রিপোটারের ডায়েরি- জেনেভা টু জুরিখ, জার্নি বাই ট্রেন
৩ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। ঠিক ১২টা ৪৫
মিনিটেই আমাদের ট্রেন ছাড়ল জেনেভার কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন থেকে। জীবনে প্রথম
দ্বিতল ট্রেন দেখলাম। দ্রুতগতির এই ট্রেনগুলো আমাদের মতো প্রাচীন ট্রেন
নয়।
এগুলো বিদু্যতে চলে। ট্রেনের লাইনের ওপর বিদ্যুতের
তার রয়েছে। ট্রেনের ওপর থেকে সেই বিদু্যতের তারের সঙ্গে প্রতিটি ট্রেনের
সংযোগ রয়েছে। ট্রেন চলার সঙ্গে সঙ্গে তারই এগিয়ে চলে। নিচের ট্রেন লাইনও
বিদু্যতায়িত। ফলে আমাদের দেশের মতো ট্রেন লাইনের ওপর দিয়ে চলাফেরা করা যায়
না। যেতে গেলেই বিদু্যতায়িত হয়ে নির্ঘাত মৃতু্য। এক পস্নাটফর্ম থেকে অন্য
পস্ন্যাট ফর্মে যেতে গেলে হয় নিচ দিয়ে অথবা ওপর দিয়ে রাসত্মা আছে। সেখান
দিয়েই যেতে হয়। পথিমধ্যেও ট্রেন লাইন আমাদের মতো ক্রস করার কোন উপায় নেই।
প্রতিটি ক্রসিংয়ের হয় ওপর দিয়ে ফাইওভার আছে, অথবা আন্ডারগ্রাউন্ড রাসত্মা
দিয়ে রেল লাইন অতিক্রম করতে হয়। ট্রেনগুলোও দুই শ' থেকে তিন শ' কিলোমিটার
গতিতে চলে। অথবা কোন দুর্ঘটনা ঘটে না।
প্রতিটি ট্রেনই হিটার লাগানো। ফলে বাইরে প্রচ- ঠা-ার মধ্যেও ট্রেনে ওঠলেই শানত্মি। ট্রেনের বগিগুলো ছোট ছোট। দুই পাশে বেশ বড় জানালা। জানালার পাশে দুটি করে আসন। এক এক আসনে দু'জন করে বসতে পারে। আসনগুলো এমনভাবে দেয়া যাতে যে কেউ বসে বাইরের দৃশ্য পর্যবেৰণ করতে পারে। বগিগুলোতে ঢোকার মুখেই লাগেজ রাখার ব্যবস্থা আছে। আছে সাইকেল রাখার ব্যবস্থাও। কারণ ইউরোপের নারী-পুরম্নষরা সবাই বেশি সাইকেল ব্যবহার করে। দূরে কোথাও যেতে গেলে সাইকেল নিয়ে যায়। ট্রেন থেকে নেমে আবার সাইকেলে চরে তার গনত্মব্যে চলে যায়। আবার অনেকে সাইকেল নিয়ে স্টেশনে আসে।
আমরা ট্রেনের একটি বগিতে উঠে জানালার পাশে সিট নিয়ে বসলাম। ঠিকমতো উঠতে পারার জন্য মনে প্রশানত্মি। বগিগুলোতে অনেকটাই ফাঁকা। যাত্রী খুব কম। প্রচ- শীতের কারণে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে।
ট্রেন ছুটে চলছে। একের পর এক ছোট ছোট স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু থামছে না। বেশ কিছুৰণ যাওয়ার পর লসুনে নামক একটি স্টেশনে থামল। এটি তুলনামূলক বড় স্টেশন। বোধহয় কোন সুইস শহর হবে। কয়েক জন যাত্রী নেমে গেলে। ট্রেন আবার চলতে শুরম্ন করল। বাইরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট ছবির মতো বাড়িঘর। রাসত্মা-ঘাটগুলো পরিপাটি। সব যেন সাজানো গোছানো। প্রকৃতিতে আমাদের মতো সবুজের সমারোহ নেই। আছে পাহাড়া-উপত্যকা। শীতের শুরম্নতেই বরফ পড়া শুরম্ন হয়েছে। দূরের কালো পাহাড়গুলো সাদা বরফে ঢেকে যাচ্ছে। যেন এক অপূর্ব দৃশ্য। পাহাড়ের ঢালে আবাসিক এলাকা। মাঝে মাঝে লেক। লেকের ওপারে সারি সারি পাহাড়। মেঘলা আকাশ। সূর্য় যেন মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।
যতই জুরিখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বরফের উপস্থিতি ততই টের পাচ্ছি। এই দিকটায় বরফ পড়া শুরম্ন হয়েছে।
