চরাচর-ধানসিঁড়ি- জীবনানন্দ অঙ্গন by রফিকুল ইসলাম
বরিশালকে বলা হয় জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের শহর। এ শহরের আধা গ্রামীণ-আধা শহুরে পরিবেশে কবির জন্ম, শৈশব ও যৌবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে। মূলত ১৯৪৬ সালে ব্রজমোহন কলেজ (বিএম) থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতা যাওয়ার আগ পর্যন্ত জীবনানন্দ দাশের স্থায়ী ঠিকানা ছিল এই শহর।
তাঁর চিঠিপত্র আসত 'জীবনানন্দ দাশ, সর্বানন্দ ভবন, বরিশাল' ঠিকানায়।
বগুড়া সড়ক ছিল অ্যাংলিকান চার্চ অক্সফোর্ড মিশনের গা ঘেঁষে শীতলাখোলা হয়ে ব্রজমোহন কলেজ পর্যন্ত। বগুড়া সড়ক (বর্তমানে কবি জীবনানন্দ দাশ সরণি) নামে পরিচিত সড়কটি যেখানে গোরস্তান সড়ক ও শীতলাখোলার মোহনায় পরিণত হয়েছে, সেখানেই ছিল জীবনানন্দ দাশের বাড়ি 'সর্বানন্দ ভবন'। সর্বানন্দ দাশ ছিলেন জীবনানন্দ দাশের ঠাকুরদা। তিনি বরিশাল কালেক্টরেটের কর্মচারী ছিলেন।
তবে সর্বানন্দ দাশ ওই বাড়ি নির্মাণ করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, দাশ পরিবার ওই বাড়িতে ভাড়া থাকত, এমনকি জীবনানন্দ দাশের জন্মও ওই বাড়িতে নয়। অশ্বিনীকুমার দত্তের বাড়ির উল্টো দিকের কোনো এক বাড়িতে জীবনানন্দ দাশের জন্ম, তবে তা চিহ্নিত করা যায়নি। কারণ পুরো এলাকার ভূগোলই পাল্টে গেছে।
বাড়ির যে অংশে এখন গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, সেই অংশে ছিল সর্বানন্দ ভবনের একটি সমাধিক্ষেত্র। সমাধিক্ষেত্রটি অত্যন্ত সুন্দর ছিল। লম্বা কংক্রিটের বেদির ওপর মৃত ব্যক্তিদের জীবাশ্ম এনে ছোট ছোট মঠ তৈরি করা হয়েছিল। চারদিকে ছিল সুশোভিত ফুলের বাগান। জীবনানন্দ দাশ যতক্ষণ বাড়িতে থাকতেন, একটি বড় সময় তিনি এখানে কাটাতেন।
এ সমাধিক্ষেত্রের পেছনে ছিল কবির ঘর। ভূমি থেকে আড়াই-তিন ফুট উঁচু দেয়াল, তার ওপর মুলিবাঁশের বেড়া। গোলপাতায় ছাওয়া ঘরের চাল। এখানে একটি শোবার ঘর, বাথরুম, সামনে বারান্দা ও পূর্ব দিকে ছোট আরেকটি বারান্দা ছিল। বড় বারান্দায় কবি সকাল-বিকেল পায়চারি করতেন। জীবনানন্দ দাশ ১৯৪৬ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএম কলেজের অধ্যাপনা থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতা যান। এরপর আর তিনি এ দেশে আসেননি।
এদিকে দেশভাগের পর কবি-পরিবারও চলে যায় কলকাতায়। ১৯৫৫ সালে কবি-পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বানন্দ ভবন সংরক্ষণের আইনসিদ্ধ অনুমতি দেওয়া হয়।
জাতীয় কবিতা পরিষদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ নানা সময় কবির জন্মভিটায় স্মারক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন কবি-পরিবার যে সর্বানন্দ ভবনে ১৯৫০ পর্যন্ত থেকেছিল, তারই একাংশে কবি জীবনানন্দ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই সঙ্গে বগুড়া সড়ককে জীবনানন্দ সরণি নামকরণ করেন। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৪.৮৬ শতাংশ জমিতে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে কবির প্রতিকৃতির ম্যুরাল তৈরি করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি 'জীবননান্দ অঙ্গন' উদ্বোধন করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম
বগুড়া সড়ক ছিল অ্যাংলিকান চার্চ অক্সফোর্ড মিশনের গা ঘেঁষে শীতলাখোলা হয়ে ব্রজমোহন কলেজ পর্যন্ত। বগুড়া সড়ক (বর্তমানে কবি জীবনানন্দ দাশ সরণি) নামে পরিচিত সড়কটি যেখানে গোরস্তান সড়ক ও শীতলাখোলার মোহনায় পরিণত হয়েছে, সেখানেই ছিল জীবনানন্দ দাশের বাড়ি 'সর্বানন্দ ভবন'। সর্বানন্দ দাশ ছিলেন জীবনানন্দ দাশের ঠাকুরদা। তিনি বরিশাল কালেক্টরেটের কর্মচারী ছিলেন।
তবে সর্বানন্দ দাশ ওই বাড়ি নির্মাণ করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, দাশ পরিবার ওই বাড়িতে ভাড়া থাকত, এমনকি জীবনানন্দ দাশের জন্মও ওই বাড়িতে নয়। অশ্বিনীকুমার দত্তের বাড়ির উল্টো দিকের কোনো এক বাড়িতে জীবনানন্দ দাশের জন্ম, তবে তা চিহ্নিত করা যায়নি। কারণ পুরো এলাকার ভূগোলই পাল্টে গেছে।
বাড়ির যে অংশে এখন গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে, সেই অংশে ছিল সর্বানন্দ ভবনের একটি সমাধিক্ষেত্র। সমাধিক্ষেত্রটি অত্যন্ত সুন্দর ছিল। লম্বা কংক্রিটের বেদির ওপর মৃত ব্যক্তিদের জীবাশ্ম এনে ছোট ছোট মঠ তৈরি করা হয়েছিল। চারদিকে ছিল সুশোভিত ফুলের বাগান। জীবনানন্দ দাশ যতক্ষণ বাড়িতে থাকতেন, একটি বড় সময় তিনি এখানে কাটাতেন।
এ সমাধিক্ষেত্রের পেছনে ছিল কবির ঘর। ভূমি থেকে আড়াই-তিন ফুট উঁচু দেয়াল, তার ওপর মুলিবাঁশের বেড়া। গোলপাতায় ছাওয়া ঘরের চাল। এখানে একটি শোবার ঘর, বাথরুম, সামনে বারান্দা ও পূর্ব দিকে ছোট আরেকটি বারান্দা ছিল। বড় বারান্দায় কবি সকাল-বিকেল পায়চারি করতেন। জীবনানন্দ দাশ ১৯৪৬ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএম কলেজের অধ্যাপনা থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতা যান। এরপর আর তিনি এ দেশে আসেননি।
এদিকে দেশভাগের পর কবি-পরিবারও চলে যায় কলকাতায়। ১৯৫৫ সালে কবি-পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বানন্দ ভবন সংরক্ষণের আইনসিদ্ধ অনুমতি দেওয়া হয়।
জাতীয় কবিতা পরিষদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ নানা সময় কবির জন্মভিটায় স্মারক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন কবি-পরিবার যে সর্বানন্দ ভবনে ১৯৫০ পর্যন্ত থেকেছিল, তারই একাংশে কবি জীবনানন্দ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই সঙ্গে বগুড়া সড়ককে জীবনানন্দ সরণি নামকরণ করেন। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৪.৮৬ শতাংশ জমিতে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে কবির প্রতিকৃতির ম্যুরাল তৈরি করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি 'জীবননান্দ অঙ্গন' উদ্বোধন করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম
No comments