পণ্য হওয়া রুখসানাদের গল্প
সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশটিতে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দেশটিতে কন্যাশিশু ও কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার ব্যাপারে তথ্য থাকলেও মেয়ে শিশু পাচারের বিষয়টি তেমন আলোচিত নয়।
অথচ মেয়ে শিশু হত্যার কারণে নারী ও পুরুষের ভারসাম্য বজায়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে চলছে নারী পাচারের ঘটনা। বিবিসির খবরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
পাচারের শিকার এমন এক কিশোরী রুখসানা। হরিয়ানা রাজ্যের এক বাড়িতে বাস করছেন তিনি। পাচার করা হয়েছে—এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করতে ওই বাড়িতে যায়। পুলিশ জানতে চাইলে সে জানাল, তার বয়স ১৪ বছর। তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
ওই সময় বয়স্ক এক নারী প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মিথ্যা বলছে সে (রুখসানা)। তার বয়স ১৮-১৯ বছর। আমি মেয়েটির বাবা-মাকে অর্থ দিই।’ এই যুক্তি দেখিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে দেননি তিনি।
রুখসানা বিবিসিকে বলে, এক বছর আগে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের এক গ্রামে সে বাস করত। তার ছোট দুটি ভাই-বোন আছে। সেসব দিনের স্মৃতি আওড়ে রুখসানা বলল, ‘আমি স্কুলে যেতাম, ভাইবোনদের সঙ্গে খেলতাম। একদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনজন লোক জোর করে আমাকে একটি গাড়িতে তুলে নেয়।’ গাড়ি, বাস ও ট্রেনে করে তিনদিনের ভয়াবহ যাত্রা শেষে রুখসানা হরিয়ানা রাজ্যে পৌঁছে। এরপর মা আর তিন ছেলের পরিবারে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
সেই থেকে রুখসানাকে আর বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। সে অভিযোগ করে, তাকে নির্যাতন ও মারধর করা হয়েছে। স্বামী দাবি করে তিন ভাইয়ের বড় ভাই নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করে এবং প্রায়ই বলে, ‘আমি তোমাকে কিনে এনেছি; আমি যেভাবে বলব, সেভাবেই চলবে।’ আর কোনোদিনও পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে না—এই আশঙ্কায় প্রতিদিন কান্নায় বুক ভাসায় রুখসানা।
শুধু রুখসানা নয়, ভারতে প্রতিবছর এমন হাজার হাজার নারী নিখোঁজ হয়। যৌনকর্মী ও গৃহপরিচারিকা হিসেবে তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দিন দিন এই সংখ্যাটা শুধু বাড়ছেই। এ ছাড়া ভারতের উত্তরাঞ্চলের মতো সেসব এলাকায় কন্যা শিশুর ভ্রূণ ও কন্যাশিশু হত্যার কারণে নারী-পুরুষের অনুপাত অনেক কম, সেখানে অবৈধভাবে এসব মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমন কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ উল্লেখ করে বলেছে, ভারতে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যার ফলে অন্তত পাঁচ কোটি নারী হারিয়ে গেছে। ভারত সরকার এ পরিসংখ্যানের ব্যাপারে আপত্তি জানালেও হরিয়ানার এই ঘটনা বলে দেয় বিষয়টা কতটা সত্য।
উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে কত নারীকে এভাবে বিক্রি করা হয়, এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন পাচারের শিকার নারীদের উদ্ধারে পুলিশকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান শক্তি বাহিনীর সমাজকর্মী ঋষি কান্ত।
বিবিসির একটি দল পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার পাঁচটি গ্রাম পরিদর্শন করে দেখতে পায়, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই অন্তত একজন হলেও শিশু নিখোঁজ আছে। তাদের অধিকাংশই মেয়ে শিশু।
সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে ভারতে প্রায় ৩৫ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ হাজারই পশ্চিমবঙ্গের। পুলিশ অবশ্য বলছে, প্রকৃত ঘটনার মাত্র ৩০ শতাংশ নথিভুক্ত করা হয়।
বিবিসির দলটি নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির সাক্ষাত্ পায় কলকাতার বস্তিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানায়, এ ব্যবসার অবস্থা বেশ ভালো। ব্যবসা করে আয়-উন্নতি কতটা হয়েছে জানাতেই যেন তিনি বললেন, ‘দিল্লিতে এখন আমার তিনটি বাড়ি আছে।’ তিনি প্রতি বছর ১৫০-২০০ জনের মতো নারী পাচার করে থাকেন। এদের বয়স ১০-১৭ এর মধ্যে। তিনি নিজে পাচারের জন্য যান না, তাঁর লোকজন আছে। একেকজন মেয়েকে বিক্রি করে প্রায় ৫৫ হাজার রুপির মতো পান বলে জানালেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সবই জানে বলে দাবি করলেন ওই পাচারকারী। কাজটি বিনা ঝামেলায় শেষ করতে পুলিশকে মাসোহারা দেওয়া হয়। তারপরও যদি কোনো কারণে ধরা পড়ে যান, সেটা নিয়ে চিন্তিত নন তিনি। তাঁর সদম্ভ ঘোষণা, ‘আমি যদি এখন জেলেও যাই, আমাকে মুক্ত করে নিয়ে আসার মতো অনেক অর্থ আছে।’