লসনি শহরে আসতে আমাদের আধা ঘণ্টা সময় লাগল। এই শহরটা পুরোটাই পাহাড়ী। বেশ উঁচু শহর। এখানে এসে প্রথম আমরা ইউরোপের বরফের রূপ দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছে গত কয়েক দিন ধরেই এখানে বরফ পড়ছে। ফলে রাসত্মা, মাঠ, বন, বাড়ি-ঘর সবই বরফের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। মনে হলো আমাদের ট্রেন যেন কোন এক বরফের রাজ্যে ঢুকে পড়ল। চারদিকে শুধু সাদা বরফ আর বরফ। বাড়ির ছাদগুলো বরফে ঢাকা। গাড়িগুলো বরফে আচ্ছাদিত। ট্রেন লাইনের পাশেও বরফ জমে আছে। মানুষের চলাফেরা দূরের কথা, আশপাশে কোথায় মানুষের চিহ্ন নেই। সবই যেন জনমানব শূন্য। বাড়িঘরগুলোর দরজা-জানালাও ভেতর থেকে বন্ধ। মনে হলো তাপমাত্রা নিশ্চয়ই শূন্য ডিগ্রী বা তারও নিচে নেমে গেছে। সেই বরফের রাজ্যের ভেতর দিয়েই আমাদের ট্রেন ছুটে চলল। বরফগুলো দেখতে অনেকটা সাদা তুলার মতো। মাঠের ওপর সাদা বরফগুলোকে মনে হচ্ছে সাদা তুলার মতো। কেউ যেন রাসত্মা-মাঠ-ঘাট সবখানে তুলা ছড়িয়ে রেখেছে। গাছগুলো পাতাশূন্য। প্রচ- শীতে গাছগুলো কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আমাদের ট্রেন একটি টানেলে ঢুকল। কয়েক মিনিটের পর টানেল থেকে বের হতেই চোখে ধাঁধা লেগে গেল। যেদিকে তাকাই শুধু বরফ আর বরফ। ২টা পাঁচ মিনিটে আমরা ফিবুর্গ শহরে এলাম। এটিও সুইজারল্যান্ডের একটি শহর। তবে এই শহরটি একটু ভিন্ন। এটি ঠিক পাহাড়ী শহর নয়। টিলার মতো। আমাদের দেশের যাতে 'টেক' বলা হয়। পাহাড়ের ঢালেই ফসলের মাঠ। শহরটি দেখে মনে হলো অনেক পুরনো।
২টা ২৫ মিনিটে আমরা সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে এলাম। বার্ন রেল স্টেশন বিশাল। রাজধানীর রেল স্টেশনের মতোই। তবে বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরনো। এখানে সেই বিখ্যাত পল কি সেন্টার আছে। যা সুইজারল্যান্ডের চিত্রকলা ও সংস্কৃতির ইতিহাস বহন করে চলেছে। সুইজারল্যান্ডের চারটি শহর বেসেল, বার্ন, জেনেভা ও জুরিখ হচ্ছে সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পাদপীঠ। জুরিখে রয়েছে ইউরোপের ২০ শতকের চিত্রকলা আন্দোলনের ঐহিত্য। যে কারণে সুইজারল্যান্ডকে 'ল্যান্ড অব কালচার' বলা হয়। বার্ন থেকে আমরা কুচিন শহর পেরিয়ে জুরিখে প্রবেশ করি। জুরিখ সেন্টাল রেল স্টেশনে আসার আগেই আমরা স্বপন মামাকে ফোন করলাম। স্বপন আহমেদ এখানে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জুরিখে আছেন। বছর পাঁচেক আগে এখানে দেশ থেকে তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। এখানে আসার পর তার এক কন্যা সনত্মান হয়েছে। তারা সবাই এখন এদেশের নাগরিক। স্বপন মামা জানালেন তিনি আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে স্টেশনে আসছেন।
জুরিখ স্টেশনটি খুব জটিল নয়। অনেকটা আমাদের কমলাপুর স্টেশনের মতো। পস্নাটফর্মে নেমে লাগেজ নিয়ে একটু হাঁটতেই আমরা মূল স্টেশনে পেঁৗছলাম। তখনও স্বপন মামা এসে পেঁৗছাননি। আমরা একটি রেস্টুরেন্টের সামনে অপেৰা করতে লাগলাম। হঠাৎ এক বাঙালীকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি স্বপন মামা। তিনি না বলে আমাদের এড়িয়ে চলে গেলেন। অবশ্য বেশিৰণ অপেৰা করতে হয়নি। কিছুৰণের মধ্যেই তিনি চলে এলেন এবং এক চক্কর দিয়েই আমাদের পেয়ে গেলেন। ওখান থেকে তিনি প্রথমে আমাদের ওই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেম। ওখানকার কর্মচারীরা অনেকেই তার পরিচিত। কফি খেতে খেতে তার বন্ধু নুরম্নজ্জামান সাহেবকে ফোন করলেন। বললেন, গাড়ি নিয়ে আসতে। কফি খাওয়া শেষ না হতেই সেল ফোন বেজে উঠল। মামা বললেন, তার বন্ধু এসে পড়েছে। আমি আর বাবলু তার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম।
কাওসার রহমান
আইনের লোক হয়ে বেআইনী কাজ করছেন
