সংসদে ঝড়- খালেদার বক্তব্য রাষ্ট্রদোহিতার শামিল
মার্কিন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ
বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ শামিল
বলে মন্তব্য করেছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা।
এ জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। দেশের স্বার্থ ধ্বংসকারী এ আহ্বানের বিষয়টি দেশের জনগণই বিচার করবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
বৃহস্পতিবার
জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে
অনির্ধারিত এ আলোচনার শুরু করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল
করিম সেলিম।
এ সময় সভাপতির আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। পরে আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন খসরু, আব্দুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের বেবী মওদুদ, তারানা হালিম, অপু উকিল, নাজমা আখতার, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি প্রমুখ, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। প্রায় দুইঘণ্টা ব্যাপী এ আলোচনা চলে।
আলোচনার এক পর্যায়ে হুইপ আ স ম ফিরোজ সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে কোনো অসংসদীয় বক্তব্য থাকলে সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার জন্য ডেপুটি স্পিকারকে অনুরোধ করেন।
আলোচনার শুরুতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ওয়াশিংটন টাইমসে একটি প্রবন্ধ লিখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে শেখ সেলিম বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলেছেন। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে প্রবন্ধ লিখেছেন। পায়ের নিচে মাটি নেই বলেই তিনি অন্য দেশের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে।”
সেলিম বলেন, “খালেদা জিয়ার বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তিনি ওবামার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কে ওবামা? তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি দরকার হয়, তবে জনগণ দেবে। এই সংসদ দেবে। ওবামার ওখানে কি তত্ত্বাবধায়ক আছে?
যুদ্ধাপরাধের অপরাধে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবারের হরতালে মনিরামপুরে পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর দায় বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং জামায়াতকে নিতে হবে। খালেদা জিয়া ও জামায়াতের নির্দেশে পুলিশ হত্যা করা হয়েছে।”
পুলিশের বিরুদ্ধে শিবিরের হামলার নিন্দা জানিয়ে শেখ সেলিম আরও বলেন, “যুদ্ধপরাধীদের বাঁচাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ককটেল ফুটিয়েছে। যেভাবে আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ দমন করেছে, সেভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার সময় এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বিএনপির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের বলবো, খালেদা, তারেক, নিজামীর অপকর্মের দায় আপনারা নেবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ ঠেকাতে পারবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, “তিনি জিয়াউর রহমান, সাত্তার, এরশাদকে ডুবিয়েছেন। এখন খালেদা জিয়াকে ডোবাচ্ছেন”।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “খালেদা জিয়ার নিবন্ধের জন্য তীব্র ধিক্কার জানাই। তিনি সংসদে আসেননি। জনগণ তাকে সংসদে আসার জন্য ভোট দিয়েছেন। জনগণ দেশের মালিক। তিনি মালিকদের কাছে কথা না বলে বিদেশে নালিশ করেছেন। বাংলার জনগণ আগামী নির্বাচনে এর বিচার করবে।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “তিনি স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আমি মনে করি, খালেদা জিয়ার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কোনো সংগ্রাম নেই। এ বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ, চিন্তা বা জ্ঞান রাখার চেষ্টা করেননি।”
তিনি আরও বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা তো দূরের কথা, কোনো ব্যক্তি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন এটা আমি চিন্তাই করতে পারি না। গণতন্ত্রের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”
“তিনি (খালেদা) এক পরিবারের শাসনের কথা বলেছেন। বাংলাদেশে যদি কেউ একজন এক পরিবারের শাসন চায় তিনি (খালেদা) এ প্রবন্ধের লেখক। এ প্রবন্ধের সব কথা দেশের জন্য অসম্মানজনক। দেশ এগিয়ে যাবেই। যতই খালেদা জিয়া পেছনে টানতে চান না কেন” যোগ করেন মুহিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা নেওয়ার জন্য আমরা যখন কাজ করছি, তখন খালেদা জিয়া জিএসপি সুবিধা বাতিলের কথা বলেছেন। এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক কাজ আর হতে পারে না। গার্মেন্টস সেক্টরে ধ্বংসের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। এজন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কারো দয়ামায়ায় হয়নি। এটা সার্বভৌম দেশ। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। এর জন্য তাকে জনগণকে মোকাবেলা করতে হবে। জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র জনগণ রক্ষা করবে। বিদেশি শক্তির দরকার নেই।”
