যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকিটা সত্যি by শামুস কুক
যাঁরা ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটা যুদ্ধ চাপিয়ে দেবে না, তাঁদের আবার ভাবতে বলি। লিবিয়ায় বোমার কারসাজি এবং তারই জের ধরে গাদ্দাফিকে হত্যার ‘সাফল্যে’ গর্বিত ওবামা সিরিয়ায় হুবহু একই কৌশলে বাজিমাত করতে চান। পাশাপাশি চলছে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হুমকি। দুটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকায় যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি করে রাখছে। এটাই সেই অঞ্চল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে স্বৈরশাসকদের মসনদে বসিয়ে রেখেছিল এবং
চালিয়েছিল সামরিক আগ্রাসন। লিবিয়া যুদ্ধের কায়দাকানুনই সিরিয়ার বেলায় খাটানো হলেও সঙ্গে থাকছে বাড়তি মহিমা: মানবাধিকার। মানবাধিকার রক্ষার নামেই তারা আরব লিগকে দিয়ে সিরিয়ার আকাশে ‘বিমান উড়াল নিষিদ্ধ’ করে। যুক্তরাষ্ট্রের মদদে এই কাজে শামিল হয় ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশ। ইরাকের অভিজ্ঞতা সাক্ষী, ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণাই ছিল ইরাক যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ।
সিরীয়দের গণ-আন্দোলনকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র সেখানকার শাসনব্যবস্থা বদলে দিতে চায়। তাদের লক্ষ্য সেখানে এমন শাসকদের বসানো, যাঁরা বর্তমান সরকারের চেয়ে অনেক বেশি মার্কিনের তাঁবেদার হবেন। সিরিয়ার বিরোধী নেতা হিসেবে আমেরিকা যাদের নাম করছে, তারা সবাই বেশ মার্কিন-বান্ধব। জনপ্রতিনিধিত্বহীন এসব নেতা আগ বাড়িয়ে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের দাবি করছে। এর নাম তারা দিয়েছে ‘মানবিক হস্তক্ষেপ’। আগ্রাসনের মাধ্যমে ইরাককে ধ্বংস এবং গৃহযুদ্ধের মুখে ফেলে চলে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে এমন লোক পাওয়া কঠিন, যে তাঁর দেশে আমেরিকান ‘সাহায্য’ ডেকে আনবেন। এই সহায়তার হাতে আফগানিস্তান নাস্তানাবুদ হচ্ছে, লিবিয়া বিপর্যস্ত হচ্ছে সেই হাতের হস্তক্ষেপে। মার্কিন প্রশাসন ও মার্কিন মিডিয়া অবলীলায় ‘মানবিক’ শব্দটা দিয়ে সামরিক কাজকারবারকে বুঝিয়েও থাকে আবার এই শব্দ দিয়েই সেটাকে ঢেকেও রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের শাসকদের সম্পর্কের বিষয়টা খেয়াল করলে এই মানবিক হস্তক্ষেপের আসল চেহারা খোলাসা হবে। ডিসেম্বরের ২৯ তারিখে ওবামা প্রশাসন বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিপীড়ক রাষ্ট্রকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের উন্নত অস্ত্রপাতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন গণমাধ্যমে একই দিনে একই পত্রিকার একই পাতায় পাশাপাশি সিরিয়াবিদ্বেষী ‘মানবিক’ সংবাদ এবং সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির খবর ছাপাও হয়। খোলা চোখে এই শঠতা যে কারোরই ধরতে পারার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্রে সম্ভাব্য সিরিয়া আক্রমণে আবারও ব্যবহূত হবে আরব লিগ। কী এই আরব লিগ? বেশির ভাগ আরব লিগ সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক/সামরিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা সবাই রাজনৈতিক ও সামরিক সাহায্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী। আরব লিগকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক পুতুল বললেও কম বলা হয়। আরব লিগের সদস্যরা হচ্ছে সৌদি আরব, ইয়েমেন, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, বাহরাইন, ইরাক, কুয়েত, ওমান, সুদান প্রভৃতি দেশের স্বৈরশাসকেরা। মার্কিন সামরিক/পুলিশি সহায়তা ছাড়া এই শাসকদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।