পশ্চিমবঙ্গে পাচারসংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত ইউনিটের প্রধান শঙ্কর চক্রবর্তীও এসব ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেন। তবে অবস্থার উন্নতির জন্য তাঁরা প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন বলে জানালেন।
পাচারের শিকার এমন এক কিশোরী রুখসানা। হরিয়ানা রাজ্যের এক বাড়িতে বাস করছেন তিনি। পাচার করা হয়েছে—এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করতে ওই বাড়িতে যায়। পুলিশ জানতে চাইলে সে জানাল, তার বয়স ১৪ বছর। তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
ওই সময় বয়স্ক এক নারী প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘মিথ্যা বলছে সে (রুখসানা)। তার বয়স ১৮-১৯ বছর। আমি মেয়েটির বাবা-মাকে অর্থ দিই।’ এই যুক্তি দেখিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে দেননি তিনি।
রুখসানা বিবিসিকে বলে, এক বছর আগে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের এক গ্রামে সে বাস করত। তার ছোট দুটি ভাই-বোন আছে। সেসব দিনের স্মৃতি আওড়ে রুখসানা বলল, ‘আমি স্কুলে যেতাম, ভাইবোনদের সঙ্গে খেলতাম। একদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনজন লোক জোর করে আমাকে একটি গাড়িতে তুলে নেয়।’ গাড়ি, বাস ও ট্রেনে করে তিনদিনের ভয়াবহ যাত্রা শেষে রুখসানা হরিয়ানা রাজ্যে পৌঁছে। এরপর মা আর তিন ছেলের পরিবারে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
সেই থেকে রুখসানাকে আর বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। সে অভিযোগ করে, তাকে নির্যাতন ও মারধর করা হয়েছে। স্বামী দাবি করে তিন ভাইয়ের বড় ভাই নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করে এবং প্রায়ই বলে, ‘আমি তোমাকে কিনে এনেছি; আমি যেভাবে বলব, সেভাবেই চলবে।’ আর কোনোদিনও পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে না—এই আশঙ্কায় প্রতিদিন কান্নায় বুক ভাসায় রুখসানা।
শুধু রুখসানা নয়, ভারতে প্রতিবছর এমন হাজার হাজার নারী নিখোঁজ হয়। যৌনকর্মী ও গৃহপরিচারিকা হিসেবে তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। দিন দিন এই সংখ্যাটা শুধু বাড়ছেই। এ ছাড়া ভারতের উত্তরাঞ্চলের মতো সেসব এলাকায় কন্যা শিশুর ভ্রূণ ও কন্যাশিশু হত্যার কারণে নারী-পুরুষের অনুপাত অনেক কম, সেখানে অবৈধভাবে এসব মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমন কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ উল্লেখ করে বলেছে, ভারতে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যার ফলে অন্তত পাঁচ কোটি নারী হারিয়ে গেছে। ভারত সরকার এ পরিসংখ্যানের ব্যাপারে আপত্তি জানালেও হরিয়ানার এই ঘটনা বলে দেয় বিষয়টা কতটা সত্য।
উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে কত নারীকে এভাবে বিক্রি করা হয়, এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন পাচারের শিকার নারীদের উদ্ধারে পুলিশকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান শক্তি বাহিনীর সমাজকর্মী ঋষি কান্ত।
বিবিসির একটি দল পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার পাঁচটি গ্রাম পরিদর্শন করে দেখতে পায়, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই অন্তত একজন হলেও শিশু নিখোঁজ আছে। তাদের অধিকাংশই মেয়ে শিশু।
সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে ভারতে প্রায় ৩৫ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ হাজারই পশ্চিমবঙ্গের। পুলিশ অবশ্য বলছে, প্রকৃত ঘটনার মাত্র ৩০ শতাংশ নথিভুক্ত করা হয়।
বিবিসির দলটি নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির সাক্ষাত্ পায় কলকাতার বস্তিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি জানায়, এ ব্যবসার অবস্থা বেশ ভালো। ব্যবসা করে আয়-উন্নতি কতটা হয়েছে জানাতেই যেন তিনি বললেন, ‘দিল্লিতে এখন আমার তিনটি বাড়ি আছে।’ তিনি প্রতি বছর ১৫০-২০০ জনের মতো নারী পাচার করে থাকেন। এদের বয়স ১০-১৭ এর মধ্যে। তিনি নিজে পাচারের জন্য যান না, তাঁর লোকজন আছে। একেকজন মেয়েকে বিক্রি করে প্রায় ৫৫ হাজার রুপির মতো পান বলে জানালেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সবই জানে বলে দাবি করলেন ওই পাচারকারী। কাজটি বিনা ঝামেলায় শেষ করতে পুলিশকে মাসোহারা দেওয়া হয়। তারপরও যদি কোনো কারণে ধরা পড়ে যান, সেটা নিয়ে চিন্তিত নন তিনি। তাঁর সদম্ভ ঘোষণা, ‘আমি যদি এখন জেলেও যাই, আমাকে মুক্ত করে নিয়ে আসার মতো অনেক অর্থ আছে।’
পশ্চিমবঙ্গে পাচারসংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত ইউনিটের প্রধান শঙ্কর চক্রবর্তীও এসব ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেন। তবে অবস্থার উন্নতির জন্য তাঁরা প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন বলে জানালেন।
No comments