আওয়ামী লীগ পরিবারতন্ত্র চালু করেছেন খালেদার এমন অভিযোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তিনি (খালেদা) কোন অধিকারে রাজনীতি করেন? আপনি তো জিয়াউর রহমানের পরিবারের ভিত্তিতে রাজনীতি করেন। যে কোনো পরিবারে যদি উপযুক্ত ব্যক্তি থাকেন, তবে দেশ পরিচালনায় আসতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। যাদের কাছে (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছেন, তাদের দেশেও একই পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি রাজনীতিতে এসেছেন।”
তিনি বলেন, “হরতালের নামে যে আতঙ্ক-নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, এটা আর যাই হোক গণতন্ত্র নয়। সাংবিধানিক শাসন ধ্বংস করার জন্য মাঠে জামায়াত মাঠে নেমেছ। এর পক্ষে সমর্থন দিয়ে খালেদা জিয়া আবারও প্রমাণ করেছেন তিনি আইনের শাসনের পক্ষে নন।”
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার প্রবন্ধকে কটাক্ষ করে বলেন, “খালেদা জিয়া ইংরেজি ভালোই জানেন। বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য ইংরেজিতে বক্তব্য পাঠিয়েছেন।”
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, “আপনি চুপ থাকেন। চুপ থাকলে মানুষ আপনাকে বুদ্ধিমতী ভাববে। বেশি কথা বলে নিজের ও দলের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করবেন না।”
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেন, “খালেদা জিয়ার বক্তব্য দূরভিসন্ধিমূলক। এ জন্য তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে তিনি তার মনের কথাই বলেছেন। বিরোধী দলকে দমনের জন্য নাকি যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। গণতন্ত্র রক্ষায় তিনি বিদেশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কিন্তু আমাদের কথা হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিদেশের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “আমার সংবিধান কী হবে সে বিষয়ে বন্ধু রাষ্ট্র পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু সেটা নির্ধারণ করবে জনগণ। সে অধিকার অন্য কারো না। তিনি (খালেদা) বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সংবিধান বদলে দিতে বলেছেন। কীভাবে তিনি এটি পারেন?”
“তিনি পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের লোকজনকে অন্যদেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বলেছেন। কী করে তিনি এটা বলতে পারেন যখন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন?”
দীপু মনি বলেন, “যিনি এদেশে দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি জনগণকে পাশ কাটিয়ে তাদের তোয়াক্কা না করে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চাওয়ায় আমি রাজনীতিদ হিসেবে লজ্জাবোধ করছি। এই ন্যাক্কারজনক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আমি তাকে আহ্বান জানাই। এই ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য আগামী নির্বাচনে জনগণ এই বিচার করবে।”
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষপর্যায়ে। খালেদা জিয়া তাদের বাঁচাতেই এ নিবন্ধ লিখেছেন।”
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “খালেদা জিয়াকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তার প্রবন্ধের মাধ্যমে জাতি জানতে পেরেছে তিনি কী চান। সংসদ তার বিরুদ্ধে সংসদীয় পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সংসদ থেকে নিন্দা প্রস্তাব আনা হোক।”
জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, “উনি (খালেদা) এমন কী মহারথী হয়েছেন যে, যা ইচ্ছা তাই-ই বলবেন। উনি মহারানী ভিক্টোরিয়ার মতো আচরণ করছেন। উনি সংসদ মানেন না, আদালত মানেন না। এগুলো অনেক সহ্য করা হয়েছে। সহ্য করা হয়েছে বলেই উনি ঔদ্ধত্য আচরণ করেছেন।”
বাদল বলেন, “উনি (খালেদা) যা করছেন, তা যদি অন্য কোনো সাধারণ নাগরিক করতেন তবে তার বিরুদ্ধে এখনই ৩৩৩টি মামলা হতো। কেন আমরা কিছু করছি না? উনার লেখাতে কিছু যায় আসে না। বেশি কথা বললে উনাকে মর্যাদা দেওয়া হয়।”
এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ বলেন, “খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে লিখতে গেলেন কেন? বাংলাদেশে কি কোনো পত্রিকা ছিল না। তিনি তো প্রিয় পত্রিকা ডেইলি স্টারে লিখতে পারতেন। তিনি মনে করেন, তার কথায় আমেরিকা ৭১ সালের মতো সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে দেবে?”
আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “আমরা জানতে চাই কে এই বক্তব্য লিখে দিয়েছে। এই বক্তব্যে জনগণকে অবমাননা করা হয়েছে।”
ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি বলেন, “যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে তখন বিরোধী দলীয় নেতা ওয়াশিংটন টাইমসে যে ন্যাক্কারজনক প্রবন্ধ লিখেছেন, তার জন্য আমি তাকে ধিক্কার জানাই। তিনি যতই অন্য দেশকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেন না কেন আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো।”
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, “কথায় বলে পাগলে কিনা বলে আর ছাগলে কিনা খায়। খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন।”
তার বক্তব্যের পর সরকার দলীয় হুইপ আ স ম ফিরোজ ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এখানে অনেক সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। অনেক কথা আছে, যেগুলো অসংসদীয়। মহান সংসদে যেগুলো বলা ঠিক নয়। আপনি চাইলে এগুলো এক্সপাঞ্জ করতে পারেন।”
এ সময় সভাপতির আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। পরে আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন খসরু, আব্দুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের বেবী মওদুদ, তারানা হালিম, অপু উকিল, নাজমা আখতার, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি প্রমুখ, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। প্রায় দুইঘণ্টা ব্যাপী এ আলোচনা চলে।
আলোচনার এক পর্যায়ে হুইপ আ স ম ফিরোজ সংসদ সদস্যদের বক্তব্যে কোনো অসংসদীয় বক্তব্য থাকলে সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার জন্য ডেপুটি স্পিকারকে অনুরোধ করেন।
আলোচনার শুরুতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার নস্যাৎ করতে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি ওয়াশিংটন টাইমসে একটি প্রবন্ধ লিখে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো উল্লেখ করে শেখ সেলিম বলেন, “সরকারের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলেছেন। বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে প্রবন্ধ লিখেছেন। পায়ের নিচে মাটি নেই বলেই তিনি অন্য দেশের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে।”
সেলিম বলেন, “খালেদা জিয়ার বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তিনি ওবামার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কে ওবামা? তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি দরকার হয়, তবে জনগণ দেবে। এই সংসদ দেবে। ওবামার ওখানে কি তত্ত্বাবধায়ক আছে?
যুদ্ধাপরাধের অপরাধে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বৃহস্পতিবারের হরতালে মনিরামপুরে পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর দায় বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং জামায়াতকে নিতে হবে। খালেদা জিয়া ও জামায়াতের নির্দেশে পুলিশ হত্যা করা হয়েছে।”
পুলিশের বিরুদ্ধে শিবিরের হামলার নিন্দা জানিয়ে শেখ সেলিম আরও বলেন, “যুদ্ধপরাধীদের বাঁচাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ককটেল ফুটিয়েছে। যেভাবে আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ দমন করেছে, সেভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার সময় এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বিএনপির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের বলবো, খালেদা, তারেক, নিজামীর অপকর্মের দায় আপনারা নেবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ ঠেকাতে পারবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, “তিনি জিয়াউর রহমান, সাত্তার, এরশাদকে ডুবিয়েছেন। এখন খালেদা জিয়াকে ডোবাচ্ছেন”।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “খালেদা জিয়ার নিবন্ধের জন্য তীব্র ধিক্কার জানাই। তিনি সংসদে আসেননি। জনগণ তাকে সংসদে আসার জন্য ভোট দিয়েছেন। জনগণ দেশের মালিক। তিনি মালিকদের কাছে কথা না বলে বিদেশে নালিশ করেছেন। বাংলার জনগণ আগামী নির্বাচনে এর বিচার করবে।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “তিনি স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আমি মনে করি, খালেদা জিয়ার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কোনো সংগ্রাম নেই। এ বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ, চিন্তা বা জ্ঞান রাখার চেষ্টা করেননি।”
তিনি আরও বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা তো দূরের কথা, কোনো ব্যক্তি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন এটা আমি চিন্তাই করতে পারি না। গণতন্ত্রের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”
“তিনি (খালেদা) এক পরিবারের শাসনের কথা বলেছেন। বাংলাদেশে যদি কেউ একজন এক পরিবারের শাসন চায় তিনি (খালেদা) এ প্রবন্ধের লেখক। এ প্রবন্ধের সব কথা দেশের জন্য অসম্মানজনক। দেশ এগিয়ে যাবেই। যতই খালেদা জিয়া পেছনে টানতে চান না কেন” যোগ করেন মুহিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা নেওয়ার জন্য আমরা যখন কাজ করছি, তখন খালেদা জিয়া জিএসপি সুবিধা বাতিলের কথা বলেছেন। এর চেয়ে ন্যাক্কারজনক কাজ আর হতে পারে না। গার্মেন্টস সেক্টরে ধ্বংসের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। এজন্য তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কারো দয়ামায়ায় হয়নি। এটা সার্বভৌম দেশ। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। এর জন্য তাকে জনগণকে মোকাবেলা করতে হবে। জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র জনগণ রক্ষা করবে। বিদেশি শক্তির দরকার নেই।”