২ মার্চ মঙ্গলবার। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের সময় সুপ্রীমকোর্টের ১নং গেটে জটলা। পাহারারত পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন তর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আমি বার কাউন্সিল থেকে বের হয়ে ওই দিকে এদিয়ে গেলাম। যেহেতু এদিকে পুুলিশ আরেক দিকে আইনজীবী। পাশে কিছু সাধারণ পাবলিক দৃশ্যটি খুব মজা করে দেখেছে। আমিও উৎসুক হয়ে বিষয়টি জানতে চাইলাম। বিষয়টি তখন পরিষ্কার হলো। বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বেশ কিছু নিয়মকানুন করেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রীমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ৮ ফেব্রম্নয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রীমকোর্টকে সুপ্রীম পরিবেশে আনার উদ্যোগ দিয়েছেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। এই সময়ের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের যত অনিয়ম তা দূর করতে চান। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, সুপ্রীমকোর্টের চত্বরও সুন্দর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের ৩টি গেটে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। ১নং গেট দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করবে। জনসাধারণ এক নম্বর গেটের মূল অংশ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশের ছোট গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যানবাহন দুই নম্বর গেট দিয়ে বের হবে। ওই গেট দিয়ে জনগণ প্রবেশ করতে পারবে না।
২ মার্চ মঙ্গলবার একজন আইনজীবী দুই নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। ওই আইনজীবী মানিকগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। তিনি সুপ্রীমকোর্টের নিয়মকানুনও জানেন না। সবেমাত্র এ্যাডভোকেটশিপ লিখিত পরীৰা দিয়েছেন। ২৬ ফেব্রম্নয়ারি তিনি ঢাকা কলেজে লিখিত পরীৰা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত কাজে বার কাউন্সিলে এসেছিলেন। পুলিশ বার বার বলছে, এই গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। কষ্ট করে এক নম্বর গেট দিয়ে যান। কিন্তু উকিল সাহেবও নাছোড় বান্দা। তখন রাগ হয়ে দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে বলেন, আপনারা আইনের লোক হয়ে বেআইনী কাজ করছেন। অবশ্য ওই বাকবিত-ায় পুলিশেরই জয় হয়। জটলার পাশে আরও কিছু উকিল ও সাধারণ মানুষ আসার পর ওই উকিল বাধ্য হয় ১ নম্বর গেট দিয়ে যেতে।
১১টার দিকে ভেতরে গিয়ে দেখি সুপ্রীমকোর্টের বাগানে রং মিস্ত্রি গাছের গোড়া এবং আইল্যান্ডে চুনকাম করতে ব্যসত্ম। কেউ বা বাগানের গাছের মড়াকা-, আগাছা, পাতা কুড়িয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। বাগান চত্বরে প্রায় ১৫/১৬ জায়গায় সত্মূপাকারে আর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ধোঁয়ায় সুপ্রীমকোর্ট চত্বর প্রায় অন্ধকার অবস্থা। প্রশ্ন করলাম এখন কেন আগুন ধরিয়েছেন, রং মিস্ত্রিরা বলল, আগাছা পোড়ানের জন্যই করা হয়েছে। বিকালে আমাদের কাজ শেষ। তাই সকালে আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছি। পুড়তে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
