মৃদুকণ্ঠ-ড. মনমোহনের সফর এবং অতঃপর by খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। সফর শেষে চলেও গেছেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে কী ঘটেছিল বাংলাদেশে? সফরের আগে, সফরকালে এবং সফরের পরে দেশের সাধারণ মানুষ কী ভেবেছিল? এখন কী ভাবছে? খণ্ডচিত্রগুলো একটি ক্যানভাসে গাঁথার চেষ্টা করা যাক। সফরের আগে সিভিল সমাজ, বিশেষজ্ঞ মহল এবং সাধারণ নাগরিকদের সাধারণ অভিযোগ ছিল যে সরকার তাদের কিছুই অবহিত করছে না।
অনেকের দাবিও ছিল, জনগণের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার পর চুক্তি চূড়ান্তকরণ বাঞ্ছনীয়। সরকার বলেছিল, চুক্তি স্বাক্ষরের পর পরই তা প্রকাশ করা হবে, ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হবে। স্বাক্ষরের আগে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কারণ স্বাক্ষর না হলে তো চুক্তি হয় না। খসড়া প্রকাশের রেওয়াজ নেই। চায়ের কাপ আর ঠোঁটের মধ্যে ফাঁক থাকে। চা কখনো ঠোঁট গড়িয়ে মুখে ঢোকে, আবার কখনো মুখে না ঢুকে নিচে গড়িয়ে পড়ে। কাজেই খসড়া প্রকাশ করা সমীচীন নয়। বিব্রতকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকার যেহেতু জনপ্রতিনিধি, অতএব নেগোসিয়েশনের বিষয়ে সরকারের ওপর আস্থা রাখা উচিত। নেগোসিয়েশন সফল হলে চুক্তি সাধারণ্যে প্রকাশ করা হবে।
চুক্তির বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়। এক পক্ষ বাংলাদেশ, অন্য পক্ষ ভারত। দেখা যাক, ভারত কী করেছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করে চলেছে ভারত। বাংলাদেশের মতো বেয়নেট আর বুলেটের আঘাতে মার্শাল ল আসেনি সে দেশে। জেনারেল সাহেবরা ক্ষমতায় আরোহণ করেননি সে দেশে। সঙ্গিনের আঘাতে সংবিধান সংশোধিত হয়নি সে দেশে। কাজেই জনগণের অধিকার সচেতনতা কম থাকার কথা নয় সেখানে। ভারতেও সম্ভাব্য চুক্তির কোনো খসড়া জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, সে বিষয়ে জনমত যাচাই করাও হয়নি। তবে ভারত সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করা হয়েছে, তবে গোপনীয়তা রক্ষা করে। ভারতে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে জনসমক্ষে কোনো খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে কানে আসেনি। এমন কোনো দাবিও সেখানে উত্থাপিত হয়নি। বাংলাদেশে সেনাশাসন-স্বৈরশাসনে গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে বলেই বোধ হয় বুদ্ধিজীবীদের একটি সন্দেহপ্রবণ মহলে অধিকার বিষয়ে অতিসচেতনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এ কথা ঠিক, বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে গুড়েবালি। সেনা-স্বৈরশাসন থেকে জন্ম নেওয়া আমাদের বিরোধী দলের তো মুখ দেখাদেখিই নেই সরকারি দলের সঙ্গে। আলোচনায় তারা বসবে না। উভয়ের মধ্যে জনমের আড়ি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পারত। করা উচিত ছিল। বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করা উচিত ছিল। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এই রেওয়াজ রয়েছে। সরকার এ ঘাটতিটুকু পূরণ করতে পারত। তবে মিডিয়া সব সময় অতি ঔৎসুক্যে ভোগে। এটা মিডিয়ার ধর্ম। সব দেশেই সত্য, অর্ধসত্য, অসত্য, গুজব_সব কিছুই আহরণ করে থাকে মিডিয়া। ফাঁদে ফেলে সংশ্লিষ্ট কারো ঠোঁটটা একটু নাড়াতে পারলেই হলো। তারপর ব্যাখ্যা, অপব্যাখ্য, ইনফারেন্স সব চলতে থাকে মিডিয়া জগতে। মানুষের ঔৎসুক্য বাড়িয়ে দেয় অযাচিতভাবে। মানুষের ব্যক্তিগত মতামত এবং অসমর্থিত তথ্যকেও কাজে লাগানো হয়। বিবিসির ফোন ইন অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আসার আগের সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রায় ডজনখানেক শ্রোতা জানালেন যে তিস্তা নদীর ২৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশ পাবে! এরা বেশির ভাগ বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর থেকে কথা বলছিলেন। এদিকে ঢাকার গুজব ছিল কমবেশি ৫০ শতাংশ পানির হিস্যা পাওয়া যাবে। অবশ্য ততক্ষণে চুক্তি হবে না মর্মেও রটে গেছে। তথ্য বিপ্লবের যুগে তথ্যবিভ্রাটও বেশ ঘটে থাকে।