আরব লিগের মানবিক সহায়তা দলের ভণ্ডামি দেখাতে সিরিয়া অভিযোগ তুলেছে যে, যে সুদানি জেনারেল এই দলের প্রধান, তিনি নিজেই মানবাধিকারের শত্রু। আরব লিগের অন্যান্য রাষ্ট্রেরও মানবাধিকার রেকর্ড বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম। লিবিয়ার মতো করে সিরিয়াকেও আরব লিগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করার অর্থ, মার্কিন-আরব জোট শক্তির দ্বারা সিরিয়ায় সামরিক ‘মানবিক হস্তক্ষেপ’ চালানোর সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া। কিংবা যদি কেবল ‘আরব সেনারাই’ সিরিয়ায় আগ্রাসন চালায়, সেটাও হবে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহযোগিতায়। সেই অভিযানের আসল সেনাপতিরা থাকবে পর্দার আড়ালে, যদিও সিরিয়ায় নিক্ষিপ্ত প্রতিটি বোমার গায়ে লেখা থাকবে ‘মেড ইন আমেরিকা’।
ইরানের পরিস্থিতিটাও মোটেই ভালো নয়। নতুন অর্থনৈতিক অবরোধ দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এই অবরোধের উদ্দেশ্য ইরানের অর্থনীতির মাজা ভেঙে দেওয়া। এই অবরোধ জারি আসলে ইরানকে উসকানো। প্রতিক্রিয়ায় ইরান হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এক মার্কিন নৌবহরের প্রধান বলেছেন, ‘মার্কিন নৌবাহিনী সর্বদাই নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাহতকারী যেকোনো পদক্ষেপ মোকাবিলায় প্রস্তুত।’ স্পষ্টতই এটা যুদ্ধের হুমকি এবং ওবামার নীরবতা সেই যুদ্ধের সম্মতির লক্ষণ।
মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কথায় কথায় ইরানের পারমাণবিক বোমার থাকার মিথ্য ভয় জাগান। যদিও তাঁদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই, যেমন প্রমাণ ছিল না ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগেরও। এমনকি ইরানের পারমাণবিক বোমা থেকে থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের খায়েশ তাদের হতো না; কারণ ইসরায়েলও তাহলে খুব সহজেই ইরানে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়ে দিত।
সিরিয়ায় এবং/অথবা ইরানে আক্রমণ আরও বড় আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক যুদ্ধের দরজা খুলে দেবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে; ‘রাশিয়া যুদ্ধজাহাজের একটা বহর পাঠাচ্ছে সিরিয়ায় অবস্থিত তার নৌঘাঁটিতে। এ ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, রাশিয়া সিরিয়ায় তার স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।...সিরিয়ায় রাশিয়ার নৌঘাঁটি রয়েছে এবং দামেস্কের কাছে প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে তারা। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য সমর্থিত নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে চীনও যোগ দিয়েছে সিরিয়ার সঙ্গে।’ (নভেম্বর ২৮, ২০১১)
রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারাও বলেছেন, সিরিয়ায় রুশ সামরিক উপস্থিতি সে দেশে পশ্চিমা শক্তির হামলার বিরুদ্ধে একটা প্রতিষেধক। সিরিয়া রাশিয়ার মিত্র এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। রাশিয়া যদি সৌদি আরবে ‘মানবিক’ উদ্দেশ্যে আগ্রাসন চালাত, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র তাকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ত না? আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ফেটে পড়বার কিনারে। বিশেষত, লিবিয়ায় মার্কিন কর্মকাণ্ড এবং সিরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে তৎপরতাকে চীন ও রাশিয়া তাদের নিজ সীমান্তে হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা এসবকে দেখছে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, রাশিয়া ও চীন সম্ভবত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না, কিন্তু অতীতেও তারা এই ভুল করেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ জর্জিয়ার প্রেসিডেন্টকে প্রতিবেশী দক্ষিণ ওসেশিয়ায় আক্রমণের সবুজ সংকেত দেওয়া মাত্রই সবাইকে হতবাক করে রাশিয়া জর্জিয়ার আগ্রাসন গুঁড়িয়ে দেয়। যদি কোনো ‘আরব বাহিনী’ সিরিয়ায় আগ্রাসন চালায় এবং রাশিয়া আগের মতো সাড়া দেয়, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই, যুক্তরাষ্ট্রও কাছা খুলে নামবে। যুদ্ধ খেলা তাস খেলার মতোই, যেখানে একে অন্যকে ভাঁওতা দেয় আর আশা করে যে প্রতিপক্ষ তাতে ধরা খাবে। ওবামার বেপরোয়া উসকানিরও একটা সীমা আছে এবং হয়তো দ্রুতই মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের ভাগ্যের মূল্যে সেই সীমা পূর্ণ হবে এবং বাদবাকি দুনিয়াকেও দিতে হবে তার খেসারত। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরানে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে মার্কিন জনগণসহ বিশ্ববাসীর দায়িত্ব হচ্ছে লক্ষ-নিযুত সংখ্যায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে সেই হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া।
