রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন-জনপ্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নিতে হবে
লক্ষ্মীপুরের বিএনপি নেতা আইনজীবী নুরুল ইসলামের হন্তারক এইচএম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফের বিষয়টি এখন ব্যাপক আলোচিত ইস্যু। সংবিধান বিশেষজ্ঞ থেকে রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ এমনকি সাংবিধানিক ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার হয়নি বলেও মনে করছেন। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের আওতায় রাষ্ট্রপতি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এটা ঠিক যে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা রয়েছে। তবে তার প্রয়োগ যথাযথ হয়েছে কি-না, সেটাই প্রশ্ন। যারা মনে করেন যে, এ ক্ষেত্রে মার্জনা প্রদর্শন সঠিক হয়নি, তাদেরও যুক্তি রয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার অধিকার কোনো সাধারণ অধিকার নয়। এটা প্রিরোগিটিভ বা বিশেষ অধিকার। যার কিংবা যাদের দণ্ড মওকুফ করা হয়, তার পেছনে যে যুক্তি রয়েছে সেটা জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। আমাদের দেশ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং রয়েছে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা। রাষ্ট্রীয় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এখানে খোলামেলা আলোচনা করা যায়। কেউই আইনের ঊধর্ে্ব নয়, সেটা সর্বজনগ্রাহ্য বিষয়। কেউ শাস্তি পেলে তার আপিল করার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে মার্জনা ভিক্ষা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ধাপ। কিন্তু আলোচিত ক্ষেত্রে দণ্ডিত ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি সময় পালিয়ে থেকে মাত্র চার মাস আগে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তার আপিল আবেদন প্রক্রিয়াধীন। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করার সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি না। জাতীয় সংসদের আইন ও সংসদবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেই রাষ্ট্রপতি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এ কারণে এ বিষয়ে কোনো দায় রাষ্ট্রপতির ওপর বর্তায় না। তার এ বক্তব্যে ধারণা করা যায় যে, ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরেও এ প্রশ্নে অভিন্ন মত নেই। বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের এটা নিশ্চয়ই স্মরণে আছে যে, বিএনপির শাসনামলে ঝিন্টু নামে দলীয় এক কর্মীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমদ কর্তৃক মার্জনার ঘটনা ছিল বহুল সমালোচিত বিষয় এবং বর্তমান শাসক দলের অনেক নেতাই এ প্রশ্নে ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। এটাও মনে রাখা দরকার যে, জনগণ যে সিদ্ধান্ত সঠিক মনে করে না, সেটা করা চলে না। এমন হতেই পারে যে, কেউ রাষ্ট্র কিংবা প্রভাবশালী মহল কর্তৃক অন্যায়ের শিকার হয়েছে এবং ন্যায়বিচার পেতেও পদে পদে সমস্যা ও হয়রানির মুখোমুখি হয়েছে। এ ধরনের ক্ষেত্রেও আইনের সর্বশেষ ধাপ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই শ্রেয়, বিশেষ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার যখন রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। অন্যথায় আইনি প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সর্বসাধারণের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, এইচএম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে এবং বিলম্ব না করেই এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। রাষ্ট্রপতির বিশেষ যে অধিকার রয়েছে, তার প্রয়োগ কোন ক্ষেত্রে হওয়া উচিত এবং কোন ক্ষেত্রে নয়, সে বিষয়ে জাতীয় সংসদে একটি গাইডলাইন প্রণয়নও কিন্তু আবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে।
No comments