বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৮৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ তরিকউল্লাহ, বীর বিক্রম অমিত সাহসী এক মুক্তিযোদ্ধার কথা মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২৮ বা ২৯ নভেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর এলাকায় এক যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকউল্লাহ শহীদ হন।


এ তথ্য দিয়েছেন তাঁর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। আর কোনো তথ্য তিনি দিতে পারেননি। তরিকউল্লাহ কীভাবে কোন যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তার কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। তিনি যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টর এলাকায়। সাহসিকতার সঙ্গে অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
তবে মে মাসের শেষ দিকে সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ এক যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে তরিকউল্লাহ মুক্তিবাহিনীদের একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সাহসিকতার সঙ্গে নিজেও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধের বিবরণ আছে সুকুমার বিশ্বাসের মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী বইয়ে (মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা ১৯৯৯)। তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা ২৭-২৮ মে ভোর চারটার দিকে দুটি কোম্পানি নিয়ে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। উভয় পক্ষে ব্যাপকভাবে সংঘর্ষ হয়। পাকিস্তানি সেনারা তেমন সুবিধা না করতে পেরে পেছনে সরে যায়। সকাল ছয়টায় পুনরায় পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে। থেমে থেমে এই সংঘর্ষ ১৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পাকিস্তানি সেনাদের একটি ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সময় এই সংঘর্ষে অংশ নেয়। এই সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার আহত ও একজন ক্যাপ্টেনসহ ১৩০ জনের মতো নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর দুজন শহীদ ও আটজন আহত হয়। এই সংঘর্ষে নায়েব সুবেদার জব্বার, হাবিলদার বেলায়েত হোসেন, হাবিলদার তরিকউল্লাহ অপূর্ব বীরত্বের পরিচয় দেন।’
তরিকউল্লাহ চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরে। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে আশ্রয় নেন ভারতের বয়রায়। বেনাপোল ও ভোমরা সাব সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ তরিকউল্লাহকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১০৫।
শহীদ তরিকউল্লাহর পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের শায়েস্তানগর গ্রামে। এলাকায় খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকে চেনেন। সেখানে শহীদ তরিকউল্লাহ বীর বিক্রমের নামে একটি পাকা সড়ক আছে। সম্প্রতি সেনবাগের নবনির্মিত স্টেডিয়াম তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। তাঁর বাবার নাম আকু আলী। মা মোহরজান বেগম। স্ত্রী আঙ্কুরের নেছা। তাঁর দুই ছেলে। শহীদ তরিকউল্লাহর ছবি পাওয়া যায়নি।
সূত্র: প্রথম আলোর নোয়াখালী প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান এবং ফখরুল ইসলাম (নোয়াখালী)।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.