কাউন্টারকারেন্টস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ ফারুক ওয়াসিফ
শামুস কুক: মার্কিন মানবাধিকারকর্মী এবং লেখক।
সিরীয়দের গণ-আন্দোলনকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র সেখানকার শাসনব্যবস্থা বদলে দিতে চায়। তাদের লক্ষ্য সেখানে এমন শাসকদের বসানো, যাঁরা বর্তমান সরকারের চেয়ে অনেক বেশি মার্কিনের তাঁবেদার হবেন। সিরিয়ার বিরোধী নেতা হিসেবে আমেরিকা যাদের নাম করছে, তারা সবাই বেশ মার্কিন-বান্ধব। জনপ্রতিনিধিত্বহীন এসব নেতা আগ বাড়িয়ে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের দাবি করছে। এর নাম তারা দিয়েছে ‘মানবিক হস্তক্ষেপ’। আগ্রাসনের মাধ্যমে ইরাককে ধ্বংস এবং গৃহযুদ্ধের মুখে ফেলে চলে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে এমন লোক পাওয়া কঠিন, যে তাঁর দেশে আমেরিকান ‘সাহায্য’ ডেকে আনবেন। এই সহায়তার হাতে আফগানিস্তান নাস্তানাবুদ হচ্ছে, লিবিয়া বিপর্যস্ত হচ্ছে সেই হাতের হস্তক্ষেপে। মার্কিন প্রশাসন ও মার্কিন মিডিয়া অবলীলায় ‘মানবিক’ শব্দটা দিয়ে সামরিক কাজকারবারকে বুঝিয়েও থাকে আবার এই শব্দ দিয়েই সেটাকে ঢেকেও রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের শাসকদের সম্পর্কের বিষয়টা খেয়াল করলে এই মানবিক হস্তক্ষেপের আসল চেহারা খোলাসা হবে। ডিসেম্বরের ২৯ তারিখে ওবামা প্রশাসন বিশ্বের অন্যতম প্রধান নিপীড়ক রাষ্ট্রকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের উন্নত অস্ত্রপাতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মার্কিন গণমাধ্যমে একই দিনে একই পত্রিকার একই পাতায় পাশাপাশি সিরিয়াবিদ্বেষী ‘মানবিক’ সংবাদ এবং সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির খবর ছাপাও হয়। খোলা চোখে এই শঠতা যে কারোরই ধরতে পারার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্রে সম্ভাব্য সিরিয়া আক্রমণে আবারও ব্যবহূত হবে আরব লিগ। কী এই আরব লিগ? বেশির ভাগ আরব লিগ সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক/সামরিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা সবাই রাজনৈতিক ও সামরিক সাহায্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী। আরব লিগকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক পুতুল বললেও কম বলা হয়। আরব লিগের সদস্যরা হচ্ছে সৌদি আরব, ইয়েমেন, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, বাহরাইন, ইরাক, কুয়েত, ওমান, সুদান প্রভৃতি দেশের স্বৈরশাসকেরা। মার্কিন সামরিক/পুলিশি সহায়তা ছাড়া এই শাসকদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।
আরব লিগের মানবিক সহায়তা দলের ভণ্ডামি দেখাতে সিরিয়া অভিযোগ তুলেছে যে, যে সুদানি জেনারেল এই দলের প্রধান, তিনি নিজেই মানবাধিকারের শত্রু। আরব লিগের অন্যান্য রাষ্ট্রেরও মানবাধিকার রেকর্ড বিশ্বের মধ্যে নিম্নতম। লিবিয়ার মতো করে সিরিয়াকেও আরব লিগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করার অর্থ, মার্কিন-আরব জোট শক্তির দ্বারা সিরিয়ায় সামরিক ‘মানবিক হস্তক্ষেপ’ চালানোর সবুজ সংকেত দিয়ে দেওয়া। কিংবা যদি কেবল ‘আরব সেনারাই’ সিরিয়ায় আগ্রাসন চালায়, সেটাও হবে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহযোগিতায়। সেই অভিযানের আসল সেনাপতিরা থাকবে পর্দার আড়ালে, যদিও সিরিয়ায় নিক্ষিপ্ত প্রতিটি বোমার গায়ে লেখা থাকবে ‘মেড ইন আমেরিকা’।
