গুঁড়ো দুধ, তেল ও ডিমের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে

কিছু দিন পরপর দাম বাড়ানোর প্রবণতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে ডিম ও গুঁড়ো দুধের বাজার। গত ১০ দিনে এ দুটি পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে। শিশুখাদ্যের দামেও একই প্রবণতা। আবার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে না বলে সরকার ঘোষণা দিলেও বাজারের চিত্র উল্টো। খোলা সয়াবিন তেল এখনো বিক্রি হচ্ছে ১২৪ থেকে ১২৮ টাকা লিটার। কোনো কোনো ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেলের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি দুই টাকা।


পাম সুপার তেলের দামও বেড়েছে। ডিমের দাম বাড়ছেই: রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে গতকাল শনিবার এক হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে ফার্মের ডিমের দাম এক মাসে বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিমের পাইকারি বাজার তেজগাঁওয়েই বেশি দামে ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। গতকাল পাইকারি বাজারে ১০০ ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ৬২৫ টাকায়। সে হিসাবে এক হালি ডিমের দাম পড়ে ২৫ টাকা। আর প্রতি শ হাঁস ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। সে হিসাবে পাইকারিতে হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের হালি দাঁড়ায় ৩২ টাকা।
ডিমের দাম কেন এত বেশি সে বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমানতউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পোলট্রি খাতে খারাপ অবস্থা চলছে। সে কারণে অনেক খামারি ডিম উৎপাদনেও যায়নি, বাচ্চাও ফোটায়নি। এ ছাড়া অতিরিক্ত শীতে হাঁস ও মুরগির ডিমের উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়। তাই শীতকালে ডিমের কিছুটা সরবরাহ সংকট দেখা দেয়।
হাঁসের ডিমের দাম বাড়ার আরেকটি কারণ জানিয়ে আমানতউল্লাহ বলেন, হাঁস এমনিতেই একটু বেশি খাবার খায়। আর বেশকিছু দিন ধরে হাঁসের খাবারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক খামারি উৎপাদনে যায়নি। তাই একদিকে সরবরাহ কম, অন্যদিকে খরচও বেশি পড়ছে। সে কারণে হাঁসের ডিমের দামও বেশি।
গুঁড়ো দুধ ও শিশুখাদ্য: গত ১০ থেকে ১৫ দিনে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। টিসিবির হিসাবে এক মাসে গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে সাড়ে ছয় শতাংশ।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রামের ডিপ্লোমা গুঁড়ো দুধের দাম ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ৪০০, ২০০ ও ১০০ গ্রাম ওজনের ডিপ্লোমা দুধের দাম বাড়েনি। ডানো দুধের দামও বেড়েছে। ৫০০ গ্রামের ডানোর দাম ২৮৫ থেকে বেড়ে ২৯৮ এবং ৪০০ গ্রামের দাম ২৩৫ থেকে বেড়ে ২৪৮ টাকা হয়েছে। ৪০০ গ্রাম ওজনের রেড কাউ আগের দামেই ১৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শিশুখাদ্যের দামও বেড়েছে। ৪০০ গ্রাম ওজনের ল্যাকটোজেন এক-এর দাম ৩৭০ থেকে বেড়ে ৪১০ টাকা হয়েছে। আর একই পরিমাণ ল্যাকটোজেন দুই ও তিন-এর দর ৩৬৫ থেকে বেড়ে ৪০০ টাকা হয়েছে।
দোকানিরা বলছেন, গুঁড়ো দুধ ও শিশুখাদ্যের দাম কয়েক দিন পর পরই বাড়ে। তাই এই দুধ বিক্রি করতে গিয়ে প্রায়ই ক্রেতাদের সঙ্গে বাগিবতণ্ডায় জড়াতে হয় তাদের।
সয়াবিনের দাম কমেনি: চার দফা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ১০ জানুয়ারি সরকার সয়াবিন তেলের আগের নির্ধারিত মূল্যই বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু সরকারের ঘোষণার পরও বাজারে সয়াবিন তেলের স্থিতি আসেনি।
সর্বশেষ গত বছরের জুলাই মাসে খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল মিলগেটে ১০৪ ও ভোক্তা পর্যায়ে ১০৯ টাকা। আর পামতেল ৯৯ টাকা। তখন বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২০ টাকা।
কিন্তু গতকাল বিভিন্ন কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১২৪ থেকে ১২৮ টাকা লিটার। খোলা তেল মূলত কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।
তবে তীর ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি দুই টাকা। আর রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের দাম আগে থেকেই তীরের চেয়ে ১০ টাকা বেশি ছিল।
দোকানিরা জানান, গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৬১০ থেকে বেড়ে হয় ৬২৫ টাকা। সে সময় তীর ও ফ্রেশের বোতলজাত সয়াবিন তেলও বিক্রি হয়েছে ৬২৫ টাকায়। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রূপচাঁদার দাম বাড়িয়ে করা হয় ৬৩৫ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে তীর ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেলের দাম ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে পাম সুপার তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে। ১০ দিন আগেও যে পাম তেলের দাম ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা লিটার, সেই তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৯ থেকে ১০৩ টাকায়।

No comments

Powered by Blogger.