জনসাধারণদের চলাচলের জন্য আইল্যান্ডের পাশে রশি টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে কেউ যত্রতত্র চলাচল করতে না পারে। সকালে রশি টাঙ্গালেও রাতে কে বা কারা তা ছিঁড়ে ফেলছে। তিন নম্বর গেটে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। সেখানে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। যদিও আইনজীবীগণ প্রধান বিচারপতির নিকট এই রাসত্মাটি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন। এই গেটটি উন্মুক্ত হলে আইনজীবী থেকে শুরম্ন করে সাধারণ মানুষের আসা যাওয়া সহজ হতো।
সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ চললেও সুপ্রীমকোর্ট এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের মাঝের রাসত্মায় বড় ধরনের একটি ম্যানহোল রয়েছে। এটির মুখ কয়েক মাস ধরেই উন্মুক্ত রয়েছে। যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যসত্মতম এই রাসত্মাটিতে বিচারপতি, আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশসহ সাধারণ জনগণ যাতায়াত করে থাকেন। কতর্ৃপৰ এমন দৃশ্য দেখার পরও আজ পর্যনত্ম ম্যানহোলের মুখে ঢাকনাটি লাগানে হয়নি। বিষয়টি সিনিয়র এক আইজীবীর দৃষ্টিগোচর করলে তিনি হেসে বলেন, জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন। আমি বললাম, আপনাদের কথায় কথায় মামলা। তখন উনি হেসে বললেন, মামলা না হলে আপনারা নিউজ পাবেন কিভাবে, মামলা হবে নিউজ হবে।
বিকাশ দত্ত
সম্ভাবনাময় ট্রেন
২৫ ফেব্রম্নয়ারি, বৃহস্পতিবার। সপরিবারে খুলনায় যাওয়ার সিদ্ধানত্ম আগে ভাগেই নিয়েছি। মায়ের মৃতু্যবার্ষিকী পালন করতে এবং ব্যক্তিগত কিছু কাজ সারতে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধানত্ম নিলাম। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে ট্রেন ছাড়বে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে। চিফ রিপোর্টার ওবায়েদ ভাইয়ের কাছ থেকে আগে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে দ্রম্নত রিপোর্ট জমা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় গিয়ে তৈরি হতেই এক সাংবাদিক বন্ধু তাঁর গাড়িটি পাঠিয়ে দিলেন আমাদের স্টেশনে পেঁৗছে দিতে। গাড়িটি পেয়ে অনেক সুবিধা হলো। বিকেলে আমার বাসা আগারগাঁও থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যাই হোক নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে আমরা পেঁৗছে গেলাম স্টেশনে। একটু পরেই আমাদের কাঙ্ৰিত খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসটি এসে হাজির হলো। শোভন চেয়ারে আমরা পাঁচটি আসন নিয়েছি। ট্রেনটি স্টেশনে থামার পর উঠে আমাদের আসন গ্রহণ করলাম। আমার স্ত্রী ও ছেলে বাস জার্নিতে বেশ দুর্বল। কিন্তু ট্রেন জার্নি তাদের কাছে বেশ আরামদায়ক। নির্ধারিত সময়ে ট্রেনটি ছাড়ল খুলনার উদ্দেশে। নতুন এই ট্রেনটি বেশ ভাল। আগে একবার ট্রেনে করে খুলনা থেকে আমরা ঢাকায় এসেছিলাম। সেটি ছিল সুন্দরবন এক্সপ্রেস। কিন্তু তার তুলনায় চিত্রা এক্সপ্রেসটি অনেক উন্নত। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে পেঁৗছলাম। বিমানবন্দর থেকেও অনেক যাত্রী উঠল। বৃহস্পতিবার হওয়ায় ট্রেনে অনেক ভিড় দেখা গেল। মধ্য রাতে দেখা পেলাম ট্রেনের এক কর্মচারীকে। তার কাছে জানতে পারলাম ট্রেনটিতে রয়েছে মাত্র ছয়টি কম্পার্টমেন্ট। অথচ আসনের প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী ট্রেনে চেপে চলেছেন বিভিন্ন গনত্মব্যে। সে জানালো বৃহস্পতিবারে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে এমন ভিড়ই হয়ে থাকে। আবার শনিবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা দূরপালস্নার