ইরানের পরিস্থিতিটাও মোটেই ভালো নয়। নতুন অর্থনৈতিক অবরোধ দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এই অবরোধের উদ্দেশ্য ইরানের অর্থনীতির মাজা ভেঙে দেওয়া। এই অবরোধ জারি আসলে ইরানকে উসকানো। প্রতিক্রিয়ায় ইরান হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এক মার্কিন নৌবহরের প্রধান বলেছেন, ‘মার্কিন নৌবাহিনী সর্বদাই নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাহতকারী যেকোনো পদক্ষেপ মোকাবিলায় প্রস্তুত।’ স্পষ্টতই এটা যুদ্ধের হুমকি এবং ওবামার নীরবতা সেই যুদ্ধের সম্মতির লক্ষণ।
মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কথায় কথায় ইরানের পারমাণবিক বোমার থাকার মিথ্য ভয় জাগান। যদিও তাঁদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই, যেমন প্রমাণ ছিল না ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগেরও। এমনকি ইরানের পারমাণবিক বোমা থেকে থাকলেও সেগুলো ব্যবহারের খায়েশ তাদের হতো না; কারণ ইসরায়েলও তাহলে খুব সহজেই ইরানে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়ে দিত।
সিরিয়ায় এবং/অথবা ইরানে আক্রমণ আরও বড় আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক যুদ্ধের দরজা খুলে দেবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে; ‘রাশিয়া যুদ্ধজাহাজের একটা বহর পাঠাচ্ছে সিরিয়ায় অবস্থিত তার নৌঘাঁটিতে। এ ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, রাশিয়া সিরিয়ায় তার স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।...সিরিয়ায় রাশিয়ার নৌঘাঁটি রয়েছে এবং দামেস্কের কাছে প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে তারা। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য সমর্থিত নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে চীনও যোগ দিয়েছে সিরিয়ার সঙ্গে।’ (নভেম্বর ২৮, ২০১১)
রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারাও বলেছেন, সিরিয়ায় রুশ সামরিক উপস্থিতি সে দেশে পশ্চিমা শক্তির হামলার বিরুদ্ধে একটা প্রতিষেধক। সিরিয়া রাশিয়ার মিত্র এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। রাশিয়া যদি সৌদি আরবে ‘মানবিক’ উদ্দেশ্যে আগ্রাসন চালাত, তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র তাকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ত না? আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ফেটে পড়বার কিনারে। বিশেষত, লিবিয়ায় মার্কিন কর্মকাণ্ড এবং সিরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে তৎপরতাকে চীন ও রাশিয়া তাদের নিজ সীমান্তে হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা এসবকে দেখছে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, রাশিয়া ও চীন সম্ভবত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না, কিন্তু অতীতেও তারা এই ভুল করেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ জর্জিয়ার প্রেসিডেন্টকে প্রতিবেশী দক্ষিণ ওসেশিয়ায় আক্রমণের সবুজ সংকেত দেওয়া মাত্রই সবাইকে হতবাক করে রাশিয়া জর্জিয়ার আগ্রাসন গুঁড়িয়ে দেয়। যদি কোনো ‘আরব বাহিনী’ সিরিয়ায় আগ্রাসন চালায় এবং রাশিয়া আগের মতো সাড়া দেয়, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই, যুক্তরাষ্ট্রও কাছা খুলে নামবে। যুদ্ধ খেলা তাস খেলার মতোই, যেখানে একে অন্যকে ভাঁওতা দেয় আর আশা করে যে প্রতিপক্ষ তাতে ধরা খাবে। ওবামার বেপরোয়া উসকানিরও একটা সীমা আছে এবং হয়তো দ্রুতই মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের ভাগ্যের মূল্যে সেই সীমা পূর্ণ হবে এবং বাদবাকি দুনিয়াকেও দিতে হবে তার খেসারত। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরানে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে মার্কিন জনগণসহ বিশ্ববাসীর দায়িত্ব হচ্ছে লক্ষ-নিযুত সংখ্যায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে সেই হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া।
কাউন্টারকারেন্টস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ ফারুক ওয়াসিফ
শামুস কুক: মার্কিন মানবাধিকারকর্মী এবং লেখক।
No comments