মনমোহনের সফরকালে কী কী সমঝোতা হলো, আর কী কী হলো না, একনজরে দেখা যাক। উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি অঙ্গনে সহযোগিতা_এসব বিষয় ঠাঁই পেয়েছে এ চুক্তিতে। আরো একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ট্রানজিটবিষয়ক ১৯৭৮ সালে করা এতদ্বিষয়ক চুক্তিটির সংযুক্তি হিসেবে। প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই দেশের কিছু সীমানা চিহ্নিতকরণ বিষয়ে। দুই দেশের বাঘ রক্ষাকল্পে প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা হয়েছে সুন্দরবন সুরক্ষা নিয়ে, টেলিভিশন সম্প্রচার নিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে, ফ্যাশন টেকনোলজিবিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে। এসব চুক্তি, প্রটোকল বা স্মারকের প্রতিটির মধ্যে এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ছাড়াও ৪৬টি পণ্যের শুল্কছাড় প্রদানের ঘোষণাও এসেছে সফরকালে। তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত রাখার ঘোষণা সাদরে গ্রহণ করেছেন সেখানকার মানুষ। না হওয়ার তালিকায় রয়েছে তিস্তা-ফেনী পানিবণ্টন এবং ট্রানজিট ইস্যু।
এসব নিয়ে মিডিয়ার অভিব্যক্তি কৌতূহলোদ্দীপক। বড় সংবাদপত্রগুলো চার-পাঁচ কলামব্যাপী প্রধান শিরোনাম করেছে 'না হওয়া' বিষয় নিয়ে। সমঝোতা হয়েছে এমন বিষয়গুলো এসেছে মাত্র সিঙ্গেল কলাম হেডিং ও কভারেজে। বাঘ রক্ষা প্রটোকল সই হওয়ায় বাঘেরা সব বিড়াল হয়ে গেছে, কোনো কাগজে এক লাইন আছে, কোনো কাগজে একদম নেই। সই না হলে ওরা বাঘের বাচ্চা হয়ে শিরোনামে ঠাঁই পেত! আহা, বেচারা বাঘ। ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত হওয়ায় দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বেশ খুশি। তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মিডিয়ার বিচারে এটি নগণ্য খবর! জুতসই জায়গা পায়নি সংবাদপত্রে। উপকারভোগীদের সঙ্গে সংবাদকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির বেশ তফাত চোখে পড়ল।
মনমোহনের সফর নিয়েও ফ্যান্টাসি হয়েছে বেশ। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন শেখ হাসিনার দিলি্ল সফরের রিটার্ন ভিজিট হিসেবে এবং দিলি্ল সফরের সময় শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে। ড. মনমোহন তখন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেছিলেন যে সময় ও সুযোগমতো তিনি বাংলাদেশে যাবেন। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু মিডিয়ার সংবাদ পরিবেশন এবং প্রচারণা থেকে কি এমনটা প্রতীয়মান হয়েছে? মোটেই না। মিডিয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মাতে সক্ষম হয়েছে যে ড. মনমোহন বাংলাদেশে এসেছিলেন চুক্তি সই করতে! এ কথা সত্যি, এ ধরনের সফরের সময় কিছু চুক্তি, কিছু সমঝোতা সই হয়। চলমান প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ে সমঝোতা পূর্ণতা পেয়েছে, সেগুলোই সই হয়েছে। অধিকাংশই সই করেন সংস্থাপ্রধান, সচিব, মন্ত্রীরা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী চুক্তি সই করতে এসেছিলেন, এমনটা কিন্তু নয়। বলা যায়, তাঁর সফরের সুযোগে কিছু সমঝোতা সম্পন্ন হয়েছে। যেগুলো নিষ্পন্ন হয়নি, যেসব বিষয়েও দুই প্রধানমন্ত্রীর পারস্পরিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতিসঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একপর্যায়ে ঐকমত্যে পেঁৗছানোর পর চুক্তি স্বাক্ষরের সময় হবে। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ নাটকীয়তা উপভোগ করেছি আমরা। বিশ্বের যেকোনো দুই দেশের মধ্যে যখন কোনো চুক্তি হয়, তখন কেউ জেতে না, কেউ হারেও না। উভয় দেশ যাতে উপকৃত হয়, সেভাবেই চুক্তি করা হয়। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় 'উইন-উইন সিচুয়েশন'। চুক্তি করলে যে একজনকে জিততে হবে, আরেকজনকে হারতে হবে_এমন ধারণা এখন নেই। আধুনিক যুগে 'পারস্পরিক সুবিধা' অর্জনের জন্য সমঝোতা হয়। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে একটি মহল এমন ধারণার সৃষ্টি করল যে মনমোহন দিলি্ল থেকে পকেটভর্তি কিছু নিয়ে আসছেন, যা থেকে আমরা কিছু পাব। আবার উল্টোটাও প্রত্যক্ষ করেছি। দু-একজন এমনও বলেছেন যে মনমোহন আসছেন বাংলাদেশকে ঠকিয়ে সব কিছু নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রত্যক্ষ প্রমাণ হলেন বিএনপির এক সংবাদপত্র সম্পাদক নেতা। তিনি ঘোষণা করলেন, মনমোহনের ঢাকা পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হবে। অনেকেই বলবেন, এ তো পাগলের প্রলাপ! কিন্তু এমন জ্ঞানপাপী শিক্ষিত পাগল তো দেশে রয়েছেন এবং তাদের প্রলাপগুলো তো মিডিয়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে। পাগলের কথায় কেউ কান দেয় না। মিডিয়া নিশ্চয়ই তাদের পাগল ভাবে না। পাগলে পাগল চেনে! বিরোধীদলীয় আরেক বর্ষীয়ান নেতা বলেছেন, মনমোহন নাকি 'করিডর নিতে এসেছেন, ট্রানজিট পেতে নয়'। মিডিয়াতে গুরুত্বসহকারে বক্তব্যটি ছাপা হয়েছে। সেনসেশনাল কিছু বলা হলেই মিডিয়া ক্যাচ করে, সত্য-মিথ্যার ধার ধারে না। আদতে করিডর ভারত চায়নি, করিডর দেওয়া নিয়ে আলাপও হয়নি, করিডর দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। করিডর আর ট্রানজিট দুটো ভিন্ন বিষয়। তবু হিরো হওয়ার জন্য কথাটি বলে ফেললেন ওই আমলা নেতা। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও পর্যালোচনাযোগ্য। সংক্ষেপে তাদের প্রতিক্রিয়া হলো_(ক) বাংলাদেশ কিছুই পায়নি, (খ) প্রতিবেশীর কাছে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে এবং (গ) ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী। এ কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করা যাক।
বাংলাদেশ কিছুই না পেলে বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত হিসেবে ভারতে রপ্তানি হবে কিভাবে? বাংলাদেশকে এই সুবিধা প্রদানের জন্য ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন যে শুল্কমুক্ত বাংলাদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাদের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বেশ উন্নত এবং কমপিটিটিভ বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, শুল্কছাড়ের ফলে ভারত সরকারের ক্ষতি হবে বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের ওপর। বাংলাদেশের আয়তন বেড়ে যাবে কমবেশি আড়াই শ বর্গমাইল। মানচিত্র সম্প্রসারিত হবে। এর পরও বলতে চান যে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি? বিএনপির পরের দাবি হলো, বাংলাদেশ প্রতিবেশীর কাছে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু কোন চুক্তির দ্বারা কিভাবে এটা ঘটেছে, তা বলেনি। তাদের মতে, উল্লেখযোগ্য চুক্তিই করা সম্ভব হয়নি। তাহলে স্বার্থহানিটা ঘটল কিভাবে?