আওয়ামী লীগ পরিবারতন্ত্র চালু করেছেন খালেদার এমন অভিযোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তিনি (খালেদা) কোন অধিকারে রাজনীতি করেন? আপনি তো জিয়াউর রহমানের পরিবারের ভিত্তিতে রাজনীতি করেন। যে কোনো পরিবারে যদি উপযুক্ত ব্যক্তি থাকেন, তবে দেশ পরিচালনায় আসতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। যাদের কাছে (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছেন, তাদের দেশেও একই পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তি রাজনীতিতে এসেছেন।”
তিনি বলেন, “হরতালের নামে যে আতঙ্ক-নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, এটা আর যাই হোক গণতন্ত্র নয়। সাংবিধানিক শাসন ধ্বংস করার জন্য মাঠে জামায়াত মাঠে নেমেছ। এর পক্ষে সমর্থন দিয়ে খালেদা জিয়া আবারও প্রমাণ করেছেন তিনি আইনের শাসনের পক্ষে নন।”
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার প্রবন্ধকে কটাক্ষ করে বলেন, “খালেদা জিয়া ইংরেজি ভালোই জানেন। বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য ইংরেজিতে বক্তব্য পাঠিয়েছেন।”
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, “আপনি চুপ থাকেন। চুপ থাকলে মানুষ আপনাকে বুদ্ধিমতী ভাববে। বেশি কথা বলে নিজের ও দলের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করবেন না।”
ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেন, “খালেদা জিয়ার বক্তব্য দূরভিসন্ধিমূলক। এ জন্য তাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে তিনি তার মনের কথাই বলেছেন। বিরোধী দলকে দমনের জন্য নাকি যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। গণতন্ত্র রক্ষায় তিনি বিদেশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কিন্তু আমাদের কথা হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিদেশের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “আমার সংবিধান কী হবে সে বিষয়ে বন্ধু রাষ্ট্র পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু সেটা নির্ধারণ করবে জনগণ। সে অধিকার অন্য কারো না। তিনি (খালেদা) বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সংবিধান বদলে দিতে বলেছেন। কীভাবে তিনি এটি পারেন?”
“তিনি পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের লোকজনকে অন্যদেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বলেছেন। কী করে তিনি এটা বলতে পারেন যখন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন?”
দীপু মনি বলেন, “যিনি এদেশে দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি জনগণকে পাশ কাটিয়ে তাদের তোয়াক্কা না করে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ চাওয়ায় আমি রাজনীতিদ হিসেবে লজ্জাবোধ করছি। এই ন্যাক্কারজনক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আমি তাকে আহ্বান জানাই। এই ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য আগামী নির্বাচনে জনগণ এই বিচার করবে।”
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষপর্যায়ে। খালেদা জিয়া তাদের বাঁচাতেই এ নিবন্ধ লিখেছেন।”
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “খালেদা জিয়াকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তার প্রবন্ধের মাধ্যমে জাতি জানতে পেরেছে তিনি কী চান। সংসদ তার বিরুদ্ধে সংসদীয় পদ্ধতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সংসদ থেকে নিন্দা প্রস্তাব আনা হোক।”
জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, “উনি (খালেদা) এমন কী মহারথী হয়েছেন যে, যা ইচ্ছা তাই-ই বলবেন। উনি মহারানী ভিক্টোরিয়ার মতো আচরণ করছেন। উনি সংসদ মানেন না, আদালত মানেন না। এগুলো অনেক সহ্য করা হয়েছে। সহ্য করা হয়েছে বলেই উনি ঔদ্ধত্য আচরণ করেছেন।”
বাদল বলেন, “উনি (খালেদা) যা করছেন, তা যদি অন্য কোনো সাধারণ নাগরিক করতেন তবে তার বিরুদ্ধে এখনই ৩৩৩টি মামলা হতো। কেন আমরা কিছু করছি না? উনার লেখাতে কিছু যায় আসে না। বেশি কথা বললে উনাকে মর্যাদা দেওয়া হয়।”
এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ বলেন, “খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে লিখতে গেলেন কেন? বাংলাদেশে কি কোনো পত্রিকা ছিল না। তিনি তো প্রিয় পত্রিকা ডেইলি স্টারে লিখতে পারতেন। তিনি মনে করেন, তার কথায় আমেরিকা ৭১ সালের মতো সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে দেবে?”
আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “আমরা জানতে চাই কে এই বক্তব্য লিখে দিয়েছে। এই বক্তব্যে জনগণকে অবমাননা করা হয়েছে।”
ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি বলেন, “যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে তখন বিরোধী দলীয় নেতা ওয়াশিংটন টাইমসে যে ন্যাক্কারজনক প্রবন্ধ লিখেছেন, তার জন্য আমি তাকে ধিক্কার জানাই। তিনি যতই অন্য দেশকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেন না কেন আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবো।”
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, “কথায় বলে পাগলে কিনা বলে আর ছাগলে কিনা খায়। খালেদা জিয়া পাগল হয়ে গেছেন।”
তার বক্তব্যের পর সরকার দলীয় হুইপ আ স ম ফিরোজ ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “এখানে অনেক সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। অনেক কথা আছে, যেগুলো অসংসদীয়। মহান সংসদে যেগুলো বলা ঠিক নয়। আপনি চাইলে এগুলো এক্সপাঞ্জ করতে পারেন।”
No comments