ট্রেনগুলোতেও এমন ভিড় হয়। সে জানলো ট্রেনে বগি বাড়ানো একানত্ম প্রয়োজন। এই মুহূর্তে কোন কারণে যদি তা সম্ভব না হয় অনত্মত সপ্তাহের বিশেষ এই দিনগুলোতে বগি বাড়াতে হবে। ট্রেন সার্ভিস দেখে মনে হলো আমাদের দেশে ট্রেন খুবই সম্ভাবনাময়। এর বিসত্মার ঘটানো অত্যাবশ্যক। দেশে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে একদিকে যাত্রী চলাচল সহজ হবে, তেমনি যানজট কমে আসবে। ট্রেনে আরমদায়ক এক জার্নিতে ভোর সোয়া পাঁচটায় আমরা খুলনায় এসে পেঁৗছলাম।
তপন বিশ্বাস
প্রতিটি ট্রেনই হিটার লাগানো। ফলে বাইরে প্রচ- ঠা-ার মধ্যেও ট্রেনে ওঠলেই শানত্মি। ট্রেনের বগিগুলো ছোট ছোট। দুই পাশে বেশ বড় জানালা। জানালার পাশে দুটি করে আসন। এক এক আসনে দু'জন করে বসতে পারে। আসনগুলো এমনভাবে দেয়া যাতে যে কেউ বসে বাইরের দৃশ্য পর্যবেৰণ করতে পারে। বগিগুলোতে ঢোকার মুখেই লাগেজ রাখার ব্যবস্থা আছে। আছে সাইকেল রাখার ব্যবস্থাও। কারণ ইউরোপের নারী-পুরম্নষরা সবাই বেশি সাইকেল ব্যবহার করে। দূরে কোথাও যেতে গেলে সাইকেল নিয়ে যায়। ট্রেন থেকে নেমে আবার সাইকেলে চরে তার গনত্মব্যে চলে যায়। আবার অনেকে সাইকেল নিয়ে স্টেশনে আসে।
আমরা ট্রেনের একটি বগিতে উঠে জানালার পাশে সিট নিয়ে বসলাম। ঠিকমতো উঠতে পারার জন্য মনে প্রশানত্মি। বগিগুলোতে অনেকটাই ফাঁকা। যাত্রী খুব কম। প্রচ- শীতের কারণে মানুষের চলাফেরা কমে গেছে।
ট্রেন ছুটে চলছে। একের পর এক ছোট ছোট স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু থামছে না। বেশ কিছুৰণ যাওয়ার পর লসুনে নামক একটি স্টেশনে থামল। এটি তুলনামূলক বড় স্টেশন। বোধহয় কোন সুইস শহর হবে। কয়েক জন যাত্রী নেমে গেলে। ট্রেন আবার চলতে শুরম্ন করল। বাইরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট ছবির মতো বাড়িঘর। রাসত্মা-ঘাটগুলো পরিপাটি। সব যেন সাজানো গোছানো। প্রকৃতিতে আমাদের মতো সবুজের সমারোহ নেই। আছে পাহাড়া-উপত্যকা। শীতের শুরম্নতেই বরফ পড়া শুরম্ন হয়েছে। দূরের কালো পাহাড়গুলো সাদা বরফে ঢেকে যাচ্ছে। যেন এক অপূর্ব দৃশ্য। পাহাড়ের ঢালে আবাসিক এলাকা। মাঝে মাঝে লেক। লেকের ওপারে সারি সারি পাহাড়। মেঘলা আকাশ। সূর্য় যেন মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।
যতই জুরিখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বরফের উপস্থিতি ততই টের পাচ্ছি। এই দিকটায় বরফ পড়া শুরম্ন হয়েছে।
লসনি শহরে আসতে আমাদের আধা ঘণ্টা সময় লাগল। এই শহরটা পুরোটাই পাহাড়ী। বেশ উঁচু শহর। এখানে এসে প্রথম আমরা ইউরোপের বরফের রূপ দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছে গত কয়েক দিন ধরেই এখানে বরফ পড়ছে। ফলে রাসত্মা, মাঠ, বন, বাড়ি-ঘর সবই বরফের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। মনে হলো আমাদের ট্রেন যেন কোন এক বরফের রাজ্যে ঢুকে পড়ল। চারদিকে শুধু সাদা বরফ আর বরফ। বাড়ির ছাদগুলো বরফে ঢাকা। গাড়িগুলো বরফে আচ্ছাদিত। ট্রেন লাইনের পাশেও বরফ জমে আছে। মানুষের চলাফেরা দূরের কথা, আশপাশে কোথায় মানুষের চিহ্ন নেই। সবই যেন জনমানব শূন্য। বাড়িঘরগুলোর দরজা-জানালাও ভেতর থেকে বন্ধ। মনে হলো তাপমাত্রা নিশ্চয়ই শূন্য ডিগ্রী বা তারও নিচে নেমে গেছে। সেই বরফের রাজ্যের ভেতর দিয়েই আমাদের ট্রেন ছুটে চলল। বরফগুলো দেখতে অনেকটা সাদা তুলার মতো। মাঠের ওপর সাদা বরফগুলোকে মনে হচ্ছে সাদা তুলার মতো। কেউ যেন রাসত্মা-মাঠ-ঘাট সবখানে তুলা ছড়িয়ে রেখেছে। গাছগুলো পাতাশূন্য। প্রচ- শীতে গাছগুলো কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আমাদের ট্রেন একটি টানেলে ঢুকল। কয়েক মিনিটের পর টানেল থেকে বের হতেই চোখে ধাঁধা লেগে গেল। যেদিকে তাকাই শুধু বরফ আর বরফ। ২টা পাঁচ মিনিটে আমরা ফিবুর্গ শহরে এলাম। এটিও সুইজারল্যান্ডের একটি শহর। তবে এই শহরটি একটু ভিন্ন। এটি ঠিক পাহাড়ী শহর নয়। টিলার মতো। আমাদের দেশের যাতে 'টেক' বলা হয়। পাহাড়ের ঢালেই ফসলের মাঠ। শহরটি দেখে মনে হলো অনেক পুরনো।