তাদের তৃতীয় বক্তব্য হলো, ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী। যত দোষ নন্দ ঘোষ! তাদের অঙ্গুলি নির্দেশ তিস্তাচুক্তি না হওয়ার দিকে। চুক্তি থেকে সরে গেল ভারত। আর দোষ বাংলাদেশের। উভয় দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চুক্তি হবে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনার দায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। সেখানে ঘাটতি থাকলে দায় ভারত সরকারের। তারাও সেটা মানে। মমতার সঙ্গে কথাবার্তার জন্য মনহোমন নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতাটা কোথায়? নাগরিক হিসেবে বিএনপিকে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১০ বছর। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল আরো বেশি সময়। আপনারা ভারতের কাছ থেকে কী এনেছেন বাংলাদেশের জন্য। আপনাদের ব্যর্থতার ছবিই কি আপনাদের চোখের সামনে ভাসছে?
আসলে মনমোহনের সফরটাও বাংলাদেশের রাজনীতির প্যাটার্নে পড়েছে এবং সে অনুযায়ী মতামত বেরিয়ে আসছে। মোটা দাগে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরাই ভারতবিরোধী। কারণ ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল। তৎকালীন রাজাকার, আলবদর, আলশামস, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ এবং তাদের উত্তরসূরিরা ভারতবিদ্বেষী। শুল্কমুক্ত সুবিধা বা ছিটমহল প্রাপ্তি তাদের অন্তর্জ্বালা বৃদ্ধি করেছে। কারণ এর ফলে যদি জনগণের একাংশের ভারতবিরোধী মনোভাব হ্রাস পায়! কৃতিত্ব যদি শেখ হাসিনার কোর্টে চলে যায়! অদ্ভুত মানসিকতা ভারতবিদ্বেষীদের।
পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগে থাকলে নিজের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে অন্য এলাকায় চলে যাওয়া যায়। কিন্তু বিধাতা বাংলাদেশ ও ভারতকে চিরস্থায়ী প্রতিবেশী করে রেখেছেন। বাংলাদেশের জমিটুকু তুলে নিয়ে পাকিস্তানের পাশে বসিয়ে দেওয়া তো সম্ভব নয়। ভারতবিদ্বেষী তথা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের এ কথাটা বুঝতে চেষ্টা করা উচিত। তারা না বুঝলে তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-পুতিরা বুঝবে এবং তাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করবে। নাগরিক সমাজকে স্বচ্ছ চিন্তা করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে মতামত বিনিময় করতে হবে, যাতে মিথ্যা এবং বৈরী, বিরূপ প্রচারণা ধোঁয়াশা সৃষ্টির সুযোগ না পায়।
লেখক : সাবেক ডেপুটি গভর্নর,
বাংলাদেশ ব্যাংক ও কলামিস্ট
চুক্তির বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়। এক পক্ষ বাংলাদেশ, অন্য পক্ষ ভারত। দেখা যাক, ভারত কী করেছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করে চলেছে ভারত। বাংলাদেশের মতো বেয়নেট আর বুলেটের আঘাতে মার্শাল ল আসেনি সে দেশে। জেনারেল সাহেবরা ক্ষমতায় আরোহণ করেননি সে দেশে। সঙ্গিনের আঘাতে সংবিধান সংশোধিত হয়নি সে দেশে। কাজেই জনগণের অধিকার সচেতনতা কম থাকার কথা নয় সেখানে। ভারতেও সম্ভাব্য চুক্তির কোনো খসড়া জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, সে বিষয়ে জনমত যাচাই করাও হয়নি। তবে ভারত সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করা হয়েছে, তবে গোপনীয়তা রক্ষা করে। ভারতে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে জনসমক্ষে কোনো খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে কানে আসেনি। এমন কোনো দাবিও সেখানে উত্থাপিত হয়নি। বাংলাদেশে সেনাশাসন-স্বৈরশাসনে গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে বলেই বোধ হয় বুদ্ধিজীবীদের একটি সন্দেহপ্রবণ মহলে অধিকার বিষয়ে অতিসচেতনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এ কথা ঠিক, বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সে গুড়েবালি। সেনা-স্বৈরশাসন থেকে জন্ম নেওয়া আমাদের বিরোধী দলের তো মুখ দেখাদেখিই নেই সরকারি দলের সঙ্গে। আলোচনায় তারা বসবে না। উভয়ের মধ্যে জনমের আড়ি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে পারত। করা উচিত ছিল। বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করা উচিত ছিল। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এই রেওয়াজ রয়েছে। সরকার এ ঘাটতিটুকু পূরণ করতে পারত। তবে মিডিয়া সব সময় অতি ঔৎসুক্যে ভোগে। এটা মিডিয়ার ধর্ম। সব দেশেই সত্য, অর্ধসত্য, অসত্য, গুজব_সব কিছুই আহরণ করে থাকে মিডিয়া। ফাঁদে ফেলে সংশ্লিষ্ট কারো ঠোঁটটা একটু নাড়াতে পারলেই হলো। তারপর ব্যাখ্যা, অপব্যাখ্য, ইনফারেন্স সব চলতে থাকে মিডিয়া জগতে। মানুষের ঔৎসুক্য বাড়িয়ে দেয় অযাচিতভাবে। মানুষের ব্যক্তিগত মতামত এবং অসমর্থিত তথ্যকেও কাজে লাগানো হয়। বিবিসির ফোন ইন অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আসার আগের সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রায় ডজনখানেক শ্রোতা জানালেন যে তিস্তা নদীর ২৫ শতাংশ পানি বাংলাদেশ পাবে! এরা বেশির ভাগ বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর থেকে কথা বলছিলেন। এদিকে ঢাকার গুজব ছিল কমবেশি ৫০ শতাংশ পানির হিস্যা পাওয়া যাবে। অবশ্য ততক্ষণে চুক্তি হবে না মর্মেও রটে গেছে। তথ্য বিপ্লবের যুগে তথ্যবিভ্রাটও বেশ ঘটে থাকে।
মনমোহনের সফরকালে কী কী সমঝোতা হলো, আর কী কী হলো না, একনজরে দেখা যাক। উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি অঙ্গনে সহযোগিতা_এসব বিষয় ঠাঁই পেয়েছে এ চুক্তিতে। আরো একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ট্রানজিটবিষয়ক ১৯৭৮ সালে করা এতদ্বিষয়ক চুক্তিটির সংযুক্তি হিসেবে। প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে দুই দেশের কিছু সীমানা চিহ্নিতকরণ বিষয়ে। দুই দেশের বাঘ রক্ষাকল্পে প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা হয়েছে সুন্দরবন সুরক্ষা নিয়ে, টেলিভিশন সম্প্রচার নিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে, ফ্যাশন টেকনোলজিবিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে। এসব চুক্তি, প্রটোকল বা স্মারকের প্রতিটির মধ্যে এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ছাড়াও ৪৬টি পণ্যের শুল্কছাড় প্রদানের ঘোষণাও এসেছে সফরকালে। তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত রাখার ঘোষণা সাদরে গ্রহণ করেছেন সেখানকার মানুষ। না হওয়ার তালিকায় রয়েছে তিস্তা-ফেনী পানিবণ্টন এবং ট্রানজিট ইস্যু।
এসব নিয়ে মিডিয়ার অভিব্যক্তি কৌতূহলোদ্দীপক। বড় সংবাদপত্রগুলো চার-পাঁচ কলামব্যাপী প্রধান শিরোনাম করেছে 'না হওয়া' বিষয় নিয়ে। সমঝোতা হয়েছে এমন বিষয়গুলো এসেছে মাত্র সিঙ্গেল কলাম হেডিং ও কভারেজে। বাঘ রক্ষা প্রটোকল সই হওয়ায় বাঘেরা সব বিড়াল হয়ে গেছে, কোনো কাগজে এক লাইন আছে, কোনো কাগজে একদম নেই। সই না হলে ওরা বাঘের বাচ্চা হয়ে শিরোনামে ঠাঁই পেত! আহা, বেচারা বাঘ। ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত হওয়ায় দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বেশ খুশি। তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। মিডিয়ার বিচারে এটি নগণ্য খবর! জুতসই জায়গা পায়নি সংবাদপত্রে। উপকারভোগীদের সঙ্গে সংবাদকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গির বেশ তফাত চোখে পড়ল।
