রক্ষণাবেক্ষণ বেসরকারি খাতে ছাড়ুন-বিধ্বস্ত সড়ক

পুরোপুরি বিধ্বস্ত একটি সড়কের বড় আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে বুধবারের প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায়। সিলেট নগর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব ৩৭ কিলোমিটার। এ নিয়ে জনগণ এতটাই ত্যক্ত-বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে যে, ১৪ জানুয়ারির মধ্যে সড়কের সংস্কারকাজ শুরু না হলে পরদিন তারা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে। সারা দেশে অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কের দশাই এখন এমন বেহাল।


যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নতুন অবতার ওবায়দুল কাদেরের অভিষেকের পর আশা করা হয়েছিল, তিনি হয়তো সীমিত সম্পদের মধ্যেও অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কিন্তু বাস্তবে এ পর্যন্ত গণমাধ্যম-আলোচিত তাঁর কয়েকটি সরেজমিন পরিদর্শনই নজরে এসেছে। কোম্পানীগঞ্জে পাথর ব্যবসার কারণে সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন একত্র হতে পারলেও দেশের অধিকাংশ স্থানেই এ ধরনের পেশাগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংগঠিত শক্তির অভাব থাকে। স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সড়ক নিয়ে মাথা ঘামায় না। সে কারণে দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এক ঘণ্টার ভ্রমণ তিন থেকে চার ঘণ্টায় গড়ালেও তা নিয়ে কাউকেও হাপিত্যেশ করতে দেখা যায় না।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের সাম্প্রতিক জরিপে দেখানো হয়েছে, সড়ক ও নৌ-দুর্ঘটনায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একজন করে প্রাণ হারাচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাবতলী থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রাবাড়ী থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ডিভাইডার স্থাপন এবং সড়ক সম্প্রসারণ করে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। মুখোমুখি সংঘর্ষের ব্যাপকতা কমেছে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের সড়ক ব্যবস্থাপনার কৌশলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা থেকে বিরত রয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এককালে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছিল। কিন্তু সেই দিন একেবারেই হারিয়ে গেছে। সার্বিকভাবে এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, সরকারি খাতের একক সংশ্লিষ্টতায় আর মুক্তি নেই। বিশেষজ্ঞদের অনেকে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সংশ্লিষ্ট করার সুপারিশ করে আসছেন। সেদিকে কর্ণপাত করা যাচ্ছে না কেন? যে অব্যবস্থা সড়ক ব্যবস্থাপনায় চলছে, তা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.