চাতাল ও গুদামে লাখ লাখ টন ধান চাল, তবুও মূল্য বৃদ্ধি- প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরম্নরী by সাজেদ রহমান

 যশোর অফিস চালের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে মজুদদাররা যাতে অশুভ তৎপরতা শুরম্ন না করতে পারে, সেজন্য সরকারকে এখন থেকেই সর্তক পদপে গ্রহণ করা দরকার।
কেন এই মূল্য বৃদ্ধি? যদিও দেশের বিভিন্ন চাতাল এবং গুদামে লাখ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে সরকারী খাদ্য গুদাম। এসব অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরম্নরী। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এ মতামত ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীসহ নানা পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশে অতীতকাল থেকেই বছরের দু'পর্বে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়। এর একটি হচ্ছে কার্তিক মাস, যা আমাদের দেশে 'মরা কার্তিক' বলে পরিচিত। অন্য পর্বটি বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যনত্ম প্রলম্বিত। বস্তুত এই দু'টি কাল ফসল উৎপাদনের মধ্যবর্তী সময়। আউশ এবং আমন ফসল উৎপাদনের মধ্যবর্তী সময়ে গাঁয়ের প্রানত্মিক চাষীদের ঘরে এক সময় খাবার থাকত না। তে মজুররাও থাকতেন কর্মহীন। এ কারণে কার্তিক মাসে খাদ্যের তীব্র অভাব দেখা যেত। গত দু'তিন দশকে ক্রমান্বয়ে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধান চাষ, সেচ ব্যবস্থার সমপ্রসারণ এবং বোরো ধানের উৎপাদন উলেস্নখযোগ্য একটি স্থান দখল করায় এখন বাংলাদেশে 'মরা কার্তিকের' বিভীষিকাময় দিনগুলো পেছনে ফেলে এসেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিরে পেছনে দেশীয় মজুদদারদের অশুভ তৎপরতার সাথে যুক্ত হয়েছিল আনত্মর্জাতিক চক্রানত্মের কালো থাবা। তাছাড়া সে সময় এখনকার মতো অগ্রসর চাষাবাদ ব্যবস্থাও ছিল না।
বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। অতীতে আমন ও আউশ খাদ্যশস্যের মধ্যে প্রধান স্থান দখল করে নিয়েছিল। কৃষি অধিদফতর থেকে পাওয়া হিসাবে দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় আড়াই কোটি মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। কয়েক দিন আগে রোপা এবং বোনা আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে এবার আমন ধানের ফলন খারাপ হবে মনে করা হলেও শেষ পর্যনত্ম দেখা গেছে, আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কারণ বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে তি হয়েছে বোনা আমনের। রোপা আমনের েেত চাষীরা সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিয়েছে। আর দেশে বোনা আমনের চেয়ে রোপা আমনের চাষ বেশি হয়। তাই ফলনও ভাল হয়েছে। এরপরও বাজারে এমন ধরনের একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা চলছে যে, দেশে এবার আমন ফসলের উৎপাদন কম, তাই মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এই ধারণা খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে অনেকখানি কাজ করেছে।
বর্তমানে যে কোন ব্যবসায়ী যার আমদানি লাইসেন্স রয়েছে তিনিও খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারেন। ফলে দেশে যে পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি রয়েছে তা মোকাবেলায় কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য আমদানি শুরম্ন করেছে। যশোরের নোয়াপাড়ার বিভিন্ন গুদামে আমদানির পর ৬ লাখ মেট্রিক টন গম মজুদ রয়েছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরও গম আমদানির। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরেও কয়েক লাখ মেট্রিক টন গম মজুদ রয়েছে। চাল এবং ধান মজুদ রয়েছে দেশের অন্যতম চালের চাতাল ও আড়ত কুষ্টিয়ার খাজানগরে।
বিগত বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তাই আমনের ফলন একটু কম হলেও সমস্যা থাকার কথা নয়। কারণ বোরো ধান এখনও মজুদ রয়েছে বিভিন্ন গুদামে এবং আড়তে। আর সমস্যাটি এখানেই। বস্তুত, বোরো ধান কাটার পর ক্রেতা না থাকায় দাম এতটাই নিম্নগামী হয়েছিল যে এক দুই মাস আগ পর্যনত্মও যে দামে চাষীরা ধান বিক্রি করেছিলেন, তাতে উৎপাদন খরচও হাতে আসেনি তাদের। এখন প্রানত্মিক ও মাঝারি চাষীদের বিক্রি করার মতো ধান না থাকায় যখনই আমন ফসল তিগ্রসত্ম হয়েছে এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তখনই বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটানোর প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ বাজারে কোথাও খাদ্যশস্যের নূ্যনতম ঘাটতি নেই। যারা ধান চাল মজুদ রেখেছে, তাদের অনেকেই যে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন বাজার পরিস্থিতি দেখে তা বোঝা যায়।
এখন গণতান্ত্রিক সরকার মতায়। তাই সকলে আশা করেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে না। তা সত্ত্বেও সরকারী তরফে খাদ্য উৎপাদন, ঘাটতি এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যবেণ করে ব্যবস্থা নেয়া প্রায়াজন। এই মুহূর্তে খাদ্যশস্যের যা দাম, তা চাষীদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু ট্রাজেডি হলো এই যে, এতে বিত্তবান কিছু চাষী ছাড়া অধিকাংশ চাষীই লাভবান হবেন না। আর লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরা। এপ্রিলে বোরো ওঠার পূর্ব পর্যনত্ম এই ক্রানত্মিকালে যদি খাদ্যশস্যের বর্তমান দাম স্থিতি বজায় রাখা যায়, তবে তা সাধারণ মানুষের সহনীয় মাত্রার মধ্যেই থাকবে বলে অনেকের ধারণা। তারপরও অনেকে মনে করেন সরকারকে এখনই খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা উচিত, না হলে মজুদদাররা চালের মূল্য বৃদ্ধি করে চলবে।

No comments

Powered by Blogger.