মনমোহনের সফর নিয়েও ফ্যান্টাসি হয়েছে বেশ। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন শেখ হাসিনার দিলি্ল সফরের রিটার্ন ভিজিট হিসেবে এবং দিলি্ল সফরের সময় শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে। ড. মনমোহন তখন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেছিলেন যে সময় ও সুযোগমতো তিনি বাংলাদেশে যাবেন। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু মিডিয়ার সংবাদ পরিবেশন এবং প্রচারণা থেকে কি এমনটা প্রতীয়মান হয়েছে? মোটেই না। মিডিয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মাতে সক্ষম হয়েছে যে ড. মনমোহন বাংলাদেশে এসেছিলেন চুক্তি সই করতে! এ কথা সত্যি, এ ধরনের সফরের সময় কিছু চুক্তি, কিছু সমঝোতা সই হয়। চলমান প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয়ে সমঝোতা পূর্ণতা পেয়েছে, সেগুলোই সই হয়েছে। অধিকাংশই সই করেন সংস্থাপ্রধান, সচিব, মন্ত্রীরা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী চুক্তি সই করতে এসেছিলেন, এমনটা কিন্তু নয়। বলা যায়, তাঁর সফরের সুযোগে কিছু সমঝোতা সম্পন্ন হয়েছে। যেগুলো নিষ্পন্ন হয়নি, যেসব বিষয়েও দুই প্রধানমন্ত্রীর পারস্পরিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতিসঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একপর্যায়ে ঐকমত্যে পেঁৗছানোর পর চুক্তি স্বাক্ষরের সময় হবে। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ নাটকীয়তা উপভোগ করেছি আমরা। বিশ্বের যেকোনো দুই দেশের মধ্যে যখন কোনো চুক্তি হয়, তখন কেউ জেতে না, কেউ হারেও না। উভয় দেশ যাতে উপকৃত হয়, সেভাবেই চুক্তি করা হয়। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় 'উইন-উইন সিচুয়েশন'। চুক্তি করলে যে একজনকে জিততে হবে, আরেকজনকে হারতে হবে_এমন ধারণা এখন নেই। আধুনিক যুগে 'পারস্পরিক সুবিধা' অর্জনের জন্য সমঝোতা হয়। কিন্তু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে একটি মহল এমন ধারণার সৃষ্টি করল যে মনমোহন দিলি্ল থেকে পকেটভর্তি কিছু নিয়ে আসছেন, যা থেকে আমরা কিছু পাব। আবার উল্টোটাও প্রত্যক্ষ করেছি। দু-একজন এমনও বলেছেন যে মনমোহন আসছেন বাংলাদেশকে ঠকিয়ে সব কিছু নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রত্যক্ষ প্রমাণ হলেন বিএনপির এক সংবাদপত্র সম্পাদক নেতা। তিনি ঘোষণা করলেন, মনমোহনের ঢাকা পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হবে। অনেকেই বলবেন, এ তো পাগলের প্রলাপ! কিন্তু এমন জ্ঞানপাপী শিক্ষিত পাগল তো দেশে রয়েছেন এবং তাদের প্রলাপগুলো তো মিডিয়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে। পাগলের কথায় কেউ কান দেয় না। মিডিয়া নিশ্চয়ই তাদের পাগল ভাবে না। পাগলে পাগল চেনে! বিরোধীদলীয় আরেক বর্ষীয়ান নেতা বলেছেন, মনমোহন নাকি 'করিডর নিতে এসেছেন, ট্রানজিট পেতে নয়'। মিডিয়াতে গুরুত্বসহকারে বক্তব্যটি ছাপা হয়েছে। সেনসেশনাল কিছু বলা হলেই মিডিয়া ক্যাচ করে, সত্য-মিথ্যার ধার ধারে না। আদতে করিডর ভারত চায়নি, করিডর দেওয়া নিয়ে আলাপও হয়নি, করিডর দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। করিডর আর ট্রানজিট দুটো ভিন্ন বিষয়। তবু হিরো হওয়ার জন্য কথাটি বলে ফেললেন ওই আমলা নেতা। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও পর্যালোচনাযোগ্য। সংক্ষেপে তাদের প্রতিক্রিয়া হলো_(ক) বাংলাদেশ কিছুই পায়নি, (খ) প্রতিবেশীর কাছে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে এবং (গ) ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী। এ কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করা যাক।
