সেবাগকে লজ্জা উপহার টাইগারদের! by আরিফুর রহমান বাবু
চট্টগ্রাম থেকে খুন কিংবা শাসত্মিযোগ্য অপরাধ করেননি। কিন্তু একটা টেস্ট খেলিয়ে দলের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পাশাপাশি শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে কটূক্তি করে বিরেন্দর সেবাগ আসামির কাঠগড়ায়।
তাকে জেরা করতে প্রস্তুত ছিল ভারত-বাংলাদেশ প্রচার মাধ্যম। কিন্তু সেবাগ নিশ্চুপ। রবিবার প্রথম দিনশেষে কোন কথা নেই। খেলা শেষের মিডিয়া সেশনেও আসেননি। কি করে আসবেন? কোন্ মুখে মিডিয়ার সামনে দাঁড়াবেন? কিইবা বলবেন? যে বাংলাদেশকে পাত্তাই দেননি, অতিসাধারণ এক দল বলেছিলেন। যে দল কিছুতেই ভারতের বর্তমান দলটিকে হারাতে পারবে না বলে কটা করেছিলেন। যে দলের বোলিং সামর্থ্য নিহায়ত দুর্বল ও কমজোরি, যারা কোনভাবেই ভারতকে এক ম্যাচে দুইবার অলআউট করতে পারবে না_ এমন সদম্ভ উক্তি করেছিলেন, এখন সেই অতিসাধারণ দলের কমজোরি বোলিংয়ের মুখেই তার দলের প্রথম দিনই অলআউট হবার উপক্রম। বাঁহাতি ওপেনার ইমরম্নল কায়েস, অভিষেক হওয়া সফিউল আর আইসিএল থেকে আবার ফেরা শাহরিয়ার নাফীস বাতাসে ভেসে ওঠা ক্যাচ ধরতে পারলে উপক্রম নয়, সত্যি অলআউটই হয়ে যেত ভারত। টাইগার ক্যাপ্টেন শাকিব আল হাসান রবিবার প্রথম দিনের খেলাশেষে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ক্যাচগুলো ধরতে পারলে আমরা প্রথম দিনই ভারতকে অলআউট করে দিতাম। মোটেই সেবাগমার্কা সদম্ভ উক্তি নয়, সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্ট সিরিজ শুরম্নর প্রথম দিনশেষে সেবাগ বাহিনীর স্কোর ৮ উইকেটের বদলে সব উইকেট হারিয়ে ২১৩-তে গিয়ে থামতে পারত। যে দলের এক ম্যাচে ২০ উইকেট নেয়ার মতা নেই, সেই দলের বোলাররা প্রায় প্রথম দিনই এক ইনিংসের ইতি টেনে ফেলেছেন। এর চেয়ে দাঁতভাঙ্গা জবাব আর কি হতে পারে? খেলার শেষ পরিণতি যাই হোক, টাইগাররা দেখিয়ে দিয়েছে, সামর্থ্য কম থাকতে পারে, তাই বলে আমরা একদমই হেলাফেলার দল নই। নিজেদের দিনে আমরাও কোন বড় শক্তির ব্যাটিংকে চাপে ফেলতে পারি। ওরা যে পারেন, সে সার্টিফিকেট দিয়েছেন খোদ শচীন তেন্ডুলকর। সর্বকালের এ অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান দিনশেষে অকপটে স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের বোলাররা কুয়াশাভেজা আবহাওয়া আর উইকেটে থাকা ময়েশ্চার কাজে লাগিয়েছেন বেশ দতার সঙ্গেই। পাশাপাশি শচীন নিজ দলের একাধিক ব্যাটসম্যানের আউট হবার ধরনকে দুর্ভাগ্যজনক বলেও অভিহিত করেছেন। তার দাবি, ভিভিএস লণ অনেকটাই ভাগ্যদোষে আউট হয়েছেন। না হয় তার ব্যাট ও প্যাডে লেগে বল উইকেটের পেছনে যাবে কেন? ওই একটি আউটের বর্ণনা দেয়া ছাড়া শচীন আর কিছু বলেননি। তবে এ ছাড়াও শাকিবের ফুলটচ বলে লংঅনে ক্যাচ দিয়েছেন যুবরাজ। সবচেয়ে পরিপাটি ব্যাটিং টেকনিকের পারফরমার রাহুল দ্রাবিড় একদম ফুললেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন। সেটা খেলার অংশ। সবাই শতভাগ সমীহ জাগানো বলে পরাসত্ম হয়ে সাজঘরে আউট হবেন না। কালও হননি। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের বোলারদের আনত্মরিক চেষ্টায় এতটুকু ঘাটতি ছিল না। সবাই বিশেষ করে পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব ও বাঁহাতি স্পিনার শাকিব আল হাসান বেশ ভাল জায়গায় বল ফেলে সমীহ আদায় করেছেন। ভারতের ৮ উইকেটের সবই ওদের পকেটে (সমান চারটি করে)।পরিবেশও অনেকটাই অনুকূল ছিল। দেশের বেশিরভাগ জায়গার মতো রবিবার সকালে বন্দরনগরীর আকাশও ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। ধোঁয়াটে আকাশ খেলার উপযোগী হতে দেরি হয় দেড় ঘণ্টা। সকাল সাড়ে নয়টার বদলে শুরম্ন হয় ১১টায়। এ রকম ধোঁয়াটে আকাশ আর ভেজা আবহাওয়ায় টস জিতে যা করার কথা টাইগার ক্যাপ্টেন তা-ই করেছেন। টস জিতেই ফিল্ডিং। কিন্তু প্রথম ঘণ্টায় মনে হলো, সিদ্ধানত্ম ভুল। কিন্তু তার পর পরই সব বদলে গেল ভোজবাজির মতো। বিনা উইকেটে ৭৯ থেকে ভারতীয় উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গার পর ৬ রানে আরও তিন উইকেটের পতন। এর পর প্রায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট গেল। একে একে ফিরলেন সেবাগ (৫২), গাম্ভীর (২৩), দ্রাবিড় (৪), লণ (৭), যুবরাজ (১২) ও দিনেশ কার্তিক (০)। ৭১ রানেই খোয়া গেল ৬ উইকেট। এর পর অমিত মিশ্র (১৪) ও জহির খানও (১১) আউট হয়েছেন। কিন্তু অনড় শচীন তেন্ডুলকর। একপ্রানত্ম ঠিক আগলে রেখেছেন এই গ্রেট। চার নম্বরে নেমে ৭৬ রানে নট আউট। ভারতের ইনিংস প্রদীপ জ্বলে আছে আসলে তার ধৈর্য ও সংযমী ব্যাটিংয়েই। তার পরও ১৬ রানে ফিরে যেতে পারতেন লিটল মাস্টার। অভিষেক হওয়া সফিউলের বলে অফড্রাইভ করতে গিয়ে প্রথম সিস্নপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইমরম্নল কায়েস তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে জীবন পান শচীন। এর পর দিনের একদম শেষভাগে রাজিবের বলে পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু মিড অফ ও অনের ঠিক মাঝামাঝি খালি জায়গায় পড়ায় বেঁচে যান। শাহরিয়ার নাফীস আর একটু আগেভাগে দৌড় শুরম্ন করলে হয়ত ধরতে পারতেন। দিনশেষে তুষ্ট শাকিবের কণ্ঠে তাই মৃদু আফসোস, আমরা ওদের ২১৩ রানের মধ্যে অলআউট করে দিতে পারতাম। তা না হলেও আজ সোমবার সকাল সকাল ভারতীয় ইনিংসের শেষ দুই উইকেট চান টাইগার ক্যাপ্টেন। তার পর নিজেরা ব্যাট করতে চান অনেকণ। অন্যদিকে শচীন চাইছেন আরও অনেকটা সময় ধরে ক্রিজে থাকতে। দেখা যাক, কার আশা পূর্ণ হয়?
No comments