পিঁয়াজে খাতুনগঞ্জ সয়লাব, আকস্মিক দরপতন by মহসিন চৌধুরী
চট্টগ্রাম অফিস আকস্মিকভাবে পিঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে হঠাৎ করে পিঁয়াজে সয়লাব হয়ে পড়ায় একদিনেই শনিবার প্রতি কেজিতে দরপতন ঘটেছে ৫/৬ টাকা।
আড়তদাররা জানিয়েছেন, পিঁয়াজের দরপতন ঘটেছে। আগামী কয়েকদিনে পিঁয়াজের দাম আরও নিম্নমুখী হতে পারে। দেশীয় পিঁয়াজের সরবরাহ দুয়েকদিনের মধ্যে আসতে শুরম্ন করলে ভারতীয় পিঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস পাবে। খাতুনগঞ্জের পিঁয়াজ আড়তদাররা জানান, চট্টগ্রামে দৈনিক গড়ে ১৫ ট্রাক পিঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। প্রায় দেড় শ' টন পিঁয়াজের সিংহভাগ চাহিদাই পূরণ হয় ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির মাধ্যমে। গত কিছুদিন ধরে ভারতীয় পিঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চীন, পাকিসত্মান এবং তুরস্ক থেকে বিশেষ কন্টেনার যোগে আমদানি হয়ে এসেছিল। এতে পিঁয়াজের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল অবস্থা ছিল। তবে দাম ছিল অস্বাভাবিক। ৩৬ থেকে ৪৫ টাকায় প্রতি কেজি পিঁয়াজের দাম উঠানামা করেছে দীর্ঘদিন। গত সপ্তাহ থেকে পিঁয়াজের বাজার কিছুটা নমনীয় হয়। কুষ্টিয়া এবং পাবনা এলাকায় উৎপাদিত পিঁয়াজের কিছু চালান স্থানীয় বাজারে আসতে শুরম্ন করলে ভারতীয় পিঁয়াজের দাম কমতে থাকে। বৃহস্পতিবার পর্যনত্ম খাতুনগঞ্জের বাজারে পিঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। শনিবার তা আকস্মিকভাবে নেমে এসে দাঁড়ায় ২৩ থেকে ২৬ টাকায়। বড় সাইজের পিঁয়াজের দাম ২৬ টাকার মধ্যে এবং ছোট সাইজের পিঁয়াজের দাম ২৩ টাকায় পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়।একদিনের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম নিম্নমুখী হয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চীন, পাকিসত্মান এবং তুরস্কের কোন পিঁয়াজ বাজারে নেই। একমাত্র ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তারপরও দাম নিম্নমুখী। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে স্থানীয় পিঁয়াজের উৎপাদন শুরম্ন হওয়ায় বাজারে দেশী পিঁয়াজের সরবরাহ আসছে। এছাড়া তীব্র শীতের কারণে শীতকালীন সবজি ও পিঁয়াজের বিকল্প ধনিয়া এবং পিঁয়াজ পাতার সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে কাঁচাবাজারে পিঁয়াজের চাহিদা কিছুটা কম। কিন্তু সীমানত্ম দিয়ে পিঁয়াজের আমদানি হচ্ছে অস্বাভাবিক। গত সপ্তাহে গড়ে দৈনিক ১৫ ট্রাক পিঁয়াজের আমদানি হয়েছিল। কিন্তু গত শনিবার চট্টগ্রামের বাজারেই এসেছে প্রায় ৪০ ট্রাক পিঁয়াজ। ঢাকার বাজারে ভারতীয় পিঁয়াজের চাহিদা কমে যাওযায় বহুসংখ্যক ঢাকামুখী পিঁয়াজের গাড়ি খাতুনগঞ্জে চলে এসেছে। ঢাকার বাজারে মূলত দেশীয় পিঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় পিঁয়াজের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ঢাকায় দৈনিক ৪০ থেকে ৬০ ট্রাক পিঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখানে সরবরাহ হয়েছে মাত্র ১৫/২০ ট্রাক। বাকি পিঁয়াজ ভর্তি ট্রাক চট্টগ্রামমুখী হয়ে পড়ায় চট্টগ্রামের বাজার পিঁয়াজে সয়লাব হয়ে পড়েছে। এছাড়া আড়তদাররা জানিয়েছেন, ভারতীয় সীমানত্ম নিকটবতর্ী মেহেরপুরে পিঁয়াজের উৎপাদনও শীঘ্রই শুরম্ন হচ্ছে। এ বছর তীব্র শীতে পিঁয়াজ উৎপাদনের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। মওসুমের শুরম্নতে ভারতের মধ্য প্রদেশে বৃষ্টির কারণে এবার পিঁয়াজ উৎপাদন বিঘি্নত হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে পরিবেশ অনুকূলে চলে আসে। কিন্তু প্রথম দিকে পিঁয়াজের বাজারে যে উর্ধমুখী ছিল তা আর শেষ পর্যনত্ম কমেনি।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পিঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণ নেমে যেতে পারে। বর্তমানে সরবরাহ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দুয়েকদিনের মধ্যে পিঁয়াজের দাম আরও ধস নামতে পারে। অন্যান্য বছর এ সময়ে পিঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ টাকার নিচে ছিল। কিন্তু এ বছর এখনও ২০ টাকার উপরে। তারা আশা করছেন, ফেব্রম্নয়ারি-মার্চের পিঁয়াজের মূল উৎপাদন শুরম্ন হলে এ বছর পিঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে। পিঁয়াজের পাশাপাশি রসুন এবং আদার দামও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে পিঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় এর দাম ব্যবসায়ীরা সহজে ধরে রাখতে পারে না।
No comments