২টা ২৫ মিনিটে আমরা সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে এলাম। বার্ন রেল স্টেশন বিশাল। রাজধানীর রেল স্টেশনের মতোই। তবে বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরনো। এখানে সেই বিখ্যাত পল কি সেন্টার আছে। যা সুইজারল্যান্ডের চিত্রকলা ও সংস্কৃতির ইতিহাস বহন করে চলেছে। সুইজারল্যান্ডের চারটি শহর বেসেল, বার্ন, জেনেভা ও জুরিখ হচ্ছে সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পাদপীঠ। জুরিখে রয়েছে ইউরোপের ২০ শতকের চিত্রকলা আন্দোলনের ঐহিত্য। যে কারণে সুইজারল্যান্ডকে 'ল্যান্ড অব কালচার' বলা হয়। বার্ন থেকে আমরা কুচিন শহর পেরিয়ে জুরিখে প্রবেশ করি। জুরিখ সেন্টাল রেল স্টেশনে আসার আগেই আমরা স্বপন মামাকে ফোন করলাম। স্বপন আহমেদ এখানে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জুরিখে আছেন। বছর পাঁচেক আগে এখানে দেশ থেকে তার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। এখানে আসার পর তার এক কন্যা সনত্মান হয়েছে। তারা সবাই এখন এদেশের নাগরিক। স্বপন মামা জানালেন তিনি আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে স্টেশনে আসছেন।
জুরিখ স্টেশনটি খুব জটিল নয়। অনেকটা আমাদের কমলাপুর স্টেশনের মতো। পস্নাটফর্মে নেমে লাগেজ নিয়ে একটু হাঁটতেই আমরা মূল স্টেশনে পেঁৗছলাম। তখনও স্বপন মামা এসে পেঁৗছাননি। আমরা একটি রেস্টুরেন্টের সামনে অপেৰা করতে লাগলাম। হঠাৎ এক বাঙালীকে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি স্বপন মামা। তিনি না বলে আমাদের এড়িয়ে চলে গেলেন। অবশ্য বেশিৰণ অপেৰা করতে হয়নি। কিছুৰণের মধ্যেই তিনি চলে এলেন এবং এক চক্কর দিয়েই আমাদের পেয়ে গেলেন। ওখান থেকে তিনি প্রথমে আমাদের ওই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেম। ওখানকার কর্মচারীরা অনেকেই তার পরিচিত। কফি খেতে খেতে তার বন্ধু নুরম্নজ্জামান সাহেবকে ফোন করলেন। বললেন, গাড়ি নিয়ে আসতে। কফি খাওয়া শেষ না হতেই সেল ফোন বেজে উঠল। মামা বললেন, তার বন্ধু এসে পড়েছে। আমি আর বাবলু তার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম।
কাওসার রহমান
আইনের লোক হয়ে বেআইনী কাজ করছেন
২ মার্চ মঙ্গলবার। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের সময় সুপ্রীমকোর্টের ১নং গেটে জটলা। পাহারারত পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন তর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আমি বার কাউন্সিল থেকে বের হয়ে ওই দিকে এদিয়ে গেলাম। যেহেতু এদিকে পুুলিশ আরেক দিকে আইনজীবী। পাশে কিছু সাধারণ পাবলিক দৃশ্যটি খুব মজা করে দেখেছে। আমিও উৎসুক হয়ে বিষয়টি জানতে চাইলাম। বিষয়টি তখন পরিষ্কার হলো। বর্তমান প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বেশ কিছু নিয়মকানুন করেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রীমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ৮ ফেব্রম্নয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর সুপ্রীমকোর্টকে সুপ্রীম পরিবেশে আনার উদ্যোগ দিয়েছেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। এই সময়ের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের যত অনিয়ম তা দূর করতে চান। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, সুপ্রীমকোর্টের চত্বরও সুন্দর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের ৩টি গেটে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। ১নং গেট দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করবে। জনসাধারণ এক নম্বর গেটের মূল অংশ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশের ছোট গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যানবাহন দুই নম্বর গেট দিয়ে বের হবে। ওই গেট দিয়ে জনগণ প্রবেশ করতে পারবে না।
২ মার্চ মঙ্গলবার একজন আইনজীবী দুই নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। ওই আইনজীবী মানিকগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। তিনি সুপ্রীমকোর্টের নিয়মকানুনও জানেন না। সবেমাত্র এ্যাডভোকেটশিপ লিখিত পরীৰা দিয়েছেন। ২৬ ফেব্রম্নয়ারি তিনি ঢাকা কলেজে লিখিত পরীৰা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত কাজে বার কাউন্সিলে এসেছিলেন। পুলিশ বার বার বলছে, এই গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। কষ্ট করে এক নম্বর গেট দিয়ে যান। কিন্তু উকিল সাহেবও নাছোড় বান্দা। তখন রাগ হয়ে দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে বলেন, আপনারা আইনের লোক হয়ে বেআইনী কাজ করছেন। অবশ্য ওই বাকবিত-ায় পুলিশেরই জয় হয়। জটলার পাশে আরও কিছু উকিল ও সাধারণ মানুষ আসার পর ওই উকিল বাধ্য হয় ১ নম্বর গেট দিয়ে যেতে।
১১টার দিকে ভেতরে গিয়ে দেখি সুপ্রীমকোর্টের বাগানে রং মিস্ত্রি গাছের গোড়া এবং আইল্যান্ডে চুনকাম করতে ব্যসত্ম। কেউ বা বাগানের গাছের মড়াকা-, আগাছা, পাতা কুড়িয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। বাগান চত্বরে প্রায় ১৫/১৬ জায়গায় সত্মূপাকারে আর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ধোঁয়ায় সুপ্রীমকোর্ট চত্বর প্রায় অন্ধকার অবস্থা। প্রশ্ন করলাম এখন কেন আগুন ধরিয়েছেন, রং মিস্ত্রিরা বলল, আগাছা পোড়ানের জন্যই করা হয়েছে। বিকালে আমাদের কাজ শেষ। তাই সকালে আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছি। পুড়তে ৩-৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
জনসাধারণদের চলাচলের জন্য আইল্যান্ডের পাশে রশি টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে কেউ যত্রতত্র চলাচল করতে না পারে। সকালে রশি টাঙ্গালেও রাতে কে বা কারা তা ছিঁড়ে ফেলছে। তিন নম্বর গেটে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। সেখানে কোন যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। যদিও আইনজীবীগণ প্রধান বিচারপতির নিকট এই রাসত্মাটি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন। এই গেটটি উন্মুক্ত হলে আইনজীবী থেকে শুরম্ন করে সাধারণ মানুষের আসা যাওয়া সহজ হতো।
