কোন বিরোধ বা বিতর্কের অবকাশ নেই যে আপিলকারীদের কার্যকলাপ সিভিল অপরাধের মতো দুষ্কর্মের মধ্যে পড়ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে গঠিত একটি ফৌজদারি আদালতে আপীলকারীদের বিচারের ব্যাপারে কোন আইনগত বাধা নেই। অবশ্য সেনাবাহিনী আইনের ৫৯(২) ধারায় বলা আছে যে, সেনাবাহিনী আইনের আওতাধীন কোন ব্যক্তি যদি সেনাবাহিনী আইনের আওতাধীন না থাকা কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তাহলে সে সেনাবাহিনী আইনের অধীনে বিচারযোগ্য হবে না যদি না সে সক্রিয় সৈন্য দলে থাকা কালীন অবস্থায় এই অপরাধ করে। সক্রিয় সৈন্যদল কথাটা আইনের ৮(১) ধারায় নিম্নোক্তরূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে :
এই আইনের আওতাধীন কোন ব্যক্তির েেত্র প্রযোজ্য সক্রিয় সৈন্যদলে থাকাকালীন কথাটার দ্বারা সেই সময়কালকে বোঝানো হয় যখন এমন ব্যক্তি শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়োজিত কিম্বা শত্রুর পুরোপুরি বা আংশিক দখলাধীন একটি দেশ বা স্থানে সামরিক অভিযানে নিয়োজিত কিম্বা সেই দেশ বা স্থান অভিমুখে অগ্রসরমান কোন সৈন্যদলের সঙ্গে যুক্ত থাকে কিম্বা সেই বাহিনীর অংশে পরিণত হয় অথবা এমন কোন বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত বা সেই বাহিনীর অংশ যা বিদেশী একটি রাষ্ট্রের সামরিক দখলাধীন।
আপিলকারীদের ও অন্য আসামীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়নি যে, সক্রিয় সৈন্যদলে থাকাকালীন অবস্থায় তারা হত্যাপরাধ করেছে এবং আপীলকারীরাও দাবি করেনি যে, তারা সক্রিয় সৈন্যদলে থাকাকালীন অবস্থান ঐ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। রেকর্ডভুক্ত এমন উপকরণও নেই যা থেকে প্রমাণ হয় যে আপীলকারীরা শত্রু বিরুদ্ধে অভিযানে নিয়োজিত থাকাকালে কিম্বা সামরিক অভিযানে নিয়োজিত থাকাকালে অথবা শত্রু কতর্ৃক সম্পূর্ণ রূপে বা আংশিকভাবে অধিকৃত কোন দেশ বা স্থান অভিমুখে অগ্রসরমান থাকাকালে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল।
উপরোক্ত আইনের প্রাসঙ্গিক বিধান অনুযায়ী আপীলকারীরা সক্রিয় সৈন্যদলে না থাকাকালীন সিভিল অপরাধ করে তাহলে ফৌজদারি আদালতে বিচারের পথে সেনাবাহিনী আইনের বিধানগুলো বাধা হয়ে দাড়াবে না। উপরন্তু সাধারণ ফৌজদারি আদালতে সিভিল অপরাধের বিচারের জন্য সেনাবাহিনী আইন ১৯৫২-এর নবম অধ্যায়ে ৯৪ ও ৯৫ ধারাকেও অন্তভর্ুক্ত করা হয়েছে। ৯৪ ধারায় পূর্বাহ্নেই মেনে নেয়া হয়েছে যে সেনাবাহিনী আইনে শাস্তি যোগ্য কোন কাজ বা ত্রুটিবিচু্যতির েেত্র কিম্বা যে েেত্র কোন অপরাধ সেনাবাহিনী আইনের আওতাভুক্ত এবং একই সময় দেশে বলবৎ যে কোন আইনের আওতাভুক্ত বলে গণ্য সেই অপরাধের েেত্র ফৌজদারি আদালত ও কোর্ট মার্শাল উভয়ের সহবর্তমান প্রক্রিয়ার (উমভডলররণর্ভ নলরধ্রঢধর্ডধমভ) থাকবে। এেেত্র কোন আদালতে মামলাটি রুজু করা হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব একজন অনুমোদিত অফিসারের ঐচ্ছিক মতার উপর ছেড়ে দেয়া হবে। অনুমোদিত অফিসার যদি ঠিক করেন যে মামলাটি কোর্ট মার্শালে রুজু হওয়া উচিত তাহলে অপরাধীকে সামরিক হেফাজতে আটক রাখা হবে। অবশ্য একই সময়ে যদি কোন ফৌজদারি আদালত মনে করে যে, ফৌজদারি আদালতেই উক্ত অপরাধের বিচার হতে হবে তাহলে সেই অফিসার হয় অপরাধীকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করার জন্য নয়ত সরকারের কাছে রেফারেন্স প্রেরণ সাপে েমামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য ৯৫ ধারায় নোটিস জারি করতে পারেন। রিকুইজিশন পাওয়ার পর অনুমোদিত অফিসার অপরাধীকে হয় উক্ত আদালতের কাছে হস্তান্তর করবেন নয়ত কার আদেশ চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে তা নির্ণয়ের জন্য বিষয়টি সরকারের কাছে পাঠাবেন। (ক্রমশ)।
No comments