গণমাধ্যমে ভাষার বিকৃতি বন্ধ না করলে কঠোর ব্যবস্থা
গণমাধ্যমে ভাষার বিকৃত ব্যবহার বন্ধ না করলে কঠোর পদৰেপ নেবে সরকার। বুধবার এফএম রেডিও এবং বেসরকারী টেলিভিশনের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে তথ্য সচিব ড. কামাল অবদুল নাসের চৌধুরী বলেন,
বিকৃত ভাষার ব্যবহার রোধে সরকার এফএম রেডিও এবং টেলিভিশনকে সহায়তা করতে চায়। কিন্তু তারা সরকারের সাহায্য নেবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান আমরা। বৈঠকে বিজ্ঞাপনে ভাষার ব্যবহারসংক্রানত্ম একটি নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দেয়া হয়।বৈঠকে বক্তারা বলেন, এক সময়ে মানুষ বেতার শুনে শুদ্ধ উচ্চারণ শিখত আর এখন বেতারের আচরণে তা দুরূহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বেসরকারী মালিকানাধীন এফএম রেডিওর বিকৃত ভাষার ব্যবহারে সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে ক্রমান্বয়ে বাংলা বিকৃত হয়ে এক অদ্ভুত রূপ লাভ করছে। কলকাতার কথা উলেস্নখ করে বৈঠকে বলা হয়, সেখানে ৪৭ ভাগ মানুষ বাংলায় কথা বলে। এটি বাংলা ভাষার অসত্মিত্বের জন্য বড় একটি হুমকি। যেহেতু বাংলা ভাষার প্রকৃত রাজধানী ঢাকা, তাই বাংলাকে রৰার দায়িত্ব আমাদেরই বেশি। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখে ভাষার ব্যবসায়িক প্রয়োগ বন্ধ করার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা বৈঠকে একমত পোষণ করেন।
দেশের গণমাধ্যম বিশেষ করে এফএম রেডিও এবং বেসরকারী টেলিভিশনে ভাষার ব্যবহারসংক্রানত্ম কোন নীতিমালা না থাকায় বাংলার যাচ্ছেতাই ব্যবহার হচ্ছে। এসব গণমাধ্যমের উপস্থাপকরা হরহামেশাই বিকৃত শব্দ চয়ন করছেন, যা অত্যনত্ম দুঃখজনক। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সকল মহলে ভাষার বিকৃত ব্যবহার বন্ধের দাবি জোরালো হয়েছে। সাধারণের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে বুধবার প্রথমবারের মতো তথ্য মন্ত্রণালয় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আর টিভির প্রধান নির্বাহী ম. হামিদ বলেন, আঞ্চলিকতাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য আমরা ভাষাকে ভাঙতে পারি, কিন্তু তাই বলে বিকৃত করতে পারি না। রেডিও স্টেশনের সংবাদ পাঠকরা শুদ্ধ উচ্চারণে সংবাদ পাঠ করায় বোঝা যায় তাঁরা শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা যেভাবে বলেন তাতে মনে হয় তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভাষাকে বিকৃত করছে। তিনি জাতীয়ভাবে একটি প্রমিত উচ্চারণবিধি প্রণয়নের দাবি জানান। ম. হামিদ বলেন, আমাদের শব্দভা-ার ছোট হওয়ার কারণে বাংলা বলার সময় অন্য ভাষার ব্যবহার বেশি করছি। কিন্তু অন্য ভাষা থেকে যা বলছি তাও ভুলভাবে উচ্চারণ করছি। রেডিও টুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল হক বলেন, ভাষা প্রতি আট কিলোমিটার পরপর পরিবর্তিত হয়। সেৰেত্রে তাদের রেডিওতে ব্যবহৃত ভাষাও পরিবর্তিত। তবে তিনি ভাষার এ পরিবর্তন সমর্থন করলেও ভাষার বিকৃত ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন। বৈঠকে এটিএন বাংলার সংবাদ বিভাগের প্রধান জয়ই মামুন বলেন, আমরা ছোটবেলায় বেতার শুনতাম শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার জন্য কিন্তু আমাদের সনত্মানরা শুদ্ধ ভাষা শেখার জন্য এখন কি শুনবে। চ্যানেল আই'র অনুষ্ঠান বিভাগের পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বৈঠকের পর জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানগুলো শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের মাধ্যমে হয়ে থাকে কিন্তু বাইরে থেকে যেসব অনুষ্ঠান কেনা হয় সেগুলোতে সমস্যা থাকে। আগামীতে চ্যানেল আই এ বিষয়ে খেয়াল রাখবে।
বৈঠকে তথ্য সচিব বলেন, আমাদের ভাষার লড়াইটা শেষ হয়নি। এখন আমাদের লড়াইটা বাংলাকে রৰা করার লড়াই। বিজ্ঞাপনে ভাষার ব্যবহারের কোন নীতিমালা না থাকায় অশস্নীলতা ছড়িয়ে পড়ছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত বলে জানান তিনি। সচিব জানান, ভাষার বিকৃত ব্যবহার রোধে বাংলা একাডেমী এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সরকার এফএম রেডিওকে সাহায্য করতে চায়। তবে ভাষার বিকৃত ব্যবহারকারীরা সাহায্য নেবেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। যেহেতু বিকৃতি সব সময়ে বর্জনীয়, তাই এখান থেকে আমাদের সরে আসতেই হবে। সচিব বলেন, ভাষার বিকৃতি ব্যবহার বন্ধ না হলে সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে বলে তিনি গণমাধ্যম কমর্ীদের হুঁশিয়ার করে দেন। বৈঠকে দেশের প্রায় সকল বেসরকারী রেডিও ও টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
No comments