কুড়িগ্রামে মামলাজট-বিচারকের শূন্য পদে নিয়োগ দিন
বিচারক সংকট এবং সে কারণে মামলাজটের বিষয়টি নতুন নয়। সারাদেশেই বিচারপ্রার্থী ও বিচারকের অনুপাতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। উচ্চ আদালতেও একই চিত্র দেখছি আমরা। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ অধীন বিচারালয় এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার নজির খুব বেশি নেই।
শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলাটির বিভিন্ন আদালতে সব মিলিয়ে ৩০ হাজারের মতো মামলা ঝুলে রয়েছে। বিচারকের ১৩টি পদের মধ্যে যদি ৬ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের ৯টি পদের মধ্যে ৩টি পূর্ণ থাকে, পরিস্থিতি এর চেয়ে ভালো আশা করা কঠিন। ফলে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এবং দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার ওই জনপদে মামলা সংক্রান্ত ভোগান্তি দেশের অগ্রসর অনেক স্থান থেকে মাত্রাগত দিক থেকেও কিন্তু তীব্র। কেবল বিচারপ্রার্থীর বিড়ম্বনা নয়, হাজার হাজার মামলা ঝুলে থাকা সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও সুসংবাদ হতে পারে না। বলা হয়ে থাকে 'জাস্টিস ডিলেড, জাস্টিস ডিনাইড'। বাস্তবে বিচার বিলম্বিত হলে ন্যায়দণ্ডই কেবল অগ্রাহ্য হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় না, বিলম্বিত বিচার নতুন অপরাধেরও জন্ম দেয়। আমরা জানি, মঙ্গাপ্রবণ এলাকা কুড়িগ্রামে উন্নয়নের জন্য সরকার সেখানে বেশ কিছু সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ন্যাশনাল সার্ভিস নামে গ্রামীণ জনপদের তরুণদের কর্মসংস্থানের যে পরীক্ষামূলক প্রকল্প বর্তমান সরকার চালু করেছে, তার আওতায় থাকা দুই জেলার একটি কুড়িগ্রাম। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা জরুরি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা গেলে আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে না। আমরা মনে করি, পিছিয়ে থাকা এই জেলার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই মামলাজট কমাতে হবে। অস্বীকার করা যাবে না যে, স্বল্পোন্নত দেশে সব প্রশাসনিক পদ রাতারাতি পূরণ সম্ভব নয়। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে কয়েকজন বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ কঠিন নয়। বিশেষ করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও দায়রা জজের পদ খালি থাকা মেনে নেওয়া যায় না। বিচারক, আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীর আন্তরিকতাও জরুরি। সবাই চাইলে বিদ্যমান জনবলেও মামলাজট সহনীয় করা যায়, আমরা কেবল তা মনে করিয়ে দিতে চাই।
No comments