সুপ্রীমকোর্ট এলাকায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ চললেও সুপ্রীমকোর্ট এবং আইনজীবী সমিতি ভবনের মাঝের রাসত্মায় বড় ধরনের একটি ম্যানহোল রয়েছে। এটির মুখ কয়েক মাস ধরেই উন্মুক্ত রয়েছে। যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যসত্মতম এই রাসত্মাটিতে বিচারপতি, আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশসহ সাধারণ জনগণ যাতায়াত করে থাকেন। কতর্ৃপৰ এমন দৃশ্য দেখার পরও আজ পর্যনত্ম ম্যানহোলের মুখে ঢাকনাটি লাগানে হয়নি। বিষয়টি সিনিয়র এক আইজীবীর দৃষ্টিগোচর করলে তিনি হেসে বলেন, জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন। আমি বললাম, আপনাদের কথায় কথায় মামলা। তখন উনি হেসে বললেন, মামলা না হলে আপনারা নিউজ পাবেন কিভাবে, মামলা হবে নিউজ হবে।
বিকাশ দত্ত
সম্ভাবনাময় ট্রেন
২৫ ফেব্রম্নয়ারি, বৃহস্পতিবার। সপরিবারে খুলনায় যাওয়ার সিদ্ধানত্ম আগে ভাগেই নিয়েছি। মায়ের মৃতু্যবার্ষিকী পালন করতে এবং ব্যক্তিগত কিছু কাজ সারতে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধানত্ম নিলাম। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে ট্রেন ছাড়বে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে। চিফ রিপোর্টার ওবায়েদ ভাইয়ের কাছ থেকে আগে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে দ্রম্নত রিপোর্ট জমা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় গিয়ে তৈরি হতেই এক সাংবাদিক বন্ধু তাঁর গাড়িটি পাঠিয়ে দিলেন আমাদের স্টেশনে পেঁৗছে দিতে। গাড়িটি পেয়ে অনেক সুবিধা হলো। বিকেলে আমার বাসা আগারগাঁও থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা ট্যাক্সিক্যাব পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যাই হোক নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে আমরা পেঁৗছে গেলাম স্টেশনে। একটু পরেই আমাদের কাঙ্ৰিত খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসটি এসে হাজির হলো। শোভন চেয়ারে আমরা পাঁচটি আসন নিয়েছি। ট্রেনটি স্টেশনে থামার পর উঠে আমাদের আসন গ্রহণ করলাম। আমার স্ত্রী ও ছেলে বাস জার্নিতে বেশ দুর্বল। কিন্তু ট্রেন জার্নি তাদের কাছে বেশ আরামদায়ক। নির্ধারিত সময়ে ট্রেনটি ছাড়ল খুলনার উদ্দেশে। নতুন এই ট্রেনটি বেশ ভাল। আগে একবার ট্রেনে করে খুলনা থেকে আমরা ঢাকায় এসেছিলাম। সেটি ছিল সুন্দরবন এক্সপ্রেস। কিন্তু তার তুলনায় চিত্রা এক্সপ্রেসটি অনেক উন্নত। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে পেঁৗছলাম। বিমানবন্দর থেকেও অনেক যাত্রী উঠল। বৃহস্পতিবার হওয়ায় ট্রেনে অনেক ভিড় দেখা গেল। মধ্য রাতে দেখা পেলাম ট্রেনের এক কর্মচারীকে। তার কাছে জানতে পারলাম ট্রেনটিতে রয়েছে মাত্র ছয়টি কম্পার্টমেন্ট। অথচ আসনের প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী ট্রেনে চেপে চলেছেন বিভিন্ন গনত্মব্যে। সে জানালো বৃহস্পতিবারে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে এমন ভিড়ই হয়ে থাকে। আবার শনিবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা দূরপালস্নার ট্রেনগুলোতেও এমন ভিড় হয়। সে জানলো ট্রেনে বগি বাড়ানো একানত্ম প্রয়োজন। এই মুহূর্তে কোন কারণে যদি তা সম্ভব না হয় অনত্মত সপ্তাহের বিশেষ এই দিনগুলোতে বগি বাড়াতে হবে। ট্রেন সার্ভিস দেখে মনে হলো আমাদের দেশে ট্রেন খুবই সম্ভাবনাময়। এর বিসত্মার ঘটানো অত্যাবশ্যক। দেশে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে একদিকে যাত্রী চলাচল সহজ হবে, তেমনি যানজট কমে আসবে। ট্রেনে আরমদায়ক এক জার্নিতে ভোর সোয়া পাঁচটায় আমরা খুলনায় এসে পেঁৗছলাম।
তপন বিশ্বাস
No comments