বাংলাদেশ কিছুই না পেলে বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্য শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত হিসেবে ভারতে রপ্তানি হবে কিভাবে? বাংলাদেশকে এই সুবিধা প্রদানের জন্য ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন যে শুল্কমুক্ত বাংলাদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাদের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বেশ উন্নত এবং কমপিটিটিভ বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, শুল্কছাড়ের ফলে ভারত সরকারের ক্ষতি হবে বছরে ৫ মিলিয়ন ডলারের ওপর। বাংলাদেশের আয়তন বেড়ে যাবে কমবেশি আড়াই শ বর্গমাইল। মানচিত্র সম্প্রসারিত হবে। এর পরও বলতে চান যে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি? বিএনপির পরের দাবি হলো, বাংলাদেশ প্রতিবেশীর কাছে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু কোন চুক্তির দ্বারা কিভাবে এটা ঘটেছে, তা বলেনি। তাদের মতে, উল্লেখযোগ্য চুক্তিই করা সম্ভব হয়নি। তাহলে স্বার্থহানিটা ঘটল কিভাবে?
তাদের তৃতীয় বক্তব্য হলো, ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী দায়ী। যত দোষ নন্দ ঘোষ! তাদের অঙ্গুলি নির্দেশ তিস্তাচুক্তি না হওয়ার দিকে। চুক্তি থেকে সরে গেল ভারত। আর দোষ বাংলাদেশের। উভয় দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে চুক্তি হবে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনার দায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। সেখানে ঘাটতি থাকলে দায় ভারত সরকারের। তারাও সেটা মানে। মমতার সঙ্গে কথাবার্তার জন্য মনহোমন নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। এখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতাটা কোথায়? নাগরিক হিসেবে বিএনপিকে আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১০ বছর। বিএনপি ক্ষমতায় ছিল আরো বেশি সময়। আপনারা ভারতের কাছ থেকে কী এনেছেন বাংলাদেশের জন্য। আপনাদের ব্যর্থতার ছবিই কি আপনাদের চোখের সামনে ভাসছে?
আসলে মনমোহনের সফরটাও বাংলাদেশের রাজনীতির প্যাটার্নে পড়েছে এবং সে অনুযায়ী মতামত বেরিয়ে আসছে। মোটা দাগে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরাই ভারতবিরোধী। কারণ ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল। তৎকালীন রাজাকার, আলবদর, আলশামস, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ এবং তাদের উত্তরসূরিরা ভারতবিদ্বেষী। শুল্কমুক্ত সুবিধা বা ছিটমহল প্রাপ্তি তাদের অন্তর্জ্বালা বৃদ্ধি করেছে। কারণ এর ফলে যদি জনগণের একাংশের ভারতবিরোধী মনোভাব হ্রাস পায়! কৃতিত্ব যদি শেখ হাসিনার কোর্টে চলে যায়! অদ্ভুত মানসিকতা ভারতবিদ্বেষীদের।
পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগে থাকলে নিজের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে অন্য এলাকায় চলে যাওয়া যায়। কিন্তু বিধাতা বাংলাদেশ ও ভারতকে চিরস্থায়ী প্রতিবেশী করে রেখেছেন। বাংলাদেশের জমিটুকু তুলে নিয়ে পাকিস্তানের পাশে বসিয়ে দেওয়া তো সম্ভব নয়। ভারতবিদ্বেষী তথা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের এ কথাটা বুঝতে চেষ্টা করা উচিত। তারা না বুঝলে তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-পুতিরা বুঝবে এবং তাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করবে। নাগরিক সমাজকে স্বচ্ছ চিন্তা করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে মতামত বিনিময় করতে হবে, যাতে মিথ্যা এবং বৈরী, বিরূপ প্রচারণা ধোঁয়াশা সৃষ্টির সুযোগ না পায়।
লেখক : সাবেক ডেপুটি গভর্নর,
বাংলাদেশ ব্যাংক ও কলামিস্ট
No comments